বিষয়বস্তুতে চলুন

লে কাত্র্ সঁ কু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লে কাত্র্ সঁ কু
মূল ছবির পোস্টার
পরিচালকফ্রঁসোয়া ত্রুফো
প্রযোজকফ্রঁসোয়া ত্রুফো
রচয়িতাফ্রঁসোয়া ত্রুফো
মার্সেল মুসি
শ্রেষ্ঠাংশেজঁ-পিয়ের লেও
ক্লের মোরিয়ে
আলবের রেমি
গি দ্যকোঁব্‌ল
সুরকারজঁ কোঁস্তঁতাঁ
চিত্রগ্রাহকঅঁরি দেকায়ে
পরিবেশকককিনর
মুক্তিফ্রান্স ৪ঠা মে, ১৯৫৯
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৬ই নভেম্বর, ১৯৫৯
স্থিতিকাল৯৯ মিনিট
ভাষাফরাসি

লে কাত্র্ সঁ কু (ফরাসি: Les Quatre Cents Coups; ইংরেজি শিরোনাম: The 400 Blows) ১৯৫৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ফরাসি চলচ্চিত্র। ফ্রঁসোয়া ত্রুফো পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি নুভেল ভাগ তথা ফরাসি চলচ্চিত্রের নবকল্লোল আন্দোলনের সংজ্ঞা নির্ধারণকারী হিসেবে পরিচিত। এই আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যময় অনেক কিছুই এতে পাওয়া যায়। অঁতোয়ান দোয়ানেল নামের প্যারিসের এক কিশোরকে কেন্দ্র করে এর কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। অঁতোয়ানের শিক্ষক ও অভিভাবক তাকে ঝামেলা সৃষ্টিকারক বলে মনে করে। ফ্রঁসোয়া ত্রুফোর নিজের জীবনের অনুকরণে এটি নির্মিত হয়েছে যদিও জীবনীর সাথে কিছু কাল্পনিক উপাদানও ছিল। উল্লেখ্য, এটি ত্রুফোর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

ত্রুফো ও তার এক বন্ধুর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। ফরাসি চলচ্চিত্রের ইতিহাস সম্বন্ধে ত্রুফোর ব্যক্তিগত অনুভূতিও এতে প্রকাশিত হয়েছে। ছবিটির একটি দৃশ্য জঁ ভিগো-র জেরো দ্য কোঁদুইত (Zéro de conduite) ছবি থেকে হুবহু অনুকরণ করা হয়েছে। ত্রুফো ছবিটি অঁদ্রে বাজাঁ-কে উৎসর্গ করেছেন। বাজাঁ ছিলেন ত্রুফোর আদর্শিক পিতা। ছবির দৃশ্যায়ন শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

চরিত্র নিয়ে নিবিড় অধ্যয়নের পাশাপাশি এতে ফ্রান্সে কিশোরদের প্রতি অবিচারের চিত্রটিও ফুটে উঠেছে। এর অনেকটা জুড়ে আছে কিশোর অপরাধীদের বিচার।

লে কাত্র্ সঁ কু অসংখ্য পুরস্কার ও মনোনয়ন অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার, OCIC পুরস্কার এবং ১৯৫৯ সালে পাল্ম দ’র মনোনয়ন। এটি ১৯৬০ সালে সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়নও লাভ করে। ফ্রান্সে এই চলচ্চিত্রটি ৪.১ মিলিয়ন দর্শক আকর্ষণ করে, যা ট্রুফোর মাতৃভূমিতে তার সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্রে পরিণত হয়। লে কাত্র্ সঁ কু বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়; ২০২২ সালে Sight & Sound সমালোচকদের জরিপে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে এটি ৫০তম স্থানে ছিল এবং পরিচালকদের জরিপে এটি ৩৩তম স্থানে ছিল।

কাহিনী সংক্ষেপ

[সম্পাদনা]

আতোয়ান দোয়ানেল প্যারিসে বেড়ে ওঠা কিশোর। বাবা-মায়ের সাথে ভুল বোঝাবুঝি এবং স্কুলে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে প্রায়ই তাকে তিরস্কার করা হয়—যেমন ক্লাস ফাঁকি দেওয়া, ক্লাসরুমের দেয়ালে লিখে রাখা, এবং অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে মায়ের মৃত্যুর মিথ্যা কথা বলা। এই সবের কারণে সে প্রায়ই স্কুল এবং বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সাহিত্যিক বালজাকের প্রতি তার ভালোবাসা থেকে নিজের লেখাকে ,তার শিক্ষক বালজাকের লেখা চুরির মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন, যার পর সে স্কুল ছেড়ে দেয়। এক স্কুলের রচনা লেখায় সে ভালোবাসা দিয়ে বালজাকের একটি বাক্যাংশ স্মৃতি থেকে তুলে ধরে এবং সেটির শিরোনাম দেয় আমার দাদার মৃত্যু

পুলিশ ষ্টেশনে চুরির দায়ে আটক আতোয়ান

বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনায়, অ্যান্টোইন তার সৎ বাবার কর্মস্থল থেকে একটি রয়্যাল টাইপরাইটার চুরি করে। তবে সেটি বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে, যখন সে টাইপরাইটারটি ফেরত দিতে যায়, তখন ধরা পড়ে।

তার সৎ বাবা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়, যার ফলে অ্যান্টোইন একটি সেলে পতিতা এবং চোরদের সাথে একটি রাত কাটায়। বিচারকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়, আতোয়ানের মা স্বীকার করেন যে তার স্বামী আতোয়ানের জৈবিক পিতা নন। মায়ের ইচ্ছানুযায়ী, অ্যান্টোইনকে সমুদ্রতীরবর্তী এক কেন্দ্রের সমস্যাগ্রস্ত যুবকদের জন্য পর্যবেক্ষণে পাঠানো হয়। সেখানে, একটি মনোবিজ্ঞানী আতোয়ানের অসুখের কারণ অনুসন্ধান করেন, যা সে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করার মাধ্যমে প্রকাশ করে।

ফুটবল খেলার সময়, অ্যান্টোইন অন্য ছেলেদের কাছ থেকে সরে গিয়ে একটি বেড়ার নিচে দিয়ে পালিয়ে যায় এবং সমুদ্রের দিকে রওনা হয়, যেটি দেখার স্বপ্ন সে সবসময় দেখত। অবশেষে, সে সমুদ্রতীরে পৌঁছে জলের দিকে দৌড়ায়।

চরিত্রসমূহ

[সম্পাদনা]
  • জঁ-পিয়ের লেও: আতোয়ান দোয়ানেল
  • ক্লের মোরিয়ে: জিল্‌বের্ত দোয়ানেল, মা
  • আলবের রেমি: জুলিয়াঁ দোয়ানেল, বাবা
  • গি দ্যকোঁব্‌ল: স্কুল শিক্ষক
  • পাত্রিক ওফে: রনে বিজে
  • জর্জ ফ্লামঁ: জনাব বিজে
  • পিয়ের রেপ: ইংরেজির শিক্ষক

পুরস্কার

[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রটি বিপুল প্রশংসিত হয়েছিল এবং অনেকগুলো পুরস্কার অর্জন করেছিল। এর মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

  • কান চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৫৯ - সেরা পরিচালক (ফ্রঁসোয়া ত্রুফো)
  • ক্রিটিক্‌স অ্যাওয়ার্ড, ১৯৫৯ - নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিক্‌স সার্ক্‌ল
  • বোডিল অ্যাওয়ার্ড, ১৯৬০ - সেরা ইউরোপীয় চলচ্চিত্র
  • ৩২তম একাডেমি পুরস্কার মনোনয়ন - সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য

সিকুয়েল ছবি

[সম্পাদনা]

ত্রুফো অঁতোয়ান দোয়ানেলের জীবন নিয়ে আরও চারটি ছবি নির্মাণ করেছেন যার সবগুলোতেই অঁতোয়ান চরিত্রে অভিনয় করেছেন লেও। এগুলো অঁতোয়ানের পরবর্তী জীবনের বিভিন্ন ধাপ নিয়ে করা। যেমন, অঁতোয়ান এ কোলেত ছবিতে অঁতোয়ান কোলেত নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে, যা ছিল তার প্রথম প্রেম। ১৯৬২ সালের "লাভ অ্যাট টুয়েন্টি" নামক চলচ্চিত্র সংগ্রহে ত্রুফোর এই ছবিটি স্থান পেয়েছিল। বেজে ভোলে ছবিতে অঁতোয়ান ক্রিস্তিন দার্‌বোঁ-র প্রেমে পড়ে। দোমিসিল কোঁজুগাল ছবিতে অঁতোয়ান ক্রিস্তিন-কে বিয়ে করে। কিন্তু লামুর অঁ ফুইত ছবিতে আবার তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]