নাগা রন্ধনশৈলী
ভারতের উত্তর-পূর্বে সীমান্তের রাজ্যগুলির একটি হল নাগাল্যান্ড যা ১৬ টি প্রধান উপজাতি এবং অন্যান্য উপ-উপজাতির আবাসস্থল। ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের নাগা জনজাতির ঐতিহ্যবাহী খাবার নাগা রন্ধনশৈলীর অন্তর্ভুক্ত। তাদের খাদ্য তালিকার প্রধান উপাদান মাছ বা মাংস যা তারা শুকিয়ে, গেঁজিয়ে বা পুড়িয়ে রান্না করে।[১]
নাগাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার
[সম্পাদনা]নাগা রন্ধনপ্রণালীতে বিভিন্ন পশুর মাংস এবং মাছ হল প্রধান যেগুলি সাধারণত পুড়িয়ে, শুকনো করে বা গেঁজিয়ে খাওয়া হয়।[১] একটি দৈনন্দিন নাগা খাবার টেবিলে একটি মাংসের পদ, একটি বা দুটি সিদ্ধ সবজি, ভাত এবং একটি স্থানীয় চাটনি (তাথু) থাকে। এই তাথু চাটনি শুকনো বাঁশের অঙ্কুর (ব্যাম্বু শুটস) এবং বীন্স দিয়ে তৈরি করা হয়।[১] ভাতের পদের মধ্যে থাকে কোন্যাক নুক-এনগে এবং গালহোর মতো এক ধরনের খিচুড়ি যা বিভিন্ন উপায়ে তৈরি করা যায়। নাগারা সেদ্ধ করা যায় এমন গাছ গাছড়ার পাতাও খেতে পছন্দ করে। নাগা খাবার মসলাযুক্ত ও ঝাল হয়ে থাকে।[১]
রন্ধনপ্রনালীর সাধারণ উপাদান
[সম্পাদনা]সাধারণ চাল, আলু এবং মাংসের ও সবজি নাগাল্যান্ডের খাবারে ব্যবহৃত প্রধান উপাদান। তারা গরুর মাংস, শুয়োরের মাংস, মাছ, মুরগি, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুক, মাকড়সা, পোকামাকড়, এবং মৌমাছি লার্ভাও খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে।[১] যেহেতু নাগারা শিকারী জনজাতি তাই তারা প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, পাখি, সাপ, মাকড়সা, বানর, ভালুক এবং এমনকি হাতির শিকার করে তাদের মাংস খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে।[১] নাগারা পশুর রক্ত শুকিয়ে শক্ত করে রাখে এবং তা খাবারে ব্যবহার করে।[১]
মাংস ছাড়াও রান্নায় বাঁশ কোড়ল, লেটুস, সয়াবিন, সরিষা পাতা, আন্দিয়াম পাতাও ব্যবহৃত হয়।[১]
নাগা খাবারের আরও এক প্রধান উপাদান হল লংকা। নাগাল্যান্ডের বিখ্যাত রাজা মরিচ বা কিং চিলি যার জন্য নাগাল্যান্ড সরকার জিআই তকমা পেয়েছে তা খাবারে স্বাদ এবং মসলা যোগ করতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।[১] পিঁয়াজ ও রসুনও মসলা হিসাবে ব্যবহার হয়।
আখুনী
[সম্পাদনা]এটি নাগা খাবারের একটি অন্যতম বিশেষ ও প্রধান উপাদান যা আখোন বা অ্যাক্সোন নামেও পরিচিত।[১] নাগা উপজাতির লোকেরা এটি সয়াবিন থেকে প্রায় সারা বছরই প্রস্তুত করে। এটি একটি উচ্চ প্রোটিন-সমৃদ্ধ উপাদান।[১]
আখুনী তৈরী করতে সোয়াবিনগুলিকে তাজা জলে ভালভাবে বাছাই করে পরিষ্কার করে করা হয়, এরপর সেগুলিকে সেদ্ধ করা হয় যতক্ষণ না সেগুলি নরম হয় কিন্তু ভেঙে যায়না। অতিরিক্ত জল ঝেড়ে ভেজা সয়াবিন একটি পাত্র বা ডেকচিতে রেখে তাকে রোদে বা আগুনের পাশে গরম করার জন্য এবং গাঁজানোর জন্য রাখা হয়। এই গাঁজন পদ্ধতিতে আখুনী তৈরী হতে গ্রীষ্মে তিন থেকে চার দিন এবং শীতকালে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে।[১]
রান্নার কৌশল
[সম্পাদনা]নাগা উপজাতিরা তাদের খাদ্য, বিশেষ করে মাংসকে সংরক্ষণ করার জন্য গেঁজিয়ে রাখে।[১]
খাবারগুলিকে প্রথমে সিদ্ধ করা হয় তারপর অ্যাক্সোন বা গাঁজানো সয়াবিন দিয়ে রোদে বা আগুনের কাছে রাখা হয়। গাঁজানো খাবারটি একটি কলাপাতায় বেঁধে এবং পরবর্তী ব্যবহার না হওয়া পর্যন্ত আগুনের পাশে সংরক্ষণ করা হয়।[১]
কোন প্রানীর মাংস খাওয়া হলে চামড়া এবং অন্ত্র সহ সমগ্র প্রাণী খাওয়া হয়। খাবার সাধারণত সিদ্ধ করা হয় এবং মাংস ও সবজি একসাথে রান্না করা হয়।[১] লেটুস এবং পালং শাকের পাতাও মাংস রান্না করতে ব্যবহৃত হয়।[১]