শান্তি বাহিনী
শান্তি বাহিনী | |
---|---|
নেতা | এম.এন লারমা সন্তু লারমা |
অপারেশনের তারিখ | ১৯৭২-১৯৯৭ |
সক্রিয়তার অঞ্চল | পার্বত্য চট্টগ্রাম,বাংলাদেশ |
মতাদর্শ | পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী উপজাতিদের জন্য স্বায়ত্তশাসন |
এর অংশ | পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি |
মিত্র | ভারত মিয়ানমার |
বিপক্ষ | বাংলাদেশ |
খণ্ডযুদ্ধ ও যুদ্ধ | পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত |
শান্তি বাহিনী ছিল বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (ইউনাইটেড পিপলস পার্টি অফ দি পার্বত্য চট্টগ্রাম ) এর সশস্ত্র শাখা । এটি বাংলাদেশে একটি বিদ্রোহী দল হিসেবে বিবেচিত হয়।[১] শান্তিবাহিনী চাকমা সহ পার্বত্ব্য চট্টগ্রামের তেরোটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিয়ে গঠিত হয়েছিল, যাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধীন অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।[২]
ইতিহাস
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্ত উপজাতীয় জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৫ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS) প্রতিষ্ঠা করেন। লারমা ১৯৭৩ সালে পিসিজেএসএস-এর প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন।[৩] রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে উপজাতীয় জনগণের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য লারমার অব্যাহত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে, [৪] লারমা এবং PCJSS পার্বত্য অঞ্চলে পরিচালিত একটি সশস্ত্র বাহিনী শান্তি বাহিনী সংগঠিত করা শুরু করে। এটি ১৯৭২ সালে গঠিত হয়েছিল এবং বহু বছর ধরে সরকারের বিরুদ্ধে হামলা ও পার্বত্য অঞ্চলে অপহরণ ও চাঁদাবাজি করেছে করে আসছিল। [৫]
শান্তিবাহিনী ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টহল দলের উপর আক্রমণ শুরু করে।[৬] [৭] [৮] [৯] লারমা পরবর্তীতে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে আত্মগোপনে চলে যান। [৭] [৯] পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-এর মধ্যে উপদলবাদ লারমার অবস্থানকে দুর্বল করে দেয় এবং ১০ই নভেম্বর ১৯৮৩ সালে তাকে হত্যা করা হয় [৭] [৯] ২৩শে জুন ১৯৮১ শান্তি বাহিনী তৎকালীন বিডিআরের একটি ক্যাম্প আক্রমণ করে ১৩ জনকে হত্যা করে ও ২৪ সদস্যকে বন্দী করে হত্যা করে। [১০]
গণহত্যা
১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ সরকার হাজার হাজার ভূমিহীন বাঙালির জন্য জমি প্রদান শুরু করে। অনেক বাঙালি বিদ্রোহের কারণে নিরাপদ অঞ্চলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল, তাদের জমি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের কাছে ছেড়ে দিয়েছিল। [১১] ১৯৮৪ সালের ৩১ মে ভূষণছড়ায় শান্তিবাহিনীর সদস্যরা ৪০০ জনকে হত্যা করে। [১২] [১৩] ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল শান্তিবাহিনী ১৯ বাঙালিকে হত্যা করে। [১৪] [১৫] ২৬শে জুন ১৯৮৯ শান্তি বাহিনী সেই গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেয় যেখানে বাসিন্দারা বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট দিয়েছিল। [১৬] ১৯৯৬ সালে শান্তিবাহিনী ৩০জন বাঙালিকে অপহরণ করে হত্যা করে। [১৭] ৯ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালে শান্তি বাহিনী একদল বাঙ্গালি কাঠুরে হত্যা করে, যারা ধারণা করছিল যে তাদের একটি মিটিংয়ে ডাকা হবে। [১৮] শান্তিবাহিনীর সদস্যরা টোল আদায়ের নামে স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে প্রায় চার মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়। [১৯]
শান্তি চুক্তি
২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জঙ্গিবাদ পরিত্যাগ করা। [২০] খাগড়াছড়ির একটি স্টেডিয়ামে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র সমর্পণ করে। চুক্তিতে রাতের কারফিউ প্রত্যাহার এবং ৫০ হাজার শরণার্থীর প্রত্যাবর্তন হয়। [২১] তবে শান্তি চুক্তির বিরোধিতাকারী কিছু সদস্য একটি ভিন্নমতাবলম্বী দল গঠন করে। [২২] শান্তি চুক্তির বিরোধিতাকারীদের মধ্যে কয়েকজন পিসিজেএসএস-এর বিকল্প হিসেবে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গঠন করে। [২৩] চুক্তিটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল [২৪] দ্বারাও সমালোচিত হয়েছিল এবং পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। [২৫] শান্তিবাহিনীর কিছু সদস্য শান্তি চুক্তির পর পুলিশ অফিসার হন। আগস্ট ২০১৪সালে ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী মিজোরামে শান্তিবাহিনীর সদস্য, দুই বাংলাদেশি চাকমা এবং তিনজন ভারতীয় চাকমাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। [২৬]
শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং ১৯৭৫সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অপসারণের পর, [২৭] ভারত শান্তিবাহিনীর সদস্যদের সমর্থন ও আশ্রয় প্রদান করে। [২৮] [২৯] [৩০] শান্তিবাহিনীর সদস্যরা ভারতের চাকরাতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। [৩১]
তথ্যসূত্র
- ↑ "Where is Kalpana?"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৬-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ Ahmed, Ishtiaq (১৯৯৮-০১-০১)। State, Nation and Ethnicity in Contemporary South Asia (ইংরেজি ভাষায়)। A&C Black। পৃষ্ঠা 235। আইএসবিএন 9781855675780।
