খুদা কে লিয়ে
খুদা কে লিয়ে | |
---|---|
পরিচালক | শোয়েব মনসুর |
প্রযোজক | শোয়েব মনসুর |
রচয়িতা | শোয়েব মনসুর |
শ্রেষ্ঠাংশে | শান শহিদ ইমান আলি রশিদ নাজ নাসিরুদ্দিন শাহ্ ফাওয়াদ খান নাইম তাহির হামিদ শেখ |
সুরকার | রোহাইল হায়াত |
চিত্রগ্রাহক | ডেভিড লেমে আলি মোহাম্মাদ নিল লিসক কেন সেং |
সম্পাদক | আলি জাভেদ আমির খান ইটি |
প্রযোজনা কোম্পানি | |
পরিবেশক | জিও ফিল্মস |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১৭১ মিনিট |
দেশ | পাকিস্তান |
ভাষা | ইংরেজি উর্দু |
নির্মাণব্যয় | ₨৬ কোটি[১] |
আয় | ₨১৫.০৬ কোটি (মার্কিন $২৫.১ লাখ) (বিশ্বব্যাপী)[২] ₨৫.৫০ কোটি (মার্কিন $১১ লাখ) (পাকিস্তান) [৩][৪] |
খুদা কে লিয়ে (আন্তর্জাতিক বাজারে যার নাম ইন দ্যা নেইম অব গড সৃষ্টিকর্তার নামে)[৫] শোয়েব মনসুর পরিচালিত ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি পাকিস্তানি নাট্য চলচ্চিত্র।[৬] আসার আব্বাস ও সৈয়দ মুজতবা তিরমিজি চলচ্চিত্রটির সহকারী পরিচালক ছিলেন। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শান শহিদ, ফাওয়াদ খান। অতিথি চরিত্রে ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ্। এটি মনসুর ও সারমাদ (শান ও খান কর্তৃক অভিনয়কৃত) নামক দুই গায়কের কাহিনী নিয়ে যাদের জীবন যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা এবং জিহাদের ভুল শিক্ষার পর বদলে যায়।
খুদা কে লিয়ে পাকিস্তানে ২০ জুলাই ২০০৭ এবং ভারতে ৪ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শন করা হয়। এটি পরবর্তীকালে অভিনয়ের জন্য, বিশেষত তিনটি ৭ম লাক্স স্টাইল অ্যাওয়ার্ডস, কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে একটি রৌপ্য পিরামিড পুরস্কার, ইতালি থেকে একটি রবার্টো রোসেলিনি পুরস্কার এবং জাপানের ফুকুকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে একটি ফুকুকা দর্শক পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার জিতে। এই চলচ্চিত্রের মুক্তি দুটি কারণে ঐতিহাসিক: প্রথমত এটি প্রায় অর্ধশত বছর পর ভারতে মুক্তি পাওয়া প্রথম পাকিস্তানি চলচ্চিত্র এবং দ্বিতীয়ত এটি ছিল প্রথম পাকিস্তানি চলচ্চিত্র যা ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (আইএফএফআই)-এর অফিসিয়াল সেকশনে অন্তর্ভুক্ত হয়।[৭]
পটভূমি
[সম্পাদনা]দুই ভাই মনসুর ও সারমাদ লাহোরের সফল সঙ্গীতশিল্পী। ঘটনাক্রমে সারমাদ মাওলানা তাহিরি নামক ইসলামী কর্মী দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার পর শরিয়ার রক্ষণশীল পথে চলতে শুরু করে এবং তাহিরির মতে হারাম হওয়ায় সারমাদ গান গাওয়া ছেড়ে দেয়। মরিয়ম (মেরি), একজন পশ্চিমা প্রভাবিত ব্রিটিশ পাকিস্তানি মেয়ে ডেভ নামক এক ব্রিটিশ ছেলের প্রেমে পড়ে যা তার বাবাকে নখোশ করে; যদিও তার বাবা এক ব্রিটিশ মেয়ের সাথে অবৈবাহিক একত্রবাসে লিপ্ত।
এদিকে, মেরির বাবা সারমাদ ও মনসুরের সাথে দেখার করার সময় তার মেয়েকে পাকিস্তানে ঘুরিয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। যাওয়ার সময় তার বাবা তার সাথে প্রতারিত করে আফগানিস্তানের সীমান্তের দিকে এক বিয়েতে উপস্থিত হয়। আফগানিস্তানে তাকে জোরপূর্বক তার চাচাতো ভাই সারমাদের সাথে বিয়ে দিয়ে তার বাবা তাকে পরিত্যাগ করে। মেরি গ্রাম থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে সারমাদের হাতে ধরা খেয়ে ব্যর্থ হয়। সারমাদ এরপর মাওলানার পরামর্শ অনুযায়ী শাস্তি হিসেবে মেরির সাথে জোরপূর্বক যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয় যাতে মেরি আর পালানোর চিন্তা না করে। মেরি গর্ভবতী হয়ে যায় এবং সন্তান জন্ম দেয় যার ফলে তার জন্য পালানো অসম্ভব হয়ে উঠে।
