খসরু

বাংলাদেশি গেরিলা যোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক কর্মী

কামরুল আলম খান হলেন বাংলাদেশের একজন গেরিলা যোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক কর্মী[] যার সুপ্রচলিত নাম খসরু। তিনি এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা অঞ্চলের গেরিলা বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন।[] বাংলাদেশ সরকার তাকে আজীবন সম্মাননা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করেন।[]

খসরু
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মকামরুল আলম খান
(1947-07-01) ১ জুলাই ১৯৪৭ (বয়স ৭৭)
ঢাকা, বঙ্গ প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
আত্মীয়স্বজনসিরাজুল আলম খান (চাচাতো ভাই)
বাসস্থানআজিমপুর, ঢাকা
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঅভিনেতা
পুরস্কারজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০২২)
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য বাংলাদেশ
শাখা মুক্তিবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৭১–১৯৭২
পদঅধিনায়ক
ইউনিটগেরিলা ইউনিট
কমান্ডঢাকা অঞ্চল
যুদ্ধ

খসরু প্রথমদিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নামক ছাত্র সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তিনি পাকিস্তান আমলে একাধিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের পতাকা তৈরিতে অবদান রাখেন। একই বছরের ২৫ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা শুরু হলে তিনি ইকবাল হল থেকে পালিয়ে যান এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর তিনি চলচ্চিত্র জগতে অভিনয় শুরু করেন যার মধ্যে অন্যতম হল ওরা ১১ জন যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত সর্বপ্রথম চলচ্চিত্র।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

খসরু পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।[] তিনি পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলনঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকর্মী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।[] ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে যোগ দেন এবং বাংলাদেশের পতাকা তৈরিতে অবদান রাখেন।[] ২৫ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণহত্যা চলাকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ছাত্রাবাসে অবস্থান করছিলেন যার বর্তমান নাম শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল। শিক্ষার্থীদের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ করায় তিনি সেখান থেকে পুরান ঢাকায় পালিয়ে যান। কিন্তু সেখানেও সেনা সদস্যদের উপস্থিতি থাকায় তিনি সেখান থেকে মুগদায় একজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে তিনি ২৭ মার্চে আজিমপুরে অবস্থিত তার বাসভবনে পৌঁছান যেটি সেনাবাহিনীর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপর তিনি ইকবাল হলে ফিরে আসেন।[] সেখানে ছাত্রাবাসের ছাদে তিনি ১৯ দিন অবরুদ্ধ ছিলেন।[] বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং ঢাকা অঞ্চলের গেরিলা ইউনিটের কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন।[] মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে ভারতের দেরাদুনে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর খসরু ও তার দল রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গেরিলা ঘাঁটি গড়ে তুলে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপর নজর রাখতে থাকে। সেই সময় তিনি একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন সময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কালো তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিসেম্বরে তার দল মিত্র বাহিনীকে নদী পেরিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে সহায়তা করে।[] বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি সরকারের নিকট যুদ্ধাস্ত্র জমা দিয়ে অভিনয়জীবনে মনোনিবেশ করেন।[]

অভিনয়জীবন

সম্পাদনা

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করার পর অভিনয় শিল্পী হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন।[] ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত সর্বপ্রথম চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন-এ প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[] ১৯৭৪ সালে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সংগ্রাম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন যেখানে অতিথি চরিত্র হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। খসরু প্রধানমন্ত্রীকে অভিনয়ের জন্য রাজি করিয়েছিলেন যা তার রাজনৈতিক পটভূমির কারণে সম্ভব হয়েছিল।[] ১৯৭৫ সালে বাদশা চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক ও নায়কের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন যা বাংলাদেশের সর্বপ্রথম রঙিন চলচ্চিত্র।[]

পরবর্তী জীবন

সম্পাদনা

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদের জন্য ঘরের বাইরে বের হলে তিনি গুলির আঘাতে আহত হোন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত তার ভাই খবরটি জানার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে ফিরে আসেন।[]

চলচ্চিত্রের তালিকা

সম্পাদনা
বছর শিরোনাম পরিচালক চরিত্র টীকা
১৯৭০ স্বরলিপি নজরুল ইসলাম
১৯৭২ ওরা ১১ জন চাষী নজরুল ইসলাম খসরু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত সর্বপ্রথম চলচ্চিত্র যেখানে খসরু প্রধান চরিত্রে ও নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন
১৯৭৪ সংগ্রাম চাষী নজরুল ইসলাম আসাদ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান খসরুর অনুরোধে এতে অতিথি চরিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন
১৯৭৫ নকল মানুষ হাসমত
বাদশা আকবর কবীর পিন্টু বাংলাদেশের সর্বপ্রথম রঙিন চলচ্চিত্র যেখানে তিনি প্রধান চরিত্র সহ দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন

পুরস্কার ও সম্মননা

সম্পাদনা
বছর পুরস্কার শ্রেণি কর্ম ফলাফল সূত্র
২০২২ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আজীবন সম্মাননা বিজয়ী []

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "চোখের পলকে তাজা প্রাণগুলো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে"জাগোনিউজ২৪.কম অনলাইন। ২৫ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৭ 
  2. "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী | শিরোনাম"Noyashotabdi। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-১৪ 
  3. "চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, দেখেছেন কি সেই ছবি"ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন। ১৭ মার্চ ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০২৪ 
  4. "কামরুল আলম খান খসরু'র জন্মদিনে শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা | Binodon Bichitra" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৭-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-০১ 
  5. "মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হওয়া চাই সত্য ঘটনা নিয়ে : খসরু"এনটিভি অনলাইন। ১ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৭ 
  6. হক, মিনাম (১৬ ডিসেম্বর ২০১৯)। "OPERATION RUPOSHI: One of Kamrul Alam Khan Khasru's valiant missions"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০২৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

আরও পড়ুন

সম্পাদনা