ইসলামাবাদ চিড়িয়াখানা
স্থাপিত | ১৯৭৮ |
---|---|
বন্ধের তারিখ | ডিসেম্বর ২০২০ |
অবস্থান | পীর সোহাওয়া রোড, ইসলামাবাদ, পাকিস্তান |
স্থানাঙ্ক | ৩৩°৪৪′৩.৪৭″ উত্তর ৭৩°৩′৩২.৮১″ পূর্ব / ৩৩.৭৩৪২৯৭২° উত্তর ৭৩.০৫৯১১৩৯° পূর্ব |
আয়তন | ৮২ একর (৩৩ হেক্টর) |
প্রাণীর সংখ্যা | ~৬০০ |
বার্ষিক পরিদর্শক | ~১০ লাখ |
ইসলামাবাদ চিড়িয়াখানা (উর্দু: اسلام آباد چڑیا گھر), পূর্বে মারঘাজার চিড়িয়াখানা নামে পরিচিত, ছিল একটি ৮২-একর (৩৩ হেক্টর) আয়তনের চিড়িয়াখানা যা ইসলামাবাদে অবস্থিত। এটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[১][২] এটি পাকিস্তানের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় ছিল। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাণীদের প্রতি অযত্নের কারণে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।[৩]
২০২০ সালের মে মাসে ইসলামাবাদ উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয় যে পার্ক ও এতে থাকা প্রাণীগুলোর ব্যবস্থাপনা ইসলামাবাদ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বোর্ডে স্থানান্তর করতে হবে। সমস্ত প্রাণীকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।[২][৪] ২০২১ সালের জুনে বোর্ডটি এর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। চিড়িয়াখানাটিকে সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি প্রথমে অঞ্চল থেকে উদ্ধারকৃত চিতাবাঘ, চিত্রা হরিণ, এবং চিনকারাদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। ইসলামাবাদ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এটি পরিচালনা করত। এটি মারগাল্লা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ছিল।[১] চিড়িয়াখানাটি অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং জাপানি বাগানের অংশ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এখানে একটি এভিয়ারি (পাখি ঘর) নির্মাণ করা হয়। ২০০৮ সালের আগস্টে ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি চিড়িয়াখানাটিকে একটি বিনোদন কেন্দ্র এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে উন্নীত ও সম্প্রসারণের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয় ১৪০৭.৮ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি।[৩]
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জারতাজ গুল সিনেটের এক কমিটিকে জানান যে তিনি সরকারের কাছে চিড়িয়াখানাটির নিয়ন্ত্রণ ইসলামাবাদ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বোর্ডের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। তার মতে, বোর্ডটি চিড়িয়াখানার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও প্রাণীদের যত্নের জন্য উপযুক্ত।[৫] গুল বলেন, "চিড়িয়াখানাটি এমসিআই থেকে নিয়ে ইসলামাবাদ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বোর্ডকে ফিরিয়ে দিতে হবে, যাদের মধ্যে দক্ষ ব্যক্তি এবং প্রশিক্ষিত তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।"
২০২০ সালের মে মাসে আদালত চিড়িয়াখানাটি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।[৬]
বিতর্ক
[সম্পাদনা]২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে, ৩২ বছর বয়সী এশীয় হাতি কাভান মানসিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করে। এর কারণ ছিল গত দুই দশক ধরে তাকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় রাখা। এই অবহেলার ঘটনা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে। সামাজিক মাধ্যমে #SaveKaavan হ্যাশট্যাগ ভাইরাল হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কাভানকে তার জন্মভূমি কম্বোডিয়াতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।[৭] ২০১৭ সালের জুলাই মাসে, চারটি সিংহ শাবকের মৃত্যু হয়। চিড়িয়াখানা কর্মীরা সিংহীর দুধের পরিবর্তে অতিরিক্ত পরিমাণে ওয়েলমিংনচ দুধ খাওয়ানোয় এই দুর্ঘটনা ঘটে।[৮] একই বছর, একটি পুরুষ অস্ট্রিচ কর্মীদের অবহেলার কারণে মারা যায়। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে, চিড়িয়াখানার একটি সম্প্রসারিত অংশে একটি নেকড়ে ছয়টি হরিণকে আক্রমণ করে হত্যা করে। চিড়িয়াখানার জন্য আরও সমালোচনা আসে প্রাণীদের নিম্নমানের বা অপ্রতুল খাবার, ছোট খাঁচা, এবং তাদের দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে।[৯]