- ↑ Kader, Rozina (২০১২)। "Larma, Manabendra Narayan"। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh।
- ↑ "An engrossing perspective on the Chittagong Hill Tracts"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ Hazarika, Sanjoy (১১ জুন ১৯৮৯)। "Bangladeshi Insurgents Say India Is Supporting Them"। The New York Times। অক্টোবর ২৬, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "18 Days That Shook Bangladesh"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৬-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ ক খ গ Nagendra K. Singh (২০০৩)। Encyclopaedia of Bangladesh। Anmol Publications Pvt. Ltd.। পৃষ্ঠা 229। আইএসবিএন 81-261-1390-1।
- ↑ Bushra Hasina Chowdhury (২০০২)। Building Lasting Peace: Issues of the Implementation of the Chittagong Hill Tracts Accord। University of Illinois at Urbana Champaign Pr। ২০০৬-০৯-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ Kader, Rozina (২০১২)। "Shanti Bahini"। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh।
- ↑ The Election Archives (ইংরেজি ভাষায়)। Shiv Lal। ১৯৮২-০১-০১। পৃষ্ঠা 218।
- ↑ "Chittagong Hill Tracts land issue"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৯-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ "Bhusanchara Genocide: 400 Bengalis killed within hour"। parbattanews : English Version (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১০-০৭। ২০২৩-০৪-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-২০।
- ↑ "Bhushanchhara genocide in Rangamati: No trial in 37yrs - City News - observerbd.com"। The Daily Observer। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-২০।
- ↑ "Samo Adhiker demands punishment of culprits"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-০৪-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ Uddin, G. M. Masbah (১৯৯২-০১-০১)। The Chittagong Hill Tracts: falconry in the hills (ইংরেজি ভাষায়)। s.n.। পৃষ্ঠা 82।
- ↑ Tahir, Naveed Ahmad (১৯৯৭-০১-০১)। The Politics of Ethnicity and Nationalism in Europe and South Asia (ইংরেজি ভাষায়)। Area Study Centre for Europe, University of Karachi। পৃষ্ঠা 145।
- ↑ "Militant attacks in Bangladesh claim 393 lives in last 11 years"। Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ "Army pullout from CHT opposed by settlers"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৭-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ Haque, Azizul (ফেব্রুয়ারি ১৯৮১)। "Bangladesh in 1980: Strains and Stresses -- Opposition in the Doldrums": 190। জেস্টোর 2643764। ডিওআই:10.2307/2643764।
- ↑ "CHT accord and ten wasted years"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৭-১২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ "Peace Accord must not remain on paper only"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-১২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ "One rescued as BD commandoes search for kidnapped workers"। Daily Times। ৩০ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Brother against brother"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-০১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ Panday, Pranab Kumar; Jamil, Ishtiaq (২০১৫)। "Conflict in the Chittagong Hill Tracts of Bangladesh: An Unimplemented Accord and Continued Violence"। Ethnic Subnationalist Insurgencies in South Asia: Identities, Interests and Challenges to State Authority (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 157। আইএসবিএন 978-1-138-83992-2।
- ↑ "A saga of un-kept promises"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ "Two Bangladeshi Chakmas among five arrested with huge arms in India"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ Prakash, Ved (২০০৮-০১-০১)। Terrorism in India's North-east: A Gathering Storm (ইংরেজি ভাষায়)। Gyan Publishing House। পৃষ্ঠা 553। আইএসবিএন 9788178356617।
- ↑ Times, Sanjoy Hazarika, Special To The New York (১৯৮৯-০৬-১১)। "Bangladeshi Insurgents Say India Is Supporting Them"। The New York Times। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ "Bangladesh is in 'Great Game'"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০২-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ "The India-Bangladesh Relationships - Lookback and Reality Check"। TIMES OF ASSAM (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৫-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬।
- ↑ Gunaratna, Rohan; Iqbal, Khuram (২০১২-০১-০১)। Pakistan: Terrorism Ground Zero (ইংরেজি ভাষায়)। Reaktion Books। পৃষ্ঠা 219। আইএসবিএন 9781780230092।