সাংস্কৃতিক মুসলিম
সাংস্কৃতিক মুসলিম ধর্মীয়ভাবে নিষ্ক্রিয় বা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি। যারা শুধু পারিবারিক পটভূমি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের কারণে মুসলিম সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়। সাংস্কৃতিক মুসলিম গোটা বিশ্ব জুড়েই পাওয়া যায়; তবে মধ্যপ্রাচ্যের আরবি ভাষাভাষী দেশগুলির পাশাপাশি ইসরায়েল, ইরান, ইউরোপ, মধ্য এশিয়া, উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের সংখ্যা অনেক বেশি।
সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]মধ্য এশিয়া এবং পূর্ব কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলিতে, তারা "সাংস্কৃতিক মুসলিম" শব্দটি তাদের মুসলিম পরিচয়কে কেবল জাতীয় ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিবর্তে নির্দিষ্ট জাতীয় ও জাতিগত পরিচয় দেওয়ার জন্য ব্যবহার করে। [১]
মালিস রুথভান (২০০০) পদ অনুসারে "সাংস্কৃতিক মুসলিম" এবং "নামমাত্র মুসলিম" পদ নিয়ে আলোচনা করেছেন:[২]
মুসলমান শব্দের দ্বিতীয় অর্থ যা প্রথম অর্থের সাথে মিলে যেতে পারে। একজন মুসলমান শিশু তার বাবা-মায়ের স্বীকারোক্তিমূলক পরিচয় গ্রহণের সাথে সাথে বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত কার্য ও অনুশীলনের না করেই মুসলিম হয়ে যায়। তেমনি একজন ইহুদী তানখ বা হালচা পালন না করেও নিজেকে ইহুদি বলে পরিচয় দিতে পারেন। অমুসলিম সমাজগুলিতে, এই ধরনের মুসলমানরা ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় দিতে পারে। অটোমান শাসন এর অধীনে ইসলামে রূপান্তরিত হওয়া দাস ও তাদের বংশধর বসনিয়ান মুসলিমরা প্রার্থনা, মদ্যপান থেকে বিরত হওয়া, ব্যভিচার এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশের মুসলমানদের সাথে যুক্ত অন্যান্য সামাজিক অনুশীলনগুলি করত না। সার্বস ও ক্যাথলিক ক্রোয়েস থেকে তাদের আলাদা করতে পূর্ব যুগোশ্লাভ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের আমলে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলমান হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। লেবেল মুসলিম তাদের জাতিগততা এবং দলগত আনুগত্য প্রদর্শন করে, কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়। এই সীমিত প্রেক্ষাপটে (যা ইউরোপ এবং এশিয়াতে অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে) ইহুদি নাস্তিক ও ইহুদী অজ্ঞতাবাদীদের মতোই মুসলমানদের মধ্যেও নিসন্দেহে নাস্তিক্যবাদ বা অজ্ঞেয়বাদ আছে। মুসলমানদের এই ধর্মনিরপেক্ষ সংজ্ঞা (কখনও কখনও সাংস্কৃতিক মুসলিম বা নামমাত্র মুসলিম বলা হয়) অবিতর্কিত।
সাংস্কৃতিক মুসলিমরা তাদের আচার-আচরণ, চাল-চলন, চিন্তাধারা ও নৈতিকতার ভিত্তি হিসাবে ইসলামিক সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যকে আখ্যায়িত করে। আবার সাংস্কৃতিক মুসলমানদের মধ্যেও তাদের চিন্তাধারা অনুযায়ী অনেক প্রকারভেদ আছে। তাদের রাজনৈতিক মতামত এবং ধর্মীয় মতামতের ভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকেও একীভূত করে কোন একক গোষ্ঠী বলা যায় না।[৩]
সাংস্কৃতিক মুসলিম একটি ধারণা মাত্র যা এমন ব্যক্তিদের বোঝায় যারা মুসলিম হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেয় তবে ইসলামের ধর্মীয়কার্য নিয়মিত করে না। তারা অনেক সময় ইসলামের কিছু নিয়ম মেনে চলে না। রক্ষণশীল ইসলামী সম্প্রদায়ের অনেক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা তারা করে থাকে।[৪]
জনসংখ্যার উপাত্ত
[সম্পাদনা]আজারবাইজানের মুসলমানদের প্রায় ১%, আলবেনিয়াতে ৫%, উজবেকিস্তানে ৯%, কাজাখস্তানে ১০%, রাশিয়াতে ১৯% এবং কসোভোতে ২২% মুসলিম মসজিদে সপ্তাহে এক বা একাধিকবার সালাত আদায় করে।[৫]
পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় উঠে এসেছে যে আলবেনিয়াতে মুসলমানদের মধ্যে মাত্র ১৭% এবং কাজাখস্তানের মুসলমানদের মধ্যে ১৮% মুসলমান তাদের জীবনে ধর্মকে অতিগুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। [৬]
একই গবেষণায় দেখা গেছে যে কাজাখস্তানে মুসলমানদের মধ্যে মাত্র ২%, আলবেনিয়াতে ৪%, কোসোভোতে ১০%, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাতে ১৪%, কিরগিজস্তানে ১৪%, উজবেকিস্তানে ১৬% এবং আজারবাইজানে ২১% মুসলমান দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। [৭]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Cara Aitchison; Peter E. Hopkins (২০০৭)। Geographies of Muslim Identities: Diaspora, Gender and Belonging। Ashgate Publishing, Ltd.। পৃষ্ঠা 147। আইএসবিএন 978-1-4094-8747-0। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৩।
- ↑ Islam: A Very Short Introduction, by Malise Ruthven, Oxford University Press, 2000.
- ↑ Spyros A. Sofos; Roza Tsagarousianou (২০১৩)। Islam in Europe: Public Spaces and Civic Networks। Palgrave Macmillan। আইএসবিএন 978-1137357779।
- ↑ Corinne Blake (২০০৩)। Teaching Islam। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 175। আইএসবিএন 0-19-515224-7।
- ↑ The World’s Muslims: Unity and Diversity
- ↑ "The World's Muslims: Unity and Diversity" (পিডিএফ)। ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৯।
- ↑ Chapter 2: Religious Commitment