একই সময়ে, মনসুর শিকাগোর একটি সঙ্গীত স্কুলে ভর্তি হয় যেখানে তার সাথে জেনি নামক একজন শিক্ষার্থীর সাথে দেখা হয়। তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে এবং জেনি তার জন্য মদ্যপান করা ছেড়ে দেয়। তবে, ৯/১১ হামলার পরে মনসুরকে এফবিআই ইসলাম ধর্মাবলম্বী হওয়ার ফলে গ্রেফতার করে এবং এক বছরের জন্য গুয়ানতানামো কারাগারে তাকে আটক রেখে নির্যাতন করে।
মেরিকে সারমাদের বাবা ব্রিটিশ সরকারের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করে। বিধ্বস্ত মেরি তার বাবা ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের জন্য পাকিস্তানের আদালতে মামলা করে। মাওলানা ওয়ালি (নাসিরুদ্দিন শাহ্) তারপর আদালতে ব্যাখ্যা করে কীভাবে যুদ্ধ ও ঘৃণার জন্য ইসলামকে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ধর্মকে তিনি বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে তুলে ধরেন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সারমাদ আদালতে নিজের অভিযোগ তুলে নেয়। সে বুঝতে পারে যে ধর্মের নামে সে কি ক্ষতি করেছে। মেরি তারপর মুক্ত হওয়ার পর গ্রামে ফিরে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ব নেয়। অন্যদিকে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্দী থাকা মনসুর অত্যাচারের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতির শিকার হয়। ব্যর্থ পুনর্বাসন প্রচেষ্টার পর তাকে পাকিস্তানে পাঠানো হয় এবং পরিবারের যত্নে সে সুস্থ হতে শুরু করে।
কুশীলব
[সম্পাদনা]- শান শহিদ - মনসুর[৬][৮]
- ফাওয়াদ খান - সারমাদ
- ইমান আলি - মরিয়ম (মেরি)[৬][৮]
- নাসিরুদ্দিন শাহ্ - মাওলানা ওয়ালি (অতিথি চরিত্র)[৮]
- নাইম তাহির - মনসুর ও সারমাদের বাবা
- রশিদ নাজ - মাওলানা তাহিরিহ[৬][৮]
- হামিদ শেখ - শের শাহ
- সনিয়া রেহমান - খালা
- হুমায়ুন কাজমি - মেরির বাবা
- অস্টিন মেরি সায়ার - জেনি
- সিমি রাহিল - মনসুর ও সারমাদের মা[৮]
প্রযোজনা
[সম্পাদনা]উন্নয়ন
[সম্পাদনা]যেই পদ্ধতিতে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব সমস্যাটি মোকাবেলা করছে তা একদম ভুল — তারা শুধু সেসব মুসলিমদের দমন ও মেরে ফেলতে চেষ্টা করছে যাদের উপর সন্ত্রাসী তকমা দেওয়া হচ্ছে। এবং এটা সমস্যার সমাধান করবেনা কেননা যদি আপনি দশজনকে মারেন, আরো একশো জন আসবে।
— চলচ্চিত্রের জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় শোয়েব মনসুর।[৯]
চলচ্চিত্রটির পরিচালক শোয়েব মনসুর পাকিস্তান সম্পর্কে পাকিস্তানি প্রবাসী ও ভারতীয়দের ভুল ধারণার প্রেক্ষিতে এর কাহিনী প্রস্তুত করেন।[৬] মনসুর বলেন যে এই চলচ্চিত্র পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের প্রতি ভারতীয়দের ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে।[৮][৯]
চিত্রগ্রহণ
[সম্পাদনা]এর প্রযোজনা পূর্ব চিত্রধারণ লাহোরে করা হয় যেখানে এর অনেক অংশ ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এর কিছু অংশ শিকাগো, লন্ডন এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় ধারণ করা হয়েছে।[১০]
বক্স অফিস
[সম্পাদনা]খুদা কে লিয়ে পাকিস্তানের উচ্চ মোট আয়ের চলচ্চিত্রগুলোর একটি। এর দেশে মোট আয় ১১ লাখ মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মোট আয় ২১ লাখ মার্কিন ডলার।[১১]
সঙ্গীত
[সম্পাদনা]খুদা কে লিয়ে | |
---|---|
বিভিন্ন সঙ্গীতশিল্পী কর্তৃক সাউন্ডট্র্যাক | |
মুক্তির তারিখ | ৭ জুলাই, ২০০৭ |
শব্দধারণের সময় | ২০০৬-২০০৭ |
ঘরানা | চলচ্চিত্র সঙ্গীত |
