মুহাম্মাদের অলৌকিক ঘটনাসমূহ
মুহাম্মাদের অলৌকিক ঘটনাসমূহ বলতে সেই সকল অতিপ্রাকৃত তথা কার্যকারণসূত্রবিহীন ঘটনাবলী বোঝানো হয় যেগুলো ইসলামের নবী মুহাম্মাদের দ্বারা তার জীবদ্দশায় সংঘটিত হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় নবী-রাসুল কর্তৃক প্রদর্শিত এরূপ অলৌকিক ঘটনাসমূহকে মুজিযা বলে আখ্যায়িত করা হয়।
মুহাম্মাদের বহু মুজিযা রয়েছে। ইমাম বায়হাকী বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজিযা হলো এক হাজার। ইমাম নববী মুহাম্মাদের বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজিযা হলো এক হাজার ২০০। আবার অনেক মনীষী বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজিযা তিন হাজার। (সূএঃ ফতহুল বারি)[১]
ইতিহাসবিদ ডেনিস গ্রিলের মতে, "কুরআন স্পষ্টতই মুহাম্মাদের অলৌকিকতাগুলো ঢালাওভাবে বর্ণনা করে না, বরং চূড়ান্তভাবে সেই কোরআনকেই মুহাম্মাদের প্রধান অলৌকিকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।"[২] খ্রিস্টানদের ভেতর প্রচলিত অভিযোগ আছে যে, কুরআন নিজেই মুহাম্মাদের অলৌকিকতা অস্বীকার করে। - যা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সাধারণ যুক্তি। খ্রিস্টানদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে,তারা নবী মুহাম্মাদের মুজিযাকে বাস্তবতার নিরিখে বুঝতে চেয়েছে; কিন্তু বিষয়টা বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত।[৩] কুরআন ও প্রায় হাদিসেই বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতার কথা পেশ করা হয়,[৪] এবং হাদীস মুহাম্মাদের অলৌকিকতার বিবরণী জানার জন্য অপরিহার্য।[৫]
অলৌকিক ক্ষমতার তালিকা
সম্পাদনা- কুরআন - মুহাম্মাদের পাওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ অলৌকিক বস্তু যা মুসলমানদের দ্বারা বিবেচিত।[৬][৭][৮] এবং সব সময়ের জন্য একটি অলৌকিক ঘটনা, তাদের নিজস্ব জীবনকালের মধ্যে সাক্ষী করা হচ্ছে এবং অন্যান্য ধর্মালম্বীরা একে অলৌকিক ক্ষমতা হিসেবে স্বীকার করেন না।[৯]
- চন্দ্র বিভাজন
- ইসরা ও মি'রাজ (রাত্রি ভ্রমণ)।
- আলী ইবনে সাহল রাবন্ আল-তাবারি বলেন, মুহাম্মাদের সাফল্য এবং তার শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় তার অলৌকিকতাসমূহের একটি ছিল।[১০] একইভাবে, অনেক আধুনিক মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে, মুহাম্মাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অলৌকিক (যেমন ধর্মীয়, সামাজিক, ধর্মান্তরিত, রাজনৈতিক, সামরিক ও সাহিত্য গোলকের হিসাবে) ক্ষমতা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে একটি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার পার্থিব শিক্ষাদীক্ষা, বিশ্বাস ও বিশ্বের বিজয়ীকে প্রভাবিত করে যার মধ্যে আরব যাযাবরেরা ছিল।[১১][১২]
- বেশ কয়েকবার তিনি অলৌকিকভাবে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করেন।[১৩]
- বদর যুদ্ধের আগের দিন বদর নামক স্থানে পৌঁছে মুহাম্মাদ বললেন,
“ | এটা অমুকের শাহাদাতের স্থান, এটা অমুকের হত্যার স্থান। সাহাবীরা বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার জন্য যে স্থান দেখিয়েছেন, তার সামান্য এদিক সেদিক হয়নি। (মুসলিম) | ” |
- তিনি একটি খেজুর গাছে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো থেকে উঠে দাঁড়ালে গাছটি কাঁদছিল।[১৩]
- তিনি দুই গাছকে সরতে বলায় তা সরে গিয়েছিল।[১৩]
- তার দ্বারা কৃত ভবিষ্যদ্বানী।
- মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত।[১৪]
- তিনি তাবুক যুদ্ধের সময় তার হাজার হাজার সৈন্যের তৃষ্ণা নিবারণে এবং ওযু করতে বিপুল পরিমাণ পানির ব্যবস্থা করেন।[১৫]
- তিনি তার অনুগামীদের নিয়ে হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্র করার সময় পানি পান এবং ওযূর পানি ব্যবহার করতে গিয়ে পানি সংকটে পড়লে তার সাথের পানি বেড়ে ভরে উঠেছিল।[১৫]
- বদর যুদ্ধের সময় তিনি শত্রুদের দিকে এক মুঠো মাটি ছুড়ে দেন, ফলে তারা অন্ধ হয়ে যায়, এই অলৌকিক ঘটনা কুরআনে উল্লেখ করা হয়, সূরা আল আনফাল, আয়াত ১৭ (৮:১৭)।
মুহাম্মদের অন্যতম অলৌকিক ঘটনা ‘রাদ আল শামস’ হলো অস্তমিত সূর্যকে ফিরিয়ে আনয়ন করা। আসমা বিনতে ওমায়স থেকে বর্ণিত আছে, একদা মুহাম্মদের খায়বারের কাছে ‘সাহবা’ নামক স্থানে ছিলেন। তার মাথা মোবারক আলী কোলে রেখে বিশ্রাম করছিলেন। আলী কিন্তু আসরের নামাজ আদায় করেননি। এমতাবস্থায় ওহি নাজিল শুরু হলো। শেষ পর্যন্ত সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল। মুহাম্মদ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি আসরের নামাজ আদায় করেছ?’ আলী বললেন, ‘না’। তখনই মুহাম্মদ হস্ত উত্তোলন করে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আলী আপনার রসুলের অনুগত ছিল, সূর্য ফিরিয়ে দিন, যাতে সে আসরের নামাজ সঠিক ওয়াক্তে আদায় করতে পারে।’ আসমা বিনতে মায়স বলেন, ‘অস্তমিত সূর্য পুনরায় দিগন্তে দৃশ্যমান হলো’। ইমাম তাহাবি মুহাম্মাদের বলেন, ‘হাদিসটি বিশুদ্ধ। হাদিসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।’ শায়খ জালাল উদ্দীন সুয়ুতী মুহাম্মাদের উল্লিখিত হাদিসটি সম্পর্কে ‘কাশফুল লাবস আন হাদিসে রদ্দে শামস’ নামে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা রচনা করেছেন। ওই পুস্তিকায় হাদিসের সনদ নিয়ে আলোচনা করে হাদিসের বিশুদ্ধতা প্রমাণ করেছেন।
মহানবী (সা.) মিরাজ থেকে প্রত্যাবর্তন করে কুরাইশদের সম্মুখে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ এবং স্বীয় ভ্রমণকাহিনী ও মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। কুরাইশরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য বায়তুল মোকাদ্দাসের বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল এবং বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ার দিকে যে কাফেলা গমন করেছিল, তারা কখন মক্কায় প্রত্যাবর্তন করবে, তা জানতে চেয়েছিল।
মহানবী (সা.) উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তারা বুধবার মক্কায় পৌঁছবে।’ বুধবার আস্তে আস্তে অতিক্রান্ত হতে চলল, দিবসের পড়ন্ত বেলাও অতিক্রম হতে চলল। এমনকি সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার নিদর্শন পরিলক্ষিত হতে লাগল কিন্তু কাফেলা মক্কায় পৌঁছেনি। তাই মক্কার কাফিরকুল তার নবুয়তের সত্যতা সম্পর্কে সমালোচনা করতে শুরু করে দিল। এমতাবস্থায় রসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করলেন, আল্লাহপাক সূর্যের গতিরোধ করলেন। কাফেলা মক্কায় প্রবেশ করা পর্যন্ত সূর্য থেমে ছিল।[১৬]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মুজেজাসমূহ"। সোনালী নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২০।
- ↑ Denis Gril, Miracles, Encyclopedia of the Qur'an
- ↑ David D. Grafton (১৫ ডিসে ২০০৯)। Piety, Politics, and Power: Lutherans Encountering Islam in the Middle East। Section 8: Wipf and Stock Publishers। আইএসবিএন 9781630877187।
These Christian apologies argued that the Qur'an itself denies that Muhammad provided any miracles to prove his identity as a prophet...
- ↑ F. E. Peters (১৩ অক্টো ২০১০)। Jesus and Muhammad: Parallel Tracks, Parallel Lives। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 205। আইএসবিএন 9780199780044। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Kenneth L. Woodward (১০ জুলাই ২০০১)। The Book of Miracles: The Meaning of the Miracle Stories in Christianity, Judaism, Buddhism, Hinduism and Islam (reprint সংস্করণ)। Simon and Schuster। পৃষ্ঠা 183। আইএসবিএন 9780743200295।
- ↑ Ibrāhīm, Zaynab; Aydelott, Sabiha T.; Kassabgy, Nagwa, সম্পাদকগণ (১ জানু ২০০০)। Diversity in Language: Contrastive Studies in Arabic and English Theoretical and Applied Linguistics (illustrated সংস্করণ)। American Univ in Cairo Press। পৃষ্ঠা ৩১। আইএসবিএন 9789774245787। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ ডেভিড হোয়াইটেন স্মিথ; এলিযাবেথ Geraldine ব্রুর (২১ আগস্ট ২০১৪)। Understanding World Religions: A Road Map for Justice and Peace (২ সংস্করণ)। রাউমান & লিটলফিল্ড। পৃষ্ঠা ১৪২। আইএসবিএন 9781442226449।
- ↑ ব্রাউন, ব্রায়ান আর্থার, সম্পাদক (১ জানু ২০১৪)। Three Testaments: Torah, Gospel, and Quran (illustrated, reprint সংস্করণ)। রাউমান & লিটলফিল্ড। পৃষ্ঠা ৪০৩। আইএসবিএন 9781442214934।
- ↑ এডওয়ার্ড সেল (৫ নভেম্বর ২০১৩)। The Faith of Islam। রাউলিজ। পৃষ্ঠা ২১৮। আইএসবিএন 9781136391699।
- ↑ লিউরেন্স এডওয়ার্ড ব্রাউন (১৯৩৩)। The Eclipse of Christianity in Asia: From the Time of Muhammad Till the Fourteenth Century। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস আর্কাইভ। পৃষ্ঠা ৯০।
- ↑ ডেনিয়েল ডব্লিউ. ব্রাউন (৪ মার্চ ১৯৯৯)। Rethinking Tradition in Modern Islamic Thought (পুনঃমুদ্রণ, revised সংস্করণ)। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৬৫। আইএসবিএন 9780521653947।
- ↑ Patricia Blundell; ট্রিভর জর্ডান (৭ মার্চ ২০১২)। Exploring Religion and Ethics: Religion and Ethics for Senior Secondary Students। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা 129–30। আইএসবিএন 9780521187169।
- ↑ ক খ গ লিমন, অলিভার, সম্পাদক (২০০৬)। কুরআন: একটি বিশ্বকোষ (illustrated, reprint, annotated সংস্করণ)। টেইলর & ফ্রান্সিস। পৃষ্ঠা ৪২৪। আইএসবিএন 9780415326391। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ এফ. ই. পিটার্স (১৩ অক্টোবর ২০১০)। যীশু এবং মুহাম্মদ: Parallel Tracks, Parallel Lives। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ১৫৩। আইএসবিএন 9780199781379।
- ↑ ক খ Kenneth L. Woodward (১০ জুলাই ২০০১)। The Book of Miracles: The Meaning of the Miracle Stories in Christianity, Judaism, Buddhism, Hinduism and Islam (পুনঃমুদ্রণ সংস্করণ)। সাইমন এবং Schuster। পৃষ্ঠা ১৮৬। আইএসবিএন 9780743200295।
- ↑ "রসুল (সা.)-এর দুটি অলৌকিক ঘটনা | বাংলাদেশ প্রতিদিন"। Bangladesh Pratidin। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২০।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Ibn Kathir (২০০৪)। Book of Evidences : The Miracles of the Prophet ( P. B. U. H. )। Islamic Books।
- Bediuzzaman Said Nursi (২২ এপ্রিল ২০১৪)। Prophet Muhammad and His Miracles। Işık Yayıncılık Ticaret। আইএসবিএন 9781597846172।
ইসলাম বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |