শহর

বড় মানব বসতি
(নাগরিক থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শহর বা নগর (স্ত্রীলিঙ্গ: নগরী) বলতে এক নির্দিষ্ট আকারের মানব বসতিকে বোঝায়। বিশ্বজুড়ে "শহর" বলতে বিভিন্নরকম বসতিকে বোঝায় এবং কিছু অঞ্চলে শহরের আকার অনেক ছোট। আবার, কিছু অঞ্চলে শহর বলতে কোনো বড় বসতিকে বোঝালেও বসতির আকার কতটুকু হলে তাকে শহর বলা যায়, এ ব্যাপারে কোনও বৈশ্বিক মানদণ্ড নেই।[][] আরও সংকীর্ণ অর্থে শহর বলতে কোনো স্থায়ী ও ঘনবসতিপূর্ণ মানব বসতিকে বোঝাতে পারে, যার এক নির্দিষ্ট প্রশাসনিক সীমানা রয়েছে এবং যার সদস্যরা মূলত কৃষিকাজ ব্যতীত অন্যান্য জীবিকায় ব্যস্ত।[] সাধারণত কোনো শহরে বাসস্থান, পরিবহন, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, ভূমির ব্যবহার, পণ্য উৎপাদন, যোগাযোগ, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে নিজস্ব নিয়মকানুন ও ব্যবস্থা থাকে।[][] শহরের বিকাশ মানুষ এবং ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সহায়তা করে। শহর প্রায়শই গ্রাম দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। এখানে চাকরির সুযোগ-সুবিধাও বেশি থাকে। কালক্রমে একটি বর্ধনশীল শহরের আশেপাশের এলাকাগুলোও ঐ শহরের ভিতরে অন্তর্ভুক্ত হতে শুরু করে।

ঐতিহাসিকভাবে, শহরবাসীদের মোট জনসংখ্যা সমগ্র বিশ্ব জনসংখ্যার তুলনায় নগণ্য বা কম হয়ে থাকে, কিন্তু দুই শতাব্দী ধরে নজিরবিহীন ও দ্রুতবেগে নগরায়নের ফলে বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শহরে বসবাস করে, যা বৈশ্বিক দীর্ঘস্থায়িত্বের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।[][][][][১০] আধুনিক শহরগুলো সাধারণত কোনো বৃহত্তর পৌরপিণ্ড বা মহানগর এলাকার কেন্দ্র গঠন করে, যার ফলে নগরকেন্দ্রে জীবিকা, মনোরঞ্জন ও শিক্ষার জন্য নিত্যযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দ্রুতহারে বিশ্বায়নের ফলে সমস্ত শহর বিভিন্ন মাত্রায় নিজস্ব পৌর এলাকার বাইরে বৈশ্বিকভাবে সংযুক্ত। এর ফলে শহর বৈশ্বিক সমস্যায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু প্রভাববৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা। এই প্রভাবের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১১-এর মাধ্যমে টেকসই শহরে বিনিয়োগ করছে। পরিবহনের দক্ষতা ও ক্ষুদ্র জমির ব্যবহারের ফলে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের বাস্তুতান্ত্রিক পদচিহ্ন আরও কম জনবহুল স্থানের তুলনায় অনেক কম থাকতে পারে।[১১][১২] এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার জন্য অনেকসময় কম্প্যাক্ট সিটির কথা উল্লেখ করা হয়।[১৩][১৪][১৫] তবে ঘনবসতির ফলে গুরুত্বপূর্ণ কুপ্রভাবও পড়তে পারে, যেমন হিট আইল্যান্ড, ঘনীভূত দূষণ এবং পানি ও অন্যান্য সম্পদ সরবরাহে টান দেখা দেয়।

