ওয়াল্টার ফ্লেমিং
ওয়াল্টার ফ্লেমিং | |
---|---|
জন্ম | ২১ এপ্রিল ১৮৪৩ |
মৃত্যু | ৪ আগস্ট ১৯০৫ | (বয়স ৬২)
জাতীয়তা | জার্মান |
মাতৃশিক্ষায়তন | রোস্তক বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | কোষজিনবিদ্যা, মাইটোসিস, ক্রোমোজোম, ক্রোমাটিন |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | ২ |
ওয়াল্টার ফ্লেমিং (২১ এপ্রিল ১৮৪৩-৪ আগস্ট ১৯০৫) একজন জার্মান জীববিজ্ঞানী, যিনি কোষজিনবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতারূপে স্বীকৃত।
ফ্লেমিং জার্মানির সাসচেনবার্গে (বর্তমানে শোয়েরিনের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মনোবিজ্ঞানী কার্ল ফ্রেডরিখ ফ্লেমিং (১৭৯৯-১৮৮০) এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী অগাস্টে উইন্টারের পঞ্চম সন্তান ও একমাত্র ছেলে। তিনি জিমনেসিয়াম ডার রেসিডেনজাস্ট হতে স্নাতক হন। সেখানে প্রখ্যাত লেখক হাইনরিখ সেইডেল তার সহকর্মী ও বন্ধু ছিলেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]ওয়াল্টার ফ্লেমিং প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিদ্যার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৮৬৮ সালে তিনি সেখান থেকে স্নাতক হন। ১৮৭০ থেকে ১৮৭১ সালে ফ্রাঙ্কো প্রুশীয় যুদ্ধে ফ্লেমিং সামরিক চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৭৬ সালে তিনি কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরবিদ্যার অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। তিনি শারীরবিদ্যা ইনস্টিটিউটের পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ঐ পদেই দায়িত্ব পালন করেন।
অ্যানিলিন ডাই ব্যবহার করে ফ্লেমিং বিশেষ এক ধরনের গঠন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বেসোফিলীয় ডাইকে এটি তীব্রভাবে শোষণ করতে সমর্থ হয়। তিনি এর নাম দেন ক্রোমাটিন। ফ্লেমিং শনাক্ত করেন, কোষের কেন্দ্রিকায় সুতার মতো গঠনগুলোর সাথে ক্রোমাটিনের কোনো না কোনো সম্পর্ক রয়েছে। পরবর্তীতে শারীরতত্ত্ববিদ ভিলহেল্ম ফন ওয়ালডেয়ার হার্টজ এর নাম দেন ক্রোমোজোম (অর্থ রঞ্জিত দেহ)। বেলজিয়ান বিজ্ঞানী এদুয়ার ভ্যান বেন্ডেন-ও এটি পর্যবেক্ষণ করেন।
ফ্লেমিং কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত অধ্যয়ন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের বণ্টন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি এই প্রক্রিয়ার নাম দেন মাইটোসিস। শব্দটি গ্রিক ভাষা হতে আগত এবং এর অর্থ সুতা। তবে অপত্য ক্রোমাটিড সমভাগে দ্বিবিভাজিত হওয়ার প্রক্রিয়া ফ্লেমিং পর্যবেক্ষণ করেননি। সামুদ্রিক সালামান্ডার মাছের কোষের অঙ্গাণুতে ফ্লেমিং মাইটোসিস প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। ১৮৭৮ সালে ফ্লেমিংয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ১৮৮২ সালে সাড়া জাগানো গ্রন্থ জেলসাবস্টাঞ্জ কার্ন উন্ড জেলথেইলাং (কোষ অঙ্গাণু, নিউক্লিয়াস ও কোষ বিভাজন) গ্রন্থে এটি পুস্তকাকারে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ সকল আবিষ্কারের ভিত্তিতে তিনি বলেন, নিউক্লিয়াস থেকেই নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয় (ভারচুর ওমনিস সেলুলা ই সেলুলা (কোষ হতেই কোষের উৎপত্তি ঘটে) অবলম্বনে ফ্লেমিং "ওমনিস নিউক্লিয়াস ই নিউক্লিও" কথাটির উদ্ভাবন করেন)।
মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় প্রদানের জন্যও ফ্লেমিং খ্যাত ছিলেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে গৃহহীন মানুষকে খাওয়াতেন। তিনি যা উপার্জন করতেন, তার বিশ ভাগ অর্থ গৃহহীনদেী দান করে দিতেন। দারিদ্র্যের কারণে যেসব শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারত না, তিনি তাদের গণিত ও বিজ্ঞান পড়াতেন।
বংশগতিবিদ্যার উপর গ্রেগর জোহান মেন্ডেল যে কাজ করেছিলেন, ফ্লেমিং সে সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। তাই ফ্লেমিং তার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও জিনগত উত্তরাধিকারের মধ্যে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেননি। দুই দশক পরে যখন মেন্ডেলের সূত্রের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, তখন ওয়াল্টার ফ্লেমিংয়ের মাইটোসিস তত্ত্বের তাৎপর্যও সবাই অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। সায়েন্স চ্যানেল ফ্লেমিংয়ের মাইটোসিস তত্ত্ব ও ক্রোমোজোম আবিষ্কারের ঘটনাকে বিজ্ঞানের সেরা একশ আবিষ্কারের একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এছাড়াও এটি ফ্লেমিংয়ের আবিষ্কারকে কোষ জীববিজ্ঞানের দশটি গুরুত্ববহ আবিষ্কারের একটি বলে অভিহিত করে। [১]
জার্মান কোষ জীববিজ্ঞান সমিতি তার নামে একটি পদক প্রদান করে।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Science, Carnegie (28 মার্চ, 2005)। "100 Greatest Discoveries"। Carnegie Institution for Science। ৩১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০২০। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Zellbiologie.de | Scientific awards"।