—এমন কাজ কোরো না—অত্যন্ত বেশি ক’রে পড়তে গেলে কম ক’রে পাবে। হঠাৎ মাঝে মাঝে একখানা বই তুলে নিয়ে সাতের পাতা, কি সতেরোর পাতা কি সাতাশের পাতা থেকে যদি পড়তে সুরু ক’রে দাও হয়তো তোমার মন ব’লে উঠবে—বাঃ, বেশ লিখেছে তো। রীতিমত পড়া অভ্যাস কর যদি তাহলে স্বাদ নষ্ট হোতে থাকবে—কিছুদিন বাদে মনে হবে, এমনই কী। আমাদের সৃষ্টির একটা সীমানা আছে সেইখানে বারে বারে যদি তোমার মনোরথ এসে ঠেকে যায় তবে মন বিগড়ে যাবে। মানুষের একটা রোগ আছে যা পায় তার চেয়ে বেশি পেতে চায়, তোমার প্রকৃতিকে সর্ব্বতোভাবে পরিতৃপ্তি দিতে পারে আমার রচনা থেকে এমন প্রত্যাশা কোরো না। কিছু তোমার ভালো লাগবে কিছু অন্যের ভালো লাগবে—কিছু তোমার মনের সঙ্গে মিলবে না অথচ আর একজন ভাববে সেটা তারই মনের কথা। নানা ভাবে নানা সুরে নানা কথাই বলেছি—যেটুকু তোমার পছন্দ হয় বাছাই ক’রে নিয়ো। পাঠকেরও রসগ্রহণ করবার একটা সীমা আছে; তোমার মন অনুভূতির একটা বিশেষ অভ্যাসে প্রবলভাবে অভ্যস্ত, সেই অভ্যাস সব-কিছু থেকে নিজের জোগান খোঁজে। কিন্তু কবিতায় কোনো একটা বিশেষ ভাব বড় জিনিষ নয়, এমন কি খুব বড়ো অঙ্গের ভার। কবিতার মুখ্য জিনিষ হচ্ছে সৃষ্টি—অর্থাৎ রূপভাবন। বিশ্বকাব্যেও যেমন, কবির কাব্যেও তেমনি,—রূপ বিচিত্র—কোনোটা তোমার চোখে পড়ে, কোনোটা আর কারও। তুমি খুঁজছ তোমার মনের একটি বিশেষ ভাবকে তৃপ্তি দিতে পারে এমন কোনো একটি রূপ,—অন্যগুলোও রূপের মুল্যে মূল্যবান হোলেও হয়তো তুমি গ্রহণ করতে চাইবে না। কিন্তু কাব্যের যারা যথার্থ রসজ্ঞ, তারা নিজের ভাবকে কাব্যে খোঁজে না—তারা যে-কোনো ভাব রূপবান হয়ে উঠেছে তাতেই আনন্দ পায়। তোমার চিঠি পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে একটা বিশেষ খাদে তোমার চিন্তাধারা
পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৬
অবয়ব
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭২
বিচিত্র প্রবন্ধ