কমলা ভট্টাচার্য
কমলা ভট্টাচার্য | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪৫ সিলেট(শ্রীহট্ট), অসম, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১৯ মে, ১৯৬১ (১৬ বছর) শিলচর, অসম, ভারত |
মৃত্যুর কারণ | পুলিশের গুলিতে |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | ছাত্রী |
পরিচিতির কারণ | প্রথম নারী ভাষা শহীদ |
পিতা-মাতা |
|
কমলা ভট্টাচার্য একজন ভারতীয় ছাত্রী যিনি বাংলা ভাষার আন্দোলনে ১৯৬১ সালে শিলচরে শহীদ হন।
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]কমলার জন্ম ১৯৪৫ সালে, অসমের সিলেট(শ্রীহট্টে)। রামরমণ ভট্টাচার্য ও সুপ্রবাসিনী দেবীর সাত সন্তানের পঞ্চম সন্তান হলেন কমলা। তারা ছিলেন তিন ভাই ও চার বোন। চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। শৈশবেই তার পিতৃবিয়োগ হয়। পিতৃবিযোগের পর আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন কাটতে থাকে কমলার পরিবারের। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এক বিতর্কিত গণভোটের মাধ্যমে অসমের শ্রীহট্টসিলেট(শ্রীহট্ট) জেলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কমলারা পাকিস্তানেই থেকে যান। কিন্তু ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের সার্বিক গণহত্যা আরম্ভ হলে তার রেশ সিলেট(শ্রীহট্টে)ও এসে পড়ে। কমলার পরিবার শরণার্থী হিসেবে অসমে চলে আসতে বাধ্য হন। তারা সিলেট(শ্রীহট্টের) পার্শ্ববর্তী অসমের কাছাড় জেলার শিলচরে এসে আশ্রয় নেন।[১]
শিলচরে কমলারা থাকতেন শিলচর পাবলিক স্কুল রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে। কমলার বড় দিদি বেণু নার্সের চাকরি পেয়ে শিমূলগুড়ি চলে যান প্রশিক্ষণ নিতে। কমলার মেজ দিদি প্রতিভা ছিলেন শিক্ষিকা। কমলার পরিবার তার মেজদিদির আয়ের উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল। শৈশবে কমলা ভর্তি হন শিলচরের ছোটেলাল শেঠ ইন্ষ্টিটিউটে।[২] কিন্তু স্কুলের পাঠ্য পুস্তক কেনার ক্ষমতা ছিল না কমলার। কমলা একবার বড়দিদি বেণুকে একটি অভিধান কিনে দিতে বললে তিনি সেটা কিনে দিতে পারেননি। কমলা তার সহপাঠীদের কাছ থেকে পাঠ্যপুস্তক ধার করে তার বিষয়বস্তু খাতায় টুকে নিতেন। ১৯৬১ সালে কমলা ম্যাট্রিক পরিক্ষায় বসেন। তার ইচ্ছা ছিল পারিবারিক আর্থিক অনটন সত্ত্বেও তিনি স্নাতকস্তর পর্যন্ত পড়বেন। ম্যাট্রিকের পর তিনি টাইপরাইটিং শিখবেন বলে মনস্থির করেন।[১]
মৃত্যুবরণ
[সম্পাদনা]ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঠিক পরের দিন শিলচর রেল স্টেশনে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার দাবীতে একটি পিকেটিংএর ডাক দেওয়া হয়। সেদিন সকালে, অর্থাৎ ১৯শে মে সকালে কমলাও পিকেটিং-এ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। সকালে স্নান করে মেজদিদির জন্য রাখা শাড়ীটা পড়ে নেন কমলা। মেজদিদি পিকেটিং-এ যেতে বারণ করলেও শোনেন না কমলা। এমন সময় ২০-২২ জনের একটি মেয়েদের দল কমলাদের বাড়ীতে আসে কমলাকে নেওয়ার জন্য। কমলার মা উদ্বেগ প্রকাশ করলে তারা কমলার মাকে বুঝিয়ে রাজী করেন। কমলার মা কমলাকে এক টুকরো কাপড় দেন কাঁদানে গ্যাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য। কমলার সাথে বেড়িয়ে পড়ে কমলার ছোট বোন মঙ্গলা, ছোট ভাই বকুল, ও বড়দির ছেলে বাপ্পা। দুপুরবেলা