২০২০ সালের ২১ মে, ইসলামাবাদ উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয় যে কাভানকে অবিলম্বে অন্য একটি অভয়ারণ্যে স্থানান্তর করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত আসে জনপ্রিয় মার্কিন পপ গায়িকা শের এর ২০১৬ সাল থেকে চলা চার বছরের প্রচারণার পর। তিনি কাভানকে ইসলামাবাদ চিড়িয়াখানা থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।[১০][১১] ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর, কাভান কম্বোডিয়ার একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে পৌঁছায়।[১২]
পুনর্নির্মাণ
[সম্পাদনা]২০২১ সালে, পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ৭.৫ মিলিয়ন ডলারের বাজেটে চিড়িয়াখানার পুনর্বাসনের পরিকল্পনা শুরু করে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে সমস্ত প্রাণী সাময়িকভাবে অভয়ারণ্যে স্থানান্তর করা হয়। মন্ত্রণালয় চিড়িয়াখানাটিকে একটি সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেছে,[১৩] যেখানে আহত বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের সুযোগ থাকবে।[১৪] ২৪ জুন ২০২১-এ ইসলামাবাদ ওয়াইল্ডলাইফ ম্যানেজমেন্ট বোর্ড চিড়িয়াখানাটির প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করে।[১৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "ইসলামাবাদ চিড়িয়াখানার বেহাল দশা"। দ্য নেশন। ১ নভেম্বর ২০০৯। ৭ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ "ইসলামাবাদে ভার্চুয়াল চিড়িয়াখানার পরিকল্পনা"। ডন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৩-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৫।
- ↑ ক খ "ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি"। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ২০১০-০৫-১৪। ১৪ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৫।
- ↑ "ইসলামাবাদ চিড়িয়াখানার ৫১৩ প্রাণী 'নিখোঁজ'"। southasiamonitor.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০২।
- ↑ Shahid, Jamal (২০১৯-০২-২১)। "ইসলামাবাদ ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগের অধীনে মারঘাজার চিড়িয়াখানার দায়িত্ব নেওয়ার সুপারিশ: মন্ত্রী"। ডন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৫।
- ↑ "ফোর পজ বিয়ার সুজি এবং বাবলুকে জর্ডানের একটি অভয়ারণ্যে স্থানান্তরিত করে, যা মারঘাজার চিড়িয়াখানার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নির্দেশ করে"। World Animal News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১২-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৫।
- ↑ "পাকিস্তান কাভানকে কম্বোডিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে"। The News International (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ জুলাই ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৫।
- ↑ "ইসলামাবাদ চিড়িয়াখানায় চারটি শাবকের মৃত্যু: অবহেলা নাকি হত্যাকাণ্ড? | পাকিস্তান টুডে"। archive.pakistantoday.com.pk। ২০২১-০৬-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৩।
- ↑ "মারঘাজার চিড়িয়াখানা"। ডন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০২-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-৩০।
- ↑ "পাকিস্তান কাভানকে মুক্তি দেবে: গায়িকা শেরের প্রচারণার ফল"। আল জাজিরা (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ মে ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৫।
- ↑ "পাকিস্তান কাভানকে মুক্তি দেবে: গায়িকা শেরের প্রচারণার পর | ডেইলি এফটি"। Daily FT (English ভাষায়)। ২৩ মে ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৫।
- ↑ "'বিশ্বের সবচেয়ে একাকী হাতি' নতুন জীবনের জন্য কম্বোডিয়ায় পৌঁছেছে"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১১-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৫।
- ↑ Constable, Pamela (১০ জানুয়ারি ২০২১)। "With the departure of the world's loneliest elephant, Islamabad's zoo has closed — but its empty cages hold clues to its animals' suffering"। The Washington Post (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0190-8286। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৫।
- ↑ "Pakistan Zoo, Once Home to the 'World's Loneliest Elephant', to Undergo Mammoth Makeover"। News18 India। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ "Islamabad Zoo to be converted into Margallah Wildlife Centre"। Pakistan Observer (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৬-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৫।