উজবেকিস্তানের জনপরিসংখ্যান

উজবেকিস্তানের জনপরিসংখ্যানে উজবেকিস্তানের জনসংখ্যা, জন্ম বৃদ্ধি, ঘনত্ব, জাতিসত্ত্বা, শিক্ষার স্তর, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক অবস্থান, ধর্মীয় সম্পর্ক ও জনসংখ্যার সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য বিষয়াদি তুলে ধরা হয়েছে। উজবেকিস্তানের নাগরিকগণ "উজবেকিস্তানী' ও উজবেক জাতিসত্ত্বার সাথে জড়িতগণ "উজবেক' নামে পরিচিত।

জনসংখ্যা

সম্পাদনা

মধ্য এশিয়ার সর্বাপেক্ষা ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে উজবেকিস্তানের অবস্থান। জুলাই, ২০১১ সালে আদমশুমারী অনুযায়ী দেশটিতে ২৮.১ মিলিয়ন অধিবাসী বসবাস করছেন যা এতদ্বাঞ্চলের জনসংখ্যা অর্ধেক।[] উজবেকিস্তানের জনসংখ্যার ৩৪.১%-এর বয়সই ১৪-বছরের নিচে অবস্থান করছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ উজবেক অধিবাসী ৮০%। ১৯৯৬ সালের তথ্য অনুযায়ী অন্যান্য জাতিসত্ত্বার অধিবাসীদের মধ্যে ৫.৫% রুশ, ৫% তাজিক, ৩% কাজাখ, ২.৫% কারাকালপাক ও ১.৫% তাতার।[] তন্মধ্যে, তাজিক অধিবাসীদের শতাংশের হার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[]

সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুযায়ী ২০১১ সালে মহিলাপ্রতি শিশু জন্মের হার ১.৮৯।[][][] ২০০২ সালের তথ্য মোতাবেক বিবাহিতা ৭৩% মহিলা আইইউডি, ১৩% জন্মনিরোধক বড়ি ও ১৪% পুরুষ কনডম ব্যবহার করেন।[]

২০০৯ সালের তথ্য মোতাবেক অধিবাসীদের ৯০% মুসলিম ধর্মাবলম্বী।[] সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, ৫% শিয়া। ৯% পূর্বাঞ্চলীয় অর্থোডক্স ও ৫% কোরীয় খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, বাহাইসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।[] ১৯৮৯ সালে উজবেকিস্তানে ৯৪.৯০০ ইহুদি বসবাস করতেন।[] কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দেশ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরাইলে আবাস গড়েছেন। বর্তমানে পাঁচ হাজারেরও কম ইহুদি উজবেকিস্তানে অবস্থান করছেন।[]

স্বাধীনতার পর উজবেক রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি পায়। রাষ্ট্রপতি ইসলাম করিমভ, জাতীয়তাবাদী বিরলিক ও উজবেক পপুলার ফ্রন্ট এ পরিবর্তন ঘটায়। বর্তমান প্রচলিত ভাষার ৭২.৪% উজবক, ১৪.২% রুশ, ৪.৪% তাজিক, ২.৭% খোয়ার এবং ৬.৩% অন্যান্য ভাষায় কথা বলেন।[]

১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে বিরলিক ভাষার বিষয়ে প্রচারণা চালায়। ১৯৮৯ সালে উজবককে রাষ্ট্রভাষার দাবীতে তাসখন্দে প্রায় ১২,০০০ লোক জমায়েত হয়।[১০] ১৯৯৫ সালে উজবেকিস্তান প্রজাতন্ত্র আইন করে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করে। তাস্বত্ত্বেও বিজ্ঞান, আন্তঃজাতিগত যোগাযোগ, ব্যবসা, বিজ্ঞাপনে রুশ ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে।[১১]

শিক্ষার উচ্চ হার ও সোভিয়েত শিক্ষার প্রভাবে উজবেকিস্তানে ধর্মীয় মৌলবাদ তেমন প্রসারিত হয়নি। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জরীপে অংশগ্রহণকারীদের ৩৫% ধর্মকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করেন।[১২] ৯৯% অধিবাসী শিক্ষিত। পুরুষ ও মহিলা - উভয়েই ১২ বছর বিদ্যালয় গমন করে থাকেন। সরকার বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখছেন।

অধিকাংশ অধিবাসী তুলা চাষের সাথে সম্পৃক্ত। গ্রামাঞ্চলেই অধিবাসীরা ব্যাপক সংখ্যায় বসবাস করছেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য থাকাকালে যৌথ খামার ব্যবস্থা ছিল যা ১৯৯০ সালের পর ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে যায়।

অভিবাসন

সম্পাদনা

রাশিয়া, কাজাখস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের দেশসমূহে শ্রমিক অভিবাসনে দেশটি জড়িত। মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে ১০% বিদেশে কাজ করছেন। প্রায় ৫৮% শ্রমিক রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। অতি উচ্চ বেকারত্ব ও নিম্ন মজুরিই এর প্রধান কারণ। ইসরাইলের দূতাবাসে সপ্তাহে প্রায় ২০০ ভিসার আবেদন করা হয়।[১৩]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Uzbekistan in CIA World Factbook ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ জুলাই ২০১৬ তারিখে
  2. "Uzbekistan"Country Reports on Human Rights Practices - 1999। U.S. Department of State, Bureau of Democracy, Human Rights, and Labor। ২০০০-০২-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১৯ 
  3. Spoorenberg, Thomas (২০১৩)। "Fertility changes in Central Asia since 1980"Asian Population Studies9 (1): 50–77। ডিওআই:10.1080/17441730.2012.752238 
  4. Spoorenberg, Thomas (২০১৫)। "Explaining recent fertility increase in Central Asia"Asian Population Studies। Routledge। ডিওআই:10.1080/17441730.2015.1027275 
  5. Jennifer Barrett and Cynthia Buckley, “Constrained Contraceptive Choice: IUD Prevalence in Uzbekistan,” International Family Planning Perspectives (Jun. 2007), 52.
  6. [১]
  7. International Religious Freedom Report for 2004, U.S. Department of State, Bureau of Democracy, Human Rights, and Labor (released 2004-09-15)
  8. World Jewish Population 2001 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে, American Jewish Yearbook, vol. 101 (2001), p. 561.
  9. World Jewish Population 2007 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ মার্চ ২০০৯ তারিখে, American Jewish Yearbook, vol. 107 (2007), p. 592.
  10. Nancy Lubin. “Uzbekistan: The Challenges Ahead,” Middle East Journal vol. 43, Number 4, Autumn 1989, 619-634.
  11. Radnitz 2006, p. 658
  12. "Pew Global Attitudes"। ২২ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৫ 
  13. Daria Fane, “Ethnicity and Regionalism in Uzbekistan: Maintaining Stability Through Authoritarian Control,” in Leokadia Drobizheva, Rose Gottemoeller, Catherine McArdle Kelleher, and Lee Walker, ed., in Ethnic Conflict in the Post-Soviet World: Case Studies and Analysis (New York: M.E. Sharp, Inc., 1998), 271-302.