অস্তরক
পরাবৈদ্যুতিক অথবা অস্তরক (বা অস্তরক পদার্থ) (ইংরেজি: Dielectric) হলো এক প্রকার তড়িৎ অন্তরক(ইন্সুলেটর) যাকে তড়িৎ ক্ষেত্র প্রয়োগে পোলারাইজ (বা মেরুকরণ) করা যায়। যখন কোন অস্তরক পদার্থকে কোন তড়িৎক্ষেত্রে স্থাপন করা হয়, তখন তড়িৎ আধানগুলো যেভাবে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যায় অস্তরক পদার্থের মেরুকরণের কারণে সেভাবে যেতে পারে না। অস্তরক পদার্থের এই মেরুকরণের কারণে ধনাত্মক তড়িৎ আধানগুলো তড়িৎক্ষেত্রের দিকে এবং ঋণাত্মক তড়িৎ আধানগুলো তড়িৎক্ষেত্রের বিপরীত দিকে সরে আসে। ফলে পদার্থের ভেতরে একপ্রকার অভ্যন্তরীণ তড়িৎক্ষেত্র তৈরি হয় যা অস্তরক পদার্থের মধ্য দিয়ে পুরো তড়িৎক্ষেত্রকেই কমিয়ে ফেলে।[১] যদি কোন দূর্বল বন্ধন সম্পন্ন অণু দ্বারা কোন অস্তরক পদার্থ গঠিত হয়, তবে তা শুধু মেরুকরণই হয় না বরং তার ইলেক্ট্রনের অক্ষও ঐ তড়িৎক্ষেত্রের অক্ষের সাথে একই দিকে পূনঃবিন্যাস্ত হয়।
অস্তরক পদার্থের ধর্ম বিশ্লেষন করার ফলে কোন পদার্থের তড়িৎ এবং চৌম্বকীয় শক্তি ধারণ করার ক্ষমতা বোঝা যায়।[২][৩][৪]
তড়িৎবিদ্যা, আলোকবিদ্যা, কঠিন-অবস্থা পদার্থ বিদ্যা এবং কোষ প্রাণপদার্থবিদ্যার অনেক ক্ষেত্রেই অস্তরক পদার্থের প্রয়োগ রয়েছে।
পরিভাষা
[সম্পাদনা]প্রকৃতপক্ষে অন্তরক শব্দটি প্রযোজ্য হয় কম তড়িত পরিবাহিতার ক্ষেত্রে, যেখানে অস্তরক শব্দটি বোঝায় এমন পদার্থ যার উচ্চ মেরুকরণ ক্ষমতা রয়েছে। একে একটি সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় যাকে আপেক্ষিক তড়িৎভেদ্যতা বলে। সাধারণত অন্তরক শব্দটি তড়িৎ অবরোধ বোঝায়, যেখানে অস্তরক শব্দটি বোঝায় (মেরুকরণের মাধ্যমে)কোন পদার্থের শক্তি সঞ্চয় করে রাখার ক্ষমতা। অস্তরক পদার্থের একটি পরিচিত উদাহরণ হলো, কোন ধারকের দুই ধাতব প্লেটের মাঝে থাকা অন্তরক পদার্থ। তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা সৃষ্ট অস্তরক পদার্থের মেরুকরণ তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা অনুসারে কোন ধারকের পৃষ্ঠ-আধান বৃদ্ধি করে।[১]
অস্তরক এবং অন্তরকের মাঝে মৌলিক পার্থক্য হলো, সকল অস্তরকই অন্তরক, তবে সকল অন্তরক অস্তরক নয়। অর্থাৎ, অস্তরক হলো অন্তরকের একটি প্রকার।
অস্তরক বা ডাইইলেক্ট্রিক শব্দটি (ডাই- ইলেকট্রিক) মাইকেল ফেরাডের অনুরোধে উইলিয়াম হেওয়েল উদ্ভাবন করেন।[৫][৬] যেহেতু একটি প্রকৃত অস্তরক পদার্থের তড়িৎ পরিবাহীতা শূন্য (তুলনাঃ প্রকৃত তড়িৎপরিবাহকের পরিবাহীতা হলো অসীম)।[৭] কাজেই এটি একটি বিচ্যুতি কারেন্ট তৈরি করে যার মাধ্যমে এটি একটি আদর্শ ধারকের মতো তড়িৎ শক্তি সঞ্চয় করে এবং ফিরিয়েও দেয়।
তড়িৎ সংবেদনশীলতা
[সম্পাদনা]প্রকৃত আর্টিকেলঃ তড়িৎ সংবেদনশীলতা এবং তড়িৎ ভেদ্যতা
কোন পদার্থের তড়িৎ সংবেদনশীলতা χe হলো কত সহজে তা তড়িৎক্ষেত্রের ফলে মেরুকরণ হতে পারে তার পরিমাপ। যার মাধ্যমে কোন পদার্থের তড়িৎ ভেদ্যতা নির্ধারিত হয় এবং এটি ঐ মাধ্যমের ক্ষেত্রে ধারক বা ধারকের ধারকত্ব থেকে আলোর গতি পর্যন্ত আরো অনেক বিষয়কেই নিয়ন্ত্রণ করে।
এটি তড়িৎক্ষেত্র E থেকে প্রণোদিত মেরুকরণ ঘণত্ব P এর সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি আনুপাতিক ধ্রুবক,
এখানে ε0 হলো শূন্য মাধ্যমে তড়িৎ ভেদ্যতা
কোন মাধ্যমে তড়িৎ সংবেদনশীলতা ও ঐ মাধ্যমের তড়িৎ আপেক্ষিক ভেদ্যতা εr এর সম্পর্ক হলো,
সুতরাং বায়বীয় মাধ্যমের ক্ষেত্রে,
তড়িৎ বিচ্যুতি D এবং মেরুকরণ ঘনত্ব P এর সম্পর্ক হলো,
বিকিরণ এবং কার্যকারণ
[সম্পাদনা]সাধারনভাবে, কোন পদার্থই তড়িৎক্ষেত্রের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরুকরণ হতে পারে না। অতএব সময়ের সাপেক্ষে এর ফাংশনের সাধারণ রুপ হলো,
সুতরাং, মেরুকরণ বা মেরুকরণ হলো সময়ের উপর নির্ভরশীল তড়িৎ সংবেদনশীলতা χe(Δt) এর সাথে পূর্বসময়ের তড়িৎক্ষেত্রের কনভলিউশন(বা কুণ্ডলী) ফাংশন। এই ইন্টিগ্রালের সর্বোচ্চ সীমা অসীম পর্যন্ত বর্ধিত করা যায় যদি χe(Δt) = 0 হয় যখন Δt < 0 হবে। ডিরাক ডেল্টা ফাংশনের জন্য তাৎক্ষনিক তড়িৎ সংবেদনশীলতা হবে, χe(Δt) = χeδ(Δt).
একটি লিনিয়ার সিস্টেম বা রৈখিক ব্যাবস্থার ক্ষেত্রে একে ফুরিয়ার রুপে কম্পাঙ্কর ফাংশন হিসেবে প্রকাশ করাটা কিছুটা সহজসাধ্য। কনভলিউশন(বা কুণ্ডলী থিওরি) অনুসারে এই ইন্টিগ্রালটির সহজ রুপ,
তড়িৎ সংবেদনশীলতা (সমতুল্য তড়িৎভেদ্যতা) কম্পাঙ্কর উপর নির্ভরশীল। কাজেই কম্পাঙ্কর সাপেক্ষে তড়িৎ সংবেদনশীলতার পরিবর্তন পদার্থের বিকিরণ ধর্ম নির্ধারণ করে।
অধিকন্তু, পদার্থের মেরুকরণ কেবলমাত্র পূর্বসময়ের তড়িৎক্ষেত্র (যেমন, Δt < 0 এর জন্য χe(Δt) = 0) এর উপরই নির্ভর করে এবং এর কার্যকারণের ফল তড়িৎ সংবেদনশীলতা χe(ω) এর প্রকৃত এবং আনুমানিক(রিয়েল এবং ইমাজিনারি) অংশের উপর ক্রেমার-ক্রনিং সীমাবদ্ধতা আরোপ করে।
অস্তরক মেরুকরণ
[সম্পাদনা]মৌলিক আণবিক মডেল
[সম্পাদনা]চিরায়ত অস্তরক মডেলে একটি অণুর সাথে তড়িৎক্ষেত্রের মিথষ্ক্রিয়া।
অস্তরক পদার্থের চিরায়ত মডেল অনুসারে, কোন পদার্থ অণু দ্বারা তৈরি। প্রতিটি অণুই তার কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ধণাত্মক আধান কণা এবং তাকে ঘিরে থাকা ঋণাত্মক আধান (ইলেক্ট্রণ) মেঘ দ্বারা গঠিত। তড়িৎক্ষেত্রের উপস্থিতিতে এই আধানের মেঘ বেঁকে যায় যেমনটা উপরে বামপাশের ছবিতে দেখানো হয়েছে।
উপরিপাত তত্ত্ব অনুসারে একে সংকুচিত করে সরল ডাইপোল বা দ্বিমেরুতে রুপান্তর করা যায়। কোন দ্বিমেরুকে তার ডাইপোল মোমেন্ট বা দ্বিমেরু ভরবেগ দ্বারা বর্ণনা করা যায়, চিত্রে M দ্বারা নির্দেশীত নীল তীরচিহ্নটি হলো এর ভেক্টর পরিমাপ। এটি হলো, তড়িৎক্ষেত্র এবং দ্বিমেরু ভরবেগ এর মাঝে সম্পর্ক, যা অস্তরকের ক্রিয়া বৃদ্ধি করে। (লক্ষণীয়, চিত্রে দ্বিমেরু ভরবেগ এবং তড়িৎক্ষেত্রের দিক একই দিকে। এমনটা কিন্তু সবসময় হয় না, তবে বেশিরভাগ পদার্থের ক্ষেত্রেই এটা সঠিক)।
যখন তড়িৎক্ষেত্র সরিয়ে ফেলা হয়, পদার্থের অণু তার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এর জন্য যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে শিথিলকরণ সময় বলা হয়, যা এক্সপনেনশিয়াল সূচকে হ্রাস পায়।
এই তো হলো কেবল পদার্থবিজ্ঞান অনুসারে অস্তরকের মডেলের ব্যাখ্যা, এখন অস্তরকের আচরণ নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর। পরিস্থিতি যত জটিল হবে, মডেলও অস্তরকের আচরণ ততটাই সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবে। জরুরী প্রশ্ন হলোঃ
- তড়িৎক্ষেত্র কি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়, নাকি স্থির থাকে? পরিবর্তন হলে কি হারে?
- উদ্ভূত ক্রিয়া এর দিক কি প্রয়োগকৃত তড়িৎক্ষেত্রের সাথে একই দিকে (পদার্থের জন্য সর্বসম)?
- উদ্ভূত ক্রিয়া কি সর্বত্র সমান (পদার্থের ক্ষেত্রে সমসত্ত্ব)?
- এর সীমারেখা এবং ইন্টারফেস কি ধর্তব্য?
