মার্ক ওলিফান্ট
স্যার মার্কাস লরেন্স এলউইন ওলিফান্ট (৮ অক্টোবর ১৯০১ - ১৪ জুলাই ২০০০) ছিলেন একজন অস্ট্রেলিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী এবং মানবপ্রেমী। যিনি পারমাণবিক সংশ্লেষের প্রথম পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
স্যার মার্ক ওলিফান্ট | |
---|---|
জন্ম | Kent Town, অ্যাডিলেইড, অস্ট্রেলিয়া | ৮ অক্টোবর ১৯০১
মৃত্যু | ১৪ জুলাই ২০০০ ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়া | (বয়স ৯৮)
জাতীয়তা | অস্ট্রেলীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | |
পরিচিতির কারণ |
|
পুরস্কার |
|
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | |
অভিসন্দর্ভের শিরোনাম | The Neutralization of Positive Ions at Metal Surfaces, and the Emission of Secondary Electrons (১৯২৯) |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | আর্নেস্ট রাদারফোর্ড |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | এর্নেস্ট উইলিয়াম টিত্টার্টন |
২৭তম দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় গভর্নর | |
কাজের মেয়াদ ১ ডিসেম্বর ১৯৭১ – ৩০ নভেম্বর ১৯৭৬ | |
সার্বভৌম শাসক | দ্বিতীয় এলিজাবেথ |
প্রিমিয়ার | ডন ডানস্ট্যান |
পূর্বসূরী | জেমস হ্যারিসন |
উত্তরসূরী | ডগলাস নিকোলস |
ওলিফান্ট জন্মগ্রহণ এবং বেড়ে উঠেন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইড শহরে। তিনি ১৯২২ সালে অ্যাডিলেইড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ১৯২৭ সালেে তিনি ইংল্যান্ডে যান এবং স্যার আর্নেস্ট রাদারফোর্ড এর অধীনে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে অধ্যায়ন করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু হিলিয়াম-৩ এবং ট্রিটিয়াম এবং উভয়ের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া আবিষ্কার করেন।
ওলিফান্ট ১৯৩৭ সালে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসর হওয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরি ত্যাগ করেন। তিনি একটি ৬০ইঞ্চি(১৫০সে.মি) সাইক্ল্যাট্রন তৈরির চেষ্টা করেন কিন্তু ১৯৩৯ এর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার এই উদ্যোগ পিছিয়ে যায়। তিনি বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন র্যান্ডল এবং হ্যারি বুট এর সাথে রাডার উন্নয়নের কাজে যুক্ত হন। তারা র্যাডিকেলের একটি নতুন নকশা এবং ক্যাভিটি ম্যাগ্নেট্রন আবিষ্কার করেন। ওলিফান্ট এম.এ.ইউ.ডি কমিটিতেও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই কমিটি ১৯৪১ সালে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেন যে, পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব এবং ১৯৪৩ সালের প্রথমদিকেই এটি উৎপাদিত হবে। ওলিফান্ট এই খবর ছড়িয়ে দিতে অবদান রাখেন যার ফলে ম্যানহাটন প্রকল্প এর কাজ শুরু হয়। যুদ্ধ চলাকালে, তিনি তার বন্ধু আর্নেস্ট লরেন্সের সাথে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে র্যাডিয়েশন ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন। তারা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক আইসোটোপ সেপারেশন এর উন্নয়ন করেন যেটি লিটল বয় নামক পারমাণবিক বোমার বিভাগীয় উপাদান প্রদান করে।
যুদ্ধের পরে, ওলিফান্ট অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (Anu) এর রিসার্চ স্কুল অব ফিজিকাল সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রথম পরিচালক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন। সেখানে তিনি বিশ্বের বৃহত্তম (৫০০ মেগাওয়াট) হোমপোলার জেনারেটরের নকশা ও নির্মাণ শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০০ সালে তিনি ক্যানবেরাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রথম জীবন
[সম্পাদনা]মার্কাস "মার্ক" লরেন্স এলভিন ওলিফান্ট অ্যাডিলেইডের উপকণ্ঠে কেনট টাউনে ৮ই অক্টোবর ১৯০১ সালে জন্মেছিলেন। তার পিতা ছিলেন হ্যারল্ড জর্জ ব্যারন ওলিফান্ট। তাঁর মা বিট্রিস এডিথ ফ্যানি ওলিফান্ট ছিলেন একজন শিল্পী। অস্ট্রেলীয় লেখক মার্কাস ক্লার্ক এবং ব্রিটিশ পর্যটক লরেন্স ওলিফান্টের নামে মার্ক ওলিফান্টের নামকরণ করা হয়। ওলিফান্টের চারটি ছোট ভাই ছিলো- রোল্যান্ড, কিথ, নিগেল এবং ডোনাল্ড। তার বাবা-মা ব্রহ্মজ্ঞানী ছিলেন এবং মাংস খাওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। ছোটবেলায় একটি খামারে শুকর হত্যার সাক্ষী হওয়ার পর থেকে মার্কাস নিরামিষাশী হয়ে উঠে। ছোটবেলা থেকে তিনি এক কানে বধির ছিলেন এবং চশমা ব্যবহার করতেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধ্যয়ন শেষে ওলিফান্ট ইউনিলি উচ্চ বিদ্যালয় এবং অ্যাডিলেইড উচ্চ বিদ্যালয় এ পড়েন। স্নাতকের পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে একটি বৃত্তি অর্জন করতে ব্যর্থ হন। তাই তিনি একটি জুয়েলারি কারখানায় মেঝ পরিষ্কারের কাজ নেন। এরপর তিনি সাউথ অস্ট্রেলিয়ার স্টেট লাইব্রেরির মাধ্যমে ক্যাডেটশিপ লাভ করেন, যা তাকে রাতের বেলায় অ্যাডিলেইড বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স নিতে অনুমতি দেয়। ১৯১৯ সালে ওলিফান্ট অ্যাডিলেইড বিশ্ববিদ্যালয় এ অধ্যয়ন শুরু করেন। প্রথমে তিনি ঔষুধের উপর ক্যারিয়ার গঠনে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কেয়ার গ্রান্ট তাঁকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ক্যাডেটশিপ দেন। তিনি ১৯২১ সালে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরের বছরেই প্রফেসর গ্রান্টের তত্ত্বাবধানে সম্মানিত হন।
১৯২৫ সালের ২৩ মে তিনি রোজা লুইস উইলব্রাহাম কে বিয়ে করেন। তারা উভয়ে কৈশোরকাল থেকে পরস্পরকে চিনতো। তিনি রোজার বিবাহের আংটি তৈরি করেছিলেন একটি সোনার পিন্ড (কুলগার্ডি গোল্ডফিল্ডস থেকে) থেকে, যেটি তার বাবা তাকে দিয়েছিল।
ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরি
[সম্পাদনা]১৯২১ সালে নিউজিল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানী স্যার আর্নেস্ট রাদারফোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত এক বক্তব্য শুনে তার হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন মার্ক ওলিফান্ট। তার এই ইচ্ছে পূরণ হয় ১৯২৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরি যোগদান লাভের মাধ্যমে।
রাদারফোর্ডের ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরিটি পৃথিবীর নিউক্লিয়ার ফিজিক্স গুলির মধ্যে বেশ কিছু উন্নত গবেষণা পরিচালনা করেছিল। তিনি শীঘ্রই ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরিতে অন্যান্য গবেষকদের সাথে দেখা করেন, যেমন প্যাট্রিক ব্ল্যাকেট,এডওয়ার্ড বুলার্ড, জেমস চ্যাডউইক, চার্লস এলিস, ফিলিপ মুন এবং আর্নেস্ট ওয়াল্টন। দুই সহকর্মী অস্ট্রেলিয়ান ছিলেন: হারি মাসেসি এবং জন কিথ রবার্টস। ল্যাবরেটরিতে যথেষ্ট প্রতিভা ছিল কিন্তু অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়নি, এবং পরীক্ষামূলক সরঞ্জামগুলিতে একটি স্ট্রিং এবং সীলমোহর মোম পদ্ধতির ব্যবহার করা হতো। ওলিফান্ট কে নিজের সরঞ্জাম নিজেকেই কিনতে হতো। একবার, ভ্যাকুয়াম পাম্প কিনার জন্য তিনি তার ভাতা থেকে ২৪ পাউন্ড খরচ করেছিলেন। ১৯২৯ সালের ডিসেম্বরে ওলিফান্ট The Neutralization of Positive Ions at Metal Surfaces এবং the Emission of Secondary electrons এর উপর তার পিএইচডি থিসিস জমা দেন। রাদারফোর্ড এবং এলিস তার ভাইবা নিয়েছিলো। ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য পূরণ হয়।
৬ অক্টোবর ১৯৩০ সালে তার এক ছেলে জিওফ্রে ব্রুস ওলিফান্ট জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯৩৩ সালে ব্রুস মিনিনগিটিস এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সন্তান গ্রহণে অক্ষম হওয়ায় ১৯৩৬ সালে চারমাস বয়সি এক ছেলে মাইকেল জন এবং ১৯৩৮ সালে এক কন্যাসন্তান ভিভিয়ান কে দত্তক নেন।
১৯৩২ এবং ১৯৩৩ সালে ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা গ্রাউন্ড ব্রেকিং আবিস্কারের একটি সিরিজ তৈরি করেন।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়
[সম্পাদনা]উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]সম্মাননা এবং পুরস্কার
[সম্পাদনা]- ১৯৩৭ সালে ফেলো অব দ্যা রয়্যাল সোসাইটি নির্বাচিত হন।
- ১৯৪৩ সালে রয়্যাল সোসাইটি কর্তৃক হিউজেস মেডেল প্রাপ্ত হন।
- ১৯৪৬ সালে ইন্সটিটিউট অব র্যাডিওলোজি কর্তৃক সিলভানিয়াস থমসন মেডেল প্রাপ্ত হন।
- ১৯৪৮ সালে ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারস কর্তৃক ফারাডে মেডেল[ প্রাপ্ত হন।
- ১৯৫৪ সালে ফেলো অব দ্যা অস্ট্রেলিয়ান আকাদেমি অব সায়েন্স নির্বাচিত হন।
- ১৯৫৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান আকাদেমি অব সায়েন্স এর প্রধান নির্বাচিত হন।
- ১৯৫৫ সালে রয়্যাল সোসাইটি থেকে Bakerian Lecture প্রদানের নিমন্ত্রণ পান।
- ১৯৫৫ সালে রয়্যাল সোসাইটি থেকে রাদারফোর্ড মেমোরিয়াল লেকচার প্রদানের নিমন্ত্রণ পান।
- ১৯৫৬ সালে ডেনমার্ক এর রাজা ফ্রেডরিক নবম কর্তৃক Galathea অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
- ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আদেশে নাইট কমান্ডার উপাধিতে ভূষিত হন।
- ১৯৬১ সালে ম্যাথু ফ্লাইন্ডার্স মেডেল প্রাপ্ত হন।
- ১৯৭৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান আকাদেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এর প্রথম সম্মানিত ফেলো অভিষিক্ত হন।
- ১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান অর্ডার অব কম্প্যানিয়ন হিসেবে নিয়োগ পান।