শ্রীলঙ্কা মাতা
শ্রীলঙ্কা মাতা (সিংহলি ভাষা:ශ්රී ලංකා ජාතික ගීය ;তামিল ভাষা ஸ்ரீ லங்கா தாயே ) হচ্ছে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত।
বাংলা: শ্রীলঙ্কা মাতা | |
---|---|
ශ්රී ලංකා ජාතික ගීය ஸ்ரீ லங்கா தாயே | |
শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত | |
কথা | আনন্দ সামারাকুন, ১৯৪০ |
সঙ্গীত | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
গ্রহণকাল | ১৯৫১ |
ইতিহাস
সম্পাদনাশ্রীলঙ্কা মাতা গানের রচয়িতা সম্পর্কে বিভিন্ন মত আছে। সবচেয়ে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার খ্যাতিমান সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব আনন্দ সামারাকুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়ে গানটি লিখেছেন।[১][২][৩][৪] অনেকে মনে করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুরো গানটি লিখেছেন। [৫][৬][৭][৮] কেউ কেউ বলেছেন যে রবীন্দ্রনাথ গানটির সুরকার এবং আনন্দ সামারাকুন রচয়িতা। [৯][১০] রবীন্দ্রনাথ সরাসরি এই গান রচনায় যুক্ত ছিলেন এই ধারণা ভারতীয় ঐতিহাসিক লিপি ঘোষ এবং শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক Sandagomi Coperahewa অস্বীকার করেছেন।[১১] আনন্দ সামারাকুন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের ছাত্র ছিলেন। [১২][১৩] শ্রীলঙ্কা ফিরে যাবার পর তিনি মাহিন্দা কলেজে গান শেখাতেন। [১৪][১৫] মাহিন্দা কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথম নমো নমো মাতা গানটি পরিবেশন করেন।[১৬][১৭] পরে মিউসেস কলেজ নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গায়ক দল গানটি পরিবেশন করার পর এটি শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয় হয়। তৎকালীন সময়ে বেতারে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল গানটি।[১৮]
১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা ব্রিটেনের নিকট হতে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু স্বাধীনতার পরও শ্রীলঙ্কায় ব্রিটেনের জাতীয় সংগীত ব্যবহার করা হত।[১৯] ১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী জে.আর জয়বর্ধনে শ্রীলঙ্কা সরকারকে আনন্দ সামারাকুনের অনুবাদকৃত নমো নমো মাতা, সু্ন্দর শ্রীবরণী গানটিকে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত করার আবেদন জানান।[১৮] তখন শ্রীলঙ্কা সরকার গৃহ ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী এডুইন বিজয়রত্নের নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীত প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটি গঠন করেন।[১৯] উক্ত কমিটি অনেক গুলো গান নির্বাচন করে, কিন্তু তন্মধ্যে আনন্দ সামারাকুনের নমো নমো মাতা জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।[৭][১৮][১৯] এই কমিটি সামারাকুনের সমর্থনে গানটির দশম পঙক্তিতে কিছু পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন আনে।[১৮] ২২ নভেম্বর ১৯৫১ সালে সরকার গানটিকে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত রূপে ঘোষণা করে। [১৯][২০] ১৯৫২ সালে এম. নল্লথম্বি গানটি তামিল ভাষায় অনুবাদ করেন।[১৮][২১][২২] ১৯৫২ সালে শ্রীলঙ্কার প্রথম স্বাধীনতা দিবসে গানটি আনুষ্ঠানিকভাবে গাওয়া হয়।[১৮][২৩]
১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে গানটির প্রথম লাইন নমো নমো মাতা নিয়ে অনেক বিতর্ক শুরু হয়।[১৮][২৪] এটিকে দেশের জন্য দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল এবং দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী করা হয়েছিল।[২৪] তাই শ্রীলঙ্কা সরকার ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনন্দ সামারাকুনের অমতে ও প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও গানটির প্রথম লাইনে পরিবর্তন আনে এবং প্রথম লাইনটি বদলে শ্রীলঙ্কা মাতা, আপা শ্রীলঙ্কা নমো নমো নমো নমো মাতা করা হয়।[১৮] আনন্দ সামারাকুন ১৯৬২ সালের এপ্রিলে মাসে আত্মহত্যা করেন ও তার আত্মহত্যার কারণ হিসেবে তার রচিত জাতীয় সঙ্গীতের ক্ষতিসাধনকে দায়ী করেন।[১৮]
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রী সংবিধান শ্রীলঙ্কা মাতা গানটিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করে।[২৫]
অন্যান্য ভাষা
সম্পাদনাশ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতটি অনেক গুলো ভাষায় অনুদিত হয়েছে। যেমন: বেলজিয়াম, ফরাসি, কানাডীয়, ইংরেজি, জার্মান, ইতালীয়, রোমানসহ আরো অনেকগুলো ভাষায়।[২২] শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ মানুষ সিংহলী ভাষায় কথা বলে (৭৫%) এবং জাতীয় সঙ্গীতটি সিংহলী ভাষায়ই বেশি গাওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রমে তামিল ভাষায়ও গানটি গাওয়া হয়।[২১][২২]
সিংহলি ভাষা | ইংরেজি উচ্চারন | বাংলা লিপিতে(সিংহলী শব্দ) | তামিল অনুবাদ |
---|---|---|---|
ශ්රී ලංකා මාතා |
Sri Lanka Matha, apa Sri Lanka, |
শ্ৰী লংকা মাতা সুন্দর সিরি বারিনি ওবাবে অপ বিদ্যা, ওবাময় অপ সত্যা |
|
বাংলা অনুবাদ
সম্পাদনা- মা লংকা আমি তোকে প্রণাম করি!
- হে মা, তোর সমৃদ্ধি বিপুল,
- দয়া আর মমতায় তুই অতুল,
- অনাজ আর সুস্বাদু ফলেতে পূর্ণ,
- উজ্জ্বল রঙের সুগন্ধিত ফুলে ফুলেল,
- জীবন আর সকল ভাল বস্তুর ধাত্রী,
- আনন্দ আর বিজয়ের আমার ভূমি,
- আমার আভারী প্রশংসা স্বীকার কর,
- শ্ৰীলঙ্কা! আমি তোর প্রশংসা করি।
- আমাকে জ্ঞান আর সত্যের দান দেয়া জননী,
- তুই আমার সামর্থ্য আর আন্তরিক বিশ্বাস,
- আমার দিব্য জ্যোতি আর সংবেদনশীল জীব,
- জীবন আর মুক্তির শ্বাস।
- আমাকে বন্ধন মুক্ত প্রেরণা, প্রদান কর,
- নবীন বুদ্ধি আর শক্তিতে,
- রোগ, ঘৃণা, কলহ সকল শেষ হয়ে যাক,
- ভালবাসায় পূর্ণ, এক শক্তিশালী রাষ্ট্র,
- আমরা সবাই এক হয়ে, আগ বাড়াই।
- হে মা আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যা।
টীকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Sri Lanka"। দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক। ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৯।
- ↑ "Sri Lanka I-Day to have anthem in Tamil"। দ্য হিন্দু। ১২ মে ২০১০।
- ↑ "Tagore's influence on Lankan culture"। হিন্দুস্তান টাইমস। ১২ মে ২০১০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন"। ২০২২-০৯-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০৭।
- ↑ Wickramasinghe, Nira (২০০৩)। Dressing the Colonised Body: Politics, Clothing, and Identity in Sri Lanka। Orient Longman। পৃষ্ঠা 26। আইএসবিএন 81-250-2479-4।
- ↑ Wickramasinghe, Kamanthi; Perera, Yoshitha। "Sri Lankan National Anthem: can it be used to narrow the gap?"। The Daily Mirror (Sri Lanka) (30 March 2015)। ১১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৯।
- ↑ ক খ Haque, Junaidul (৭ মে ২০১১)। "Rabindranath: He belonged to the world"। দ্য ডেইলি স্টার। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ Habib, Haroon (১৭ মে ২০১১)। "Celebrating Rabindranath Tagore's legacy"। The Hindu।