সঙ্গীত প্রকাশনী | রিপাবলিক মিউজিক গ্রুপ, হুকা এন্টারটেইনমেন্ট কর্প, সনি বিএমজি |
প্রযোজক | রোহাইল হায়াত |
এই চলচ্চিত্রের গান ৭ জুলাই ২০০৭ তারিখে প্রকাশ করা হয়। এর সবগুলো গানের প্রযোজক ছিলেন রোহাইল হায়াত।[১২][১৩] "মাহি ওয়ে" এবং "বান্দেয়া" বাদে সবগুলো গান লিখেছেন শোয়েব মনসুর।
নং. | শিরোনাম | রচয়িতা | শিল্পী | দৈর্ঘ্য |
---|---|---|---|---|
১. | "দুনিয়া হো" | শোয়েব মনসুর | আহমেদ জাহানযেব; সুজা হায়দার | ৩:৫৭ |
২. | "হামারে হ্যাঁয়" | শোয়েব মনসুর | আহমেদ জাহানযেব; সুজা হায়দার | ৩:৪৯ |
৩. | "বান্দেয়া হো" | বুল্লেহ শাহ | খাওয়ার জাওয়াদ; ফারাহ জালাহ | ৩:৩৮ |
৪. | "তিলুক কামর" | আহমেদ জাহানযেব | ৪:৩৭ | |
৫. | "জেনি জেনি" | শোয়েব মনসুর | আহমেদ জাহানযেব; লগন দ্যা ব্যান্ড | ৬:০১ |
৬. | "আল্লাহ হু" | সাইন জহুর; জারা মাদানি | ||
৭. | "মাহি ওয়ে" | ফাইজা মুজাহিদ | খাওয়ার জাওয়াদ; ফাইজা মুজাহিদ | ৩:১০ |
৮. | "খুদা কে লিয়ে" | শোয়েব মনসুর | আম্মর হাসান | ৩:৩৩ |
৯. | "বান্দেয়া হো (ডিজে সুকেতু ও ডিজে একেএস রিমিক্স)[১৪]" | বুল্লেহ শাহ | খাওয়ার জাওয়াদ; ফাইজা মুজাহিদ | ৩:৩৪ |
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Arpana (১ এপ্রিল ২০০৮)। "Khuda Kay Liye thaws 43 years of India-Pakistan screen chill"। হিন্দুস্তান টাইমস। ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০২০।
- ↑ "Top 10 Highest Grossing Pakistani Movies of All Time"। Brandsynario website। ৩১ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০।
- ↑ "Khuda Kay Liye box office Pakistan"। boxofficedetail.com। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩। ২০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০।
- ↑ "Khuda Ke Liye (2007 film)"। বক্স অফিস মোজো। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০২০।
- ↑ "Khuda Kay Liye Movie Review - A fantastic film from across the border"। IndiaGlitz। ২ এপ্রিল ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "KHUDA KAY LIYE (2007) - BFI"। British Film Institute website। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০২০।
- ↑ "Khuda Kay Liye thaws 43 years of India-Pakistan screen chill"। হিন্দুস্তান টাইমস। ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "Khuda Kay Liye: Complete cast and crew details"। Bollywood Hungama website। ১১ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০২০।
- ↑ ক খ Schifrin, Nick (৮ এপ্রিল ২০০৮)। "'Lollywood' Hits Bollywood"। ABC News website। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০।
- ↑ "▼ 10 PAKISTANI FILMS THAT INDIAN'S MUST WATCH"। The Ghaziabad Live। ২১ জুলাই ২০১৫। ১৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২০।
- ↑ "Khuda Ke Liye (2007)"। Boxofficemojo.com। ২০ জুলাই ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২০।
- ↑ "Exclusive: The life and times of Rohail Hyatt"। Dawn (newspaper)। ২৬ জুলাই ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২০।
- ↑ "Laili jaan"। The Friday Times। ১ নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২০।
- ↑ https://www.youtube.com/watch?v=Udx7hJaRSLs
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে খুদা কে লিয়ে (ইংরেজি)
- রটেন টম্যাটোসে খুদা কে লিয়ে (ইংরেজি)
- বলিউড হাঙ্গামায় খুদা কে লিয়ে (ইংরেজি)