ঈশা মহম্মদ
ঈশা মহম্মদ | |
---|---|
জন্ম | ঈশা মহম্মদ ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ |
মৃত্যু | ১১ মে ২০২১ | (বয়স ৯২)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পরিচিতির কারণ | চিত্রাঙ্কন |
অধ্যাপক ঈশা মহম্মদ (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ – ১১ মে ২০২১)[১] ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি চিত্রকর ও শিল্পী। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই চিত্রশিল্পী কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন এই মানুষটি পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের সাথেও যুক্ত ছিলেন।[২]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]ঈশা মহম্মদের জন্ম ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরে। পুরুষানুক্রমিক ভাবেই তাদের বসবাস কোন্নগরে এবং যৎসামান্য বিষয়সম্পত্তি ছিল তার পিতার। তার প্রপিতামহের নামেই এখানে একটা রাস্তাও আছে। ঈশা উদারপন্থী পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন। পিতা কাজ করতেন কোন্নগরে ভারতে প্রথম শুরু হওয়া বাটা কোম্পানিতে ডিজাইনার হিসাবে, যদিও তিনি আর্ট স্কুলের পড়াশোনা তখনও শেষ করেন নি। কোন্নগর হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার পিতা মারা যান। সুতরাং দারিদ্র আর সেইসময়কার দাঙ্গাসহ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দুটি বৎসর নষ্ট করে ঈশা ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে স্কুল ফাইনাল পাশ করেন। ছোটবেলা থেকে তার ছবি আঁকতে ভাল লাগত। ফুল, ফল, পাখি, রাস্তায় দেখা মিলিটারি পুলিশ আঁকতেন। তার ইচ্ছা ছিল আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে আর্ট শেখার। কিন্তু মায়ের ইচ্ছায় উত্তরপাড়া কলেজে ভর্তি হন বিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইএসসি পাশ করেন। এই সময় কোন্নগরে জে পি গঙ্গোপাধ্যায়, রথীন মৈত্র, সুধীর খাস্তগীর, কিশোরী রায়, বীরেন দে প্রমুখের দেশীয় শিল্পীদের প্রদর্শিত চিত্র প্রদর্শনীর ছবি দেখে ঈশা উদ্বুদ্ধ হন। কলেজে যাওয়ার নাম করে গঙ্গার ঘাটে বসে স্কেচ করতে থাকেন এবং দূরসম্পর্কের এক কাকা মহিউদ্দিনের বাড়িতে সে শিল্পকর্ম রেখে দিতেন। সেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের আনাগোনা ছিল। বিধানচন্দ্র রায়ের বন্ধু ডা কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত কাকার বাড়িতে ঈশার শিল্পকর্ম দেখেন। তারই সূত্রে ঈশা ওয়েস্টার্ন পেন্টিং-এ ফাইন আর্টস বিষয়ে ভর্তি হন কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটে। [১] ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ডিপ্লোমা লাভ করেন। এখানে তিনি চিন্তামণি কর, গোপাল ঘোষ প্রমুখ খ্যাতনামা শিল্পীদের সান্নিধ্য ও সাহচর্য লাভ করেন। কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটে অধ্যাপনাকালে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মান সরকারের ভ্রমণ স্কলারশিপ নিয়ে ডুসেলডর্ফ যান। সেখানকার আকাদেমি হতে গ্রাফিক আর্টে প্রশিক্ষণ নেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ডিপ্লোমা লাভের পর ঈশা মহম্মদ চিন্তামণি করের কথায় গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটে দেবকুমার রায়চৌধুরী ছুটিতে গেলে, তার জায়গায় ছয় মাস কাজ করেন। এর পর তিনি বহুজাতিক বিজ্ঞাপন সংস্থা জে ওয়াল্টার থমসন-এ রণেন আয়ণ দত্তের অধীনে কয়েকদিন এবং পরে সরকারের প্রচার বিভাগে কিছু দিন কাজ করে শেষে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে স্থায়ী ভাবে গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটে ‘লেকচারার ইন ড্রইং অ্যাণ্ড পেন্টিং’ পদে যোগ দেন। এখানেই ছ’বছর পর অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হন। শেষে অফিসার ইনটচার্জ হিসাবে প্রায় চোদ্দ বছর কাজ করে, ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের অবসর নেওয়ার এক বছর পূর্বে অধ্যক্ষ হন।[১]
শিল্পকর্ম ও প্রদর্শনী
