আফজাল চৌধুরী
আফজাল চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম | ১০ মার্চ ১৯৪২ খাগাউড়া, হবিগঞ্জ। |
মৃত্যু | ৯ জানুয়ারি ২০০৪ | (বয়স ৬১)
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অধ্যাপনা ও সাহিত্যচর্চা |
পরিচিতির কারণ | সাহিত্যিক |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | কল্যাণব্রত, হে পৃথিবী নিরাময় হও, শ্বেতপত্র, সামগীত দুঃসময়ের, বিশ্বাসের দিওয়ান, নয়া পৃথিবীর জন্য ইত্যাদি। |
উপাধি | কল্যাণব্রতের কবি |
পুরস্কার | মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য পুরস্কার, কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর) ইত্যাদি। |
আফজাল চৌধুরী (১৯৪২-২০০৪) বাংলা সাহিত্যের ষাট দশকের অন্যতম প্রধান কবি। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ "কল্যাণব্রত" প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। "সাহিত্যের টাইরেসিয়াস" খ্যাত এই দূরদর্শী কবি আত্মিক দিক দিয়ে নিপীড়িত বিশ্বের সকল মানুষের পক্ষে ছিলেন অত্যন্ত সোচ্চার।[১][২][৩][৪][৫][৬][৭]
শৈশব
[সম্পাদনা]কবি আফজাল চৌধুরী ১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ[৩] হবিগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাহুবল উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে। কবি আফজাল চৌধুরীর পিতা মাওলানা আব্দুল বসির চৌধুরী ও মাতা সৈয়দা ফয়জুন্নেসা খাতুন। তিন ভাইয়ের মধ্যে আফজাল চৌধুরী ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তাঁর বড় ভাই কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।[৮]
শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]আফজাল চৌধুরী হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। পরবর্তীতে হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজে থেকে ১৯৬১ সালে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ অনার্স ও ১৯৬৪ সালে এম এ সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]কবি আফজাল চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। তিনি প্রথমে দু বছর রাজশাহী ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ও সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে ও দায়িত্ব পালন করেন। কবি আফজাল চৌধুরী সিলেট এম সি কলেজে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ ইং পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন[৩] এবং এই পদে দায়িত্বরত অবস্থায় ১৯৯৯ সালের ৯ মার্চ তিনি অবসরগ্রহণ করেন।[২]
অধ্যাপনার পাশাপাশি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ ইং পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন কবি আফজাল চৌধুরী। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার 'ইন্সপেক্টর অব স্কুলস' ছিলেন তিনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক থাকাকালীন সাহিত্য পত্রিকা "ঐতিহ্য" প্রকাশ ও সম্পাদনা করে তিনি সবার প্রশংসা অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত OIC'র পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে কবি আল মাহমুদ সহযোগে "আফগানিস্তানঃ আমার ভালোবাসা" সংকলন প্রকাশ করে তাঁর অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেন। কবি আফজাল চৌধুরী সিলেটের প্রাচীন সাহিত্য সংগঠন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ-এর সহ-সভাপতি ছিলেন।[৯][২][১]
বিদেশ-ভ্রমণ
[সম্পাদনা]ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক থাকাকালে ১৯৮৪ সালে আফজাল চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটিং প্রোগ্রামের আওতায় মাসব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটটি অঙ্গরাজ্য সফর করেন। যাত্রাপথে ব্রিটেনে যাত্রাবিরতি এবং ফেরার পথে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করেন। এ সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বেশকিছু কবিতা রচনা করেন যা তাঁর "অন্য গোলার্ধে হৃদয়" এবং "বিশ্বাসের দিওয়ান" শীর্ষক দুটি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সাহিত্যকর্ম
[সম্পাদনা]কাব্যগ্রন্থঃ
- কল্যাণব্রত(১৯৬৯)
- হে পৃথিবী নিরাময় হও(১৯৭৯)
- শ্বেতপত্র(১৯৮৩)
- সামগীত দুঃসময়ের(১৯৯১)
- শবেমেহেরের ছুটি(২০০৫)
- নয়া পৃথিবীর জন্য (২০০৬)
- বিশ্বাসের দিওয়ান (২০০৭)
- এই ঢাকা এই জাহাঙ্গীরনগর (২০১১)
- বন্দী আরাকান ও অন্যান্য কবিতা (২০১৭)
- অন্য গোলার্ধে হৃদয় (অপ্রকাশিত) ইত্যাদি।
প্রবন্ধগ্রন্থঃ
- ঐতিহ্যচিন্তা ও রসুল প্রশস্তি(১৯৭৯)
- তাঁর কাব্যালোকে সৈয়দ আলী আহসান(২০১২)
- সিলেটে সুফি সাধনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১৩)
- মক্কার পথ:মোহাম্মদ আসাদের মহাজীবন (২০১৫)
- প্রতিশ্রুত কথকতা(অপ্রকাশিত)
- কবিতার সংসারে জটিলতা(অপ্রকাশিত)
- সমকালীন সাহিত্যের ধারা (অপ্রকাশিত)
- নান্দনিক ভুবন
অনুবাদঃ
- বার্নাবাসের বাইবেল(১৯৯৬)
- জালালুদ্দীন রুমির কবিতা(২০১৩)
- আলী শরীয়তির কবিতা ইত্যাদি।
নাটক
- সিলেট বিজয় (২০০৫)
- বাঁশি
সম্পাদনাঃ
- আফগানিস্তানঃ আমার ভালোবাসা ( কবি আল মাহমুদ সহযোগে)
- ঐতিহ্য( ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্রিকা)।
আফজাল চৌধুরীকে নিয়ে গবেষণা
[সম্পাদনা]১. আফজাল চৌধুরীঃ কবি ও কবিতা -মুকুল চৌধুরী
২. আফজাল চৌধুরীঃ জীবন ও সাহিত্য -নাসির হেলাল
৩. আফজাল চৌধুরীঃ ব্রতচারী ও বিশ্বকবি -আবদুল হাই জেহাদি ইত্যাদি।
পুরস্কার/সম্মাননা
[সম্পাদনা]- মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য পুরস্কার
- রাগীব রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০১)[১০]
- কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪)[১১]
- বিএনএসএ পুরস্কার ইত্যাদি।
পরলোকগমন
[সম্পাদনা]কবি আফজাল চৌধুরী ২০০৪ সালের ৯ জানুয়ারি পরলোকগমন করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "কবি আফজাল চৌধুরী কিছু স্মৃতি, কিছু কথা -মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২১।
- ↑ ক খ গ "বাংলা সাহিত্যে কবি আফজাল চৌধুরী"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২০।
- ↑ ক খ গ "কবি আফজাল চৌধুরীর ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ"। সিলেটের ডাক (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০১-০৮। ২০২২-০৫-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২০।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "কল্যাণব্রতের কবি আফজাল চৌধুরী"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২১।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "কল্যাণব্রতের কবি এবং কিছু স্মৃতি"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২১।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "কবি আফজাল চৌধুরী"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২০।
- ↑ -প্রসঙ্গ-বিশ্বাসের-দিওয়ান "আফজাল চৌধুরীর কবিতা প্রসঙ্গ 'বিশ্বাসের দিওয়ান'"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২১।
- ↑ আহমদ, জামিল (১ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। মানবতার কবি আফজাল চৌধুরী "মানবতার কবি আফজাল চৌধুরী"
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। our Islam।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] - ↑ "কল্যাণব্রতের কবি আফজাল চৌধুরী : একটি নীরব আন্দোলন"। দৈনিক জালালাবাদ | Daily Jalalabad (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০১-১১। ২০২১-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২১।
- ↑ "Ragib Rabeya Foundation"। rrfbd.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৯।
- ↑ "আমাদের পরিচিতি | কিশোরকণ্ঠ" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৬-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৯।