আবেগোন্মত্ততা
আবেগোন্মত্ততা বা হিস্টেরিয়াকে কথ্য ভাষায় বলা যায় অনিয়ন্ত্রিত আবেগের আধিক্য।[১] হিস্টিরিয়াগ্রস্ত ব্যক্তি প্রায়ই অতিরিক্ত ভয় পেয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, যার কারণ হতে পারে সেই ব্যক্তির অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা যেখানে বড় ধরনের কোন দ্বন্দ্ব/সংঘাত হয়েছিল। এই ভয় শরীরের কোন একটি অংশে কেন্দ্রীভূত হতে পারে অথবা যেমনটা প্রায়ই দেখা যায়, শরীরের সেই নির্দিষ্ট অংশে কোন কল্পিত সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। অসুখ হওয়া এর একটা সাধারণ অভিযোগ। এখন সাধারণত, আধুনিক চিকিৎসকেরা রোগনির্ণয়ের সাধারণ শ্রেণী বোঝাতে "হিস্টিরিয়া" শব্দটি আর ব্যবহার করেন না, এর পরিবর্তে তারা ব্যবহার করছেন সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত শ্রেণীসমূহ যেমন : সোমাটাইজেশন ডিসঅর্ডার।[২] ১৯৮০ সালে মার্কিন মনোচিকিৎসক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে রোগনির্ণয়ের জন্য হিস্টেরিয়াকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করেছে, যেগুলি হল কনভার্শন, সোমাটাইজেশন, ও ডিসোসিয়েটিভ ডিসর্ডার।
উৎস
[সম্পাদনা]যদিও হিস্টিরিয়া শব্দটি জরায়ুর গ্রীক শব্দ, hystera (ὑστέρα) থেকে উদ্ভূত হয়েছে, শব্দটি কিন্তু অনেক পুরোনো নয়। "হিস্টেরিকাল দমবন্ধ হওয়া" শব্দটি, যেটির অর্থ উত্তাপের অনুভূতি এবং শ্বাস নিতে অক্ষমতা, সেটি প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হত। গ্রীকরা বিশ্বাস করত যে জরায়ু অঙ্গটি একটি মহিলার দেহে চলাচল করে, তাকে শ্বাসরোধ করে এবং অসুখ ডেকে আনে।[৩] এই লক্ষণগুলি সম্পূর্ণভাবে শারীরিক কারণের জন্য হয়, কিন্তু, এগুলিকে জরায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত করা হত বলে মনে হয়, এই ব্যাধিগুলি কেবল মহিলাদের মধ্যেই পাওয়া যেত।[৪]
ঐতিহাসিকভাবে, মনে করা হত, হিস্টিরিয়া অসুখটি বিভিন্ন লক্ষণ নিয়ে মহিলাদের (স্ত্রী হিস্টিরিয়া) মধ্যে প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে: উদ্বেগ, শ্বাসকষ্ট, অজ্ঞান হওয়া, অনিদ্রা, বিরক্তি, স্নায়বিক দুর্বলতা এবং যৌন আচরণে এগিয়ে যাওয়া।[৫] এই লক্ষণগুলি আসলে আরও অন্যান্য নির্দিষ্ট কিছু রোগের লক্ষণগুলির অনুকরণ। এবং হিস্টিরিয়া সত্যিই কোন রোগ কিনা তা তর্কসাপেক্ষ, এবং এটি প্রায়শই এই ইঙ্গিত বহন করে যে, নির্ণয় করা যায়নি এমন অসুস্থতার জন্য এটি একটি ছাতা বিশেষ।[৪] হিস্টিরিয়া সম্পর্কে জানতে প্রাথমিক নিশ্চিত কাজের মধ্যে ছিল, ১৮৪০ থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত ৪০০ হিস্টেরিয়াগ্রস্ত রোগীকে নিয়ে পল ব্রিকেটের গবেষণা।[৬]
আধুনিক ধারণা
[সম্পাদনা]তবে, বিংশ শতকের মধ্যে, হিস্টিরিয়ার নামকরণটি জরায়ু বা শারীরিক ক্লেশের পরিবর্তে মানসিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছিল।[৭]
আধুনিক ব্যবহারে, হিস্টিরিয়া শব্দটি গণ আতঙ্ক (গণ হিস্টিরিয়া) কে বোঝায়। হিস্টিরিয়ার ঘটনা প্রায়শই সালেম ডাইনি বিচারের মতো ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল।
কোনও ব্যক্তির জন্য হিস্টেরিয়াগ্রস্ত শব্দটি প্রযোজ্য হলে বুঝতে হবে যে, সে সংবেদনশীল বা অযৌক্তিকভাবে বিপর্যস্ত। এছাড়াও আতঙ্ক জড়িত নয় এমন এটি পরিস্থিতিতেও এটি প্রয়োগ করা হয়। সেক্ষেত্রে এর অর্থ এই যে পরিস্থিতিটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে মজাদার (অর্থাৎ পাগলের মত হাসি আসে)।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Beattie, Michael; Lenihan, Penny (২০১৮)। Counselling Skills for Working with Gender Diversity and Identity। London: Jessica Kingsley Publishers। পৃষ্ঠা 83। আইএসবিএন 9781785927416।
- ↑ Adams, Henry (১৯৮৪)। Comprehensive Handbook of Psychopathology। New York: Springer Science Business Media। পৃষ্ঠা 319। আইএসবিএন 9781461566830।
- ↑ O'Brien, Jodi (২০০৯)। Encyclopedia of Gender and Society। Thousand Oaks, CA: SAGE। পৃষ্ঠা 448। আইএসবিএন 9781412909167।
- ↑ ক খ Gilman, Sander L.; King, Helen; Porter, Roy; Rousseau, G.S.; Showalter, Elaine (১৯৯৩)। Hysteria Beyond Freud। Los Angeles: University of California Press।
- ↑ Maines, Rachel (১৯৯৯)। The technology of Orgasm: 'Hysteria', the Vibrator, and Women's Sexual Satisfaction। Baltimore: The Johns Hopkins University Press।
- ↑ Lamberty, Greg (২০০৮)। Understanding Somatization in the Practice of Clinical Neuropsychology। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 5। আইএসবিএন 9780195328271।
- ↑ Carta, Mauro Giovanni; Fadda, Bianca; Rappeti, Mariangela; Tasca, Cecilia (অক্টোবর ১৯, ২০১২)। "Women and Hysteria In Mental Health"। Clin Pract Epidemiol Ment Health। 8: 110–19। ডিওআই:10.2174/1745017901208010110। পিএমআইডি 23115576। পিএমসি 3480686 ।
- Gilman, Sander L., Helen King, Roy Porter, G.S. Rousseau and Elaine Showalter. Hysteria Beyond Freud. Los Angeles University of California Press, 1993. [আইএসবিএন অনুপস্থিত]
- Devereux, Cecily. "Hysteria, Feminism, and Gender Revisited: The Case of the Second Wave". University of Alberta [১]
- Carta, Mauro Giovanni, Bianca Fadda, Mariangela Rappeti and Cecilia Tasca. "Women and Hysteria In Mental Health". Clin Pract Epidemiol Ment Health. 2012; 8: 110–19. [২]
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- Paul Briquet (1859). Traité clinique et thérapeutique de l’Hystérie from Gallica at BnF
- Chodoff, P. et al. (1982) Hysteria, John Wiley & Sons.[আইএসবিএন অনুপস্থিত]
- Halligan, P.W., Bass, C., & Marshall, J.C. (Eds.) (2001) Contemporary Approach to the Study of Hysteria: Clinical and Theoretical Perspectives, Oxford University Press
- Hennefeld, Maggie (ডিসেম্বর ২০১৬)। "Death from Laughter, Female Hysteria, and Early Cinema"। differences: A Journal of Feminist Cultural Studies। Duke University Press। 27 (3): 45–92। ডিওআই:10.1215/10407391-3696631।
- Sander Gilman, Roy Porter, George Rousseau, Elaine Showalter, and Helen King (1993). Hysteria Beyond Freud, University of California Press[আইএসবিএন অনুপস্থিত]
- Andrew Scull (2009) Hysteria. The Biography, Oxford University Press [আইএসবিএন অনুপস্থিত]
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]শ্রেণীবিন্যাস |
---|
- Is Hysteria Real? Brain Images Say Yes at the New York Times.
- The H-Word, Guardian Unlimited, 2002-09-02
- Hysteria, BBC Radio 4 discussion with Juliet Mitchell, Rachel Bowlby & Brett Kahr (In Our Time, Apr. 22, 2004)