[সম্পাদনা]অধ্যাপক ঈশা মহম্মদ তেলরঙে ছবি আঁকতে বেশি পছন্দ করতেন। ডাইরেক্ট অয়েল বা ওয়াটার কালারে স্কেচ করতেন। বেশকিছু প্রতিকৃতিও এঁকেছেন। তবে জার্মানিতে শিল্পকর্ম দেখে এবং গ্রাফিক আর্টে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ঈশা রিয়্যালিজ্ম থেকে ক্রমশ এক্সপ্রেশনিজ্মের দিকে এবং তারপর সোস্যাল রিয়েলিটির দিকে মনোনিবেশ করেন। [১][৩] ক্যানভাসে তেলরঙে আঁকা উল্লেখযোগ্য ছবির শিরোনাম ছিল-
- 'আতঙ্ক' (ফ্রাইটেন্ড)
- 'গ্রাম বাংলা'
- 'ইফতার'
- 'রাজিয়া সুলতানা'
- 'কর্ণ ও কুন্তি'
- 'অল মাই সন্স'
- 'ডাইং প্রিন্সেস'
- 'স্কয়ার অ্যান্ড মিরর'
- 'কন্সপিরেসি - ১'
- 'বধূ' ১,২,৩
ঈশা মহম্মদ সুনিপুণ দক্ষতায় বিশাল আকারের পোর্টরেটও আঁকতেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি রুমে তাঁর আঁকা রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথের বড় ছবি রক্ষিত আছে।
ঈশা মহম্মদের আঁকা শিল্পকর্মের বহু প্রদর্শনী (একক ও সম্মিলিতরূপে) দেশ-বিদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেমন -
- একক প্রদর্শনী-
- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে দার্জিলিঙ
- ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ইন্দো আমেরিকান সোসাইটি, কলকাতা
- ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া ফাইন আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফট সোসাইটি, নতুন দিল্লি
- ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম জার্মানি (হাউস প্রদর্শনী)
- ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে অ্যালায়েন্স ফ্রাঙ্কেস, কলকাতা
১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে বেডফোর্ড হিল গ্যালারি, বেডফোর্ড, লন্ডন ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে জেনেসিস আর্ট গ্যালারি, কলকাতা ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ভাদেরা আর্ট গ্যালারি, নতুন দিল্লি ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারি, মুম্বাই ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে চিত্রকূট আর্ট গ্যালারি, কলকাতা ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে তাজ গ্যালারি, তাজ হোটেল, মুম্বই
- যৌথ প্রদর্শনী-
- অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, কলকাতা, ১৯৫৫, ১৯৫৮, ১৯৫৯ এবং ১৯৬১
- ললিত কলা একাডেমি আয়োজিত ন্যাশনাল এক্সজিবিশন অফ আর্ট- ১৯৬৭, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৮৭
- কলকাতার বিড়লা একাডেমী অফ আর্ট এন্ড কালচার - ১৯৭১খ্রি হতে ২০০৬ খ্রি প্রতি বৎসর। [৪]
প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন খ্যাতনামা শিল্পী ঈশা মহম্মদ ছিলেন সংস্কৃতি-মনস্ক মানুষ। অসাম্প্রদায়িক আধুনিক এবং বামপন্থী রাজনীতির সমর্থক ছিলেন তিনি। কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন নিজের দক্ষতায়। তেমনই তিনি কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতিও হয়েছিলেন দুবার (২০১৬ -১৮) এবং (২০১৮-২০) [৫]
জীবনাবসান
[সম্পাদনা]খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী ঈশা মহম্মদ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর পরবর্তীকালে স্বল্প সময়ের শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ১১ মে কলকাতায় পরলোক গমন করেন। [৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ "ভাস্বর - কলকাতার কডচা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৭। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "abp" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ "প্রয়াত বিশিষ্ট চিত্রকর ও শিল্পী ঈশা মোহম্মদ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৯।
- ↑ "Isha Mohammed"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৯।
- ↑ "Artistview- Isha Mohammed"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৮।
- ↑ ক খ "Condolence message for demise of Prof. Isha Mohammed, former President of Asiatic Society Kolkata"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৯।