গিরিজা দেবী
গিরিজা দেবী | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্ম | বারাণসী, বেনারস রাজ্য, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা উত্তরপ্রদেশ, ভারত) | ৮ মে ১৯২৯
মৃত্যু | ২৪ অক্টোবর ২০১৭ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | (বয়স ৮৮)
ধরন | হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সংগীত |
বাদ্যযন্ত্র | কণ্ঠসংগীত |
কার্যকাল | ১৯৪৯–২০১৭ |
পুরস্কার | পদ্মবিভূষণ |
গিরিজা দেবী (৮ মে ১৯২৯ – ২৪ অক্টোবর ২০১৭)[১] ছিলেন সেনিয়া ও বারাণসী ঘরানার একজন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী। তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও রাগাশ্রয়ী গান পরিবেশনা করতেন এবং ঠুংরি শৈলীটিকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাকে ‘আপ্পাজি’ নামে সম্বোধন করা হত।[১]
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]১৯২৯ সালের ৮ মে বারাণসীতে গিরিজা দেবী জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রামদেও রাই ছিলেন একজন জমিদার।[২] রামদেও রাই হারমোনিয়াম বাজাতেন ও সঙ্গীত শিক্ষা দিতেন। পাঁচ বছর বয়সে গিরিজা দেবী কণ্ঠশিল্পী ও সারেঙ্গি বাদক সরযূপ্রসাদ মিশ্রের কাছে খেয়াল ও টপ্পা সঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন।[৩] নয় বছর বয়সে তিনি ইয়াদ রহে ছবিতে অভিনয় করেন এবং পরে শ্রীচন্দ মিশ্রের কাছে বিভিন্ন সঙ্গীত শৈলীতে তালিম নিতে থাকেন।[৩]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৪৬ সালে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে গিরিজা দেবীর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে এলাহাবাদ অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে তিনি প্রথম বেতার সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশ নেন। গিরিজা দেবীর মা ও ঠাকুরমা মনে করতেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরা সর্বসমক্ষে সঙ্গীত পরিবেশন করেন না। তাই তারা অনুষ্ঠানে তার সঙ্গীত পরিবেশনার বিরোধিতা করেন।[২][৩][৪] গিরিজা দেবীও অন্যদের সামনে পৃথকভাবে সঙ্গীত পরিবেশন না করার ব্যাপারে রাজি হন। কিন্তু ১৯৫১ সালে তিনি প্রথম সঙ্গীতানুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।[৩] ১৯৬০-এর দশকে শ্রীচন্দ মিশ্রের মৃত্যুর আগে অবধি তিনি তার কাছে তালিম নিয়েছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে কলকাতার আইটিসি সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমিতে অনুষদ সদস্য হিসেবে এবং ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেন তিনি। এছাড়াও একাধিক ছাত্রছাত্রীকে নিজের সাংগীতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য তালিমও দিয়ে যান।[৩] ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশবিদেশের বিভিন্ন স্থানে সঙ্গীত পরিবেশনা করেন গিরিজা দেবী।[৩][৫]
গিরিজা দেবী বারাণসী ঘরানার শিল্পী ছিলেন। এই ঘরানার বিশেষ ভাবে পরিচিত পূরবী অঙ্গ ঠুংরি শৈলীটিকে নিজের গায়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে যান তিনি।[৪][৬] তার রেপোর্টারির মধ্যে রাগাশ্রয়ী কাজরি, চৈতি ও হোলি শৈলীর গানও ছিল। এছাড়াও তিনি খেয়াল, ভারতীয় লোকসংগীত ও টপ্পা শৈলীর গান পরিবেশন করতেন। [৪][৭] দ্য নিউ গ্রোভ ডিকশনারি অফ মিউজিক অ্যান্ড মিউজিশিয়ানস গ্রন্থে একবার উল্লিখিত হয়েছিল যে, তার রাগাশ্রয়ী গান পরিবেশনার মধ্যে তার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষার সঙ্গে মিশে আছে বিহার ও পূর্ব উত্তরপ্রদেশ অঞ্চলের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যগুলি।[৩] গিরিজা দেবীকে “ঠুংরির সম্রাজ্ঞী”ও বলা হয়।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বুকে ব্যথা নিয়ে কলকাতার বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারে ভর্তি করা হলে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখানেই রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।[৮]
পুরস্কার ও সম্মননা
[সম্পাদনা]সঙ্গীতে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী (১৯৭২), পদ্মভূষণ (১৯৮৯) ও পদ্মবিভূষণ (২০১৬) সম্মাননা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালে সংগীত মহাসম্মান ও ২০১৫ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মাননায় ভূষিত হন।[৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "চলে গেলেন ঠুমরির রানি গিরিজা দেবী"। বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন। ২৫ অক্টোবর ২০১৭। ২৫ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ ক খ Ramnarayan, Gowri (১১ নভেম্বর ২০০৮)। "Queen of thumri"। The Hindu। ১৬ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০০৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ Dutta, Amelia (২০০১)। "Devi, Girija"। Sadie, Stanley। The New Grove dictionary of music and musicians। 7 (2nd সংস্করণ)। London: Macmillan Publishers। পৃষ্ঠা 265–266। আইএসবিএন 0-333-60800-3।
- ↑ ক খ গ Tandon, Aditi (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪)। "Future of folk music uncertain, warns Girija Devi"। The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০০৯।
- ↑ Trivedi, Sukumar (৫ জানুয়ারি ২০০৯)। "Pandit Hariprasad Chaurasia works a charm with his magic flute"। The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০০৯।
- ↑ Dorian, Frederick; Broughton, Simon; Ellingham, Mark; McConnachie, James; Trillo, Richard; Duane, Orla (২০০০)। World Music: The Rough Guide। Rough Guides। পৃষ্ঠা 91। আইএসবিএন 1-85828-636-0।
- ↑ Kumar, Raj (২০০৩)। Essays on Indian music। Discovery Publishing House। আইএসবিএন 81-7141-719-1।
- ↑ "'ঠুমরির রানি' গিরিজা দেবী আর নেই"। দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন। ২৫ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ "'ঠুমরির রানি' গিরিজা দেবী আর নেই"। দৈনিক যুগান্তর অনলাইন। ২৫ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Mishra, Yatindra (২০০৬)। Girija: A Journey Through Thumri। Rupa। আইএসবিএন 81-291-0857-7।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ১৯২৯-এ জন্ম
- ২০১৭-এ মৃত্যু
- ২১শ শতাব্দীর ভারতীয় গায়িকা
- কলকাতার ব্যক্তি
- ঠুংরি
- বারাণসীর ব্যক্তি
- ভারতীয় সঙ্গীতজ্ঞ
- হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী
- শিল্পকলায় পদ্মভূষণ প্রাপক
- শিল্পকলায় পদ্মবিভূষণ প্রাপক
- শিল্পকলায় পদ্মশ্রী প্রাপক
- বঙ্গবিভূষণ প্রাপক
- সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার প্রাপক
- হিন্দুস্তানি সঙ্গীতশিল্পী
- ঠুমরী
- ভারতীয় ধ্রুপদী গায়িকা
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় গায়ক
- মহিলা হিন্দুস্তানি সংগীতশিল্পী
- ২১শ শতাব্দীর ভারতীয় গায়ক
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় গায়িকা
- পশ্চিমবঙ্গের নারী সঙ্গীতজ্ঞ