বদরুদ্দীন উমর
এই নিবন্ধটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়নি বরং একজন ভক্তের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছে। (জানুয়ারি ২০২২) |
বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর | |
---|---|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | বদরুদ্দীন উমর ২০ ডিসেম্বর ১৯৩১ বর্ধমান, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
পিতামাতা | আবুল হাশিম (পিতা) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, অধ্যাপক, লেখক, ইতিহাসবিদ |
বাংলাদেশে সাম্যবাদ |
---|
সিরিজের অংশ |
সাম্যবাদ প্রবেশদ্বার |
বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর (জন্ম: ২০ ডিসেম্বর ১৯৩১) একজন বাংলাদেশি মার্কসবাদী–লেনিনবাদী তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক সক্রিয়তাবাদী, ইতিহাসবিদ, লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) (উমর)-এর নেতা। তিন খণ্ডে উমর রচিত পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (১৯৭০, ১৯৭৬, ১৯৮১) বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনায় পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত।[১] তাঁর পিতা আবুল হাশিম ভারতীয় উপমহাদেশের একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ছিলেন।[২]
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
[সম্পাদনা]উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বর্ধমান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হাশিম ও মাতার নাম মাহমুদা আখতার মেহেরবানু বেগম। যদিও তার পিতা আবুল হাশিম—একজন সাম্যবাদী—পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধী ছিলেন, তথাপি তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। উমর ১৯৪৮ সালে বর্ধমান টাউন স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫০ সালে তিনি বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। দর্শন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৫৫ সালে। ১৯৬১ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলোসফি, পলিটিক্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স (পিপিই) ডিগ্রি লাভ করেন।[৩]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]প্রথমে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। বদরুদ্দীন উমর ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয় তারই হাত ধরে। ১৯৬৮তে পদত্যাগ করেন। তিনি সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ছিলেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের। তিনি সভাপতি আছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।[৩] তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে 'সংস্কৃতি' নামে একটি রাজনৈতিক সাময়িকী সম্পাদনা করেছেন। তিনি ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। তাকে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ১৯৭৬ সালের মাঝামঝি অনুষ্ঠেয় বিশেষ কংগ্রেসের প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়।[৪] ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[৫]
প্রকাশিত গ্রন্থ
[সম্পাদনা]প্রবন্ধ-গবেষণা
[সম্পাদনা]
|
|
ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থ
[সম্পাদনা]- Politics and Society in East Pakistan and Bangladesh [পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজ] (১৯৭৩)
- Society and Politics in Pakistan [পাকিস্তানের সমাজ ও রাজনীতি] (কলকাতা, ১৯৮০)
- Politics and Society in Bangladesh [বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজ] (১৯৮৭)
- Towards the Emergency in Bangladesh [বাংলাদেশে জরুরি অবস্থার দিকে] (১৯৮০)
- Imperialism and General Crisis of the Bourgeoise in Bangladesh [বাংলাদেশে বুর্জোয়াদের সাম্রাজ্যবাদ ও সাধারণ সংকট] (১৯৮৬)
- Language Movement in East Bengal [পূর্ব বাংলায় ভাষা আন্দোলন] (২০০১)
- Emergence of Bangladesh: Class Struggles in East Pakistan (1947-1958) [বাংলাদেশের উত্থান], অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পাকিস্তান (২০০৪)। উল্লেখ্য, এটির প্রথম মুদ্রণ দ্রুতই নিঃশেষিত হলে দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়।[৭]কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, নয়া দিল্লি (২০১৭); বাঙ্গালা গবেষণা (২০২০)।
