সারস্বত ব্রাহ্মণ হলো ভারতীয় হিন্দু ব্রাহ্মণদের একটি উপগোষ্ঠী, যারা মূলত সরস্বতী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করতো বলে ধরা হয়৷ ঋগ্বেদে উল্লেখিত সরস্বতী নদী প্রাচীন গান্ধার রাজ্যের (আফগানিস্তান) হিন্দুকুশ পর্বত থেকে উৎপন্ন এবং এর অববাহিকা আফগানিস্তান, ইরান এবং পাকিস্তানে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত যা প্রাচীন আর্যভূমি হিসেবে পরিচিত। [] রাজতরঙ্গীনিতে লিপিবদ্ধ পঞ্চগৌড় ব্রাহ্মণদের পাঁচটি বিভাগের একটি হলো এই সারস্বত ব্রাহ্মণরা। বাংলার বৈদ্যব্রাহ্মণরা, মূলত সারস্বত শ্রেণীর ব্রাহ্মণ। মূর্ধাভিষিক্ত বা ব্রহ্মক্ষত্রিয় হলো সারস্বত ব্রাহ্মণ শ্রেণির সর্বোচ্চ সম্প্রদায় যারা একই সাথে ব্রাহ্মণ্য আচার এবং ক্ষত্রিয়ের পেশা গ্রহণ করে ধর্ম ও ব্রাহ্মণকে রক্ষা করে।

চিত্রে সারস্বত ব্রাহ্মণদের সহিত ব্রহ্মক্ষত্রিয় পরশুরাম কোঙ্কণ অঞ্চল তৈরির জন্য বরুণদেবকে সমুদ্র পিছিয়ে নেওয়ার আদেশ দিচ্ছেন৷

ইতিহাস

সম্পাদনা

খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে কলহণের কাশ্মীরের ইতিহাস বিষয়ে রচিত রাজতরঙ্গিনী পুস্তকে বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরভাগে অবস্থিত পাঁচ পঞ্চগৌড় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের একটিকে সারস্বত ব্রাহ্মণ বলে উল্লেখ করা রয়েছে৷[] তারা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন৷ এদেরই মধ্যে একটি অংশ সিন্ধু প্রদেশের দক্ষিণ উপকূলভাগ ও গুজরাতের উপকূল অঞ্চলে বসবাস করতেন, যারা ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের দেশভাগের পরে বোম্বে রাজ্যে চলে আসেন৷ আরেকটি অংশ অবিভক্ত পাঞ্জাব এবং কাশ্মীর উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাস করতেন, যারা দেশভাগের পরে পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে আসেন৷ আরেকটি অংশ, যারা গৌড় সারস্বত ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত তাদের বাস বর্তমান ভারতের কোঙ্কণ উপকূল বরাবর৷[]

আগ্রাতে বসবাসকারী সারস্বত ব্রাহ্মণরা মনে করেন দশগ্রীব রাবণও ছিলেন সারস্বত ব্রাহ্মণ কারণ তার পিতা ছিলেন ঋষি বিশ্বশ্রবা৷[]

সংস্কৃতি

সম্পাদনা

সামাজিক অবস্থা

সম্পাদনা

গোয়াতে উচ্চতর চিৎপাবন ব্রাহ্মণদের কাছে সারস্বত ব্রাহ্মণরা জাতিগত শ্রেণিবিন্যাসের দিক থেকে নিকৃৃষ্ট৷ চিৎপাবনরা নিজেরা যেহেতু নিরামিষভোজী তাই তারা আমিষ ও মাংসভক্ষণকারী সারস্বত উপগোষ্ঠীর ব্রাহ্মণদের হীন চোখে দেখে৷[]

খাদ্যাভ্যাস

সম্পাদনা

গোয়াতে অবস্থিত সারস্বত ব্রাহ্মণরা আমিষাশী এবং তারা প্রায় সমস্ত ধরনের প্রাপ্ত মাছ ছাড়াও মুরগি ও পাঁঠার মাংস খেয়ে থাকেন৷[]

কর্ণাটক রাজ্যের উপকূল বরাবর বসবাসরত সারস্বত ব্রাহ্মণদের মধ্যে গৌড় সারস্বত ব্রাহ্মণরা হলেন মধ্ব বৈষ্ণব এবং মধ্বাচার্যের অনুগামী, অপরদিকে অন্যান্য সারস্বতরা স্মার্ত এবং শঙ্করাচার্যের অনুগামী৷[] তারা অধিকাংশই নিরামিষাশী৷[]

কোঙ্কণ অঞ্চলের সারস্বত ব্রাহ্মণদেরকে বেশিরভাগই আমিষাশী না বলে মৎস্যভোজী বলা যেতে পারে৷[] শুধু তাই নয়, উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা সারস্বত ব্রাহ্মণদের মধ্যেও এই মাছ খাওয়ার প্রবণতা অধিক দেখা যায়৷[১০][১১][১২]

বিবাহ পদ্ধতি

সম্পাদনা

সারস্বতরা একাধিক আলাদা আলাদা গোষ্ঠীতে বিভক্ত, যারা নিজেদের মধ্যে নিয়ম করে অন্তর্বিবাহ করে না তথা সমজাতির মধ্যে বিবাহ নিয়মবিরুদ্ধ৷[১৩] সারস্বত এবং অ-সারস্বত দের মধ্যে বর্তমানে বিবাহর হার বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও সারস্বতরা সাধারণত মৎস্যভোজী এবং কদাচিৎ আনুষ্ঠানিকভাবে মাংস খেয়ে থাকেন আবার অন্যান্য ব্রাহ্মণরা পুরোপুরি নিরামিষাশী৷[১৪][১৫]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sarasvati_River
  2. D. Shyam Babu and Ravindra S. Khare, সম্পাদক (২০১১)। Caste in Life: Experiencing Inequalities। Pearson Education India। পৃষ্ঠা 168। আইএসবিএন 9788131754399 
  3. James G. Lochtefeld (২০০২)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: N-Z। Rosen। পৃষ্ঠা 490–491। আইএসবিএন 9780823931804 
  4. Qureshi, Siraj (১২ অক্টোবর ২০১৬)। "A Dussehra without burning Ravana"India Today। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-২৯ 
  5. Arun Sinha। Goa Indica: A Critical Portrait of Postcolonial Goa। Bibliophile South Asia। পৃষ্ঠা 50। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০০২ 
  6. The Scheduled Castes, Volume 21। Oxford University Press। ১৯৯৫। পৃষ্ঠা 185। The Saraswat Brahmins are non-vegetarian and take fish of all kinds, chicken and mutton. 
  7. S. Anees Siraj (২০১২)। Karnataka State: Udupi District। Government of Karnataka, Karnataka Gazetteer Department। পৃষ্ঠা 189। 
  8. The Illustrated Weekly of India, Volume 91, Part 2। Published for the proprietors, Bennett, Coleman & Company, Limited, at the Times of India Press। ১৯৭০। পৃষ্ঠা 63। The Saraswats are largely a vegetarian community, whose coconut- based cuisine is famed for its variety. 
  9. Understanding Society: Readings in the Social Sciences। Macmillan International Higher Education। পৃষ্ঠা 273। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৯ 
  10. Frederick J. Simoons (১৯৯৪)। Eat Not this Flesh: Food Avoidances from Prehistory to the Present। University of Wisconsin Press। পৃষ্ঠা 284। 
  11. Kaw, M. K. (২০০১)। Kashmiri Pandits: Looking to the Future (ইংরেজি ভাষায়)। APH Publishing। আইএসবিএন 9788176482363। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  12. "Forward castes must think forward as well"। Hindustan Times। ২৩ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৯ 
  13. Kumar Suresh Singh (১৯৯৮)। India's Communities, Volume 6। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 3175। The Saraswat Brahman are an ancient and a dynamic community of India, spread from Jammu and Kashmir to Konkan. They are divided into various territorial endogamous groups, who at one time did not intermarry. 
  14. Gopa Sabharwal (২০০৬)। Ethnicity and Class: Social Divisions in an Indian City। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 131। আইএসবিএন 9780195678307In fact, marriages between Saraswat and non-Saraswat Brahmins are on the increase though they were unheard of before, mainly because the Saraswats eat fish and occasionally meat, while all other Brahmins are vegetarians. 
  15. Ramesh Bairy। Being Brahmin, Being Modern: Exploring the Lives of Caste Today। Routledge। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৩