সূরা আর-রাহমান

কুরআন শরীফের ৫৫তম সূরা

সূরা আর রহমান (আরবি: الرحمن) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৫৫ তম সূরা; এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৭৮ এবং রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৩। সূরা আর রহমান মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।[][]

আর রাহমান
الرحمن
সূরা আর-রহমান
শ্রেণীমাক্কী সূরা
নামের অর্থপরম দয়াময় আল্লাহ
অবতীর্ণ হওয়ার সময়মদীনায় হিযরাতের পূর্বে
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম৫৫
আয়াতের সংখ্যা৭৮
পারার ক্রম২৭
রুকুর সংখ্যা
সিজদাহ্‌র সংখ্যানেই
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা ক্বামার
পরবর্তী সূরা →সূরা ওয়াকিয়াহ
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

এই সূরায় জ্বীন ও মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, "অতএব, তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?" এ আয়াতটি ৩১ বার রয়েছে।

শিরোনাম

সম্পাদনা
 
আর-রাহমান শব্দের আরবি ক্যালিগ্রাফি

এই সূরার শিরোনাম, যেটি সূরার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে যার অর্থ “পরম দয়াময় আল্লাহ”। এ সূরার মধ্যে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার রহমতের পরিচায়ক গুণাবলী ও তার বাস্তব ফলাফলের উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য সূরার মত এটিও (সূরা তওবা ব্যতীত) "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি) দিয়ে শুরু করা হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময় ও স্থান

সম্পাদনা

সূরা আর-রাহমান মক্কায় অবতীর্ণ। তবে মদীনায় অবতীর্ণ বলেও অভিমত পাওয়া যায় যার সূত্র আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, ইক্বরিমাহ এবং ক্বাতাদাহ। কিন্তু তাদেরই সূত্রে কথিত আছে যে এ সূরা মক্কায় অবতীর্ণ। অন্যান্য নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন হাদীসের ভিত্তিতে কুরতুবী সূরা আর রাহমানকে মক্কায় অবতীর্ণ হওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। জিনদের উপস্থিতিতে রাসুল কর্তৃক এ সূরা আবৃত্তির ঘটনা মক্কায়ই ঘটেছিল। পূর্ববর্তী সূরা ক্বামারে আল্লাহর অবাধ্যতার শাস্তিতে হিসাবে পৃথিবীতে গযব নাজিলের ইাতহাস বর্ণনা করে “ফা কাইফা কা-না য়াযাবি ওয়া নুযুর” বাক্যের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। অতঃপর ঈমান ও আনুগত্যকে উৎসহিত করার লক্ষ্যে বলা হয়েছে “ওয়া লাক্বাদ ইয়াসসারনার ক্কুর’আন”। এর বিপরীতে সূরা আর-রাহমানে আল্লাহপাকের ইহলোকিক ও পারলোকিক অবদানসমূহের কিছু কিছু উল্লেখ করা হয়েছে।[] সূরা হিযর-এরও আগে এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল। নবুয়তের ১০ম বৎসরে জ্বিনদের উপস্তিতিতে সূরা আর-রাহমান রাসুল কর্তৃক আবৃত্তির কথা সূরা আহ্‌ক্বাফে উল্লিখিত রয়েছে (আয়াত ২৯-৩২)। সুতরাং সূরা আহ্‌ক্বাফেরও আগে এটি নাযিল হয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ ক্বাবায় মাক্বামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে এ সূরা আবৃত্তি করতে থাকলে কাফিররা তাকে মুখে আঘাত করতে থাকে। তিনি আহত হতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে আবৃত্তি বন্ধ করতে বাধ্য হন।[]

নাযিল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিত

সম্পাদনা

মুহাম্মাদ কর্তৃক নবুয়াত লাভের পর মক্কার কাফেররা ইসলাম সম্পর্কে কৌতূহলী হয়। তারা আল্লাহ নামটির সঙ্গে পরিচিত ছিল। কিন্তু আল্লাহ’র অন্যান্য নাম যেমন ‘রাহমান’ সম্পর্কে অবহিত ছিল না। তারা যে সকল মূর্তির পূজা করতো সেগুলোর একাধিক নাম ছিল না। আল্লাহ’র গুণবাচক নাম ‘রাহমান’ শুনে তারা বলাবলি করতো ওয়া মা রাহমান, অর্থাৎ “রাহমান আবার কী?” এ সূরা নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহ’র ‘রাহমান’ নামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. মুফতী মুহাম্মাদ শফী: তফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, ৮ম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশান বাংলাদেশ, ঢাকা। ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৩৭
  2. Sayyid Abul Ala Maududi: Tafhim al-Qur'an
  3. মুফতী মুহাম্মাদ শফী: তফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, ৮ম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশান বাংলাদেশ, ঢাকা। ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৩৫-২৩৭,
  4. মুফতী মুহাম্মাদ শফী: তফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, ৮ম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশান বাংলাদেশ, ঢাকা। ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৩৭-২৩৮

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা