রোমান চ্যারিটি
রোমান চ্যারিটি (লাতিন: ''Caritas romana''; [Carità Romana] ত্রুটি: {{Lang-xx}}: text has italic markup (সাহায্য)) পেরো নামের এক মহিলার দৃষ্টান্তবাদী কাহিনি, যিনি কারাগারে অনাহারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত তার বন্দি বাবা সিমনকে গোপনে নিজের স্তন্যপান করিয়েছিলেন।[১] প্রাচীন রোমানদের স্মরণীয় আইন ও বক্তব্যগুলিতে প্রাচীন রোমান ঐতিহাসিক ভ্যালেরিয়াস ম্যাক্সিমাস পেরোর এই নিঃস্বার্থ নিষ্ঠাকে নিজের পিতামাতার সম্মানের সর্বোচ্চ উদাহরণ হিসাবে উপস্থাপন করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে, শিল্পীরা জনপ্রিয় এই বিষয়ের বিভিন্ন নাটকীয় সংস্করণ এঁকেছেন, যা জিন-ব্যাপটিস্ট গ্রুজ এবং অন্যান্য শিল্পীরা এক শতাব্দী পরে পুনরুদ্ধার করেছিলেন।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]রোমান কারাগারে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সিমন নামের একজন বৃদ্ধকে আমৃত্যু অনাহারে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, এবং যিনি তার মেয়ে পেরোর স্তন্য পান করে দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন। পেরো প্রতিদিন তার বাবাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং গোপনে তাকে স্তন পান করাতো। এক পর্যায়ে কারাগার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পারে, তবে তারা পেরোকে বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে তার বাবাকে মুক্তি দিয়েছিল।[৩]
প্রাচীন রোমান ঐতিহাসিক ভ্যালেরিয়াস ম্যাক্সিমাস কর্তৃক, ফ্যাক্টোরিম এসি ডিকোরাম মেমোরাবিলিয়াম (স্মরণীয় আইন এবং প্রাচীন রোমানদের বক্তব্যগুলির নয়টি গ্রন্থ)[৪] নথিভুক্ত করা হয়েছিল, এবং এটি পিয়েতাস (অর্থাৎ ফিলিওলিয় ধার্মিকতা) এবং রোমানদের দুর্দান্ত কর্ম এবং সম্মান হিসাবে উপস্থাপিত হয়েছিল। পিয়েতাস মন্দিরের একটি চিত্রকেন্দ্রে এই দৃশ্য চিত্রিত হয়েছে।[৫] রোমানদের, এট্রুরিয় নিবাসীদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হারকিউলিসকে ইউনোর স্তন্যপান করানোর মধ্যে এই থিমটির পৌরাণিক প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়।[৬]
সিমনের কাহিনিটির পূর্বাভাস পাওয়া যায়, রোমান ঐতিহাসিক ভ্যালেরিয়াস ম্যাক্সিমাস কর্তৃক নথিভুক্ত প্রায় সকল কাহিনিতেই, পরবর্তীতে প্লিনি দ্য এল্ডার (২৩–৭৯ খ্রিষ্টাব্দ) দ্বারা পুনরায় বলা হয়, এক কারাবন্দি মহিলাকে তার কন্যা লালন-পালন করেছিলেন।[৭] ঐতিহাসিকরা লক্ষ করেছেন যে, রেনেসাঁ এবং বারোক চিত্রগুলিতে বিষয়টির অজাচারমূলক আচরণ রয়েছে।[৭]
সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকে বহু ইউরোপিয় শিল্পী এই কাহিনির চিত্রায়ন করেছিলেন।[৮] পিটার পল রুবেন্স এর বেশকয়েকটি সংস্করণ আঁকার জন্য পরিচিত। বারোক শিল্পী কারাভাজ্জো তার ১৬০৬ সালের দ্য সেভেন ওয়ার্কস অব মার্সি চিত্রকর্মে এই কাহিনির উপস্থাপন করেছিলেন। নব্যধ্রুপদী চিত্রকর্মগুলিও এই থিমে ব্যাপকভাবে বশীভূত হয়েছে।[৯] যদিও সেখানে মূল কিংবদন্তি পেরোর সন্তানের উল্লেখ নেই। এই উপাদানটি ১৭শ শতাব্দীতে এই ব্যাখ্যাটি রোধ করার জন্য প্রবর্তিত হয়েছিল যে এই কাজটি সম্পর্কে বেআইনি কিছু ছিল। একই সাথে, শিশুটির অন্তর্ভুক্তি কাহিনির একটি নতুন মাত্রা যোগ করে কারণ তিনটি চিত্র তিনটি প্রজন্মকে উপস্থাপন করে এবং তাই এটি মানব যুগের রূপক হিসাবেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।[১০] ১৭৪১ সাল থেকে জেন্টের বেলফ্রি মন্দিরে রোমান চ্যারিটির একটি ছোট সংযুক্তি ভাস্কর্যাকারে সামনের দরজার উপরে স্থাপন করা হয়। এটিকে ওলন্দাজ ভাষায় ম্যামেলোকার হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যার অর্থ 'স্তন চোষক' হিসাবে অনুবাদ করা হয়।[১১]
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
[সম্পাদনা]বিশ শতকে, রোমান চ্যারিটির একটি কাল্পনিক বিবরণ জন স্টাইনবেকের দ্য গ্রেপস অব র্যাথ (১৯৯৯) উপন্যাসে উপস্থাপিত হয়েছে।[১২] উপন্যাসের শেষে, রোশার্ন (রোজ অব শ্যারন) একটি শস্যাগারের কোণে একজন অসুস্থ এবং অনাহারী মানুষের সেবা করে। মাই ড্যান্টসিগের ১৯৬৯ সালে চিত্রিত পার্টিসান ব্যালাড চিত্রকর্মে রোমান চ্যারিটির প্রতিধ্বনি রয়েছে।[১৩]
১৯৭৩ সালের ও লাকি ম্যান! পরাবাস্তববাদী চলচ্চিত্রে রোমান চ্যারিটির একটি দৃশ্য রয়েছে যেখানে প্রধান চরিত্র অনাহারে থাকে এবং এক ভিসারের স্ত্রী তাকে উৎসর্গের জন্য জড়ো করা খাবার লুণ্ঠন না করে তাক শুশ্রুষা করে।[১৪]
শিল্পীদের চিত্র
[সম্পাদনা]-
অজানা শিল্পী
(আনু. ১৫০০–১৫২০) -
সেবল্ড বেহাম
(১৫৪৪) -
পিটার পল রুবেন্স
(আনু. ১৬১২) -
জান জনস্যান্স
(১৬২০–২৫) -
ডির্ক ভ্যান বাবুরেন
(আনু. ১৬২৩) -
গ্যাস্পার ডি ক্রায়ার
(আনু. ১৬২৫) -
চার্লস মেলিন
(আনু. ১৬২৮) -
পিটার ভ্যান মল
(আনু. ১৬৪০) -
ক্রিস্টোফ মাউচার
(অ্যাম্বার, ১৬৯০) -
বার্নার্ডিনো মেই
১৭ শতক -
জিন-ব্যাপটিস্ট গ্রুজ
(আনু. ১৭৬৭) -
জোহান যোফ্ফানি
(আনু. ১৭৬৯) -
বারবারা ক্র্যাফ্ট
(১৭৯৭) -
র্যামব্র্যান্ড পিল
(১৮১১) -
উইলিয়াম-অ্যাডল্ফ বোউগ্রিও
(১৮২৫–১৯০৫) -
ম্যাক্স সাউকো (২০১১)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Iconographical sources of nursing and nursing gestures in Christian cultures"। darkfiber। ২৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "Cimon and Pero: "Roman Charity""। গেটি ইমেজেস। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ কেসেল, মার্ক ডি (৭ নভেম্বর ২০১৩)। "Roman Love / Caritas Romana" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য থিওলজিক্যাল এনথ্রোপোলজি ব্লগ। ১ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ Book V, 5.4.7
- ↑ বিগন ২০০৫, পৃ. ৩১৪।
- ↑ গ্রুমন্ড ২০০৬, পৃ. ৮৩–৮৪।
- ↑ ক খ ইয়ালম, মেরিলিন (এপ্রিল ১০, ২০১৩)। "Roman Charity"। New York Times Book Review। মার্চ ১৮, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৮, ২০১৮।
- ↑ J. Paul Getty Museum. Cimon and Pero: "Roman Charity." Jean-Baptiste Greuze. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ জুলাই ২০১৪ তারিখে, last visited 23 September 2008
- ↑ Shearer West, "Guide To Art." Bloomsbury, 1996 Bloomsbury.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ মার্চ ২০১২ তারিখে, accessed 29 March 2006
- ↑ Jerôme Duquesnoy (attributed to Artus Quellinus the Elder), Caritas Romana ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ আগস্ট ২০১৯ তারিখে at the Royal Museum of Fine Arts of Antwerp
- ↑ "The Belfort of Gent" (পিডিএফ)। ১৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ Steinbeck, John. The Grapes Of Wrath. New York: Viking Press, 1939.
- ↑ "Partisan ballade 1969"। আর্ট রাস। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসে ২০১৫।
- ↑ "সংক্ষিপ্তসার"। আইএমডিবি। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৯।
উৎস
[সম্পাদনা]- বিগন, মেরি (২০০৫)। The Elder Pliny on the Human Animal: Natural History Book 7 (ইংরেজি ভাষায়)। ৭। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 9780198150657। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- গ্রুমন্ড, ন্যান্সি থমসন ডি (২০০৬)। Etruscan Myth, Sacred History, and Legend (ইংরেজি ভাষায়)। ইউনিভার্সিট অব পেনসিলভেনিয়া প্রেস। আইএসবিএন 9781931707862।