হৃদয়
অবয়ব
হৃদয় বা মন বা হৃৎপিণ্ড মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশীবহুল অঙ্গ যা শরীরের ধমনী এবং শিরাগুলির মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে। শব্দটি নিজেই দীর্ঘকাল ধরে প্রেমের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং মানুষের আধ্যাত্মিক, মানসিক, নৈতিক, বা বুদ্ধিবৃত্তিক মূল বা আত্মাকে বোঝায়।
উক্তি
[সম্পাদনা]- কি প্রেমে লহরী করে বেলা-আলিঙ্গন,
কি প্রেমে বেলা বা করে লহরী-চুম্বন,
কি প্রেমে উছলি উঠে সাগর-বদন,
আর আমার হৃদয়?- অধরলাল সেন - ললিতাসুন্দরী ও কবিতাবলী, আমার হৃদয়।
- পূর্ণিমার ইন্দু সকলেরই আনন্দপ্রদ। প্রেমিকের, ভক্তের, কবির সকলের হৃদয়ে আনন্দ প্রদান করে। শশাঙ্ককে দেখিলে কবির হৃদয়ের রুদ্ধদ্বার মুক্ত হইয়া কল্পনার উৎস খুলিয়া যায়, ভাবের গ্রস্রবন ছুটিতে থাকে। দম্পতির হৃদয়ের রুদ্ধ ভালবাসা উভয়ের হৃদয়ে নীরবে কার্য্য করিতে থাকে; পূর্ণিমার ইন্দুকে দেখিয়া প্রণয়ীর পবিত্র প্রণয় একের হৃদয় হইতে অপরের হৃদয়ে বিদ্যুৎগতিতে মিশিতে চায়।
- ইন্দিরা দেবী - আমার খাতা, পূর্ণিমার ইন্দু ১৯১২ (পৃ. ১৫১-১৫৩)।
- ওরে,আমার হৃদয় আমার, কখন তোরে প্রভাতকালে
দীপের মত গানের স্রোতে কে ভাসালে॥
যেনরে তুই হঠাৎ বেঁকে
শুকনো ডাঙায় যাসনে ঠেকে,
জড়াসনে শৈবালের জালে॥- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - প্রবাহিণী, গীতগান ১৯২৫ (পৃ. ১১-১২)।
- যার হৃদয় কঠিন, সে তো বেদনা অনুভব করে না। কারণ, সে যদি বেদনা পেত, তবে পাপ এমন নিদারুণ হতেই পারত না। যার হৃদয় কোমল, যার প্রেম গভীর, তাকেই সমস্ত বেদনা বইতে হবে। এইজন্য যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের রক্তপাত কঠিন নয়, রাজনৈতিকদের দুশ্চিন্তা কঠিন নয়, কিন্তু ঘরের কোণে যে-রমণী অশ্রুবিসর্জন করছে তারই আঘাত সবচেয়ে কঠিন।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - সংকলন, পাপের মার্জনা ১৯৪৬ (পৃ. ২৭৫-২৭৮)।
- সবচেয়ে বড় দান হৃদয় দান। এটি দিলে দেবার আর কিছু বাকি থাকে না। যাকে এই দান করা হয় তার কি কম সৌভাগ্য। তার মত সৌভাগ্যবান বা সুখী আর কে আছে? কিন্তু যে ঐ দান ফিরিয়ে দিতে না পারে তার মত—আর কে আছে? ফল কি? ফল—উভয়ের শান্তি।
- সুভাষচন্দ্র বসু - পত্রাবলী ১৯৬০ (পৃ. ৪৪)।
- নারী তার সঙ্গীকে: ‘পৃথিবীর পুরনাে পথের রেখা হ’য়ে যায় ক্ষয়,
জানি আমি,—তারপর আমাদের দুঃস্থ হৃদয়
কী নিয়ে থাকিবে বল;—একদিন হৃদয়ে অগাধ ঢের দিয়েছে চেতনা,
তারপর ঝ’রে গেছে; আজ তবু মনে হয় যদি ঝরিত না।- জীবনানন্দ দাশ - বনলতা সেন, দুজন।
- এমন মানুষ নাই, যাহার হৃদয়ে কখন না কখন প্রেম দেখা দিয়াছে। বোধ হয় কেবল হিন্দু যোগীগণই নিজ নিজ সাধনার বলে হৃদয় হইতে দুর্দমনীয় প্রেমবৃত্তি উচ্ছেদ করিতে সমর্থ হইয়া ছেন। ইহারাই কেবল যোগ-সাধনার বলে ইন্দ্রিয় দমন করিয়া জিতেন্দ্রিয় হইতে সমর্থ হইয়াছেন।
- উপেন্দ্রকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় - লেফ্টেন্যাণ্ট সুরেশ বিশ্বাস, প্রেম ১৮৯৯ (পৃ. ১৬০-১৬৩)।
- আমরা যে সকলে মিলিয়া সেই বিশ্ব-জননীকে ডাকিতেছি ও পরস্পরের মধ্যে মনোভাব আদান প্রদান করিতেছি ইহা কি কম সৌভাগ্যের বিষয়? যাঁহার হৃদয় দিয়া ঈশ্বর এই শুভ ইচ্ছা প্রেরণ করিয়াছেন তাঁহাকে আমরা ধন্যবাদ দিই। প্রেমময়!
- ইন্দিরা দেবী - আমার খাতা , স্বার্থপরতা।
- একজন মানুষের প্রথম যত্ন হওয়া উচিত তার নিজের হৃদয়ের তিরস্কার এড়ানো; তার পরেরটি হল বিশ্বের নিন্দা থেকে নিজেকে বাঁচানো: যদি দ্বিতীয়টি প্রথমটির সাথে হস্তক্ষেপ করে তবে এটি সম্পূর্ণরূপে অবহেলিত হওয়া উচিত।
- জোসেফ অ্যাডিসন, "স্যার রজার", দ্য স্পেক্টেটর নং ১২২ (২০ জুলাই ১৭১১)।
- যেহেতু হৃদয় বিভিন্ন শক্তির সঞ্চয়কারী এবং প্রেরক, তাই এই শক্তিগুলিকে জাগিয়ে তোলা এবং আকর্ষণ করার জন্য আরও অনুকূল পরিস্থিতি থাকতে হবে। সবচেয়ে মৌলিক অবস্থা হল কাজ, মানসিক এবং এর পাশাপাশি শারীরিক। কাজের গতিতে, মহাকাশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করা হয়; কিন্তু কাজকে অবশ্যই একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসেবে বুঝতে হবে যা জীবনকে সমৃদ্ধ করে। এইভাবে, প্রতিটি ধরণের কাজই একটি আশীর্বাদ, অন্যদিকে নিষ্ক্রিয়তার অস্পষ্টতা মহাজাগতিক অর্থে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
- অগ্নি যোগ, হৃদয়, পৃষ্ঠা ৭৯ (১৯৩২)
- একজন মানুষ হৃদয় দিয়ে চিন্তা করতে পারে বা মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করতে পারে। এমন একটি সময় ছিল যখন মানুষ হৃদয়ের কাজ সম্পর্কে ভুলে গিয়েছিল, কিন্তু এখন হৃদয়ের যুগ, এবং আমাদের অবশ্যই সেই দিকে লক্ষ্য করতে হবে। এইভাবে, মস্তিষ্ককে তার কাজের থেকে মুক্ত না করে, আমরা হৃদয়কে একটি উদ্দেশ্য শক্তি হিসাবে চিনতে প্রস্তুত হতে পরি। হৃদয়ে সীমাবদ্ধতা রাখার জন্য মানুষ হাজারো উপায় ভেবেছে। হৃদয়ের কাজগুলি সংকীর্ণ অর্থে বোঝা যায়, এমনকি সর্বদা বিশুদ্ধ অর্থে নয়। আমাদের অবশ্যই পুরো বিশ্বকে হৃদয়ের গোলকের মধ্যে আনতে হবে, কারণ হৃদয় হল সমস্ত কিছুর আদিউৎস।
- অগ্নি যোগ, হৃদয়, পৃষ্ঠা ২৭৭, (১৯৩২)
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় হৃদয় সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে হৃদয় শব্দটি খুঁজুন।