কমলার মা দুশ্চিন্তা করতে করতে নিজেই গিয়ে উপস্থিত হন রেল স্টেশনে। বকুল ও বাপ্পাকে একবার পুলিশে ধরেছিল আবার ছেড়েও দিয়েছে। মাকে দেখতে পেয়েই ছুটে আসেন কমলা, মায়ের ধূলিধূসরিত পা ধুয়ে দিয়ে, শরবত খেতে দেন। মায়ের সমস্ত দুশ্চিন্তা নিবারণ করে মাকে বাড়ী পাঠিয়ে দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সেদিন সকালে রেল অবরোধ কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবেই সমাধা হয়। যদিও অবস্থানের সময়সূচী ছিল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, কিন্তু শেষ ট্রেনটি ছিল বিকেল ৪টা নাগাদ, যার পড়ে গণ অবস্থান স্বভাবতই শিথিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই অসম রাইফেল্সের জওয়ানরা জায়গাটাকে ঘিরে ফেলতে শুরু করে। বেলা ২-৩৫ নাগাদ বিনা প্ররোচনায় তারা অবস্থানকারী ছাত্রছাত্রীদের নির্মমভাবে লাঠি ও বন্দুকের কুঁদো দিয়ে পেটাতে থাকে। এলোপাথারি লাঠিচার্জে অবস্থানকারী জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ও দিকবিদিকজ্ঞানশুন্য হয়ে যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে। কমলার ছোটবোন মঙ্গলা পুলিশের লাঠির ঘায়ে মাটিতে পড়ে যান, ও সাহায্যের জন্য কমলার উদ্দেশ্যে চিত্কার করতে থাকেন। ইতমধ্যে অসম রাইফেল্সের জওয়ানরা পলায়নরত জনতার উপর গুলিবৃষ্টি শুরু করে। মঙ্গলাকে বাঁচাতে কমলা ছুটে গেলে একটি গুলি তার চোখ ভেদ করে তার মাথা চুরমার করে দেয়। অন্যন্য আহত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থানকারীদের সাথে কমলাকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখনেই তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাস বাদে তার জ্ঞান ফিরলেও বাকি জীবনটা তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে যান।
স্মারক
[সম্পাদনা]২০১১ সালে, ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শহীদ কমলা ভট্টাচার্য মূর্তি স্থাপন কমিটির পক্ষ থেকে গোপা দত্ত আইচ ছোটেলাল শেঠ ইন্ষ্টিটিউটের প্রাঙ্গণে কমলার একটি ব্রোঞ্জের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেন।[৩]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "বাংলাভাষার পারুল বোন শহিদ কমলা ভট্টাচার্য"। The Sunday Indian। মার্চ ৪, ২০১২। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ৮, ২০১২।
- ↑ "মাজেদি এক বেড়া..."। The Sunday Indian। জুন ১২, ২০১১। ২৮ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ৯, ২০১২।
- ↑ "Bronze bust of martyr Kamala Bhattacharya installed"। The Sentinel। মে ১৮, ২০১১। ২০১৬-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ১০, ২০১২।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "REPORT of Non Official Enquiry Commission of CACHAR" [কাছাড়ের অফিসিয়াল তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন] (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। শিলচর-৫, আসাম: এ. কে. দাশ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭।
- বিশ্বাস, সুকুমার। আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি-প্রসঙ্গ ১৯৪৭-১৯৬১। আগরতলা, ত্রিপুরা: পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড। আইএসবিএন 93-8670-825-6।