বায়ুগতিবিদ্যা
এই নিবন্ধ অথবা অনুচ্ছেদটি বায়ুগতিবিজ্ঞান নিবন্ধের সাথে একত্রিত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। (আলোচনা করুন) |
বায়ুগতিবিদ্যা-র ইংরাজী এরোডাইনামিক্স (Aerodynamics) শব্দটি এসেছে গ্রীক ἀήρ aero (বায়ু) δυναμική (গতিশীলতা) থেকে। বায়ুগতিবিদ্যা হল বায়ুর গতির অধ্যয়ন। বায়ুর এই গতি বিশেষ করে বিমান এর ডানার মতো কোনও কঠিন বস্তুর সাথে মিথস্ক্রিয়ার বিষয়ে অধ্যয়ন করা হয়। এটি তরল গতিবিদ্যা এবং গ্যাস গতিবিদ্যা এর একটি উপ-ক্ষেত্র এবং বায়ুগতিবিদ্যা তত্ত্বের অনেকগুলি দিকই এই দুই ক্ষেত্রের মধ্যে সাধারণ আলোচ্য বিষয়। বায়ুগতিবিদ্যা শব্দটি প্রায়ই গ্যাসের গতিশীলতার সাথে সমার্থকভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু পার্থক্য হ'ল "গ্যাস গতিশীলতা"য় সমস্ত গ্যাসের গতি অধ্যয়নের জন্য প্রযোজ্য এবং তা কেবল বাতাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আধুনিক অর্থে বায়ুগতিবিদ্যার আনুষ্ঠানিক অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীতে। যদিও বায়ুগতিবিদ্যার টানা বল (এয়ারোডাইনামিক ড্র্যাগ) এর মতো মৌলিক ধারণাগুলির পর্যবেক্ষণ তারও অনেক আগে রেকর্ড করা হয়েছিল। বায়ুগতিবিদ্যায় প্রাথমিক পর্যায়ের বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই পরিচালিত হয়েছিল বাতাসের চেয়েও ভারী (কিছুর) উড্ডয়ণ বিষয়ে। এমন প্রচেষ্টা প্রথম প্রদর্শণ করে ছিলেন ১৮৯১ সালে অটো লিলিয়ান্থাল। [১] তার পর থেকে গাণিতিক বিশ্লেষণ, অনুশীলনীয় অনুমান, বাতাসের টানেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এবং কম্পিউটার সিমুলেশন এর মাধ্যমে অন্যান্য অনেক প্রযুক্তি সমেত বাতাসের-থেকে-ভারী উড্ডয়ণ বিষয়ে উন্নয়নের যৌক্তিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে। বায়ুগতিবিদ্যার সাম্প্রতিক কাজ সংকোচযোগ্য প্রবাহ, টার্বুলেন্স, এবং সীমানা স্তর এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করা হয়েছে এবং প্রকৃতির ক্রমবর্ধমান গণনযোগ্য হয়ে উঠেছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]আধুনিক বায়ুগতিবিদ্যা কেবলমাত্র সতেরো শতকের পুরানো হলেও বায়ুগতিবিদ্যার বলসমূহ হাজার হাজার বছর ধরে নাবিক ও বায়ুকলে মানুষ ব্যবহার করে এসেছে।[২] উড়ান যানের চিত্র এবং গল্পগুলির রেকর্ড সারা লিখিত ইতিহাস জুড়ে উপস্থিত,[৩] যেমন প্রাচীন গ্রীকদের ইকারাস এবং দাদালাস এর কিংবদন্তি।[৪] এর মৌলিক ধারণা কন্টিনাম, টান এবং প্রেষক্রম (প্রেসার গ্র্যাডিয়েন্ট) এর কথা এরিস্টটল এবং আর্কিমিডিস এর রচনায় দেখা মেলে।
১৭২৬ সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বিকাশ করেছিলেন বায়ুর বাধা সম্পর্কিত একটি তত্ত্ব।[৫] সেই কারণে তিনি ছিলেন বায়ুগতিবিদ্যাবিদদের মধ্যে প্রথম এক জন। তার পরে নাম করতে হয় ডাচ- সুইস গণিতবিদ ড্যানিয়েল বার্নোলির নাম। তিনি ১৭৩৮ সালে প্রকাশ করেন হাইড্রোডায়নামিকা। এতে তিনি অসংকোচনীয় প্রবাহর চাপ, ঘনত্ব এবং প্রবাহ বেগের মধ্যে একটি মৌলিক সম্পর্কের বর্ণনা দিয়েছিলেন যা এখন বার্নোলির নীতি নামে পরিচিত। এর থেকে বায়ুগতিবিদ্যার উত্তোলন বা লিফ্ট গণনার একটি পদ্ধতি পাওয়া যায়।[৬] ১৭৫৭ সালে লিওনহার্ড ইউলার আরও সাধারণ ইউলার সমীকরণ প্রকাশ করেছিলেন। এটি অসংকোচনীয় এবং সংকোচনীয় উভয় প্রকার প্রবাহর জন্যই প্রয়োগ করা যেতে পারে। ইউলার সমীকরণ ১৮০০ এর প্রথমার্ধে সান্দ্রতার প্রভাবের সাথে সংযুক্ত করার জন্য প্রসারিত করা হয়। ফলে পাওয়া যায় নেভিয়ার–স্টোকস সমীকরণ।[৭][৮] নেভিয়ার–স্টোকস সমীকরণ তরল প্রবাহর সর্বাধিক সাধারণ নিয়ন্ত্রক সমীকরণ। আকারের তা সহজতম হলেও চারপাশের প্রবাহর জন্য সমাধান করা বেশ কঠিন।
১৭৯৯ সালে স্যার জর্জ কেইলে বায়ুগতিবিদ্যার চারটি বলের (ওজন, উত্তোলন, টান এবং ধাক্কা) প্রথম সনাক্তকারী ব্যক্তি এবং পাশাপাশি তিনি তাদের মধ্যের সম্পর্কগুলিও নির্ধারণ করেন।[৯][১০] তার ফলে পরবর্তী শতাব্দীতে বাতাসের-চেয়ে-ভারী সফল আকাশযান নির্মাণের রূপরেখাটি তৈরি হয়। ১৮৭১ সালে ফ্রান্সিস হারবার্ট ওয়েনহাম প্রথম বায়ু টানেল তৈরি করেন। এটি বায়ুগতিবিদ্যার বলসমূহের যথাযথ পরিমাপের সুযোগ করে দেয়। টানা তত্ত্বসমূহ (ড্রাগ থিয়োরিজ) বিকাশিত হয় জিন লে রন্ড ডি'আলেমবার্ট, [১১] গুস্তাভ কির্চফ,[১২] এবং লর্ড রাইলিংগ দ্বারা।[১৩] ১৮৮৯ সালে চার্লস রেনার্ড নামে এক ফরাসি এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রথম যুক্তিসঙ্গতভাবে একটানা উড়ানের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির প্রয়োজনীয়তার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।[১৪] অটো লিলিয়েনথাল ছিলেন গ্লাইডার উড়ানে প্রথম সফল ব্যক্তি। তিনিই প্রথম পাতলা এবং বাঁকা এয়ারফয়েল ব্যবহার করে উচ্চ উত্তোলন এবং নিম্ন টানা বল উৎপাদনে সফল হয়েছিলেন। এই বিকাশগুলির পাশাপাশি তাদের নিজস্ব বায়ু টানেলের উপর গবেষণা চালিয়ে রাইট ভাইয়েরা ১৭ ডিসেম্বর, ১৯০৩ সালে প্রথম শক্তি চালিত বিমানটি উড়িয়েছিলেন।
প্রথম উড়ানের সময় ফ্রেডরিক ডব্লু. ল্যানচেস্টার,[১৫] মার্টিন কুট্টা, এবং নিকোলাই জুকোভস্কি তরলের প্রবাহর উত্তোলনের জন্য সংবহন (সার্কুলেশন) সম্পর্কিত তত্ত্বগুলি স্বতন্ত্রভাবে প্রয়োগ ও সংযুক্ত করেছিলেন। কুট্টা এবং জুকোভস্কি দ্বি-মাত্রিক উইং বা ডানা তত্ত্বের বিকাশ করেন। ল্যানচেস্টারের কাজকে প্রসারিত করাতে লুডউইগ প্র্যান্ডটলকে গণিতের বিকাশের কৃতিত্ব প্রদান করা হয়।[১৬] এর সঙ্গে আছে তাঁর পাতলা-এয়ারফয়েল এবং উত্তোলন-রেখা তত্ত্বের পাশাপাশি সীমানা স্তর সম্পর্কিত কাজ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "How the Stork Inspired Human Flight"। flyingmag.com।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Wind Power's Beginnings (1000 BC – 1300 AD) Illustrated History of Wind Power Development"। Telosnet.com। ২ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ Berliner, Don (১৯৯৭)। Aviation: Reaching for the Sky। The Oliver Press, Inc.। পৃষ্ঠা 128। আইএসবিএন 1-881508-33-1।
- ↑ Ovid; Gregory, H. (২০০১)। The Metamorphoses। Signet Classics। আইএসবিএন 0-451-52793-3। ওসিএলসি 45393471।
- ↑ Newton, I. (১৭২৬)। Philosophiae Naturalis Principia Mathematica, Book II।
- ↑ "Hydrodynamica"। Britannica Online Encyclopedia। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-৩০।
- ↑ Navier, C. L. M. H. (১৮২৭)। "Memoire sur les lois du mouvement des fluides"। Mémoires de l'Académie des Sciences। 6: 389–440।
- ↑ Stokes, G. (১৮৪৫)। "On the Theories of the Internal Friction of Fluids in Motion"। Transactions of the Cambridge Philosophical Society। 8: 287–305।
- ↑ "U.S Centennial of Flight Commission – Sir George Cayley."। ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-১০।
Sir George Cayley, born in 1773, is sometimes called the Father of Aviation. A pioneer in his field, he was the first to identify the four aerodynamic forces of flight – weight, lift, drag, and thrust and their relationship. He was also the first to build a successful human-carrying glider. Cayley described many of the concepts and elements of the modern airplane and was the first to understand and explain in engineering terms the concepts of lift and thrust.
- ↑ d'Alembert, J. (১৭৫২)। Essai d'une nouvelle theorie de la resistance des fluides।
- ↑ Kirchhoff, G. (১৮৬৯)। "Zur Theorie freier Flussigkeitsstrahlen"। Journal für die reine und angewandte Mathematik। 1869 (70): 289–298। ডিওআই:10.1515/crll.1869.70.289।
- ↑ Rayleigh, Lord (১৮৭৬)। "On the Resistance of Fluids"। Philosophical Magazine। 2 (13): 430–441। ডিওআই:10.1080/14786447608639132।
- ↑ Renard, C. (১৮৮৯)। "Nouvelles experiences sur la resistance de l'air"। L'Aéronaute। 22: 73–81।
- ↑ Lanchester, F. W. (১৯০৭)। Aerodynamics।
- ↑ Prandtl, L. (১৯১৯)। Tragflügeltheorie। Göttinger Nachrichten, mathematischphysikalische Klasse, 451–477।