সর্পদংশন
সর্পদংশন (ইংরেজি: Snake bite) হচ্ছে একপ্রকার আঘাতগ্রস্ততা, যা সাপের কামড়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই আঘাতটি সংঘটিত হয় প্রাণীটির বিষদাঁতের কামড়ের ফলে শরীরে বিষ প্রবেশের (envenomation) মাধ্যমে। সাপের বেশিরভাগ প্রজাতি নির্বিষ এবং সাধারণত তারা শিকার করে শিকারকে চারপাশ দিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে। তুলনামূলক অল্প সংখ্যক সাপই বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে শিকারকে হত্যা করে। গড়ে পৃথিবীতে সাপের ৩,০০০ প্রজাতি পাওয়া যায়, যার মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশের দংশন মানুষের জন্য বিপজ্জনক।[১][২] অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত পৃথিবীর সকল স্থানেই বিষধর সাপের দেখা মিলে।[৩] সাপ সাধারণত শিকারের জন্যই দংশন করে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে নিজেকে হুমকির সম্মুখীন মনে করলে ক্ষতিসাধন এড়াতেও তারা দংশন করে। যেহেতু একই সাপ দেখতে বিভিন্ন রকম হতে পারে, তাই নির্দিষ্ট কোনো প্রজাতি নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। এজন্য সঠিক চিকিৎসা পেতে অবশ্যই পেশাদার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।[৪][৫]
সর্পদংশন | |
---|---|
বিশেষত্ব | জরুরী চিকিৎসাবিজ্ঞান |
সর্পদংশনের ফলাফল বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন: সাপটির প্রজাতি, শরীরের কোন স্থানে কামড় দেওয়া হয়েছে, কতোটুকু বিষ প্রবেশ করানো হয়েছে, এবং যাকে কামড় দেওয়া হয়েছে তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা। আতঙ্কগ্রস্ত বোধ করা সর্পদংশনের পর হওয়া একটি সাধারণ অনুভূতি। অটোমেটিক নার্ভাস সিস্টেমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই অনুভূতি সর্পদংশনের পর বিভিন্ন রকম আচরণের প্রকাশ ঘটাতে পারে। যেমন: ট্রাইকার্ডিয়া (বুক ধুকধুক করা), ও নসিয়া।[১][৬] নির্বিষ সাপের দংশনে আঘাতগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। সাপের দাঁতের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত জীবাণু সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া কামড়ের মাধ্যমে অ্যানাফাইলেকটিক বিক্রিয়ার সৃষ্টিও হতে পারে যা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। সর্পদংশন পরবর্তী প্রাথমিক চিকিৎসা সাপের বিস্তৃতি অঞ্চল ও সাপের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে। সেজন্য এক প্রজাতি সাপের জন্য কার্যকর প্রাথমিক চিকিৎসা অপর প্রজাতির জন্য কার্যকর নাও হতে পারে।
সর্পদংশনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ততার হার ভৌগোলিক অঞ্চল অনুসারে পরিবর্তিত হয়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় সর্পদংশনে মৃত্যুর হার খুবই কম,[৩][৭][৮] কিন্তু বিশ্বের অনেক স্থানে এই শারীরিক ক্ষতি ও মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে, যেখানে চিকিৎসাসুবিধা শহরাঞ্চলের তুলনায় অপ্রতুল। বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ও সাহারা-নিম্ন আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সর্পদংশনের প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এছাড়া নিওট্রপিক, বিষুবীয়, এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলগুলোতেও প্রচুর পরিমাণ সর্পদংশনের ঘটনা ঘটে থাকে।[৩][৭][৮] প্রতি বছর হাজারে দশজন মানুষ সর্পদংশনের কবলে পড়ে প্রাণ হারান।[৩] বিশেষজ্ঞরা সর্পদংশনের ঝুঁকি কমাতে বিশেষ ধরনের জুতা ও সাপের প্রাদুর্ভাব আছে এমন অঞ্চল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।
আরো দেখুন
সম্পাদনা- ↑ ক খ Gold, Barry S. (১ এপ্রিল ২০০২)। "Bites of venomous snakes"। The New England Journal of Medicine। 347 (5): 347–56। আইএসএসএন 0028-4793। ডিওআই:10.1056/NEJMra013477। পিএমআইডি 12151473। ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২৫। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ Russell, F. E. (১৯৯০)। "When a snake strikes"। Emerg Med। 22 (12): 33–4, 37–40, 43।
- ↑ ক খ গ ঘ Kasturiratne, A. (২০০৮)। "The Global Burden of Snakebite: A Literature Analysis and Modelling Based on Regional Estimates of Envenoming and Deaths"। PloS Medicine। 5 (11)। ডিওআই:10.1371/journal.pmed.0050218। ২০০৯-১১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২৪। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ "Snake Venom Detection Kit: Detection and Identification of Snake Venom" (পিডিএফ)। CSL Limited। ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-২৪।
The physical identification of Australian and Papua New Guinean snakes is notoriously unreliable. There is often marked colour variation between juvenile and adult snakes and wide size, shape and colour variation between snakes of the same species. Reliable snake identification requires expert knowledge of snake anatomy, a snake key and the physical handling of the snake
অজানা প্যারামিটার|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ White, Julian (২০০৬)। "Snakebite & Spiderbite: Management Guidelines" (পিডিএফ)। Adelaide: Department of Health, Government of South Australia: 1–71। আইএসবিএন 0730895513। ২০০৯-১১-১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-২৪।
The colour of brown snakes is very variable and misleading for identification purposes. They may be brown, red brown, grey, very dark brown and may be plain in color, have speckling, stripes or bands, or have a dark or black head
অজানা প্যারামিটার|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Kitchens C, Van Mierop L (১৯৮৭)। "Envenomation by the Eastern coral snake (Micrurus fulvius fulvius). A study of 39 victims"। JAMA। 258 (12): 1615–18। ডিওআই:10.1001/jama.258.12.1615। পিএমআইডি 3625968।
- ↑ ক খ Chippaux, J.P. (১৯৯৮)। "Snake-bites: appraisal of the global situation" (পিডিএফ)। Bulletin of the World Health Organization। 76 (5): 515–24। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-০৩।
- ↑ ক খ Gutiérrez, José María (২০০৭)। "Trends in Snakebite Envenomation Therapy: Scientific, Technological and Public Health Considerations" (পিডিএফ)। Current Pharmaceutical Design। 13 (28): 2935–50। ২০১১-০৪-২৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-০১। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- Campbell, Jonathan A.; William W. Lamar (2004). The Venomous Reptiles of the Western Hemisphere, Ithaca, NY: Cornell University Press.
- Spawls, Stephen; Bill Branch (1995). The Dangerous Snakes of Africa: Natural History - Species Directory - Venoms and Snakebite, Sanibel Island, FL: Ralph Curtis Publishing.
- Sullivan JB, Wingert WA, Norris Jr RL. North American Venomous Reptile Bites. Wilderness Medicine: Management of Wilderness and Environmental Emergencies, 1995; 3: 680–709.
- Thorpe, Roger S.; Wolfgang Wuster, Anita Malhotra (1996). Venomous Snakes: Ecology, Evolution, and Snakebite, Oxford, England: Oxford University Press.