শহরে বসবাসের অনেক অসুবিধা যেমন আছে (যেমন কোলাহল, দূষণ, ভিড়, অপরাধ, ফুটপাথ দখল, ইত্যাদি), তেমনি গ্রামের তুলনায় শহরে বসবাস করা অনেক দিক থেকেই সুবিধাজনক। যখন অনেক মানুষ শহরের মতো একটি ক্ষুদ্র এলাকাতে গুচ্ছবদ্ধ হয়ে বাস করতে ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড করতে শুরু করে, তখন তাকে পিণ্ডীভবন (agglomeration) বলে। এর ফলে হাজার হাজার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের জন্য বিরাট দূরত্ব পাড়ি দেবার অসুবিধা কমে যায়। আদর্শ দৃষ্টিকোণ থেকে শহর হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের নিশ্চয়তা প্রাপ্তির একটি স্থান যেখানে মানুষ বসবাস, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষার সুব্যবস্থা, কর্মের সুযোগ, সামাজিক যোগাযোগ ও খেলাধুলা-বিনোদনের জন্য সুবিধাজনক একটি স্থান। শহরে গণপরিবহনের ব্যয় কম, আর অবকাঠামোর খরচও এককভাবে ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে বা পরিচিতদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, যে ব্যাপারটিকে "পিণ্ডীভবনের অর্থনীতি" বলে। এটি একটি নগর স্থাপত্য উৎপত্তির অন্যতম মূল কারণ। নগর জীবনের সুবিধা ও অর্থনৈতিক লাভের কারণে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সিংহভাগ নাগরিক শহরে বাস করে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার ৯৫% জনগণই কোনও না কোনও শহরে বাস করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বিভিন্ন জাতীয় জনশুমারি বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে কোনো বসতিকে শহর বা নগর হিসাবে চিহ্নিত করে, যেমন জনসংখ্যা, জনঘনত্ব, আবাসনের সংখ্যা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পরিকাঠামো। সাধারণত ১,০০,০০০ জন থেকে কার্যকরী ছোট শহরের জনসংখ্যা শুরু করা হয়।[১৬] প্রচলিত সংজ্ঞাভেদে কোনো পৌর এলাকার ন্যূনতম জনসংখ্যা ১,৫০০ থেকে ৫০,০০০ জন হতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ রাজ্যের শহরের ন্যূনতম জনসংখ্যা ১,৫০০ থেকে ৫,০০০ জনের মধ্যে।[১৭][১৮] কিছু এক্তিয়ারের ক্ষেত্রে শহরের এরকম কোনো ন্যূনতম মানদণ্ড নেই।[১৯] যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে রাজতন্ত্র নগর মর্যাদা প্রদান করে এবং এই মর্যাদা চিরস্থায়ী। ঐতিহাসিকভাবে, নগর মর্যাদার জন্য একটি ক্যাথিড্রালের উপস্থিতির প্রয়োজন হতো, যার ফলে যুক্তরাজ্যে অনেক ছোট ছোট নগর রয়ে গিয়েছে, যেমন সমারসেট কাউন্টির ওয়েলস, যার জনসংখ্যা ১২,০০০ (২০১৮); এবং সেন্ট ডেভিডস, যার জনসংখ্যা ১,৮৪১ (২০১১)। আবার, ইংল্যান্ড, ওয়েলসউত্তর আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রে বাজার ও উৎসব আয়োজনে সনদপ্রাপ্ত যেকোনো বসতিকে "শহর" বা "টাউন" বলা হয়।

অনেকসময় শহরের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য শিক্ষিত অভিজাত বর্গের উপস্থিতি শহরের সাথে জড়িত।[২০][২১]

"নগরায়নের মাত্রা" হচ্ছে শহরের সংজ্ঞা নির্ধারণের এক আধুনিক পদ্ধতি। বিশ্ব ব্যাংকের মতে শহরের ন্যূনতম জনসংখ্যা ৫০,০০০ জন এবং ন্যূনতম জনঘনত্ব ১,৫০০ জন প্রতি বর্গকিমি।[২২] মূলত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানমূলক তুলনার জন্য ইউরোপীয় কমিশন, ওইসিডি, বিশ্ব ব্যাংক ইত্যাদি সংগঠন কয়েক বছর ধরে এই মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে।[২৩]

ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

"শহর" শব্দটি ফার্সি شهر (শহ্‌র্) থেকে গৃহীত, যা সংস্কৃত क्षत्र (ক্ষত্র) শব্দের সাথে সম্পর্কিত।

"নগর" শব্দটি সংস্কৃত থেকে সরাসরি আগত, যার সঠিক উৎস অজানা।

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
মহেঞ্জোদারো, বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্গত একটি প্রাচীন শহর, যাকে ছয় বা তার বেশিবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। এর নির্মাণের জন্য সাধারণ আকারের ইট ও একইরকম বর্গজালি বিন্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল।

জেরিকো, আলেপ্পো, ফাইয়ুম, ইয়েরেভান, এথেন্স, মাতেরা, দামেস্ক ইত্যাদি শহরকে বিশ্বের প্রাচীনতম নিরবিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী শহর বলে অভিহিত করা হয়।[২৪][২৫]

জনঘনত্ব, ভূমিকা ও নগর পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য রয়েছে এরকম শহর হাজার হাজার বছর ধরে রয়েছে,[২৬] তবে শহরের উৎপত্তি নিয়ে কোনো নির্ধারিত প্রমাণ নেই। অনেক তত্ত্ববিদ ধারণা করেন, কিছু মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর তাগিদেই শহর জন্মলাভ করে। বহুল প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, কৃষি বিপ্লবের পর থেকে শহর ও সভ্যতা জন্মলাভ করে। কৃষি বিপ্লবের ফলে খাদ্য উৎপাদনের তাগিদে মানুষ স্থায়ীভাবে একস্থানে বসবাস শুরু করে, যার ফলে ধীরে ধীরে শহর গড়ে ওঠে।[২৭][২৮] পল বাইরোচ তার শহর এবং অর্থনৈতিক উন্নতি বইয়ে বলেন, কৃষির ফলেই মানুষ একসাথে বসবাস করার প্রয়োজন অনুভব করে এবং এই মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্যই মানুষ শহর গড়ে তোলে। আদিম শহরে গ্রামীণ অঞ্চল থেকে শস্য সংগ্রহ করে পুনর্বণ্টন করার ব্যবস্থা ছিল এবং অনেকসময় কোনো আদিম শহরের ধর্মস্থানে শস্যভাণ্ডারের অস্তিত্ব পাওয়া যেত।[২৯]

এক সংখ্যালঘু মত অনুযায়ী কৃষি ছাড়াই শহরের বিকাশ ঘটেছিল এবং জীবনযাত্রার বিকল্প উপায় (মাছ ধরা),[৩০] ঋতুগত বাসস্থান হিসাবে শহরের ব্যবহার,[৩১] আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক সামরিক সংগঠনের ঘাঁটি হিসাবে শহরের গুরুত্ব[৩২][৩৩] কিংবা শহরের মজ্জাগত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে শহরের উৎপত্তির কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[৩৪][৩৫][৩৬] গ্রামীণ তত্ত্ববিদ জেন জ্যাকবস বলেন, শহরের উৎপত্তিই কৃষির উদ্ভাবনকে তরান্বিত করে, তবে তাঁর এ যুক্তি অকাট্য বলে মেনে নেয়া হয় না।[৩৪]

কোনো এলাকার উপর রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য শহরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং মহান আলেকজান্ডারের মতো প্রাচীন নেতৃত্ব উদ্দীপনার সাথে শহর গড়ে তুলেছিলেন।[৩৭]

প্রাচীন যুগ

সম্পাদনা
 
১৯০৮ সালে গ্রিসের এথেন্স নগরীর বন্দর পায়োরিয়াসের মানচিত্র

প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম সহস্রাব্দের জেরিকোচাতালহোয়ুক প্রাচীনতম প্রত্ন-শহরের মধ্যে অন্যতম।[৩১][৩৮] তবে বেশিরভাগ প্রত্নতত্ত্ববিদ খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের মাঝে প্রতিষ্ঠিত মেসোপটেমিয়ার উরুককে প্রথম প্রকৃত শহর হিসাবে অভিহিত করে। উরুক শহরের অনেক বৈশিষ্ট্য ছিল যা পরবর্তী অনেক শহর অনুসরণ করেছিল।[৩৯][৪০][৪১]

খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দ থেকে তৃতীয় সহস্রাব্দের মধ্যে মেসোপটেমিয়া, ভারত,[৪২][৪৩] চীন,[৪৪]মিশরের নদী উপত্যকায় জটিল সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

প্রাচীন বিশ্বের আদিম শহরের মধ্যে বর্তমান পাকিস্তানে অবস্থিত সিন্ধু সভ্যতার মহেঞ্জোদারো তৎকালীন বৃহত্তম শহরের মধ্যে অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০-এ প্রতিষ্ঠিত এই শহরের জনসংখ্যা ৫০,০০০-এর বেশি এবং এর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল।[৪৫]

মেসোপটেমিয়াতে সুমেরীয় সভ্যতা এবং পরবর্তী আসিরীয়ব্যাবিলনীয় সভ্যতার সময় একাধিক শহরের জন্ম হয়েছিল, যেগুলো রাজাদের দ্বারা শাসিত। এই শহরগুলো কীলক লিপিতে রচিত একাধিক ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল।[৪৬]

মধ্যযুগ

সম্পাদনা
 
হারলেমের মানচিত্র১৫৫০ সালের দিকে জেরুজালেমের একটি শহর থেকে অনুপ্রাণিত। এটি দেওয়াল এবং প্রতিরক্ষামূলক খাল দ্বারা ঘেরা।

প্রাক-আধুনিক যুগ

সম্পাদনা

শিল্প যুগ

সম্পাদনা

শিল্প-পরবর্তী যুগ

সম্পাদনা

নগরায়ন

সম্পাদনা
 
১৯৫০ থেকে ২০৫০ পর্যন্ত বৈশ্বিক নগরায়নের লেখচিত্র[৪৭]
 
২০১৫ সালে বিভিন্ন দেশে নগরায়নের শতকরা নির্দেশক বিশ্বব্যাপী নগরায়নের মানচিত্র

নগরায়ন (বা শহরায়ন) বলতে গ্রামাঞ্চল থেকে শহুরে অঞ্চলে জনসংখ্যার স্থানান্তর, গ্রামের তুলনায় নগর অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের অনুপাত ক্রমশ বৃদ্ধি এবং কোনো সমাজ যেভাবে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় তা বোঝায়।[৪৮] এটি মূলত এমনন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শহর এবং নগরগুলো গঠিত হয় এবং আরও বেশি লোক বসবাস এবং কাজ শুরু করায় তা বৃহত্তর হয়ে ওঠে।[৪৯] জাতিসংঘ প্রস্তাব করেছিল যে ২০০৮ সালের শেষদিকে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক লোক শহুরে এলাকায় বাস করবে।[৫০]

ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রায় ৬৪% এবং উন্নত বিশ্বের ৮৬ শতাংশই নগরায়িত হয়ে নগরাঞ্চলে পরিণত হবে।[৫১]

প্রশাসন

সম্পাদনা
 
বৃহত্তর চেন্নাই নিগম, ভারতের প্রাচীনতম পৌর প্রশাসনিক সংস্থা

শহরের স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্নরকম, যেমন: পৌরসভা (ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও অন্যান্য প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং স্পেন, পর্তুগাল ও তাদের প্রাক্তন উপনিবেশ) ও কমিউন (ফ্রান্স, চিলিইতালি)।[৫২]

নগর ভূগোল বৃহত্তর প্রসঙ্গে শহর ও তার অভ্যন্তরীণ কাঠামো নিয়ে আলোচনা করে।[৫৩] পৃথিবীর স্থলভাগের প্রায় ৩% পৌর এলাকা।[৫৪]

কেন্দ্র

সম্পাদনা
 
সিটি অব লন্ডন, লন্ডনের নগরকেন্দ্র।

বেশিরভাগ শহরের ক্ষেত্রে এক কেন্দ্রীয় এলাকা রয়েছে যেখানে বিশেষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ভবন রয়েছে, যা নগরকেন্দ্র নামে পরিচিত।[৫৫] ঐতিহাসিকভাবে, নগরকেন্দ্র শহরের কেন্দ্রীয়তা ও গুরুত্বকে তার বৃহত্তর প্রভাবক্ষেত্রে প্রতিফলিত করে।[৫৬]

পৌর এলাকা

সম্পাদনা
 
ভারতের কেন্দ্রীয় জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের (সিএনসিআর) একটি উপগ্রহ চিত্র। এখানে পরিকল্পিত নয়াদিল্লি (মাঝে), নয়ডা (দক্ষিণ-পূর্বে) ও গুরুগ্রাম (দক্ষিণ-পশ্চিমে) শহর দৃশ্যমান।

পৌর এলাকা অনেকসময় নগরসীমা ছাড়িয়ে অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে[৫৭] এবং এই বিস্তৃতিকে কখনো কখনো অপরিকল্পিত নগরায়িত এলাকা বলে অভিহিত করা হয়।[৫৮] বিকেন্দ্রীকরণ এবং শহরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের (বাণিজ্যিক, শৈল্পিক, আবাসিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক) বিচ্ছুরণ "শহর" কথাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা ভূগোলবিদদের পৌর-গ্রামীণ দ্বৈতের আকার শ্রেণীকরণে সমস্যা সৃষ্টি করে।[১৮]

সাধারণত নগরকেন্দ্রশহরতলি নিয়ে মহানগর এলাকা গঠিত, যা নিত্যযাত্রীদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। কিছু শহর আবার নিরবিচ্ছিন্ন পৌর ভূমিরূপের অন্তর্গত হয়ে যায়, যা পৌরপিণ্ড, পৌরপুঞ্জ, মহাপৌরপুঞ্জ ইত্যাদি নামে পরিচিত। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থইস্ট মেগারিজিয়ন, যা বোস্টন থেকে ওয়াশিংটন, ডিসি অবধি বিস্তৃত।[৫৯]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Goodall, B. (1987) The Penguin Dictionary of Human Geography. London: Penguin.
  2. Kuper, A. and Kuper, J., eds (1996) The Social Science Encyclopedia. 2nd ed. London:; Routledge.
  3. Caves, R. W. (২০০৪)। Encyclopedia of the City। Routledge। পৃষ্ঠা 99। 
  4. Glaeser, Edward (২০১১)। "Cities, Productivity, and Quality of Life"। Science333 (6042): 592–863। এসটুসিআইডি 998870ডিওআই:10.1126/science.1209264পিএমআইডি 21798941বিবকোড:2011Sci...333..592G 
  5. Bettencourt, Luis; West, Geoffrey (২০১০)। "A unified theory of urban living"। Nature467 (7318): 912–913। ডিওআই:10.1038/467912a পিএমআইডি 20962823বিবকোড:2010Natur.467..912B 
  6. Ritchie, Hannah; Roser, Max (১৩ জুন ২০১৮)। "Urbanization"Our World in Data (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  7. James, Paul; with Magee, Liam; Scerri, Andy; Steger, Manfred B. (২০১৫)। Urban Sustainability in Theory and Practice: Circles of Sustainability। London: Routledge। আইএসবিএন 978-1315765747। ১ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  8. "Rise of the City"। Science352 (6288): 906–907। ২০১৬। ডিওআই:10.1126/science.352.6288.906 পিএমআইডি 27199408 
  9. "Cities: The century of the city"। Nature467 (7318): 900–901। ২০১০। ডিওআই:10.1038/467900a পিএমআইডি 20962819 
  10. Sun, Liqun; Chen, Ji; Li, Qinglan; Huang, Dian (২০২০)। "Dramatic uneven urbanization of large cities throughout the world in recent decades"Nature Communications11 (1): 5366। ডিওআই:10.1038/s41467-020-19158-1 পিএমআইডি 33097712 |pmid= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)পিএমসি 7584620  |pmc= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)বিবকোড:2020NatCo..11.5366S 
  11. "Cities: a 'cause of and solution to' climate change"UN News (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯। ৪ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০২১ 
  12. Merite, Gabrielle; Vitorio, Andre। "How megacities could lead the fight against climate change"MIT Technology Review (ইংরেজি ভাষায়)। 
  13. "Sustainable cities must be compact and high-density"The Guardian News (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ জুন ২০১১। ৯ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০২১ 
  14. Angelo, Hillary; Wachsmuth, David (২০২০)। "Why does everyone think cities can save the planet?"। Urban Studies57 (11): 2201–2221। ডিওআই:10.1177/0042098020919081 বিবকোড:2020UrbSt..57.2201A 
  15. Bibri, Simon Elias; Krogstie, John; Kärrholm, Mattias (২০২০)। "Compact city planning and development: Emerging practices and strategies for achieving the goals of sustainability"। Developments in the Built Environment4: 100021। hdl:11250/2995024 ডিওআই:10.1016/j.dibe.2020.100021  
  16. "Population by region – Urban population by city size – OECD Data"theOECD (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৯ 
  17. "Table 6 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে" in United Nations Demographic Yearbook (2015 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে), the 1988 version of which is quoted in Carter (1995), pp. 10–12.
  18. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; HugoEtAl2003 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  19. "How NC Municipalities Work – North Carolina League of Municipalities"www.nclm.org। ১৬ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  20. Prokopovych, M. (13 May 2015). Literary and artistic metropolises. EGO. Retrieved 5 March 2023, from http://ieg-ego.eu/en/threads/crossroads/courts-and-cities/markian-prokopovych-rosemary-h-sweet-literary-and-artistic-metropolises
  21. Kaplan et al. (2004), pp. 23–24.
  22. Dijkstra, Lewis; Hamilton, Ellen; Lall, Somik; Wahba, Sameh (১০ মার্চ ২০২০)। "How do we define cities, towns, and rural areas?"। ৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০২১ 
  23. Moore, Oliver (২ অক্টোবর ২০২১)। "What makes a city a city? It's a little complicated"। The Globe and Mail। পৃষ্ঠা A11। 
  24. "10 oldest cities in the world"EducationWorld (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০২-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৬ 
  25. Centre, UNESCO World Heritage। "UNESCO World Heritage Centre - World Heritage List"UNESCO World Heritage Centre (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৬ 
  26. Nick Compton, "What is the oldest city in the world?", The Guardian, 16 February 2015.
  27. (Bairoch 1988, পৃ. 3–4)
  28. (Pacione 2001, পৃ. 16)
  29. Kaplan et al. (2004), p. 26. "Early cities also reflected these preconditions in that they served as places where agricultural surpluses were stored and distributed. Cities functioned economically as centers of extraction and redistribution from countryside to granaries to the urban population. One of the main functions of this central authority was to extract, store, and redistribute the grain. It is no accident that granaries—storage areas for grain—were often found within the temples of early cities."
  30. Jennifer R. Pournelle, "KLM to CORONA: A Bird's Eye View of Cultural Ecology and Early Mesopotamian Urbanization"; in Settlement and Society: Essays Dedicated to Robert McCormick Adams ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে ed. Elizabeth C. Stone; Cotsen Institute of Archaeology, UCLA, and Oriental Institute of the University of Chicago, 2007.
  31. Fredy Perlman, Against His-Story, Against Leviathan, Detroit: Black & Red, 1983; p. 16.
  32. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Mumfurd1961war নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  33. Ashworth (1991), pp. 12–13.
  34. (Jacobs 1969, পৃ. 23)
  35. P.J. Taylor, "Extraordinary Cities I: Early 'City-ness' and the Invention of Agriculture"; International Journal of Urban and Regional Research 36(3), 2012; ডিওআই:10.1111/j.1468-2427.2011.01101.x; see also GaWC Research Bulletins 359 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে and 360 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে.
  36. Smith, Michael E.; Ur, Jason; Feinman, Gary M. (২০১৪)। "Jane Jacobs' 'Cities First' Model and Archaeological Reality" (পিডিএফ)International Journal of Urban and Regional Research (ইংরেজি ভাষায়)। 38 (4): 1525–1535। আইএসএসএন 0309-1317এসটুসিআইডি 143207540ডিওআই:10.1111/1468-2427.12138। ২০১৭-১০-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  37. McQuillan (1937/1987), §1.03. "The ancients fostered the spread of urban culture; their efforts were constant to bring their people within the complete influence of municipal life. The desire to create cities was the most striking characteristic of the people of antiquity, and ancient rulers and statesmen vied with one another in satisfying that desire."
  38. Southall (1998), p. 23.
  39. Department of Ancient Near Eastern Art (অক্টো ২০০৩)। "Uruk: The First City"www.metmuseum.org। ১ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০২২ 
  40. "Uruk (article)"খান অ্যাকাডেমি (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০২২ 
  41. "What Science Has Learned about the Rise of Urban Mesopotamia"ThoughtCo (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০২২ 
  42. Ring, Trudy (২০১৪)। Middle East and Africa: International Dictionary of Historic Places। Routledge। পৃষ্ঠা 204। আইএসবিএন 9781134259861 
  43. Pandeyl, Jhimli Mukherjee (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "Varanasi is as old as Indus valley civilization, finds IIT-KGP study"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া 
  44. "Where was the first city in the world?"New Scientist। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২২ 
  45. Kenoyer, Jonathan Mark (১৯৯৮)। Ancient Cities of the Indus Valley Civilization (ইংরেজি ভাষায়) (2nd সংস্করণ)। Karachi and New York: Oxford University Pressআইএসবিএন 978-0-19-577940-0 
  46. Adams, Robert McCormick (১৯৮১)। Heartland of cities: surveys of ancient settlement and land use on the central floodplain of the Euphrates (পিডিএফ)। Chicago and London: University of Chicago press। পৃষ্ঠা 2। আইএসবিএন 978-0-226-00544-7। ২০১৮-১১-১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। Southern Mesopotamia was a land of cities. It became one precociously, before the end of the fourth millennium B.C. Urban traditions remained strong and virtually continuous through the vicissitudes of conquest, internal upheaval accompanied by widespread economic breakdown, and massive linguistic and population replacement. The symbolic and material content of civilization obviously changed, but its cultural ambience remained tied to cities. 
  47. "United Nations, Department of Economic and Social Affairs, Population Division (2014). World Urbanization Prospects"। ৬ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল (CD-ROM) থেকে আর্কাইভ করা। 
  48. "Urbanization"MeSH browser। National Library of Medicine। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০১৪The process whereby a society changes from a rural to an urban way of life. It refers also to the gradual increase in the proportion of people living in urban areas. 
  49. "Urbanization in"demographic partitions। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৫ 
  50. "UN says half the world's population will live in urban areas by end of 2008"International Herald Tribune। Associated Press। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  51. "Urban life: Open-air computers"The Economist। ২৭ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৩ 
  52. Williams, Joan (১৯৮৫-০১-০১)। "The Invention of the Municipal Corporation: A Case Study in Legal Change"American University Law Review34: 369। ২০১৭-১০-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  53. Carter (1995), pp. 5–7. "[...] the two main themes of study introduced at the outset: the town as a distributed feature and the town as a feature with internal structure, or in other words, the town in area and the town as area."
  54. Bataille, L., "From passive to energy generating assets", Energy in Buildings & Industry, October 2021 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে, p. 34, accessed 12 February 2022
  55. Kaplan et al. (2004), pp. 34–35. "In the center of the city, an elite compound or temenos was situated. Study of the very earliest cities show this compound to be largely composed of a temple and supporting structures. The temple rose some 40 feet above the ground and would have presented a formidable profile to those far away. The temple contained the priestly class, scribes, and record keepers, as well as granaries, schools, crafts—almost all non-agricultural aspects of society."
  56. Latham et al. (2009), p. 18. "From the simplest forms of exchange, when peasant farmers literally brought their produce from the fields into the densest point of interaction—giving us market towns—the significance of central places to surrounding territories began to be asserted. As cities grew in complexity, the major civic institutions, from seats of government to religious buildings, would also come to dominate these points of convergence. Large central squares or open spaces reflected the importance of collective gatherings in city life, such as Tiananmen Square in Beijing, the Zócalo in Mexico City, the Piazza Navonae in Rome and Trafalgar Square in London."
  57. Carter (1995), p. 15. "In the underbound city the administratively defined area is smaller than the physical extent of settlement. In the overbound city the administrative area is greater than the physical extent. The 'truebound' city is one where the administrative bound is nearly coincidental with the physical extent."
  58. Paul James; Meg Holden; Mary Lewin; Lyndsay Neilson; Christine Oakley; Art Truter; David Wilmoth (২০১৩)। "Managing Metropolises by Negotiating Mega-Urban Growth"। Harald Mieg; Klaus Töpfer। Institutional and Social Innovation for Sustainable Urban Development। Routledge। ১৬ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  59. Fang, Chuanglin; Yu, Danlin (২০১৭)। "Urban agglomeration: An evolving concept of an emerging phenomenon"। Landscape and Urban Planning (ইংরেজি ভাষায়)। 162: 126–136। ডিওআই:10.1016/j.landurbplan.2017.02.014  

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা