ততবীর

তৎবীর (আরবি: تطبير), যা দক্ষিণ এশিয়ায় তলোয়ার জানি ও কামা জানি নামেও পরিচিত, হল একটি ধর্মীয় রক্তক্ষরণ আচারানুষ্ঠান যেটি কিছু শিয়া মুসলমানের দ্বারা চর্চিত হয়। এটি ইসলামের পয়গম্বর মুহাম্মাদের দৌহিত্র হোসাইন ইবনে আলীর স্মরণে একটি শোকানুষ্ঠান হিসাবে প্রচলিত যিনি উমাইয়া শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া কর্তৃক কারবালার যুদ্ধে তাঁর সন্তান, সঙ্গী এবং স্বজনসহ শহীদ হয়েছিলেন। এই প্রথাটি প্রথম কিজিলবাশ গোত্রের দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল যারা সহায়ক ছিল সফবীয় শাসন প্রতিষ্ঠায়। তৎবীর শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয়। অধিকাংশ শিয়া আলেমগণ এটাকে আত্মক্ষতি হওয়ার দরুন হারাম বলে গণ্য করেন। তৎসত্ত্বেও শিয়াদের একটি সংখ্যালঘু অংশ আলেমদের অবাধ্যতা করে এই চর্চাটি টিকিয়ে রেখেছে।

তৎবীর উদযাপনের রীতি

ইসলামি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী প্রতিবছর ১০ই মুহররমকে ‘আশুরা’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে তৎবীর পালনকারী শিয়াদের কেউ কেউ ২১শে রমজান (ইমাম আলী কুফাতে শহীদ হন), ২৮ই সফর ও ৮ই রবিউল আউয়ালে ততবীর পালন করে থাকেন।

তৎবীরের নিজেকে নিজেই আঘাত করা হয়। এক্ষেত্রে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। যেমন: তলোয়ার, ব্লেড, ছোরা ইত্যাদি। সাধারণত মাথা ও কপালে আঘাত করা হয় এবং নিষ্পাপ ইমাম হোসাইনের স্মরণে রক্ত ঝরানো হয়। কেউ কেউ চেনযুক্ত ব্লেড দিয়ে বুকে ও পিঠে আঘাত করে।

তৎবীর সম্পর্কে আয়াতুল্লাহদের মতামত

তৎবীর শিয়া মাযহাবে বিতর্কিত বিষয় যেখানে অনেক আলেমগণ তৎবীরের পক্ষে। তবে ইসলামে নিজের ক্ষতিসাধন হারাম এই যুক্তিতে বর্তমান অনেক আয়াতুল্লাহ একে হারাম ঘোষণা করেছেন। এর পরিবর্তে রক্ত দানের মত দানশীল কর্মে অংশ গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। শিয়া আলেমদের মাঝে তৎবীর একটি বিতর্কিত বিষয়। যদিও কিছু ঐতিহ্যবাদী আলেমরা বিশ্বাসীদের তৎবীরে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি দেন, আধুনিকতাবাদী আলেমরা এটিকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন কারণ এটিকে আত্মক্ষতি বলে গণ্য করা হয় যা ইসলামে হারাম। বেশিরভাগ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ সমস্ত ধরনের আত্মনিগ্রহ ও রক্তপাতকে ইমাম হোসাইন এবং সমর্থকদের কারবালার যুদ্ধে বেদনাদায়ক মৃত্যুর সাথে যুক্ত হওয়ার উপায় হিসেবে সম্পর্কিত করেন।

তৎবীর সবন্ধে আবুল কাসিম আল-খোয়ীর ফতোয়া

ক্রমিক	আয়াতুল্লাহ	মতামত	বর্ণনা
০১	রুহুল্লাহ খোমেইনী	নিষেধ	আয়াতুল্লাহ খোমেইনী এটিকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং যার কারণে হিজবুল্লাহর সদস্যদের জন্য এ ধরনের কাজের অনুমতি নেই। এর পরিবর্তে আয়াতুল্লাহ খোমেইনী ও আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী রক্তদানের ব্যাপারে উৎসাহিত করছে।
০২	সৈয়দ সাদিক রুহানী	নিষেধ নয়	আমি সেসকল যুবকদের ভালোবাসি যারা ততবীর পালন করে থাকে এবং আল্লাহর কাছে কামনা করি যেন তাদের সঙ্গে থাকতে পারি।"
০৩	আলী সিস্তানী	নিষেধ	যেসব কর্ম হুসাইন ইবনে আলীর স্মরণ অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত করে তা এড়িয়ে চলা উচিত।
০৪	আলী খামেনেয়ী	নিষেধ	এ ধরনের কর্মযজ্ঞকে তিনি হারাম ঘোষণা করেছেন।
০৫	সাদিক হুসাইন সিরাজী	নিষেধ নয়	সাদিক হুসাইন সিরাজীর মতানুযায়ী ইহা হালাল এবং মুবাহ কর্ম। তার মতানুযায়ী শ্রদ্ধেয় মহিলা জয়নাব কর্তৃক ততবীর প্রথম পালন করা হয় এবং মেয়েদের ক্ষেত্রেও ততবীর জায়েজ।.
০৬	নাসের মাকারেম সিরাজী	নিষেধ	ইহা অবশ্যই পরিত্যাগ করা উচিত কেননা তা শিয়া মতবাদকে দুর্বল করে ও শারীরিক ক্ষতিসাধন করে।.
০৭	মোহাম্মদ ফাজেল লঙ্কারানি	নিষেধ	ততবীর হুসাইন ইবনে আলী স্মরণ অনুষ্ঠান সম্পর্কে ভুল বার্তা দেয় এবং শিয়া মতবাদের ক্ষতি করে।
০৮	আয়াতুল্লাহ যাবেদ আমেলী	নিষেধ	ইসলাম ও স্মরণ অনুষ্ঠানকে অপবিত্র করা অগ্রহণনীয়।. অতএব ততবীর এড়িয়ে চলা উচিত।.
০৯	মোহাম্মদ - তাকী বাহজাত ফুমেনী	নিষেধ	শিয়া মাযহাবকে কলঙ্কিত করে এমন কর্ম উপেক্ষা করা উচিত।.
১০	হুসাইন নূরী হামেদানী	নিষেধ	শিয়া মতবাদকে যা দূর্বল করে তা পরিহার করা উচিত।.
১১	হুসাইন মাজাহেরী	নিষেধ	যখন ওয়ালী-ই-ফিকহ কোন কাজ পরিহার করতে বলেন তখন জনগণের উচিত তা পরিহার করা। এমনকি তারা যদি উক্ত ফকিহগনের অনুসারী না হয় সেক্ষেত্রেও।
১২	কাজেম আল - হায়েরী	নিষেধ	ততবীর এমন একটি কুসংস্কার যা ইসলাম ও শিয়া মাযহাবের মানহানি করে।
১৩	মুহাক্কি কাবেলী	নিষেধ	ততবীর ও স্ব-বেত্রাঘাতের কোন অনুমতি নেই। এই জাতীয় কাজ হারাম।
১৪	মোহাম্মদ আল-ফায়াদা	নিষেধ নয়	ততবীর অনুমতি যোগ্য যদি এতে ব্যাপক কোন ক্ষতি না ঘটে।
১৫	মোহাম্মদ সায়েদ আল-হাকিম	নিষেধ নয়	হুসাইন ইবনে আলী স্মরণে ততবীর অনুমতি যোগ্য।

বহি:সংযোগ

• Tatbir Fatawa ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে
• Historical evidence for Ashura practices? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে
• What is Tatbir?