- ↑ Nandy, Ashis (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "Nationalism, Genuine and Spurious: A Very Late Obituary of Two Early Postnationalist Strains in India"। Occasion, Stanford University। 3। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৯।
- ↑ Alexander, J. P. (২০১৪)। Decisive Battles, Strategic Leaders। Partridge Publishing। পৃষ্ঠা 188। আইএসবিএন 978-1-4828-1805-5।
- ↑ Kasturi, Charu Sudan (১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। "Fact check stress on PM Tagore claim No evidence to suggest that bard penned or composed song, says professor"। The Telegraph।
- ↑ "Five things you need to know about Rabindranath Tagore"। Hindustan Times। ৯ মে ২০১৫।
- ↑ Ahmed, Khaled (১২ জুন ২০১৫)। "Nationalism over verse"। The Indian Express।
- ↑ "The quest for the right song"। The Sunday Times (Sri Lanka)। ১৬ নভেম্বর ২০০৮।
- ↑ Saparamadu, Sumana (৩০ জানুয়ারি ২০১১)। "The origin of our National Anthem"। Sunday Observer (Sri Lanka)।
- ↑ Miranda, Sujitha (২৮ অক্টোবর ২০১২)। "The 'National Anthem' was first sung at Mahinda Galle"। The Sunday Times (Sri Lanka)।
- ↑ Saparamadu, Sumana (১৪ মে ২০০৬)। "Ananda Samarakoon - The composer of our national anthem"। Sunday Observer (Sri Lanka)।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ Bamunuarachchi, Jinadasa (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Vasu, DO NOT KILL Ananda Samarakoon again"। Daily News (Sri Lanka)।
- ↑ ক খ গ ঘ de Silva, K. M.; Wriggins, Howard (১৯৮৮)। J. R. Jayewardene of Sri Lanka: a Political Biography - Volume One: The First Fifty Years (ইংরেজি ভাষায়)। University of Hawaii Press। পৃষ্ঠা 368। আইএসবিএন 0-8248-1183-6।
- ↑ "The quest for the right song"। The Sunday Times (Sri Lanka) (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ নভেম্বর ২০০৮।
- ↑ ক খ Jeyaraj, D. B. S. (১৭ ডিসেম্বর ২০১০)। "The language controversy over Sri Lankan National Anthem" (ইংরেজি ভাষায়)। dbsjeyaraj.com। ২০ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ ক খ গ Kodagoda, Anuradha (২২ মার্চ ২০১৫)। "Namo, Namo...: A matter of language"। Sunday Observer (Sri Lanka)। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ Jeyaraj, D. B. S. (৩১ ডিসেম্বর ২০১০)। "National Anthem: From "Namo Namo" to "Sri Lanka Matha""। dbsjeyaraj.com। ৭ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ ক খ "Ananda Samarakoon - The composer of our national anthem"। Sunday Observer (Sri Lanka)। ১৪ মে ২০০৬। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "The Constitution of the Democratic Socialist Republic of Sri Lanka: Chapter I - The People, The State and Sovereignty"। Policy Research & Information Unit, Presidential Secretariat, Sri Lanka। ৩১ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৫।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- জাতীয় সংগীত: শ্রীলঙ্কা (ইংরেজি)
- জাতীয় সংগীতশ্রীলঙ্কা (ইংরেজি)
- Himnuszok: Sri Lanka (ইংরেজি)
- সব দেশের জাতীয় প্রতীকসমূহ: শ্রীলঙ্কা (ইংরেজি)