- তা কি তড়িৎক্ষেত্রের সাপেক্ষে রৈখিক? নাকি অরৈখিক? (লিনিয়ার নাকি নন লিনিয়ার)
তড়িৎক্ষেত্র E এবং দ্বিমেরু ভরবেগ M এর সম্পর্ক অস্তরকের বৈশিষ্ট বৃদ্ধি করে। প্রদত্ত যেকোন পদার্থের ক্ষেত্রে একে F ফাংশন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে,
যখন তড়িৎক্ষেত্র এবং পদার্থের প্রকৃতি উভয়টি নির্ধারিত হয়ে যায়, তখন সহজেই F ফাংশন তার আচরনের প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
উদাহরণ স্বরুপ যে আচরণগুলো ঘটতে পারেঃ
- প্রতিসারক সূচক
- দলগত গতি বিকিরণ
- বিরিফ্রেঞ্জেন্স (প্রতিসারক সূচক মেরুকরণ এবং আলোর প্রসারণের দিকের উপর নির্ভরশীল)
- রশ্মী আত্ম-কেন্দ্রীভূত করা
- ঐকতান তৈরি
দ্বিমেরু মেরুকরণ
[সম্পাদনা]দ্বিমেরু মেরুকরণ হলো এমন মেরুকরণ, যা হয় মেরুকরণযোগ্য অণুগুলো (দিকনির্ভর মেরুকরণ) এর মধ্যে নিহিত, অথবা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন অণুকে মেরুকরণের(বাঁকানো মেরুকরণ) মাধ্যমে বাঁকিয়ে তৈরি করা। দিকনির্ভর মেরুকরণ এর ফলাফল স্থায়ী দ্বিমেরু যেমন, পানির অণুতে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনের মাঝে ১০৪.৪৫° কোণ, যা তড়িৎক্ষেত্র ছাড়াই বজায় থাকে। এর ফলে তৈরি হয় ম্যাক্রোস্কোপিক মেরুকরণ।
যখন বাইরে থেকে কোন তড়িৎক্ষেত্র প্রয়োগ করা হয়, তখন দিকনির্ভর মেরুকরণের অনুগুলোর দুইমেরুর মাঝে দূরত্ব সমান থাকে, যদিও মেরুকরণের দিক নিজ থেকেই ঘুরে। এই ঘূর্ণন হয় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যা তার ঘাত এবং পারিপার্শ্বীক অণুর সান্দ্রতার উপর নির্ভর করে, কারণ এই ঘূর্ণন হলো তাৎক্ষণিক ক্রিয়া। দ্বিমেরু মেরুকরণ উচ্চ কম্পাঙ্কে কাজ করে না। কোন তরলে অণু প্রতি পিকো সেকেন্ডে এক রেডিয়ান করে ঘুরে যা লস করে 1011 Hz (মাইক্রোওয়েভ রিজিয়নে)। তড়িৎক্ষেত্রে এই সময়ক্ষেপন তাপ এবং ঘর্ষণ উৎপন্ন করে।
যখন তড়িৎক্ষেত্র অবলোহিত বা আরো কম কম্পাঙ্কে প্রয়োগ করা হয়, তড়িৎক্ষেত্রের ফলে অণুগুলোতে টান লেগে বেঁকে যায় এবং মেরুকরণ ভরবেগ পরিবর্তিত হয়। অণুগুলো কাঁপার কম্পাঙ্ক হলো প্রায় সময়ের বিপরীত মান যা অণুগুলোকে বাঁকিয়ে দেয়, এটি হলো অবলোহিত কম্পাঙ্কে বাঁকানো মেরুকরণ।
আয়নিক মেরুকরণ
[সম্পাদনা]আয়নিক মেরুকরণ হচ্ছে এমন মেরুকরণ যা আয়নিক স্ফটিকগুলিতে (উদাহরণস্বরূপ, NaCl) ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আয়নগুলিতে আপেক্ষিক স্থানচ্যুতির কারণে হয়।
যদি কোনও স্ফটিক বা অণুতে একাধিক ধরনের পরমাণু থাকে তবে পুরো স্ফটিক বা অণুতে পরমাণুর আধান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক একদিকে দিকে ঝুঁকে থাকে। ফলে, যখন স্ফটিক জালি কম্পন বা আণবিক কম্পন হয়, তখন তা অণুগুলোকে আপেক্ষিকভাবে স্থানচ্যুত করে, তখন ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আধানের কেন্দ্রগুলিও স্থানচ্যুত হয়। এই কেন্দ্রগুলির অবস্থানের স্থানচ্যুতি তার ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করে। যখন কেন্দ্রগুলি পরস্পর অনুরুপ হয় না, তখন পুরো অণু বা স্ফটিকেই মেরুকরণ দেখা দেয়, এই মেরুকরণকেই আয়নিক মেরুকরণ বলে।
আয়নিক মেরুকরণের ফলে ফেরোইলেকট্রিক প্রভাবের পাশাপাশি দ্বিমেরু মেরুকরণও হয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট দিক বরাবর স্থায়ী দ্বিমেরুকে সারিবদ্ধ করার ফলে সৃষ্ট ফেরোইলেকট্রিক স্থানচ্যুতিকে অর্ডার-ডিসঅর্ডার স্থানচ্যুতি দশা বলে। স্ফটিকগুলিতে আয়নিক মেরুকরণের ফলে যে স্থানচ্যুতি ঘটে, তাকে ডিসপ্লেসিভ স্থানচ্যুতি দশা বলে।
জীবকোষে
[সম্পাদনা]আয়নিক মেরুকরণ কোষগুলিতে শক্তি-সমৃদ্ধ যৌগগুলির (মাইটোকন্ড্রিয়ায় প্রোটন পাম্প) উৎপাদন সক্রিয় করে এবং প্লাজমা ঝিল্লিতে রেস্টিং-পটেনশিয়াল প্রতিষ্ঠা করে, আয়নের প্রতিকূল পরিবহনকে শক্তিশালী করে এবং কোষ থেকে কোষে যোগাযোগ (যেমন Na /K -ATPase এনজাইম) সক্রিয় করে।
প্রাণীর দেহের টিস্যুগুলিতে কোষগুলো বৈদ্যুতিকভাবে মেরুকৃত থাকে -অন্যভাবে বললে, তারা কোষের প্লাজমা ঝিল্লি জুড়ে একটি বিভব পার্থক্য বজায় রাখে, একে ঝিল্লি বিভব পার্থক্য বলে। এই বৈদ্যুতিক মেরুকরণ আয়ন পরিবহনকারী এবং আয়ন পরিবহন চ্যানেলের মধ্যে পরস্পরে জটিল প্রকৃয়ায় ক্রিয়া করে।
কোষের নিউরনের ঝিল্লিতে আয়ন পরিবহন চ্যানেল ভিন্ন হওয়ার ফলে স্নায়ু, তন্তু সহ বিভিন্ন অংশগুলোতে আয়ন পৌঁছানো সহ বিভিন্ন তড়িৎ ক্রিয়াগুলো ভিন্ন হয়। ফলে কখনো নিউরনের ঝিল্লির কিছু অংশ উত্তেহিত হতে পারে (কাজ করতে সক্ষম) যখন হয়তো অন্য অংশ তা হবে না।
অস্তরক বিকিরণ
[সম্পাদনা]পদার্থবিজ্ঞানে, অস্তরক বিকিরণ হলো প্রদত্ত তড়িৎক্ষেত্রের কম্পাঙ্কের সাপেক্ষে কোন অস্তরক পদার্থের তড়িৎ ভেদ্য়তার উপর নির্ভরশীলতা। যেহেতু এখানে মেরুকরণের পরিবর্তন এবং তড়িৎক্ষেত্র পরিবর্তনের মধ্যে একটা বিরতি আছে, তাই অস্তরকের তড়িৎভেদ্যতা তড়িৎক্ষেত্রের কম্পাঙ্কের একটি জটিল ফাংশন। অস্তরক পদার্থের প্রয়োগগুলো এবং মেরুকরণ ব্যবস্থা বিশ্লেষণে অস্তরক বিকিরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পদার্থের বিকিরণের একটা উদাহরণ হলোঃ তরঙ্গ বিস্তারের জন্য কোন মাধ্যমের কম্পাঙ্ক-নির্ভর প্রতিক্রিয়া।
যখন কম্পাঙ্ক বেশি হয়ঃ
- দ্বিমেরু মেরুকরণ মাইক্রোওয়েভ রিজিয়নে (প্রায় 1010 Hz) তড়িৎক্ষেত্রের তরঙ্গ অনুসরণ করতে পারে না।
- আয়নিক মেরুকরণ এবং অণুর বাঁকানো মেরুকরণ তড়িৎক্ষেত্রের অবলোহিত এবং অতি-অবলোহিত রিজিয়নে (প্রায় 1013 Hz) তরঙ্গের পথ অনুসরণ করতে পারে না।
- তড়িৎ মেরুকরণ অতিবেগুনী রশ্মী রিজিয়নে (প্রায় 1015 Hz) তার প্রতিক্রিয়া হারিয়ে ফেলে।
কম্পাঙ্ক অতিবেগুনী রশ্মী রিজিয়নের উপরে হলে তড়িৎভেদ্যতা ধ্রুবক ε0 হয়, এটি হলো শূন্যস্থানের তড়িৎভেদ্যতা। কারণ তড়িৎ ভেদ্যতা তড়িৎক্ষেত্র এবং মেরুকরণের শক্তিমত্তা নির্দেশ করে, যদি কোনও মেরুকরণ প্রক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হারায় তবে তড়িৎভেদ্যতা হ্রাস পায়।
অস্তরকীয় শিথিলতা
[সম্পাদনা]অস্তরকীয় শিথিলতা হলো, কোনও পদার্থের অস্তরক ধ্রুবকের ক্ষণিকের বিলম্ব (বা বিরতি)। এটি সাধারণত কোন অস্তরক মাধ্যমে (উদাঃ ধারকের অভ্যন্তরে বা দুটি বৃহত পরিবাহীপৃষ্ঠের মাঝে) তড়িৎক্ষেত্রের পরিবর্তনের সাপেক্ষে আণবিক মেরুকরণে বিলম্বের কারণে হয়ে থাকে। তড়িৎক্ষেত্রের পরিবর্তনে অস্তরকীয় শিথিলতা পরিবর্তনশীল চৌম্বকক্ষেত্রের (উদাঃ, আবেশক বা ইন্ডাক্টর অথবা ট্রান্সফর্মার কোরে) হিস্টেরেসিসের সমতুল্য হতে পারে। সাধারণভাবে অস্তরকীয় শিথিলতা একটা বিরতি যা একটি লিনিয়ার বা রৈখিক প্রকৃয়া। তড়িৎক্ষেত্র ও মেরুকরণের মাঝের এই বিরতি গিবস মুক্ত শক্তির অপরিবর্তনীয় অবক্ষয়কে বোঝায়।
পদার্থবিদ্যায়, অস্তরকীয় শিথিলতা বলতে বোঝায় কোন অস্তরক মাধ্যমে দুলন্ত বা অসিলেট করতে থাকা বাইরের তড়িৎক্ষেত্রের বিরাম। একে অনেক সময় কম্পাঙ্কের ফাংশনে তড়িৎভেদ্যতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়।,যা আদর্শ মাধ্যমে ডিবে সমীকরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।
ডিবে শিথিলতা
[সম্পাদনা]ডিবে শিথিলতা হলো, বাইরের বিকল্প তড়িৎক্ষেত্রের প্রতি আদর্শ ও নিরবচ্ছিন্ন সংখ্যক দ্বিমেরুর অস্তরক শিথিলতা। একে সাধারণত কোন মাধ্যমের তড়িৎক্ষেত্রের কম্পাঙ্ক ω এর ফাংশন জটিল তড়িৎভেদ্যতা ε হিসেবে প্রকাশ করা হয়ঃ
- এখানে, ε∞ হলো উচ্চ কম্পাঙ্কে তড়িৎভেদ্যতা যখন কম্পাঙ্ক সীমা, Δε = εs − ε∞ যেখানে εs হলো স্ট্যাটিক স্বল্প কম্পাঙ্কে তড়িৎভেদ্যতা
এবং τ হলো, কোন মাধ্যমের শিথিলতা বিরতিকাল।
এখন সমীকরণের প্রকৃত এবং কাল্পনীক অংশ তুলনা করে পাই,[৮]
অস্তরকীয় লসকে প্রকাশ করা হয় এভাবেঃ
অস্তরকীয় শিথিলতার মডেলটি তৈরি করেন পদার্থবিজ্ঞানী পিটার ডিবে (১৯১৩)[৯] তার নামানুসারেই এর নামকরন করা হয়। এটি একটি গতিশীল মেরুকরনের বিরতিকালের জন্য প্রযোজ্য।
ডিবে সমীকরনের বিভিন্নরুপ
[সম্পাদনা]- কোল-কোল সমীকরণ
- এই সমীকরণটি ব্যবহৃত হয় যখন অস্তরক লসের শীর্ষ সমমিতিক সম্প্রসারণ দেখায়।
- কোল – ডেভিডসন সমীকরণ
- এই সমীকরণটি ব্যবহৃত হয় যখন অস্তরক লস পিক অসমমিতিক সম্প্রসারণ দেখায়।
- হাভরিলিয়াক–নেগামি শিথিলতা
- এই সমীকরণটি সমমিতিক ও অসমমিতিক উভয় সম্প্রসারণ বিবেচনা করে।
- কোহলরাউশ – উইলিয়ামস – ওয়াটস ফাংশন
- প্রসারিত এক্সপনেনশীয়াল সূচক ফাংশনের ফুরিয়ার রূপান্তর।
- কুরি-ভন শ্যুইডলার সূত্র
- এটি শক্তি সূত্র অনুসারে প্রদত্ত ডিসি তড়িৎক্ষেত্রে অস্তরকের প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা ভারী এক্সপনেনশীয়াল ফাংশনের ইন্টিগ্রাল আকারে প্রকাশ করা যেতে পারে।
প্যারাইলেক্ট্রিসিটি
[সম্পাদনা]আরও দেখুন: ফেরোইলেক্ট্রিসিটি
প্যারাইলেক্ট্রিসিটি হলো, প্রদত্ত তড়িৎক্ষেত্রের ফলে পদার্থগুলোর (বিশেষত সিরামিক) মেরুকৃত হওয়ার ক্ষমতা। ফেরোইলেক্ট্রিসিটির বিপরীত, যা এমনকি পদার্থে কোন স্থায়ী তড়িৎ দ্বিমেরুর না থাকলেও হতে পারে এবং তড়িৎক্ষেত্রে অপসারণে পদার্থের মেরুকরণ শূন্য হয়ে যায়।[১০] পদার্থের প্যারাইলেক্ট্রিক আচরণের কারণ হতে পারে- আলাদাভাবে প্রত্যেক আয়নের বিকৃতি (নিউক্লিয়াস থেকে বৈদ্যুতিক মেঘের বিচ্যুতি) অথবা অণুগুলির মেরুকরণ অথবা আয়নসমুহের বিন্যাস বা ত্রুটির মিশ্রণ।
স্ফটিক দশায় প্যারাইলেক্ট্রিসিটি দেখা যেতে পারে যদি তাদের দ্বিমেরুগুলো বিন্যাস্ত না থাকে। ফলে এটি বিন্যাস্ত হতে প্রয়োজনীয় বিভব পার্থক্য বাইরের তড়িৎক্ষেত্রকে দুর্বল করে দিতে পারে।
উচ্চ ডাইইলেক্ট্রিক বা অস্তরক ধ্রুবক সম্পন্ন একটি প্যারাইলেকট্রিক পদার্থের উদাহরণ হলো, স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট।
LiNbO3 স্ফটিকটি 1430 কেলভিন তাপমাত্রার নিচে ফেরোইলেক্ট্রিক এবং এর উপরে এটি একটি বিচ্যুত প্যারাইলেক্ট্রিক। একইভাবে, অন্যান্য পেরভস্কাইটগুলিও উচ্চ তাপমাত্রায় প্যারাইলেক্ট্রিসিটি প্রদর্শন করে।
রেফ্রিজারেশনের কাজে প্যারাইলেকট্রিসিটির সমূহ সম্ভবনা রয়েছে। রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় তড়িৎক্ষেত্র প্রয়োগ করে প্যারাইলেকট্রিক পদার্থকে মেরুকরণ করলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং তড়িৎক্ষেত্রের অপসারণে তাপমাত্রা হ্রাস পায়।[১১] একটি তাপ পাম্প যা প্যারাইলেক্ট্রিককে মেরুকরণ করলে এটি পরিবেষ্টিত তাপমাত্রায় (অতিরিক্ত তাপকে ছেড়ে দিয়ে) ফিরে যায়, একে তখন কোন জিনিসের (যাকে ঠান্ডা করতে হবে) তার সংস্পর্শে আনলে এবং পদার্থের মেরুকরণ অপসারণ করলেই তার হিমায়ন ঘটে।
পরিবর্তনশীলতা
[সম্পাদনা]টিউনাবল বা পরিবর্তনশীল অস্তরক হলো এমন অন্তরক বিভব পরিবর্তনের সাথে সাথে যার তড়িৎ আধান সংরক্ষণের ক্ষমতা পরিবর্তিত হয়।[১২][১৩]
সাধারণত স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট (SrTiO3) স্বল্প তাপমাত্রার ডিভাইসগুলিতে ব্যবহৃত হয় আর বেরিয়াম স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট (Ba1−xSrxTiO3) স্বাভাবিক বাসার তাপমাত্রার ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়, মাইক্রোওয়েভ অস্তরক এবং কার্বন ন্যানোটিউব (সিএনটি) যৌগগুলো।[১২][১৪][১৫]
২০১৩ সালে বহুস্তর বিশিষ্ট স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট দ্বারা প্রস্তুতকৃত যার প্রতি স্তরে স্ট্রনসিয়াম অক্সাইডের একটি করে শীট ক্রমানুসারে সন্নিবেশিত করে একপ্রকার অস্তরক তৈরি করা হয় যা প্রায় 125 গিগাহার্টজ পর্যন্ত অপারেটিংয়ে সক্ষম। উপাদানটি আণবিক বিম এপিট্যাক্সির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল। এতে দুটো ভিন্ন পদার্থের স্তরের মাঝে ক্রিস্টাল স্পেসিংয়ের ফলে স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট লেয়ারের মধ্যে একপ্রকার ফাঁক তৈরি হয় যা এটিকে অপেক্ষাকৃত কম স্থিতিশীল এবং টিউনাবল বা পরিবর্তনশীল করে তোলে।[১২]
Ba1−xSrxTiO3 এর মতো সিস্টেমগুলোতে পরিবেষ্টিত( বা এমবিয়েন্ট) তাপমাত্রার সামান্য নিচে একটি প্যারাইলেকট্রিক–ফেরোইলেকট্রিক ট্রানজিশন রয়েছে। এজাতীয় ফিল্ম থেকে সিস্টেম ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
ব্যবহারসমুহ
[সম্পাদনা]ধারক
[সম্পাদনা]বিস্তারিত প্রবন্ধঃ ধারক
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ধারকগুলি সাধারণত সঞ্চিত ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আধানের মধ্যে মধ্যবর্তী মাধ্যম হিসাবে উচ্চ তড়িৎভেদ্যতা সম্পন্ন অস্তরক পদার্থ ব্যবহার করে। এদের ধারক অস্তরক বলা হয়।[১৬]
এই ধরনের অস্তরক ব্যবহার করার সুবিধা হলো এটি পরিবাহী পাতগুলোকে সরাসরি তড়িৎ স্পর্শ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও উচ্চ তড়িৎভেদ্যতা প্রদত্ত বিভবে আধানকে আরো ভালো সঞ্চয় করতে পারে।
সুতরাং তড়িৎভেদ্যতা ε, দুই পাতের মাঝে দূরত্ব d, বিভব পার্থক্য v এবং আধান ঘণত্ব σε হলে,
এবং প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ধারকত্ব,
এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে বড় তড়িৎভেদ্যতা ε অধিকতর চার্জ সঞ্চিত করে যার ফলাফল বৃহৎ ধারকত্ব। ধারকগুলির জন্য ব্যবহৃত অস্তরক পদার্থগুলিও এমনভাবে বেছে নেওয়া হয় যেগুলি আয়নীকরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী।
অস্তরক অনুনাদক
[সম্পাদনা]বিস্তারিত প্রবন্ধঃ অস্তরক অনুনাদক
অস্তরক অনুনাদী দোলক(DRO) হলো একপ্রকার কম্পোনেন্ট যা সরু কম্পাঙ্ক(প্রধানত মাইক্রোওয়েভ) রেঞ্জে মেরুকরণে অনুনাদ দেয়। এটি কুঁচকানো সিরামিক দিয়ে তৈরি যার উচ্চ অস্তরক ধ্রুবক রয়েছে। এটি অস্তরকের অতি সাম্প্রতিক একটি আবিষ্কার, যা এখনো পুরোপুরি উদ্ঘাটন করা যায়নি।
বিএসটি পাতলা ফিল্ম
[সম্পাদনা]২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকান সেনা গবেষণা ল্যাবরেটরি (ARL) এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিল। বেরিয়াম স্ট্রনসিয়াম টাইটানেট (বিএসটি), একটি ফেরোইলেক্ট্রিক পাতলা ফিল্ম, যা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এবং মাইক্রোওয়েভ সিগনালের উপাদানগুলি যেমন বিভব-নিয়ন্ত্রিত দোলক, সিগনালের টিউন বা পরিবর্তন ছাঁকনী এবং দশা পরিবর্তনের উন্নতির জন্য এটির উপর গবেষণা হয়েছিল।[১৭]
গবেষণাটি ছিল সেনাবাহিনীকে উচ্চ-টিউনেবল, মাইক্রোওয়েভ রেঞ্জে কাজ করার উপযোগী উপকরণ সরবরাহ করার প্রয়াসের অংশ ছিল, যা তীব্র তাপমাত্রায় ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে পারবে।[১৮] এই গবেষণার ফলে বাক বেরিয়াম স্ট্রনসিয়াম টাইটানেটের টিউনাবিলিটি বা পরিবর্তনশীলতায় উন্নতি হয়েছে, যা তড়িৎউপাদানগুলির জন্য পাতলা ফিল্ম সক্রিয়কারী।[১৯]
2004 এর একটি গবেষণাপত্রে ARL গবেষকরা অনুসন্ধান করেছেন যে সামান্য পরিমাণ সক্রিয়কারী ডোপান্ট কীভাবে বিএসটি-র মতো ফেরোইলেকট্রিক পদার্থগুলির বৈশিষ্ট্য নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দেয়।[২০]
গবেষকরা বিএসটি পাতলা ফিল্মকে ম্যাগনেসিয়াম দিয়ে ডোপ করেন এবং প্রাপ্ত ফলাফলের "কাঠামো, পরিকাঠামো, পৃষ্ঠের গঠন এবং ফিল্ম / সাবস্ট্রেটের গাঠনিক মানের" বিশ্লেষণ করেন। এই ডোপগুলো মাইক্রোওয়েভ রেঞ্জের ডিভাইসগুলিতে "উন্নত অস্তরক বৈশিষ্ট্য, কম তড়িৎপ্রবাহ লস এবং ভাল টিউনবিলিটি বা পরিবর্তনশীলতা" দেখিয়েছিল।[১৭]
কিছু ব্যবহারিক অস্তরক
[সম্পাদনা]অস্তরক পদার্থ কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় হতে পারে। এমনকি শূন্যস্থানও অস্তরক হতে পারে, প্রায় ক্ষতিহীন অস্তরক যদিও এর আপেক্ষিক অস্তরক ধ্রুবক একক হয়।[২১]
কঠিন অস্তরকগুলি তড়িৎ প্রকৌশলে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় এবং অনেক কঠিন অস্তরকই খুব ভাল অন্তরক। যেমন, চীনামাটি, কাঁচ এবং বেশিরভাগ প্লাস্টিক। বায়ু, নাইট্রোজেন এবং সালফার হেক্সাফ্লোরাইড তিনটি সর্বাধিক ব্যবহৃত বায়বীয় অস্তরক।
- পদার্থের বহিরাবরণীতে পেরিলিনের মতো অস্তরকগুলির ব্যবহার পরিবেশের সাথে একটি অস্তরকবাধা তৈরি করে।
- খনিজ তেল তরল অস্তরক হিসাবে এবং শীতলকরণে সহায়তার জন্য ট্রান্সফর্মারের অভ্যন্তরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বৈদ্যুতিক গ্রেডের ক্যাস্টর অয়েল এর মতো উচ্চ অস্তরক ধ্রুবক সম্পন্ন তরল অস্তরকগুলি প্রায়ই উচ্চ বিভবের ধারকগুলিতে করোনার ডিসচার্জ রোধ করতে এবং ধারকত্ব বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করা হয়।
- যেহেতু অস্তরকগুলি বিদ্যুতের প্রবাহকে প্রতিহত করে, তাই এটি অস্তরকপৃষ্ঠতে আটকে থাকা অতিরিক্ত অভ্যন্তরীন তড়িৎ চার্জ ধরে রাখতে পারে। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনাক্রমে (ট্রাইডোইলেকট্রিক এফেক্ট) অস্তরকটি ক্ষয়ে যেতে পারে। ভ্যান ডি গ্রাফ জেনারেটর বা ইলেক্ট্রোফোরাস অথবা ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জের ক্ষেত্রে এটি এমনকি ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
- বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত অস্তরকগুলি, যাদের ইলেক্ট্রেট বলা হয় (যা ফেরোইলেক্ট্রিক নয়), এরা অতিরিক্ত অভ্যন্তরীণ চার্জ ধরে রাখতে পারে বা "হিমায়িত" রাখতে পারে। ইলেক্ট্রেটগুলির একটি আধা(সেমি) তড়িৎক্ষেত্র রয়েছে, এবং এটি চৌম্বকক্ষেত্রের সমতুল্য। দৈনন্দিন জীবনে এবং শিল্পে এদের অনেক ব্যবহার রয়েছে।
- এদের মধ্য দিয়ে বাইরে থেকে কোন বিভব প্রয়োগ করা হলে বা কোন প্রকার যান্ত্রিক চাপ বা (সমতুল্য) শারীরিক আকার পরিবর্তনের শিকার হওয়ার সাথে সাথে কিছু কিছু অস্তরক একটি সম্ভাব্য বিভব পার্থক্য তৈরি করতে পারে। একে পাইজোইলেক্ট্রিসিটি বলে। পাইজোইলেক্ট্রিক উপকরণগুলি অত্যন্ত দরকারী অস্তরকের আরেকটি শ্রেণি।
- কিছু আয়নিক স্ফটিক এবং পলিমার অস্তরক একটি স্বতঃস্ফূর্ত দ্বিমেরু ভরবেগ প্রদর্শন করে, যা প্রয়োগকৃত তড়িৎক্ষেত্রের বিপরীত হতে পারে। এই আচরণকে ফেরোইলেকট্রিক এফেক্ট বলা হয়। এই উপকরণগুলি বহির্মুখী প্রয়োগ করা চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে ফেরোম্যাগনেটিক পদার্থগুলি যেভাবে আচরণ করে তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ফেরো ইলেকট্রিক উপকরণগুলিতে প্রায়ই খুব উচ্চ অস্তরক ধ্রুবক থাকে, যা একে ধারকের জন্য বেশ দরকারী করে তোলে।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- তড়িৎ ভেদ্যতার সাপেক্ষে পদার্থের প্রকার
- প্যারাচৌম্বক পদার্থ
- ক্লসিয়াস-মসোট্টি সম্পর্ক
- অস্তরকীয় শোষন
- অস্তরকীয় ক্ষতি
- অস্তরকের দৃঢ়তা
- অস্তরকের বর্ণালী বীক্ষন
- EIA শ্রেণী ১ অস্তরক
- EIA শ্রেণী ২ অস্তরক
- উচ্চ-ক অস্তরক
- নিম্ন-ক অস্তরক
- নিষ্ক্রমণ
- রৈখিক প্রতিক্রিয়া ফাংশন
- মেটা পদার্থ
- RC বিলম্ব
- ঘূর্ণনশীল ব্রাউনীয় গতি
- প্যাশ্চেনের সূত্র – গ্যাসীয় চাপের ফলে অস্তরকীয় দৃঢ়তা
- পৃথকীকারক (বৈদ্যুতিক)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Dielectric ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ এপ্রিল ২০২১ তারিখে. Encyclopædia Britannica: "Dielectric, insulating material or a very poor conductor of electric current. When dielectrics are placed in an electric field, practically no current flows in them because, unlike metals, they have no loosely bound, or free, electrons that may drift through the material."
- ↑ Arthur R. von Hippel, in his seminal work, Dielectric Materials and Applications, stated: "Dielectrics... are not a narrow class of so-called insulators, but the broad expanse of nonmetals considered from the standpoint of their interaction with electric, magnetic, or electromagnetic fields. Thus we are concerned with gases as well as with liquids and solids, and with the storage of electric and magnetic energy as well as its dissipation." (Technology Press of MIT and John Wiley, NY, 1954).
- ↑ Thoms, E.; Sippel, P.; et., al. (২০১৭)। "Dielectric study on mixtures of ionic liquids"। Sci. Rep.। 7 (1): 7463। arXiv:1703.05625 । ডিওআই:10.1038/s41598-017-07982-3। পিএমআইডি 28785071। পিএমসি 5547043 । বিবকোড:2017NatSR...7.7463T।
- ↑ Belkin, A.; Bezryadin, A.; Hendren, L.; Hubler, A. (২০১৭)। "Recovery of Alumina Nanocapacitors after High Voltage Breakdown"। Sci. Rep.। 7: 932। ডিওআই:10.1038/s41598-017-01007-9। পিএমআইডি 28428625। পিএমসি 5430567 । বিবকোড:2017NatSR...7..932B।
- ↑ Daintith, J. (১৯৯৪)। Biographical Encyclopedia of Scientists। CRC Press। পৃষ্ঠা 943। আইএসবিএন 978-0-7503-0287-6।
- ↑ James, Frank A.J.L., editor. The Correspondence of Michael Faraday, Volume 3, 1841–1848, "Letter 1798, William Whewell to Faraday, p. 442."। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৯। The Institution of Electrical Engineers, London, United Kingdom, 1996. আইএসবিএন ০-৮৬৩৪১-২৫০-৫
- ↑ Microwave Engineering – R. S. Rao (Prof.)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-০৮।
- ↑ Kao, Kwan Chi (২০০৪)। Dielectric Phenomena in Solids। London: Elsevier Academic Press। পৃষ্ঠা 92–93। আইএসবিএন 978-0-12-396561-5।
- ↑ Debye, P. (1913), Ver. Deut. Phys. Gesell. 15, 777; reprinted 1954 in collected papers of Peter J.W. Debye. Interscience, New York
- ↑ Chiang, Y. et al. (1997) Physical Ceramics, John Wiley & Sons, New York
- ↑ Kuhn, U.; Lüty, F. (১৯৬৫)। "Paraelectric heating and cooling with OH—dipoles in alkali halides"। Solid State Communications। 3 (2): 31। ডিওআই:10.1016/0038-1098(65)90060-8। বিবকোড:1965SSCom...3...31K।
- ↑ ক খ গ Lee, Che-Hui; Orloff, Nathan D.; Birol, Turan; Zhu, Ye; Goian, Veronica; Rocas, Eduard; Haislmaier, Ryan; Vlahos, Eftihia; Mundy, Julia A.; Kourkoutis, Lena F.; Nie, Yuefeng; Biegalski, Michael D.; Zhang, Jingshu; Bernhagen, Margitta; Benedek, Nicole A.; Kim, Yongsam; Brock, Joel D.; Uecker, Reinhard; Xi, X. X.; Gopalan, Venkatraman; Nuzhnyy, Dmitry; Kamba, Stanislav; Muller, David A.; Takeuchi, Ichiro; Booth, James C.; Fennie, Craig J.; Schlom, Darrell G. (২০১৩)। "Self-correcting crystal may lead to the next generation of advanced communications"। Nature। 502 (7472): 532–6। ডিওআই:10.1038/nature12582। পিএমআইডি 24132232। বিবকোড:2013Natur.502..532L।
- ↑ Lee, C. H.; Orloff, N. D.; Birol, T.; Zhu, Y.; Goian, V.; Rocas, E.; Haislmaier, R.; Vlahos, E.; Mundy, J. A.; Kourkoutis, L. F.; Nie, Y.; Biegalski, M. D.; Zhang, J.; Bernhagen, M.; Benedek, N. A.; Kim, Y.; Brock, J. D.; Uecker, R.; Xi, X. X.; Gopalan, V.; Nuzhnyy, D.; Kamba, S.; Muller, D. A.; Takeuchi, I.; Booth, J. C.; Fennie, C. J.; Schlom, D. G. (২০১৩)। "Exploiting dimensionality and defect mitigation to create tunable microwave dielectrics"। Nature। 502 (7472): 532–536। hdl:2117/21213। ডিওআই:10.1038/nature12582। পিএমআইডি 24132232। বিবকোড:2013Natur.502..532L।
- ↑ Kong, L.B.; Li, S.; Zhang, T.S.; Zhai, J.W.; Boey, F.Y.C.; Ma, J. (২০১০-১১-৩০)। "Electrically tunable dielectric materials and strategies to improve their performances"। Progress in Materials Science। 55 (8): 840–893। ডিওআই:10.1016/j.pmatsci.2010.04.004।
- ↑ Giere, A.; Zheng, Y.; Maune, H.; Sazegar, M.; Paul, F.; Zhou, X.; Binder, J. R.; Muller, S.; Jakoby, R. (২০০৮)। "Tunable dielectrics for microwave applications"। 2008 17th IEEE International Symposium on the Applications of Ferroelectrics। পৃষ্ঠা 1। আইএসবিএন 978-1-4244-2744-4। ডিওআই:10.1109/ISAF.2008.4693753।
- ↑ Müssig, Hans-Joachim. Semiconductor capacitor with praseodymium oxide as dielectric, টেমপ্লেট:US Patent published 2003-11-06, issued 2004-10-18, assigned to IHP GmbH- Innovations for High Performance Microelectronics/Institute Fur Innovative Mikroelektronik
- ↑ ক খ "Novel tunable acceptor doped BST thin films for high quality tunable microwave devices"। Revista Mexicana de Fi´sica।
- ↑ Nair, K. M.; Guo, Ruyan; Bhalla, Amar S.; Hirano, S.-I.; Suvorov, D. (২০১২-০৪-১১)। Developments in Dielectric Materials and Electronic Devices: Proceedings of the 106th Annual Meeting of The American Ceramic Society, Indianapolis, Indiana, USA 2004 (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। আইএসবিএন 9781118408193।
- ↑ Nair, K. M.; Bhalla, Amar S.; Hirano, S.-I.; Suvorov, D.; Schwartz, Robert W.; Zhu, Wei (২০১২-০৪-১১)। Ceramic Materials and Multilayer Electronic Devices (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। আইএসবিএন 9781118406762।
- ↑ Cole, M. W.; Hubbard, C.; Ngo, E.; Ervin, M.; Wood, M.; Geyer, R. G. (জুলাই ২০০২)। "Structure–property relationships in pure and acceptor-doped Ba1−xSrxTiO3 thin films for tunable microwave device applications"। Journal of Applied Physics (ইংরেজি ভাষায়)। 92 (1): 475–483। আইএসএসএন 0021-8979। ডিওআই:10.1063/1.1484231। বিবকোড:2002JAP....92..475C।
- ↑ Lyon, David (২০১৩)। "Gap size dependence of the dielectric strength in nano vacuum gaps"। IEEE Transactions on Dielectrics and Electrical Insulation। 20 (4): 1467–1471। ডিওআই:10.1109/TDEI.2013.6571470।
পরবর্তী পড়াশোনা
[সম্পাদনা]- Jackson, John David (আগস্ট ১০, ১৯৯৮)। Classical Electrodynamics (3 rd সংস্করণ)। John Wiley & Sons। আইএসবিএন 978-0-471-30932-1।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] ৮০৮ বা ৮৩২ পৃঃ
- Scaife, Brendan (সেপ্টেম্বর ৩, ১৯৯৮)। Principles of Dielectrics (Monographs on the Physics & Chemistry of Materials) (2 nd সংস্করণ)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0198565574।
অতিরিক্ত তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Electromagnetism ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুন ২০১১ তারিখে – একটি অনলাইন বইয়ের অধ্যায়
- ডাইলেট্রিক উপাদান