যশোর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। প্রশাসনিকভাবে শহরটি যশোর জেলা এবং যশোর সদর উপজেলার সদর। এটি যশোর জেলার সবচেয়ে বড় এবং প্রধান শহর। এটি খুলনা বিভাগ এর ৩য় বৃহত্তম শহর এবং প্রতীষ্ঠাকালের দিক থেকে দেশের প্রাচীন পৌরসভার একটি। যশোর খুলনা বিভাগের অন্যতম বাণিজ্যিক একটি শহর। [১]যশোর বিমানবন্দর রাজধানী ঢাকার সাথে শহরটিকে আকাশপথে সংযুক্ত করেছে। বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে যশোর শহরের দূরত্ব ৫২.২ কি.মি.। যশোর শহর ভৈরব নদ এর তীরে অবস্থিত। যশোর কে ফুলের রাজধানী বলা হয় কেননা যশোরের গদখালি থেকে বাংলাদেশের ৮০% ফুল সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের সব থেকে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল যশোরে অবস্থিত। যশোরে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে যশোর বিমানবন্দর। ব্রিটিশ সরকার যশোর রোড নির্মাণ করেছিল যা বর্তমানে যশোর শহর কে কলকাতা এবং খুলনার সাথে সংযুক্ত করে রেখেছে। ১৭৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই যশোর অবিভক্ত বাংলার একটি জেলা ছিল। প্রবাদ আছে, 'যশোরের যশ খেজুরের রস'। তবে পুরোনো এই শহর শুধু খেজুরের রসের জন্যই বিখ্যাত না, জেলাটিতে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান।
বোঝা
[সম্পাদনা]প্রবেশ
[সম্পাদনা]- 1 যশোর বিমানবন্দর (জেএসআর আইএটিএ)। শুধুমাত্র ঢাকা পর্যন্ত সার্ভিসের একটি ছোট বিমানবন্দর।
বেনাপোল সীমান্ত চৌকি থেকে 'লোকাল বাস চলে (১:২০ ঘণ্টা, ৫০ টাকা), খুলনা (১০০ টাকা, ১:৪৫ ঘণ্টা) এবং অন্যান্য।
ভ্রমণ
[সম্পাদনা]গদখালী ফুলের বাজার গদখালী ফুলের বাজারকে ফুলের রাজধানী বলা হয়। কারণ সারা বাংলাদেশের ৮০ ভাগ ফুলের চাহিদা মেটায় এই গদখালী। যশোর জেলার ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার প্রায় ৯০টি গ্রামের ৪ হাজার বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করা হয়। বেনাপোল রোড দিয়ে গেলে রাস্তার দুইপাশে দেখা মিলবে দিগন্ত বিস্তৃত লাল, নীল, হলুদ আর সাদা রঙের ফুলের সমারোহ। আর তাতে মৌমাছি আর প্রজাপতির গুঞ্জন। এখানে সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা ও গ্লাডিওলাস। উৎপন্ন এই ফুলগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয় গদখালী বাজারে। তারপর তা চলে যায় সারা বাংলাদেশে। সারা বছর বাহারি ফুলের সমারোহ থাকলেও এখানে যাওয়ার উপযুক্ত সময় শীতের সময় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে।
যশোর থেকে বেনাপোল রোডে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে গদখালী বাজার। ৩০ টাকা বাস ভাড়ায় আসা যায় সেখানে। চাইলে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়েও আসা যায়। বেনাপোল স্থলবন্দর ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে এটি অবস্থিত। ভারত বাংলাদেশের স্থল বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এটি পরিচিত। এখান থেকে কলকাতা ৮০ কিলোমিটার দূরে। বেনাপোলে একটি তল্লাশি ঘাঁটি রয়েছে। বেনোপোলের বিপরীতে ভারতের অংশটির নাম পেট্রাপোল। এখান থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগও রয়েছে।
লোকজন সাধারণত এখানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত প্যারেড অনুষ্ঠান দেখতে যায়। এতে বিজিবি ও বিএসএফ অংশগ্রহণ করে। প্যারেড দেখতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা হিসেবে গ্যালারিও রয়েছে। যশোর সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শার্শা উপজেলায় বেনাপোল স্থলবন্দর অবস্থিত। বাসে যেতে ভাড়া লাগে ৬০ টাকা। চাইলে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়েও যাওয়া যায়।
দেখুন
[সম্পাদনা]যশোর ঘোরার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় শীতকাল।
- মধুপল্লী (কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাড়ি)। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। সাপ্তাহিক রোববার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ।। যশোর সদর থেকে ৪৫ কিলো দূরে মধুপল্লী। যশোর থেকে বাসে এসে কেশবপুর নামতে হবে। তারপর রিকশা করে সাগরদাঁড়ি গ্রাম। বাস ভাড়া ৫০ টাকা ও অটোরিকশা ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। এখানে রয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি, মধুসূদন জাদুঘর, লাইব্রেরি ও সাগরদাঁড়ি পর্যটন কেন্দ্র। মধুসূদন দত্তের বাড়ি সংলগ্ন রয়েছে বিখ্যাত কপোতাক্ষ নদ। মধুসূদন দত্তের দ্বিতলা বাড়িটি অপূর্ব নির্মাণশৈলীর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটাকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকীতে এখানে মধুমেলা হয়। বর্তমানে এখানে একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে । ১০ টাকা। বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা।।
- 1 যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি। এটি একটি পাবলিক লাইব্রেরি, যা ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম গ্রন্থাগারগুলির একটি। লাইব্রেরিতে ৬৭,১৯৭টি বই এবং বিপুল সংখ্যক পাণ্ডুলিপি, জার্নাল এবং সংবাদপত্র রয়েছে।
- 2 যশোর কালেক্টরেট ভবন (কালেক্টরেট ভবন)। যশোর সদরেই এই ভবনটি অবস্থিত। এটি মূলত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। কালেক্টরেট ভবনকে কেন্দ্র করে এখানে পার্ক গড়ে উঠেছে। প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস এই কালেক্টরেট ভবনের। বর্তমানে লাল রঙের এই ভবনটি দ্বিতল। বাহারি ফুলের গাছ, পুকুর, পানির ফোয়ারা ও ভাস্কর্যে সুসজ্জিত এর চত্বর।
- 'বিজয় '৭১ হল শহরের প্রবেশদ্বারে খন্দকার বদরুল ইসলামের একটি ৩৫' উচ্চ একটি ভাস্কর্য, যা পালবাড়িতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে।
- ডিহি ইউনিয়ন পাবলিক লাইব্রেরি [ডিইউপিএল] হল বাংলাদেশের প্রথম ইউনিয়ন ভিত্তিক পাবলিক লাইব্রেরি। ১৯৭৭ সালের ৩০ নভেম্বর যশোরের সরসার অধীনে পাকশিয়া বাজারে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিইউপিএল যশোর থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ধাতব রাস্তা দ্বারা সংযুক্ত। বইয়ের খুব সমৃদ্ধ সংগ্রহ ছাড়াও এটির একটি সমৃদ্ধ আর্বোরিটাম রয়েছে।
- ডিইউপিএল আর্বোরিটাম যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সংগ্রহ করা হচ্ছে, বেনাপোল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে।
- 3 যশোর কালেক্টরেট পার্ক (যশোর কালেক্টরেট পার্ক) (শহরের পশ্চিম প্রান্তে), ☎ ৮৮০১৯১১৫৭৩৫০৭। প্রতিদিন সকাল ১০-সন্ধ্যা ০৭। এই পার্কে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক লাল দালান রয়েছে যা ১৭৮৬ সালে ব্রিটিশ আমলে কালেক্টরেট অফিস হিসেবে নির্মিত হয়েছিল।
- 4 পৌর পার্ক (পৌরসভা পার্ক - পৌর পার্ক) (আবদুর রাজ্জাক পৌর কলেজের পাশে), নিঃশুল্ক-ফোন: ৮৮০১৭৭৫৯২৬১৫৪। পুকুর এবং একটি আচ্ছাদিত সেতুসহ একটি জনপ্রিয় পৌর পার্ক যা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত; যেখানে আপনি আরাম করতে পারেন।
- 5 চাঁচড়া শিব মন্দির (যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে চাঁচড়া ইউনিয়নে এ মন্দির অবস্থিত।)। মন্দিরটি ১৬৯৬ সালে রাজা মনোহর রায় নির্মাণ করেন। মন্দিরটি ‘আট-চালা’ ধরনের মন্দির। শিব মন্দিরটির সামনের দিকের তিনটি খিলান যুক্ত প্রবেশদ্বার আছে এবং পুরো মন্দিরের সন্মুখভাগ পোড়ামাটির ফলকে চমৎকার ভাবে অলংকৃত। একসময়ের চাঁচড়া রাজবাড়ি এখন সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। যশোর মনিহার থেকে ৫০ টাকা দিয়ে রিকশা নিয়ে এই শিব মন্দিরে যেতে সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট।
কার্যাবলী
[সম্পাদনা]- গল্ফ খেলুন! যশোর সেনানিবাসে বসবাসকারী অসংখ্য সেনা অফিসারের একজনের সাথে যদি আপনি বন্ধুত্ব করতে পারেন, তাহলে আপনি ৯-হোলের গল্ফ কোর্সে খেলার সুযোগ পাবেন। আপনার নিজের সরঞ্জাম আনার দরকার নেই, যদিও এতে আপনার কিছু খরচ হবে। আপনি স্থানীয়ভাবে রানওয়ে হিসেবে পরিচিত বিমানবন্দর পরিদর্শন করতে পারেন এটি সত্যিই চমৎকার। আপনি বিনোদিয়া পার্ক, জেস গার্ডেন পার্ক, বোট ক্লাব, নিউটাউন পার্ক এবং লেক-এ ঘুরে আসতে পারেন; এগুলো মূল শহরের ঠিক পাশেই অবস্থিত।
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]এই শহরে আপনি ২টি শপিং কমপ্লেক্স পাবেন: জেস টাওয়ার এবং সিটি প্লাজা। শপিং কমপ্লেক্স ছাড়াও; আপনি বাজার থেকে সরাসরি কিনতে পারেন যেমন বোরো বাজার, কালেক্ট্রি বাজার ইত্যাদি। এইসব বাজার থেকে আপনি কাপড়, খাবার, উপযোগী জিনিসপত্র ইত্যাদি কিনতে পারেন।
খাবার
[সম্পাদনা]- রোজ গার্ডেন একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁ যেটি এমকে রোডের হোটেল মিড-টাউন এর বিপরীতে একটি শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত। এটি খুঁজে পাওয়া কিছুটা কঠিন (চিহ্নটি দেখতে উপরে সন্ধান করুন) তবে ১০০ টাকায় একটি অ-চর্বিযুক্ত এবং সুস্বাদু উদ্ভিজ্জ চাউমিনসহ দুর্দান্ত চীনা খাবার পরিবেশন করে।
- নিউ নুরী হোটেল রোজ গার্ডেন থেকে প্রায় ৫০ মিটার পশ্চিমে এবং স্থানীয় খাবারের জন্য একটি দুর্দান্ত এবং জনপ্রিয় জায়গা। মাছ, ভাত, পালংশাক, আলুর তরকারি, ডাল ও মিষ্টির ভোজে খরচ হবে প্রায় ৪০ টাকা।
- দোরাটানা পয়েন্টে ২৫ টাকায় চটপটি খেতে পারেন।
পানীয়
[সম্পাদনা]যশোরে আপনি অনেক ক্যাফে পাবেন: তবে এদের মধ্যে কেয়ারিস ফুড সেন্টার, ডে লাইট এবং ওয়েসিস সবচেয়ে ভালো।
থাকার ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]- বাঁচতে শেখা এটি একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশে অনেক দাতব্য কাজ করে এবং এর যশোরের বিশাল ঘাঁটিতে এটি ভ্রমণকারীদের জন্য কক্ষ সরবারহ করে। এমনকি আপনি কখনো কখনো এর প্রতিষ্ঠাতা, র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার ("এশিয়ার নোবেল পুরস্কার") বিজয়ী অ্যাঞ্জেলা গোমসসহ দাতব্য সংস্থার কর্মীদের সাথে খাবারও খেতে পারেন।
- কাছাকাছি আরেকটি সস্তা জায়গা হল গ্র্যান্ড হোটেল, এবং আরএস ইন্টারন্যাশনাল এবং হোটেল ম্যাগপাই এর থেকে কিছুটা সুন্দর। এইগুলো এমকে রোডে অবস্থিত।
- হোটেল হাসান। বুফে ব্রেকফাস্টসহ প্রশস্ত কক্ষের ব্যবস্থা আছে।
- 1 হোটেল সিটি প্লাজা ইন্টারন্যাশনাল (হোটেল সিটি প্লাজা ইন্টারন্যাশনাল), সিটি প্লাজা রোড (সিটি প্লাজা মলের পাশে), ☎ ৮৮০১৭৯৫৪৭৭৯৭৭। রেস্তোরাঁ সহ হোটেল, বিনামূল্যে সকালের নাস্তা, গরম টাব, ওয়াইফাই, এসি আছে। এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি ভাল অবস্থানে অবস্থিত।
- 2 জাবির হোটেল ইন্টারন্যাশনাল, মাওলানা মোহাম্মদ আলী রোড (শহরের কেন্দ্রস্থল), ☎ ৮৮০১৮৮৫০০০৫৫৫। সম্ভবত যশোরের সবচেয়ে নতুন হোটেল, এটি একটি কাঁচের সম্মুখভাগের উঁচু ভবন যারা নিজেদের ৫-স্টার বলে দাবি করে। এটিতে একটি রেস্তোরাঁ, পূর্ণ প্রাতঃরাশ, জিম, পুল এবং বিলাসবহুল স্টাইল রুমসহ একটি ছাদের পুল রয়েছে। ~৬১০৫ টাকা।
সংযোগ
[সম্পাদনা]- পোস্ট অফিসের বিপরীতে সিটি সাইবার ক্যাফে মাঝারি গতির সংযোগের জন্য ২০ টাকা/ঘন্টা চার্জ করে।
পরবর্তীতে যান
[সম্পাদনা]কালীগঞ্জের কাছে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম বটগাছ এবং নলডাঙ্গা মন্দির কমপ্লেক্স, যা রিক্সা বা অন্যান্য গণপরিবহনে পৌঁছানো যায়। যদি আপনি যশোরের মধ্যে ঘুরতে চান তবে গোদখালী হবে আদর্শ স্থান