- Emergence of Bangladesh: Rise of Bengali Nationalism (1958-1971), অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পাকিস্তান (২০০৬)[৩]। পাকিস্তান সরকার ও সামরিক মহলের চাপে পড়ে গ্রন্থটির প্রকাশনা প্রকাশক অবিরত রাখতে পারে নি।[৭] বাঙ্গালা গবেষণা (২০২০)।
সম্পাদনা
[সম্পাদনা]- সুকান্ত সমগ্র (১৯৭০)
- ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ : কতিপয় দলিল (১ম খন্ড ১৯৮৪ এবং ২য় খন্ড ১৯৮৫)
- স্ট্যালিন প্রসঙ্গ (১৯৯০)
- পার্বত্য চট্টগ্রাম : নিপীড়ন ও সংগ্রাম (১৯৯৭)
- নারী প্রশ্ন প্রসঙ্গে (২০০৩)
সম্মাননা
[সম্পাদনা]১৯৭২ সালে বদরুদ্দীন উমর বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন, তবে তিনি তা সাথে সাথেই প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার পান এবং প্রত্যাখ্যান করেন।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি
[সম্পাদনা]বদরুদ্দীন ওমর বাংলাদেশের 'দেশ টিভি'তে আসাদুজ্জামান নুর উপস্থাপিত একটি সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি আল্লাহর উপর আস্থা হারিয়েছেন।[৮] সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,
মানুষের এত যে দুঃখ দুর্দশা... এই যে বলা হচ্ছে আল্লাহরা হাতের ইশারা ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না ইত্যাদি। তা এখন আল্লাহর গুণ হিসেবে যা বলা হয় তিনি অত্যন্ত দয়ালু, সবজান্তা, সর্বক্ষমতাময়... এইরকম গুণসম্পন্ন অস্তিত্ব দিয়ে দুনিয়ার বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যায় না। মানুষ যে এত দুঃখ দুর্দশার মধ্যে আছে... অনেকে বলেন আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহর এই পরীক্ষা করার তো কোন দরকার ছিল না! তিনি মজা করার জন্য মানুষকে এই দুর্দশার মাঝে ফেলছেন? এটার কি কারণ? একজন মা হাসপাতালে ঢুকেছেন বাচ্চাকে বাইরে রেখে, এসে দেখলেন বাচ্চা মারা গিয়েছে। এখানে বাচ্চাটাকে মেরে কী পরীক্ষা করলেন, কী খেলা করলেন? ... পরীক্ষা যত হচ্ছে গরীবের উপর দিয়েই হচ্ছে। আমি ওখানে বলেছি আল্লাহ বড়লোকদের যা দেয়ার তা ইহলোকেই দেন, আর গরীবদের যা দেয়ার তা বাকির খাতায় রেখে দেন...
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "বড় পটভূমির মধ্যে ভাষা আন্দোলনকে ধরতে চেয়েছিলাম"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৪।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০১০-০৮-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২১।
- ↑ ক খ গ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৪ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১১।
- ↑ জয়নাল আবেদীন, উপমহাদেশের জাতীয়তাবাদী ও বামধারার রাজনীতি প্রেক্ষিত বাংলাদেশ; বাংলাপ্রকাশ, ঢাকা; ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, পৃষ্ঠা-৩৯৪।
- ↑ হক, মনজুরুল (ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। "প্রথম অধ্যায়"। পূর্ব বাংলার সাত দশকের কমিউনিস্ট রাজনীতি (১ সংস্করণ)। ঢাকা: ঐতিহ্য। পৃষ্ঠা ১০৭। আইএসবিএন 978-9847764187
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)। - ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১১।
- ↑ ক খ উমর, বদরুদ্দীন (ডিসেম্বর ২০১৪)। "১৯৭১ সালের যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে: সামরিক অভিযান- অপারেশন সার্চলাইট"। সংস্কৃতি।
- ↑ "বেলা অবেলা সারাবেলা / বদরুদ্দীন উমর এবং আসাদুজ্জামান নূর। DeshTv (29:40 minutes)"। YouTube। নভে ১৯, ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০২৪।
- ১৯৩১-এ জন্ম
- জীবিত ব্যক্তি
- প্রবন্ধ ও গবেষণায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- রাজনীতিবিদ
- বাংলাদেশী সাংবাদিক
- বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ
- বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী
- বাংলাদেশী মার্ক্সবাদী
- বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক
- মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক
- বাংলাদেশী রাজনৈতিক লেখক
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী দার্শনিক
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ
- বাংলাদেশী রাজনৈতিক দার্শনিক
- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- বাঙালি লেখক
- ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী ব্যক্তি
- পূর্ব বর্ধমান জেলার ব্যক্তি
- পশ্চিমবঙ্গের লেখক