ইসলামি জ্যামিতিক কারুকাজ
ইসলামিক সাজসজ্জা বা অলঙ্করণ জীব-জন্তুর আকৃতিবিশিষ্ট ছবিকে নিরুৎসাহিত করে।[১] তাই এই শিল্প গড়ে উঠেছে কতিপয় জ্যামিতিক আকৃতির সমন্বয়ে, যার বিকাশ ঘটে চলেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে।
ইসলামি শিল্পকলায় এই জ্যামিতিক ডিজাইন প্রায়ই তৈরি হয় অনেকগুলো ত্রিভুজ আর চতুর্ভুজের সমন্বয়ে। এগুলো একেবারে পাশাপাশি কিংবা একটির উপর আরেকটি এভাবে সজ্জিত হয়ে জটিল প্যাটার্ন তৈরি করে। এগুলো দিয়ে পুরো প্যাটার্নটাই গড়ে উঠতে পারে, কিংবা ফুল-লতা-পাতা বা ক্যালিগ্রাফির জন্য একটি ফ্রেম গঠন করতে পারে কিংবা অন্য কোনো ডিজাইনের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে থাকতে পারে। প্যাটার্নগুলো ধীরে ধীরে পরিপক্কতা পায় আর নতুনত্ব আসতে থাকে যখন নবম শতকের সাধারণ (৫ কোণা) তারা আর ডায়মন্ড আকৃতির বদলে ৬ থেকে ১৩ কোণা তারার ব্যবহার শুরু হয় ১৩শ শতাব্দীতে এবং তা আরো পরিপূর্ণতা লাভ করে ষলো শতকে ১৪ থেকে ১৬ কোণা তারা ব্যবহারের মাধ্যমে।
ইসলামি শিল্পকলা আর স্থাপত্যে জ্যামিতিক কারুকার্য বার বার শুরে ফিরে এসেছে। যেমন কিলিম কার্পেট, পারস্যের গিরিথ, মরক্কো-র জেলিয টালি, মুক্বারনাস (অলঙ্কৃত প্রবেশপদ্বারের ছাদ), জালি (অলঙ্কৃত পাথুরে দেয়াল)। এছাড়াও সিরামিক, চামড়াজাত পণ্য, রঙীন কাঁচের বিন্যাস, কাঠ আর ধাতব জিনিসপত্রে একই ধরনের জ্যামিতিক কারুকার্যের দেখা মেলে।
বিশ শতকে পাশ্চাত্যে ইসলামি জ্যামিতিক কারুকার্যের প্রতি সবারই আগ্রহ বাড়ছে, বিশেষ করে কারিগর এবং শিল্পী শ্রেণীর। শিল্পী এম সি ইশার তাদের অন্যতম। আগ্রহ বাড়ছে গণিতবিদ এবং পদার্থবিদদের মাঝেও। ২০০৭ সালে পিটার জে লু এবং পল স্টেইনহার্ড দাবি করেন, ইসফাহানে অবস্থিত দার্ব-ই ইমাম-এর টালি অনেকটা পেনরোজ টালির মত।
পটভূমি
[সম্পাদনা]ইসলামি সাজসজ্জা
[সম্পাদনা]ইসলামি শিল্প সবসময় বস্তুগত চিত্র বা শিল্প এড়িয়ে চলে যাতে তা উপাসনার বস্তু না হয়ে দাড়ায়।[১][২] ইসলামি সংস্কৃতিতে এই অ্যানিকনিজম বা ধারণা শিল্পীদের অ-প্রতীকী শিল্প অন্বেষণ করতে পরিচালিত করেছিল এবং গণিত ভিত্তিক সজ্জায় এক সাধারণ নান্দনিক পরিবর্তন তৈরি করেছিল।[৩] পূর্ববর্তী গ্রীক, রোমান এবং সাসানিয়ান সংস্কৃতিগুলিতে ব্যবহৃত সাধারণ নকশা থেকে প্রাপ্ত ইসলামিক জ্যামিতিক নিদর্শনগুলি। এগুলি ইসলামি সাজসজ্জার তিনটি রূপের একটি, অন্যটি হ'ল আরবস্কু, যা উদ্ভিদ আকৃতি এবং শাখা প্রশাখার উপর ভিত্তি করে এবং ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি মাধ্যমে তৈরি; তিনটিই প্রায়শই একসাথে ব্যবহৃত হয়।[৪] জ্যামিতিক নকশাগুলি এবং আরবস্কুইসগুলি ইসলামি মিশ্রিত পদ্ধতি।[৫]
উদেশ্য
[সম্পাদনা]কিথ ক্রিচলো এর মতো লেখক যুক্তি দেখান যে ইসলামিক নিদর্শনগুলি দর্শকদের কেবল সজ্জা না করে অন্তর্নিহিত বাস্তবতার বোঝার দিকে পরিচালিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা প্যাটার্নে আগ্রহী লেখকরা মাঝে মাঝে করে থাকে।[৬][৭] ইসলামি সংস্কৃতিতে, নিদর্শনগুলি আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের সেতু, মন এবং আত্মাকে পবিত্র করার উপকরণ বলে মনে করা হয়।[৮] ডেভিড ওয়েড বলেছেন যে "স্থাপত্যশিল্প, সিরামিকস, টেক্সটাইল বা বইগুলিতে ইসলামের বেশিরভাগ শিল্পই হ'ল সাজসজ্জা - যা বলতে গেলে রূপান্তর।[৯] ওয়েড যুক্তি দিয়েছিলেন যে উদ্দেশ্যটি হল রূপান্তর করা, মসজিদগুলিকে "হালকা এবং প্যাটার্নে পরিণত করা", যখন "কোরানের সজ্জিত পৃষ্ঠাগুলি অসীমের উন্মুক্ত জানালায় পরিণত হতে পারে।"[৯] এর বিপরীতে ডরিস বেরেনস-আবৌসিফ[ক] তার Beauty in Arabic Culture বইতে বলেছেন যে মধ্যযুগীয় ইউরোপ এবং ইসলামি বিশ্বের দার্শনিক চিন্তার মধ্যে একটি "প্রধান পার্থক্য" হ'ল, ভাল এবং সুন্দরদের ধারণাগুলি আরবী সংস্কৃতিতে পৃথক করা হয়েছে । তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, কবিতা বা ভিজ্যুয়াল আর্টের মধ্যে সৌন্দর্যটি "ধর্মীয় বা নৈতিক মানদণ্ডের প্রতিশ্রুতি ছাড়াই" নিজের স্বার্থেই উপভোগ করা হয়।[১০]
-
ইয়াজদ, পারস্যের জামে মসজিদের ভিতরে জ্যামিতিক এবং ভেজিটাল প্যাটার্ন সহ টাইলস
-
বো ইনানিয়া মাদরাসা, ফেস, মরোক্কো, মূলত আনু. ১৩৫০, জেলিজ টাইলের কাজে জ্যামিতিক নিদর্শন সহ
-
মরোক্কোতে বিভিন্ন স্থানীয় আলংকারিক ইসলামিক শৈলী: গিরিহ-সদৃশ কাঠের প্যানেল, জেলিজ টাইলওয়ার্ক, স্টাকো ক্যালিগ্রাফি এবং ফুলের দরজার প্যানেল
-
মোকারাবে স্ট্যালাক্টাইটিস কাজ সহ আলহাম্বরার খিলান
-
আইয়ুবিদ রাক্কা ওয়্যার স্টোনিউরে গ্লেজড জার যার ওভারল্যাপিং সার্কেলগ্রিড প্যাটার্ন রয়েছে। সিরিয়া, দ্বাদশ/ত্রয়োদশ শতাব্দী
-
তুরস্কের বার্সার উসমানীয় সবুজ মসজিদের একটি তোরণ (১৪২৪), গিরিহ ১০ পয়েন্ট তারকা এবং পেন্টাগন সহ
প্যার্টান গঠন
[সম্পাদনা]অনেক ইসলামিক নকশা বর্গক্ষেত্র এবং বৃত্তের উপর নির্মিত হয়, সাধারণত পুনরাবৃত্তি, ওভারল্যাপ এবং জটিল এবং জটিল নিদর্শন গঠনের জন্য আন্তঃসংযোগ।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Bouaissa, Malikka (২৭ জুলাই ২০১৩)। "The crucial role of geometry in Islamic art"। Al Arte Magazine। ২৭ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ Bonner, Jay,। Islamic geometric patterns : their historical development and traditional methods of construction। New York। পৃষ্ঠা ১। আইএসবিএন 978-1-4419-0217-7। ওসিএলসি 1001744138।
- ↑ Bier, Carol (২০০৮)। "Art and Mithāl: Reading Geometry as Visual Commentary"। Iranian Studies। 41 (4): 491–509। আইএসএসএন 0021-0862।
- ↑ ক খ "Geometric Patterns in Islamic Art"। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৩।
- ↑ "The Drawing of Geometric Patterns in Saracenic Art. Memoirs of the Archaeological Survey of India No. 15"। Government of India Central Publication Branch.।
- ↑ Field, Robert. (১৯৯৮)। Geometric patterns from Islamic art & architecture। Diss, Norfolk, England: Tarquin। আইএসবিএন 1-899618-22-8। ওসিএলসি 38924524।
- ↑ Field, Robert. (১৯৯৮)। Geometric patterns from Islamic art & architecture। Diss, Norfolk, England: Tarquin। আইএসবিএন 1-899618-22-8। ওসিএলসি 38924524।
- ↑ Ahuja, Mangho; Loeb, A. L. (১৯৯৫)। "Tessellations in Islamic Calligraphy"। Leonardo। 28 (1): 41–45। আইএসএসএন 0024-094X। ডিওআই:10.2307/1576154।
- ↑ ক খ "The Evolution of Style | Pattern in Islamic Art"। patterninislamicart.com। ২০১৮-১২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৩।
- ↑ Behrens-Abouseif, Doris. (১৯৯৯)। Beauty in Arabic culture (১ম সংস্করণ)। Princeton, NJ: Markus Wiener Publishers। পৃষ্ঠা ৭–৮। আইএসবিএন 1-55876-198-5। ওসিএলসি 40043536।