শুতীয়া রাজ্য
শুতীয়া রাজ্য (অসমীয়া: চুতীয়া ৰাজ্য)আনুমানিক ১১৮৭ সনে প্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মপুত্র নদীর উত্তর পারে সোবনশিরি ও দিসাং নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের একটি বিশাল সাম্রাজ্য। ১১৮৭ সনে বীরপাল শদিয়াকে শুতীয়া রাজ্যের রাজধানী করে। এরপর প্রায় দশটি সম্রাট এখানে রাজত্ব করেন। কামরূপ রাজ্য ধ্বংস হওয়ার পর শুতীয়া রাজ্য ও রাজভূঞা বিষয়া ও খেন রাজারা ক্ষমতায় আসেন। অসমের স্থানীয় জাতির মধ্যে শুতীয়া জাতিরা অন্যতম। তারা তিব্বত বার্মীশ গোষ্ঠির অন্তর্গত ছিলেন ও তিব্বত বার্মীশ ভাষা ব্যবহার করতেন।[১]
রাজ্য প্রতিষ্ঠা
[সম্পাদনা]আনুমানিক ১১৮৭ সনে শুতীয়া রাজ্যের প্রথম রাজা বীরপাল বা বীরবল শোবনশিরি নদীর তীরে স্থিত সোনাগিরি পাহাড়ে বসবাসকারী ৬০টি পরিবারের উপর আধিপত্য বিস্তার করে শাসন করা আরম্ভ করেন। তারপর তিনি প্রতিবেশী জনজাতীদের পরাস্ত করেন ও গয়পাল নাম গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি উত্তর-পূর্ব অসম ও অরুণাচল প্রদেশকে নিয়ে শুতীয়া রাজ্য স্থাপন করেন। তার রাজ্যের রাজধানী ছিল শদিয়ায়। আহোম সাম্রাজ্য স্থাপনের পূর্বে উজনী অসমে শুতীয়া রাজ্য সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য ছিল। একটি আহোম ইতিহাস মতে সেই সময়ে শুতীয়া রাজ্যের পূর্বে ছিল ব্রহ্মকুণ্ড ও পশ্চিমে ছিল সোবনশিরি উপত্যকা এবং উত্তরে পর্বতমালা ও দক্ষিণে বুঢ়ীদিহিং নদী। শুতীয়াদের মধ্যে ইতিহাস লেখার প্রথা না থাকার জন্য তাদের সবকয়টি রাজার নাম জানা যায় নাই। দেওধাই অসম বুরজ্ঞী নামক পুস্তক অনুযায়ী ১২ থেকে ১৬ শতকে সর্বমোট ১০টি রাজা শুতীয়া রাজ্যে রাজত্ব করেছেন। নোই ইলিয়াস সাহেবের হিস্ট্রী অফ দা শ্বানস-এর মতে আহোম রাজা চুকাফার সমসাময়িক সুতীয়া রাজা কোসীর পূর্বে তার চৌত্রিশজন বংশধর সুতীয়া রাজ্যে শাসন করেছেন। এই কথায় ভিত্তি করে বহুসংখ্যক পণ্ডিত খ্রিস্টিয় সপ্তম শতকে শুতীয়া রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল বলে অনুমান করেছেন।[১]
পরবর্তী রাজা
[সম্পাদনা]শুতীয়া রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী রাজা ছিলেন গৌরীনারায়ণ। তার অপর নাম রত্নধ্বজপাল। তিনি বীরপালের পুত্র ছিলেন। ১২২৪ সনে তিনি স্বেতাগিরির রাজা ভদ্রসেনকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন। তিনি ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পারে রত্নপুর বা রতনপুর নামক স্থানকে রাজধানী স্থাপন করেন। কমতাপুরের রাজার কন্যাকে বিবাহ করে তিনি বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। তিনি অন্যান্য শুতীয়া সমষ্টিকে নিজের রাজ্যে বিলীন হওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। ১৩৭৬ সনে দ্বন্দের ফলস্বরূপ শুতীয়া রাজার হাতে আহোম রাজা চুতাফার মৃত্যু হয়। ফলে আহোম রাজ্য ও শুতীয়া রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় ও এই দ্বন্দ্ব বহুবৎসর চলে। অবশেষে ১৫৯২ সনে আহোমেরা শুতীয়া রাজা নীতিপালকে হত্যা করে ও শুতীয়া রাজধানী শদিয়া দখল করে। আহোমেরা অঞ্চলটি শাসন করার জন্য শদিয়া খোয়া গোহাই নামক নতুন পদের সৃষ্টি করেন। কিন্তু শুতীয়ারা আহোমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লুণ্ঠন কার্য শুরু করেন। ১৬৭৩ সনে শুতীয়ারা আহোমের বশ্যতা শিকার করেন।[১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ Rajadhyaksha, P. L. Kessler and Abhijit। "Kingdoms of South Asia - Indian Kingdoms of Assam"। The History Files (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০৩।