সুইফট

আন্তঃব্যাংক আর্থিক লেনদেনের বার্তা প্রেরণের সুরক্ষিত নেটওয়ার্ক

সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) হল ব্রাসেলস ভিত্তিক আন্তঃব্যাংক আর্থিক লেনদেনের বার্তা প্রেরণের একটি সুরক্ষিত নেটওয়ার্ক। নিরাপদ ও দ্রুত অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সুইফট একটি বার্তা নেটওয়ার্ক পদ্ধতি যা মূলত সংকেত লিপি বা নির্ধারিত কোডের মাধ্যমে বার্তা আদান প্রদান এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। এক্ষেত্রে লেনদেনের তারবার্তা (ওয়ার) এই কোডের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়। বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের ১১ হাজারের অধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুইফটের মাধ্যমে আন্তঃ ব্যাংকিং লেনদেনের বার্তা প্রেরণ তথা লেনদেন সম্পাদন করে থাকে। বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সুইফটের সদস্য। এজন্য অর্থ লেনদেনের সুবিধায় প্রত্যেক সদস্যকে ৮ বা ১১ কোডের একটি গোপন পিনও সরবারাহ করা হয়।[]

সুইফট
ধরনসমবায়
শিল্পটেলিযোগাযোগ
প্রতিষ্ঠাকাল৩মে,১৯৭৩; ৫১ বছর আগে (3May,1973)
সদরদপ্তরলা হুল্পে, বেলজিয়াম
প্রধান ব্যক্তি
জাভিয়ের পেরেজ-তাসো (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা)
পণ্যসমূহফিনান্সিয়াল টেলিযোগাযোগ
আয়১,০২,৪০,০০,০০০ ইউরো (২০২৩) উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
কর্মীসংখ্যা
৩,২৪০ (২০২৩) উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
ওয়েবসাইটসুইফট

ইতিহাস

সম্পাদনা

সুইফট ১৯৭৩ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস এ প্রতিষ্ঠিত হয়।[] সুইফট এর প্রতিষ্ঠাতা কার্ল রয়টার্স কিল্ড। পরবর্তীতে এটি আর্থিক লেনদেনের জন্য একটি সাধারণ মানদণ্ড, ডাটা প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি ও বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে যেটি বুরো কর্পোরেশন (Burroughs Corporation) এর তৈরি করা। সুইফট এর মাধ্যমে সর্ব প্রথম ১৯৭৭ সালে বার্তা বা মেসেজ প্রদান করা হয়।

ব্যবস্থাপনা

সম্পাদনা

সুইফটের ব্যবস্থাপনায় আছে একটি দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ যেটির প্রধান হলেন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। পর্ষদের অন্য সদস্যরা কোম্পানির প্রতিদিনের পরিচালনার তথ্য প্রধান নির্বাহীর নিকট রিপোর্ট করে। সুইফটের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভিয়ের পেরেজ-তাসো।[]

সুইফটের পরিচালনা কেন্দ্রসমূহ

সম্পাদনা

সুইফটের কার্যক্রম তিনটি তথ্য কেন্দ্র বা ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয় যেগুলো নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করে। তিনটি তথ্য কেন্দ্রর একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, একটি নেদারল্যান্ডস এবং একটি সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত। সুইফট তথ্য প্রেরণের জন্য সাবমেরিন কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে থাকে। যখন একটি তথ্য কেন্দ্র তথ্য প্রেরণে ব্যর্থ হয় তখন অন্য একটি তথ্য কেন্দ্র সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক পরিচালনা করে।

সুইফটের সেবাসমূহ

সম্পাদনা

সুইফট মূলত চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আর্থিক সেবা দিয়ে থাকে। যেগুলো হচ্ছে- সিকিউরিটিজ, ট্রেজারি এবং ডেরাইভেটিভস, বাণিজ্য সেবা এবং নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনা।

সিকিউরিটিজ

সম্পাদনা
  • সুইফটনেট ফিক্স (অপ্রচলিত)
  • সুইফটনেট ডেটা বিতরণ
  • সুইফটনেট তহবিল
  • সুইফটনেট অ্যাকর্ড ফর  সিকিউরিটিজ জন্য (অক্টোবর, ২০১৭ কার্যক্রম শেষ)

ট্রেজারি এবং ডেরাইভেটিভস

সম্পাদনা
  • সুইফটনেট অ্যাকর্ড ফর ট্রেজারি(অক্টোবর, ২০১৭ কার্যক্রম শেষ
  • সুইফটনেট আফ্রিমিসন্স
  • সুইফটনেট সিএলএস থার্ড পার্টি সার্ভিস

বাণিজ্য সেবা

সম্পাদনা
  • সুইফটনেট ট্রেড সার্ভিস ইউটিলিটি

নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনা

সম্পাদনা
  • সুইফটনেট বাল্ক পেমেন্ট
  • সুইফটনেট ক্যাশ রিপোর্টিং
  • সুইফটনেট ব্যতিক্রম এবং তদন্ত

নিরাপত্তা

সম্পাদনা

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের $৮১ মিলিয়ন ডলার সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে হ্যাকাররা চুরি করে।[] পরবর্তীতে সুইফট স্বীকার করেছে যে এটিই প্রথম নয়, আগেও এই জাতীয় প্রচেষ্টা এবং সেই অনুযায়ী বার্তা স্থানান্তর পদ্ধতির সুরক্ষা উন্নত করেছিলো। বাংলাদেশর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চুরির খবর প্রকাশিত হওয়ার পরপরই জানা যায় যে ভিয়েতনামের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকেও সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে হ্যাকাররা এই ধরনের হামলা চালিয়েছে। উভয় আক্রমণে অননুমোদিত সুইট বার্তা ইস্যু ও প্রেরণ করা হয়েছিলো এবং ম্যালওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছিলো।[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "About Us"SWIFT (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৩ 
  2. "History"SWIFT (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৩ 
  3. "Organisation & Governance"SWIFT (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৩ 
  4. Corkery, Michael (২০১৬-০৫-১২)। "Once Again, Thieves Enter Swift Financial Network and Steal"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৩ 
  5. "বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির আদ্যোপান্ত"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৩ 
  6. "Special Report: Cyber thieves exploit banks' faith in SWIFT transfer network"Reuters (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৫-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৩ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা