তাহাদের ভালোবাসা না থাকিত তবে তাহারা এ দীর্ঘপথ চলিতে পারিত। পথ ভালোবাসে বলিয়াই প্রতিপদক্ষেপেই তাহাদের তৃপ্তি। এই, পথ ভালোবাসে বলিয়াই তাহারা চলে, আবার এই, পথ ভালোবাসে বলিয়াই তাহারা চলিতে চাহে না। তাহারা পা উঠাইতে চাহে না। প্রতিপদে তাহাদের ভ্রম হয়, “যেমন পাইয়াছি এমন আর পাইব না”- কিন্তু অগ্রসর হইয়াই আবার সমস্ত ভুলিয়া যায়। প্রতিপদে তাহারা শোক মুছিয়া মুছিয়া চলে। তাহারা আগেভাগে আশঙ্কা করিয়া বসে বলিয়াই কাঁদে, নহিলে কাঁদিবার কোনো কারণ নাই।
ঐ দেখো, কচি ছেলেটিকে বুকে করিয়া মা সংসারের পথে চলিয়াছে। ঐ ছেলেটির উপরে মাকে কে বাঁধিয়াছে! ঐ ছেলেটিকে দিয়া মাকে কে টানিয়া লইয়া যাইতেছে! প্রেমের প্রভাবে পথের কাঁটা মায়ের পায়ের তলে কেমন ফুল হইয়া উঠিতেছে! ছেলেটিকে মায়ের কোলে দিয়া পথকে গৃহের মতো মধুর করিয়াছে কে?—কিন্তু হায়, মা ভুল বোঝে কেন? মা কেন মনে করে এই ছেলেটির মধ্যেই তাহার অনন্তের অবসান? অনন্তের পথে যেখানে পৃথিবীর সকল ছেলে মিলিয়া খেলা করে, একটি ছেলে মায়ের হাত ধরিয়া মাকে সেই ছেলের রাজ্যে লইয়া যায়—সেখানে শতকোটি সন্তান। সেখানে বিশ্বের কচি মুখগুলি ফুটিয়া একেবারে নন্দনবন করিয়া রাখিয়াছে। আকাশের চাঁদকে কাড়াকাড়ি করিয়া লইবার জন্য আগ্রহ! সেখানে স্খলিত মধুর ভাষার কল্লোল! আবার ওদিকে শোনো-সুকুমার অসহায়েরা কী কান্নাই কাঁদিতেছে! শিশুদেহে রোগ প্রবেশ করিয়া ফুলের পাপড়ির মতো কোমল তনুগুলি জীর্ণ করিয়া ফেলিতেছে। কোমল কণ্ঠ হইতে স্বর বাহির হইতেছে; ক্ষীণস্বরে কাঁদিতে চেষ্টা করিতেছে, কান্না কণ্ঠের মধ্যেই মিলাইয়া যাইতেছে। আর ঐ শিশুদের প্রতি বর্ব্বর বয়স্কদের কত অত্যাচার!
একটিছেলে আসিয়া মাকে পৃথিবীর সকল ছেলের মা করিয়া