প্রথম তীর্থযাত্রা

ইসলামী নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং মুসলিমদের মদিনায় হিজরতের পর যে প্রথম তীর্থযাত্রা সম্পন্ন হয়, তা ছিলো ধুল-ক্বাদাহ মাসের তীর্থযাত্রা বা উমরাহ। এই তীর্থযাত্রা হয়েছিলো ৭ম হিজরী সনের (৬২৯ খ্রিস্টাব্দ) ধুল-ক্বাদাহ মাসের চতুর্থ দিনের সকালে, ৬ষ্ঠ হিজরী সনে (৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ) হুদায়বিয়ার সন্ধি-র পরবর্তী সময়ে। পুরো আয়োজনটি তিন দিনব্যাপী ছিলো।[]

ধুল-হিজ্জাহ মাসে যে তীর্থযাত্রা সম্পন্ন করা হয়, তাকে "বড় তীর্থযাত্রা" বা শুধুমাত্র "তীর্থযাত্রা" (আরবি: حَـجّ, হজ্জ ) হিসেবে অভিহিত করা হয়। অন্যদিকে, অন্যান্য যেকোনো মাসে করা তীর্থযাত্রাকে "ছোট তীর্থযাত্রা" (আরবি: عُـمْـرَة, উমরাহ) বলা হয়।

ইতিহাস

সম্পাদনা

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মাদ (সা.) জানিয়েছিলেন যে, ৪০ বছর বয়স থেকে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে ওহি (প্রত্যাদেশ) পেতে শুরু করেন। তিনি এবং তার অনুসারীরা, যাদের মুসলিম বলা হয়, মক্কার শাসকগোষ্ঠী কুরাইশদের দ্বারা নির্যাতিত হন এবং উত্তরের শহর মদিনায় চলে যেতে বাধ্য হন। এরপর বেশ কয়েকটি সশস্ত্র সংঘাত ঘটে। মুসলিমরা ৬২৮ সালে ওহির নির্দেশে মক্কায় হজ্জ যাত্রা করার চেষ্টা করেছিল। কুরাইশরা তাদের বাধা দেয়, তবে মক্কার অধিবাসীরা একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে রাজি হয়। হুদাইবিয়ার সন্ধিতে একটি বিধান ছিল যে, মুসলিমরা ৬২৯ সালে শান্তিপূর্ণভাবে তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে মক্কায় ফিরে আসতে পারবে।[]

তীর্থযাত্রা

সম্পাদনা

"আর-রাহিক আল-মাখতুম" (আরবী: ٱلـرَّحِـيْـق ٱلْـمَـخْـتُـوْم, "সিলমোহরকৃত সুধা") গ্রন্থে অধ্যায় 'ক্ষুদ্র তীর্থযাত্রা' -এ ঘটনাবলী নিম্নরূপ বর্ণনা করা হয়েছে:

হিজরি সাতম বছরের যুল-ক্বাদা মাসের শুরুর দিকে, রাসূল (সা.) তাঁর অনুসারীদের, এবং বিশেষ করে যারা হুদাইবিয়ার সন্ধিতে অংশ নিয়েছিলেন, ক্ষুদ্র তীর্থযাত্রা ('উমরা') করার জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। তিনি ২০০০ পুরুষ, কিছু নারী ও শিশু [ফাতহ-আল-বারী ৭/৭০০] এবং কুরবানির জন্য ৬০টি উট নিয়ে মক্কার পবিত্র অভয়ারণ্য পরিদর্শন করার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কুরাইশদের বিশ্বাসঘাতকতার ভয়ে মুসলিমরা অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে নেন, তবে মক্কা থেকে প্রায় আট মাইল দূরে ২০০ জনের একদল পুরুষের হাতে সেগুলো রেখে যান। তলোয়ার মুখে ঢালা অবস্থায় নগরে প্রবেশ করেন [যাদ আল-মাআদ ২/১৫১, ফাতহ আল-বারী ৭/৭০০]। রাসূল (সা.) সবার আগে উষ্ট্রী আল-কাসওয়ায় চড়ে ছিলেন। তাঁকে ঘিরে ছিলেন অনুসারীগণ, মনোযোগের সাথে তাঁকে দেখছিলেন, সবাই উচ্চারণ করছিলেন, “আল্লাহ, আমি তোমার আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত।” কুরাইশরা মক্কা ছেড়ে আশেপাশের পাহাড়ে নিজেদের তাঁবুতে অবস্থান নেন। মুসলিমগণ তাওয়াফ সম্পাদন করেন পুরো শক্তি ও উদ্যমের সঙ্গে। রাসূল (সা.) এর নির্দেশে প্রথম তিন চক্কর দ্রুত হেঁটে সম্পন্ন করেন এবং পরেরগুলো সাধারণ গতিতে। কারণ, মুশরিকরা রটনা করেছিল যে ইয়াসরিবের (মদিনার) জ্বর মুসলিমদের দুর্বল করে দিয়েছে। এ সময় মাক্কাবাসীরা কোয়াইকান পর্বতের উপর থেকে তাওয়াফকারীদের পর্যবেক্ষণ করছিল। মুসলিমদের শক্তি ও ভক্তির প্রকাশে তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Tafsir ibn Kathir [১]
  2. Armstrong, Karen (২০০৭)। Muhammad: A Prophet for Our Time। New York: HarperCollins। পৃষ্ঠা 181আইএসবিএন 978-0-06-115577-2