বিষয়বস্তুতে চলুন

হেলেনা, প্রথম কনস্টান্টিনের মাতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হেলেনা
আউগুস্তা
হেলেনার প্রতিমূর্তি, কাপিতোলিনি জাদুঘর, রোম
রোমান সম্রাজ্ঞী
জন্মআনু. ২৪৬/২৪৮
দ্রেপানন (পরবর্তী হেলেনোপলিস), বিথিনিয়া, এশিয়া মাইনর
(বর্তমান হের্সেক, আলতিনোভা, ইয়ালোভা, তুরস্ক)
মৃত্যুআনু. ৩৩০
রোম, তুস্কানিয়া এ উমব্রিয়া
(বর্তমান ইতালি)
সমাধি
দাম্পত্য সঙ্গীকনস্টান্টিউস ক্লোরাস
বংশধরমহান কনস্টান্টিন
পূর্ণ নাম
ফ্লাভিয়া জুলিয়া হেলেনা
রাজ্যের নাম
ফ্লাভিয়া জুলিয়া হেলেনা অগাস্টা
রাজবংশকনস্টান্টিনীয়
ধর্মনিসিন ধর্মবিশ্বাস

ফ্লাভিয়া জুলিয়া হেলেনা আউগুস্তা (সন্ত হেলেনাকনস্টান্টিনোপলের হেলেনা নামেও পরিচিত; আনু. ২৪৬/২৪৮ - আনু. ৩৩০) রোমান সাম্রাজ্যের অগাস্টা ও সম্রাজ্ঞী এবং মহান কনস্টান্টিনের মাতা। তিনি এশিয়া মাইনরের বিথিনিয়ার গ্রিক শহর দ্রেপাননে, যা পরবর্তীকালে তার সম্মানে হেলেনোপলিস নামে নামকরণ করা হয়, এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[]

হেলেনা খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার জীবনের শেষভাগে তিনি সিরিয়া পালেস্তিনা ও জেরুসালেমে সফরে যান এবং প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে এই সময়ে তিনি আসল ক্রুশ আবিষ্কার করেন। পূর্বদেশীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলী, ক্যাথলিক মণ্ডলীপ্রাচ্য সনাতনপন্থী মণ্ডলীঅ্যাংলিকান সম্প্রদায় তাকে সন্ত হিসেবে সম্মান করে এবং লুথারীয় মণ্ডলী তার স্মরণার্থে উৎসব করে।


প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

বিভিন্ন সূত্র এই মর্মে সম্মত হয় যে হেলেনা একজন গ্রিক ছিলেন, যিনি সম্ভবত এশিয়া মাইনর তথা বর্তমান তুরস্কে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জন্মস্থানও নিশ্চিত করে বলা যায় না, তবে প্রোকোপিউসের অনুমানের পর থেকে তৎকালীন দ্রেপানুম, বিথিনিয়া বা বর্তমান হেলেনোপলিসকে তার জন্মস্থান হিসেবে ধারণা করা হয়।[] তার নাম ফ্লাভিয়া হেলেনা, ফ্লাভিয়া জুলিয়া হেলেনা এবং মাঝে মাঝে অ্যালেনা নামে মুদ্রায় সত্যায়িত করা হত।[][] জোসেফ ভোগ্‌ট বলেন হেলেনা নামটি রোমান সাম্রাজ্যের গ্রিক-ভাষী অঞ্চলের সাধারণ নাম ছিল এবং এর ফলে তার জন্মস্থান রোমান সাম্রাজ্যের পূর্ববর্তী প্রদেশসমূহে হতে পারে।[] ষষ্ঠ শতাব্দীর ঐতিহাসিক প্রোকোপিউস প্রথম অনুমান করেন হেলেনা এশিয়া মাইনরের বিথিনিয়া প্রদেশের দ্রেপানুমে বাসিন্দা ছিলেন। হেলেনা নামটি রোমান সাম্রাজ্যের সকল অঞ্চলেই দেখা যায় এবং লাতিন-ভাষী অঞ্চলেও সাধারণ নাম হিসেবে ব্যবহার করা হত। প্রোকোপিউস সেই সময়ের অনেক পরে জন্মেছিলেন এবং তার বর্ণনা মূলত হেলেনোপলিস শীর্ষক নামটির ব্যুৎপত্তিমূলক ব্যাখ্যা হতে পারে।[] অন্যদিকে তার পুত্র কনস্টান্টিন ৩৩৩ সালে তার মৃত্যুর পর এই শহরের নামকরণ করেন "হেলেনোপলিস", যা এই স্থানটি তার জন্মস্থান এই বিষয়টির সমর্থনকে জোরদার করে।[] বাইজেন্টাইনীয় সাইরিল ম্যাংগো যুক্তি দেখান যে হেলেনোপলিস কনস্টান্টিনের নতুন রাজধানী কনস্টান্টিনোপলের আশেপাশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং তার সম্মানার্থে নামকরণ করা হয়েছিল, যা তার জন্মস্থান ছিল না।[] ফিলিস্তিনলিদিয়ায়ও হেলেনোপলিস নামে শহর রয়েছে।[১০][১১] এই শহর দুটি এবং পন্তুসের হেলেনোপন্তুস প্রদেশও সম্ভবত কনস্টান্টিনের মাতার নামানুসারের নামকরণ করা হয়েছিল।[] ফ্রান্স ও পাইরেনিসের আরও দুটি স্থানের নাম হেলেনার নামানুসারে রাখা হয়।[] দ্রেপানুমের মত অনিশ্চিত ও সঠিক তথ্যপ্রমাণ ব্যতিরেকে নাইসুস, কাফার বা এদেস (মেসোপটেমিয়া), ট্রিয়ার শহরগুলোকে তার জন্মস্থান বলে উল্লেখ করা হয়।[]

সম্রাট কনস্টান্টিউসের সাথে বিবাহ

[সম্পাদনা]

কনস্টান্টিউসের সাথে তার প্রথম কখন সাক্ষাৎ হয়েছিল তা অজানা।[১২] ঐতিহাসিক টিমথি বার্নস মনে করেন কনস্টান্টিউস সম্রাট অরেলিয়ানের অধীনে দায়িত্ব পালনকালে জেনোবিয়ায় আক্রমণের সময় এশিয়া মাইনরে অবস্থানকালে তাদের পরিচয় হতে পারে। বলা হয়ে থাকে তাদের পরিচয়ের সময় তারা রৌপ্য ব্রেসলেট পরিধান করে ছিলেন।[১৩] হেলেনা ও কনস্টান্টিউসের সম্পর্কের বৈধ প্রকৃতি অজানা। বিভিন্ন উৎসে হেলেনা কনস্টান্টিউসের স্ত্রী বলে উল্লেখ করা হয় এবং কনস্টান্টিউসের প্রতিদ্বন্দ্বী মাক্সেন্তিউসের উড়িয়ে দেওয়া প্রচারণার পর[১৪] প্রায়ই তাকে কনস্টান্টিউসের উপপত্নী বলে উল্লেখ করা হয়।[১২]

ঐতিহাসিক জ্যান ড্রিজভার্সের মত কয়েকজন বিদ্বান বলেন কনস্টান্টিউস ও হেলেনা সাধারণ আইনী বিবাহে আবদ্ধ হন, যা একত্রে বসবাসের নিমিত্তে করা হয় কিন্তু কোন আইন নয়।[১৫] টিমথি বার্নস-সহ অন্যান্যরা বলেন কনস্টান্টিউস ও হেলেনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এই যুক্তিতে যে আনুষ্ঠানিক বিবাহ অধিক বিশ্বাসযোগ্য।[১৬]

কনস্টান্টিনের সিংহাসনে আরোহণের পর

[সম্পাদনা]

৩০৬ খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিউসের মৃত্যুর পর কনস্টান্টিন কনস্টান্টিউসের সেনাবাহিনী কর্তৃক রোমান সাম্রাজ্যের আউগুস্তুস হিসেবে ঘোষিত হন এবং তার উচ্চপদের আসীন হওয়ার পর ৩১২ খ্রিস্টাব্দে তাকে রাজদরবারে ফিরিয়ে আনা হয়।[] ৩২৫ সালে তিনি আউগুস্তা উপাধি লাভ করেন।

মৃত্যু ও সমাধি

[সম্পাদনা]
রোমের পিও-ক্লেমেন্টিন ভ্যাটিকান জাদুঘরে হেলেনার ভাস্কর্যশোভিত পাথরের শবধার

হেলেনা আনুমানিক ৩৩০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে রোমের নিকটবর্তী ভিয়া লাবিকানায় হেলেনার সমাধিতে সমাহিত করা হয়। তার ভাস্কর্যশোভিত পাথরের শবধার পিও-ক্লেমেন্টিন ভ্যাটিকান জাদুঘরে তার নাতনী কনস্টান্টিনার (সন্তু কনস্ট্যান্স) শবধারের পাশে প্রদর্শিত রয়েছে। ১১৫৪ খ্রিস্টাব্দে শবাধারে তার শবের অবশিষ্টাংশের স্থলে পোপ চতুর্থ আনাস্তাসিউসের শবের অবশিষ্টাংশের রাখা হয় এবং তার শবের অবশিষ্টাংশ আরা কোয়েলির সান্তা মারিয়ায় স্থানান্তর করা হয়।

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. It has been speculated that the name "Aelena" is the result of poor minting, with H turning into A. Nontheless the 5th-century Latin text Acta Cyriaci (based on an earlier Greek text)[] also refers to her as Aelena.[][]
  2. The cameo was incorporated in the rich binding of the Ada Gospels; the year 316 is argued in Stephenson 2010:126f.

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Anonymus Valesianus 1.2, "Origo Constantini Imperatoris".
  2. Drijvers 1992, পৃ. 9।
  3. Drijvers, Jan Willem (১৯৯১)। "Helena's position at the court of Constantine"। Helena Augusta: The mother of Constantine the Great and the legend of her finding of the true cross। Brill's Studies in Intellectual History। BRILL। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 9789004246768 
  4. Harbus, Antonina (অক্টোবর ১, ১৯৯৪)। "Text as Revelation: Constantine's Dream in "Elene""Neophilologus78 (4): 645–653। এসটুসিআইডি 161998085ডিওআই:10.1007/BF01003514 – ProQuest-এর মাধ্যমে। 
  5. Lavezzo, Kathy (২০১৬)। "1 Sepulchral Jews and Stony Christians: Supersession in Bede and Cynewulf"। United States of America-এ লিখিত। The Accommodated Jew: English Antisemitism from Bede to Milton The Accommodated Jew: English Antisemitism from Bede to Milton (Literary Studies (Early and Medieval)) (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। Ithaca: Cornell University Press। পৃষ্ঠা 28–63। আইএসবিএন 9781501706158 (online) 9781501703157 (print) |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) – Academic.oup.com-এর মাধ্যমে। 
  6. Bodden, Mary Catherine (১৯৮৭)। "Anglo‐saxon self‐consciousness in language"English Studies68 (1): 24–39। ডিওআই:10.1080/00138388708598490 – Tandfonline-এর মাধ্যমে। 
  7. Drijvers 1992, পৃ. 12
  8. Harbus, 12.
  9. Mango, 143–58, cited in Harbus, 13.
  10. Günter Stemberger, Jews and Christians in the Holy Land: Palestine in the fourth century, 2000, p. 9 (full text).
  11. Hunt, 49, cited in Harbus, 12.
  12. Lieu and Montserrat, 49.
  13. Inscriptiones Latinae Selectae 2776, cited in Barnes, "New Empire," 36.
  14. Paul Stephenson, Constantine, Roman Emperor, Christian Victor, 2010:126f.:130.
  15. Drijvers, Helena Augusta, 17–19.
  16. Barnes, New Empire, 36.

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:AmCyc Poster

টেমপ্লেট:রোমান সম্রাজ্ঞী