আবদুল ওহাব (বীর বিক্রম)
আবদুল ওহাব | |
---|---|
মৃত্যু | ২০০৭ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
আবদুল ওহাব (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৭) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]আবদুল ওহাবের জন্ম কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের মরিচা গ্রামে। তার বাবার নাম আলী নেওয়াজ এবং মায়ের নাম খাতুন বিবি। তার স্ত্রীর নাম মাজেদা বেগম। তাদের দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। [২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন আবদুল ওহাব। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তার ইউনিটের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য আবদুল ওহাবকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল আবদুল ওহাব তার প্লাটুন নিয়ে ছিলেন দেবীপুরে। খবর পেলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৭০-৭২ জনের একটি দল সালদা নদীর দিকে আসছে। খবর পেয়ে তিনি তার কোম্পানি কমান্ডার আবদুল গাফফারের কাছে অভিপ্রায় জানালেন পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশ করার। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি দিলেন। ওহাব তৈরিই ছিলেন। রওনা দিয়ে কালতাদীঘিরপাড়ে গিয়ে জানতে পারলেন, পাকিস্তানি সেনারা ততক্ষণে সালদা নদী পৌঁছে গেছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সেখানেই অ্যামবুশ করলেন। কারণ, পাকিস্তানি সেনাদের ওই স্থান দিয়েই কসবা যেতে হবে। ওহাব একটি গাছে উঠে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন। একটু পর দূরে দেখতে পেলেন, পাকিস্তানি সেনারা ফিরে আসছে। তাদের গাইড হিসেবে আছে চার-পাঁচজন বাঙালি। পেছনে একজন অফিসারের নেতৃত্বে সেনারা দুই সারিতে দূরত্ব বজায় রেখে এগিয়ে আসছে। গাছ থেকে নেমে সহযোদ্ধাদের কর্তব্য ঠিক করে দিয়ে বললেন, তিনি গুলি ছোড়ার আগে কেউ যেন গুলি না ছোড়েন। তারপর তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। পাকিস্তানি সেনারা তাদের অস্ত্রের গুলির আওতায় আসামাত্র প্রথম গর্জে উঠল আবদুল ওহাবের এলএমজি। সঙ্গে সঙ্গে সহযোদ্ধা ৩৫ জনের অস্ত্র থেকে একযোগে গুলি শুরু হলো। পাকিস্তানি সেনাদের সেখানে আত্মরক্ষার তেমন জায়গা ছিল না। একমাত্র স্থান ছিল সড়কসংলগ্ন খাল। আক্রমণে লুটিয়ে পড়ে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। আকস্মিক আক্রমণে দিশাহারা পাকিস্তানি সেনারা কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ে খালে, কেউ পজিশন নিয়ে গুলি শুরু করে। আচমকা এই আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এক ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন। পরে ওহাব খবর পান, ১৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং নয়জন আহত হয়েছে। [১০ জুলাই ঝিকুরা অ্যামবুশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, দুজন মেজর, তিনজন ক্যাপ্টেন, একজন সুবেদার মেজর, একজন সেনা, একজন সিভিল পোশাকের ইঞ্জিনিয়ার, একজন ব্যবসায়ীসহ ১২ জন নিহত হয়। তারা একটি স্পিডবোটে করে সালদা নদী দিয়ে যাচ্ছিল। ওহাবের অ্যামবুশে স্পিডবোট সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কুখ্যাত পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন বোখারি ছিল। বোখারি ১৯৭১ সালে কুমিল্লায় অসংখ্য নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে পাখির মতো হত্যা করে। মেয়েদের ওপর অত্যাচার চালায়। একাত্তরে বাঙালি যাঁরা কুমিল্লায় ছিলেন, তারা বেশির ভাগ ক্যাপ্টেন বোখারির নাম জানেন। মুক্তিযুদ্ধকালে আবদুল ওহাব সম্পর্কে নানা কিংবদন্তি ছিল। তিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ত্রাস। একের পর এক অ্যামবুশ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে ফিরে যেতেন বিজয়ীর বেশে। তখন তার সাহসিকতা ও বীরত্বের কথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে আটক বা হত্যা করার জন্য অনেকবার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তারা দুবার ৫০ হাজার টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করে। অসংখ্য স্থানে অ্যামবুশ করেন তিনি। এর মধ্যে কালতাদীঘিরপাড়, শালগড়, লোত্তামুড়া, সালদা নদী, মন্দভাগ, ঝিকুরা, গোবিন্দপুর, মীরপুর-মাধবপুর এবং চান্দলা অ্যামবুশ ও অপারেশন উল্লেখযোগ্য। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৯-০৯-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।