ভিলহেল্ম র‌ন্টজেন

জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী
(উইলিয়াম রন্টজেন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

পদার্থবিজ্ঞানে সর্বপ্রথম নোবেল বিজয়ী (১৯০১) জার্মান বিজ্ঞানী[] ভিলহেল্ম কনরাড র‌ন্টজেন (/ˈrɛntɡən, -ən, ˈrʌnt-/;[] জার্মান: [ˈvɪlhɛlm ˈʁœntɡən] ; মার্চ ২৭, ১৮৪৫  – ফেব্রুয়ারি ১০, ১৯২৩) যিনি ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম রঞ্জন রশ্মির পরিসরে বিদ্যুৎচৌম্বকীয় বিকিরণের আবিষ্কার করেন যা রঞ্জন রশ্মি বা এক্স-রশ্মি (English: X-ray) নামে পরিচিত।[][] ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে রন্টজেনের আবিষ্কার এবং অবদানের স্মরণে আন্তর্জাতিক বিশুদ্ধ ও ফলিত রসায়ন সংস্থা (IUPAC; English: International Union of Pure and Applied Chemistry) ১১১ পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট তেজস্ক্রিয় ও কৃত্রিম মৌলের নামকরণ করে রন্টজেনিয়াম, যার একাধিক অস্থিতিশীল আইসোটোপ বিদ্যমান। তাঁর নামে বিকিরণ এক্সপোজারের একক, রন্টজেন-এর (R) নামকরণ করা হয়।

ভিলহেল্ম কনরাড র‌ন্টযেন
ভিলহেল্ম কনরাড র‌ন্টগেন
জন্মমার্চ ২৭, ১৮৪৫
মৃত্যু১০ ফেব্রুয়ারি ১৯২৩(1923-02-10) (বয়স ৭৭)
জাতীয়তা জার্মান
মাতৃশিক্ষায়তনইটিএইচ জুরিখ, জুরিখ বিশ্ববিদ্যলয়
পরিচিতির কারণএক্স রশ্মি
পুরস্কার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯০১)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহস্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যলয়
হোহেনহাইম
গিসেন বিশ্ববিদ্যালয়
ভুজবার্গ বিশ্ববিদ্যলয়
মিউনিখ বিশ্ববিদ্যলয়
ডক্টরেট শিক্ষার্থীহেরমান মার্খ
স্বাক্ষর
Hand mit Ringen: রন্টগেনের তোলা প্রথম মানবদেহের এক্স-রে চিত্র। রন্টগেন ১৮৯৫ এর ২২শে ডিসেম্বর তাঁর স্ত্রী আনা বার্থা রন্টগেনের হাতের ছবি তোলেন।[][]

শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

তাঁর পিতা একজন জার্মান বণিক এবং কাপড় প্রস্তুতকারক ফ্রেডরিখ কনরাড রন্টজেন এবং মাতার নাম শার্লট কনস্ট্যানজে ফ্রোয়েইন।[] রন্টজেনের বয়স যখন তিন বছর, তখন পরিবারসহ তিনি নেদারল্যান্ডস-এ স্থানান্তরিত হন।[] তিনি ইউট্রেচ্ট টেকনিক্যাল স্কুলে প্রায় দুই বছরের জন্য পড়াশোনা করেন।[][] ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তাকে অন্যায়ভাবে হাই স্কুল থেকে বহিষ্কৃত করা হয়, যখন তাঁর একজন শিক্ষক অন্য একজন শিক্ষকের একটি ব্যঙ্গচিত্রে বাধা দেন, যা অন্য কেউ এঁকেছিলেন।

হাই স্কুল ডিপ্লোমা ছাড়াই রন্টজেন শুধুমাত্র অভ্যাগত হিসেবে নেদারল্যান্ডসের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারতেন। ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিয়মিত ছাত্রদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র ছাড়াই ইউট্রেচ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জুরিখ-এ অবস্থিত ফেডারেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে ইটিএইচ জুরিখ নামে পরিচিত) ভর্তি হতে পারবেন শুনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং সেখানে যন্ত্র প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।[] ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসফি ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তিনি প্রফেসর আগস্ট কুন্ড্টের একজন পছন্দের ছাত্র হয়ে ওঠেন, যাকে তিনি স্ট্রাসবার্গ-এ সদ্য প্রতিষ্ঠিত জার্মান কায়েজার-ভিলহেম্মস-ইউনিভার্সিটি (বর্তমান স্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়) পর্যন্ত অনুসরণ করেন।[]

 
রেমশেইড-লেনেপে রন্টজেনের জন্মস্থান
 
শাল্কউইজকস্ট্রাতে যে বাড়িতে রন্টজেন ১৮৬৩ থেকে ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত থাকতেন সেখানে দেওয়াল শিল্প। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে জ্যাকি স্লেপার কর্তৃক তৈরিকৃত।

কর্মজীবন

সম্পাদনা
 
মিউনিখের ডয়চেস জাদুঘর এ রন্টজেনের মার্বেল-নির্মিত ভাষ্কর্য

১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে রন্টজেন স্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক নিযুক্ত হন। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ওয়ার্টেমবার্গের হোহেনহেইমে অবস্থিত একাডেমি অফ এগ্রিকালচারের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে পুনরায় স্ট্রাসবার্গে ফিরে আসেন এবং ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গিসেন বিশ্ববিদ্যালয়-এর পদার্থবিদ্যা বিভাগের চেয়ারপার্সন নিযুক্ত হন। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উরজবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের [১০] এবং ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে বাভারিয়া সরকারের বিশেষ অনুরোধে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় এর বিশেষ অনুরোধে পদার্থবিদ্যার চেয়ার হিসেবে যোগদান করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়ায় রন্টজেনের পরিবার ছিল এবং তিনি দেশত্যাগ করার পরিকল্পনা করছিলেন। তিনি নিউ ইয়র্ক শহর-এর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এ একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ করেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বেই তাঁর পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ট্রান্সআটলান্টিক টিকিট ক্রয় করেন। কর্মজীবনের বাকি সময় তিনি মিউনিখ-এই অতিবাহিত করেন।

রঞ্জন রশ্মির আবিষ্কার

সম্পাদনা

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ারজবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ারজবার্গ ফিজিক্যাল ইনস্টিটিউটে তাঁর পরীক্ষাগারে রন্টজেন বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকুয়াম টিউব পরীক্ষার সরঞ্জামের (হেনরিক হার্টজ, জোহান হিটরফ, উইলিয়াম ক্রুকস, নিকোলা টেসলা এবং ফিলিপ লেনার্ড-এর যন্ত্র) মাধ্যমে বৈদ্যুতিক স্রাব অতিবাহিত করানোর বাহ্যিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছিলেন।Agar, Jon (২০১২)। Science in the Twentieth Century and Beyond। Cambridge: Polity Press। পৃষ্ঠা 18। আইএসবিএন 978-0-7456-3469-2 </ref> নভেম্বরের শুরুর দিকে তিনি লেনার্ডের টিউবগুলির একটি নিয়ে একটি পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করছিলেন যাতে ক্যাথোড রশ্মি প্রস্থান করার মতো একটি পাতলা অ্যালুমিনিয়ামের জানালা যুক্ত করা হয়েছিল, তবে ক্যাথোড রশ্মি উৎপন্নকারী শক্তিশালী স্থিরতড়িৎ ক্ষেত্র-এর প্রভাবে অ্যালুমিনিয়ামকে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এতে একটি কার্ডবোর্ড-এর আবরণ যোগ করা হয়েছিল। রন্টজেন জানতেন যে কার্ডবোর্ডের আবরণ আলোর গতিপথে বাধা প্রদান করে, তবুও তিনি লক্ষ্য করলেন যে অদৃশ্য ক্যাথোড রশ্মিগুলি অ্যালুমিনিয়াম উইন্ডোর কাছে রাখা বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড প্রলেপযুক্ত একটি ছোট কার্ডবোর্ডের পর্দায় প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে।[১০] রন্টজেন মনে করেন যে লেনার্ড টিউবের চেয়ে অত্যাধিক ঘন কাচের প্রাচীরবিশিষ্ট ক্রুকস-হিটরফ টিউবও এই ফ্লুরোসেন্ট প্রভাবের একটি কারণ হতে পারে।

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ৮ নভেম্বরের শেষ বিকেলে নিজস্ব ধারণা পরীক্ষার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রন্টজেন যত্ন সহকারে একটি কালো কার্ডবোর্ডের আবরণ তৈরি করেন, যেমনটা তিনি লেনার্ড টিউবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ক্রুকস-হিটরফ টিউবটিকে কার্ডবোর্ড দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন এবং স্থিরতড়িৎ আধান তৈরির জন্য একটি রুহম্কর্ফ কয়েলের সাথে তড়িৎদ্বার সংযুক্ত করেন। তিনি বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড স্ক্রিন স্থাপন করার পূর্বে কার্ডবোর্ডের আবরণের স্বচ্ছতা পরীক্ষা করার জন্য ঘরটিকে অন্ধকার করে নিয়েছিলেন। টিউবের মাধ্যমে রুহম্কর্ফ কয়েল চার্জ প্রেরণ করার সময়, তিনি নিশ্চিত করেন যে কভারটি হালকা আঁট ছিল এবং পরীক্ষার পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত হন। এই মুহূর্তে রন্টজেন টিউব থেকে কয়েক ফুট দূরে একটি বেঞ্চ থেকে একটি অস্পষ্ট ঝিলমিল লক্ষ্য করেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য, তিনি আরও বেশ কয়েকটি স্রাবের চেষ্টা করেন এবং প্রতিবার একই ঝিলমিল দেখেন। একটি ম্যাচ স্ট্রাইক করার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন যে বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড স্ক্রিনের অবস্থান থেকে ঝিলমিল এসেছে যা তিনি পরবর্তীতে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।

নিয়মিত ছায়ার গঠনের উপর ভিত্তি করে রন্টজেন একে "রশ্মি" বলে অভিহিত করেন।[১১] যেহেতু ৮ নভেম্বর শুক্রবার ছিল, তাই তিনি তাঁর পরীক্ষাসমূহ পুনরাবৃত্তি করার জন্য সপ্তাহান্তিক অবকাশের সুযোগ নিয়েছিলেন এবং তাঁর প্রথম নোট তৈরি করেন। পরের সপ্তাহগুলোতে তিনি অজানা রাশির জন্য ব্যবহৃত গাণিতিক প্রতীক ("X") ব্যবহার করে অস্থায়ীভাবে "এক্স-রে" নামে অভিহিত নতুন রশ্মির বৈশিষ্ট্যসমূহ অনুসন্ধান করা শুরু করেন। এ সময় এ নিবেদিতপ্রাণ পদার্থবিদ তাঁর আহার এবং নিদ্রা পরীক্ষাগারেই সম্পন্ন করতেন। নতুন রশ্মিগুলো অনেক ভাষায় তাঁর নামে "রন্টজেন রশ্মি" নামকরণ করা হয়। বাংল ভাষায় "এক্স-রশ্মি" বা "রন্টজেন রশ্মি"-কে "রঞ্জন রশ্মি" হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এ রশ্মি সংশ্লিষ্ট এক্স-রে রেডিওগ্রামকে "রন্টজেনোগ্রাম" হিসেবে নামকরণ করা হয়।

এক পর্যায়ে যখন তিনি বিভিন্ন পদার্থের এই রশ্মি থামাবার ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করছিলেন, তখন স্রাব ঘটানোর সময় রন্টজেন সীসার একটি ছোট অংশ রেখেছিলেন। রন্টজেন এইভাবে প্রথম রেডিওগ্রাফিক চিত্রটি দেখেছিলেন: বেরিয়াম প্ল্যাটিনোসায়ানাইড স্ক্রিনে তাঁর নিজের চকচকে কঙ্কাল।

তাঁর আবিষ্কারের প্রায় ছয় সপ্তাহ পর, তিনি তাঁর স্ত্রী আনা বার্থার হাতের এক্স-রে ব্যবহার করে একটি ছবি তুলেছিলেন—একটি রেডিওগ্রাফ[] যখন তাঁর স্ত্রী সে ছবি প্রত্যক্ষ্য করেন, তিনি উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠেন, "আমি আমার মৃত্যু দেখেছি!"[১২] তিনি পরবর্তীতে একটি অভিভাষণে তাঁর বন্ধু শারীরতত্ত্ববিদ আলবার্ট ভন কলিকার-এর হাতের আরও ভালো ছবি তুলেছিলেন।

১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর রন্টজেনের মূল গবেষণাপত্র "অন এ নিউ কাইন্ড অফ রে" (Ueber eine neue Art von Strahlen) প্রকাশিত হয়। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি এক অস্ট্রীয় সংবাদপত্র রন্টজেনের এক নতুন ধরণের বিকিরণ আবিষ্কারের সংবাদ প্রতিবেদন তুলে ধরে। রন্টজেন তাঁর আবিষ্কারের পর উরজবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় হতে সম্মানসূচক ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ রয়েল সোসাইটি হতে ফিলিপ লেনার্ড-এর সাথে যৌথভাবে রামফোর্ড পদক অর্জন করেন, যিনি ইতিমধ্যেই দেখিয়েছিলেন যে ক্যাথোড রশ্মির একাংশ ধাতুর (উদাহরণস্বরূপ অ্যালুমিনিয়াম) পাতলা ফিল্মের মধ্য দিয়েও চলাচল করতে পারে।[১০] ১৮৯৫ হতে ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রন্টজেন এক্স-রে সংক্রান্ট মোট তিনটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ।[১৩] বর্তমানে রন্টজেনকে ডায়াগনস্টিক রেডিওলজির (চিকিৎসা বিষয়ক ক্ষেত্র যাতে রোগ নির্ণয়ের জন্য ইমেজিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়) জনক হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

পুরস্কার এবং সম্মান

সম্পাদনা

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে রন্টজেন প্রথম পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার-এ ভূষিত হন। পুরষ্কারটি আনুষ্ঠানিকভাবে "অসাধারণ রশ্মি, যা পরবর্তীকালে তাঁর নামকরণ করা হয়, আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি যে অসাধারণ সেবা প্রদান করেছেন তাঁর স্বীকৃতিস্বরূপ"।[১৪] অভিভাষণে লাজুক রন্টজেন নোবেল বক্তৃতা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।[১১]:৩৯ নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৫০,০০০ সুইডিশ ক্রোনা তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়, উরজবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্যদান করে দেন। মারি এবং পিয়ের ক্যুরির মতোই রন্টজেন তাঁর এক্স-রে আবিষ্কারের সাথে সম্পর্কিত পেটেন্ট নিতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে সমগ্র সমাজ এই ঘটনার ব্যবহারিক প্রয়োগ থেকে উপকৃত হোক। রন্টজেন এছাড়াও ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে বার্নার্ড মেডেল ফর মেরিটরিয়ার সার্ভিস ইন সাইন্স পদকে ভূষিত হন।[১৫]

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিশুদ্ধ ও ফলিত রসায়ন সংস্থা তাঁর সম্মানে ১১১ পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট মৌলিক পদার্থের রন্টজেনিয়াম (Rg) নামকরণ করেন। আন্তর্জাতিক বিশুদ্ধ ও ফলিত পদার্থ সংস্থা (IUPAP) ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে নামটি গ্রহণ করে।

১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির একজন আন্তর্জাতিক সদস্য নির্বাচিত হন।[১৬] তিনি ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে en:Royal Netherlands Academy of Arts and Sciences-এর একজন বিদেশী সদস্য নির্বাচিত হন।[১৭]

উত্তরাধিকার

সম্পাদনা

মেরিল্যান্ডে অবস্থিত বেথেসদার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে তাঁর গবেষণাপত্রের একটি সংগ্রহ রাখা হয়েছে।[১৮]

রন্টজেনের জন্মস্থান ডুসেলডর্ফ হতে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে রেমশেইড-লেনেপে ডয়েচে রন্টজেন-যাদুঘর অবস্থিত।[১৯]
উর্জবার্গে (যেখানে তিনি এক্স-রে আবিষ্কার করেছিলেন) সেখানে একটি অলাভজনক সংস্থা তাঁর পরীক্ষাগার রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত এবং রন্টজেন মেমোরিয়াল সাইট-এ নির্দেশনাসমৃদ্ধ পর্যটনের সুযোগ প্রদান করে।[২০]

বিশ্ব রেডিওগ্রাফি দিবস: বিশ্ব রেডিওগ্রাফি দিবস একটি বার্ষিক দিবস যা আধুনিক স্বাস্থ্যসেবাইয় মেডিকেল ইমেজিংয়ের ভূমিকার প্রচার-প্রচারণা করা হয়ে থাকে। এটি প্রতি বছর ৮ নভেম্বর পালিত হয়। এটি প্রথম ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে en:European Society of Radiology, en:Radiological Society of North America এবং en:American College of Radiology-এর একটি যৌথ উদ্যোগ হিসাবে শুরু হয়েছিল।

রন্টজেনকে রঞ্জন রশ্মির আবিষ্কারক হিসাবে স্মরণ করে ৪০ টি দেশ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট ৫৫ টি স্ট্যাম্প জারি করা হয়েছে।[২১][২২]

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের রন্টজেন পিক ভিলহেল্ম রন্টজেনের নামে নামকরণ করা হয়েছে।[২৩]

গৌণ গ্রহরাশি 6401 রন্টজেন তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে।[২৪]

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Wilhelm Röntgen (1845–1923) – Ontdekker röntgenstraling"। historiek.net। ৩১ অক্টোবর ২০১০। 
  2. "Röntgen". Random House Webster's Unabridged Dictionary.
  3. Novelize, Robert. Squire's Fundamentals of Radiology. Harvard University Press. 5th ed. 1997. আইএসবিএন ০-৬৭৪-৮৩৩৩৯-২ p. 1.
  4. Stoddart, Charlotte (১ মার্চ ২০২২)। "Structural biology: How proteins got their close-up"Knowable Magazineডিওআই:10.1146/knowable-022822-1 । সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০২২ 
  5. Kevles, Bettyann Holtzmann (১৯৯৬)। Naked to the Bone Medical Imaging in the Twentieth Century। Camden, NJ: Rutgers University Press। পৃষ্ঠা 19–22। আইএসবিএন 0813523583 
  6. Sample, Sharron (2007-03-27)। "X-rays"The electromagnetic spectrum। NASA। সংগ্রহের তারিখ 2007-12-03  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  7. "Wilhelm Röntgen"University of Washington: Department of Radiology। ৭ জানুয়ারি ২০১৫। 
  8. Rosenbusch, Gerd। Wilhelm Conrad Röntgen: The Birth of Radiology। পৃষ্ঠা 10। 
  9. Trevert, Edward (১৯৮৮)। Something About X-Rays for Everybody। Madison, Wisconsin: Medical Physics Publishing Corporation। পৃষ্ঠা 4আইএসবিএন 0-944838-05-7 
  10. চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Röntgen, Wilhelm Konrad"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ23 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 694। 
  11. Pais, Abraham (২০০২)। Inward bound: of matter and forces in the physical world (Reprint সংস্করণ)। Oxford: Clarendon Press [u.a.]। আইএসবিএন 978-0-19-851997-3 
  12. Landwehr, Gottfried (১৯৯৭)। Hasse, A, সম্পাদক। Röntgen centennial: X-rays in Natural and Life Sciences। Singapore: World Scientific। পৃষ্ঠা 7–8। আইএসবিএন 981-02-3085-0 
  13. Wilhelm Röntgen, "Ueber eine neue Art von Strahlen. Vorläufige Mitteilung", in: Aus den Sitzungsberichten der Würzburger Physik.-medic. Gesellschaft Würzburg, pp. 137–147, 1895; Wilhelm Röntgen, "Eine neue Art von Strahlen. 2. Mitteilung", in: Aus den Sitzungsberichten der Würzburger Physik.-medic. Gesellschaft Würzburg, pp. 11–17, 1896; Wilhelm Röntgen, "Weitere Beobachtungen über die Eigenschaften der X-Strahlen", in: Mathematische und Naturwissenschaftliche Mitteilungen aus den Sitzungsberichten der Königlich Preußischen Akademie der Wissenschaften zu Berlin, pp. 392–406, 1897.
  14. See https://www.nobelprize.org/prizes/physics/1901/rontgen/facts/ and Jost Lemmerich: Röntgen Rays Centennial 1895–1995, Würzburg 1995, আইএসবিএন ৩-৯২৩৯৫৯-২৮-১.
  15. "Award of Bernard Medal"Columbia Daily Spectator। XLIII (57)। New York City। ২৩ মে ১৯০০। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৮ 
  16. "APS Member History"search.amphilsoc.org। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  17. "W.C. Röntgen (1845–1923)"। Royal Netherlands Academy of Arts and Sciences। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৫ 
  18. "Fundamental contributions to the X-ray: the three original communications on a new kind of ray / Wilhelm Conrad Röentgen, 1972"। National Library of Medicine। 
  19. Deutsches Röntgen-Museum at roentgen-museum.de
  20. Röntgen Memorial Site at wilhelmconradroentgen.de
  21. Guzei, Ilia (২০২৩)। "Wilhelm Conrad Röntgen - on international postage stamps"। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০২৪ 
  22. Munk, Peter L.; Peh, Wilfred C.G. (২০২৩)। "Rontgen and the Discovery of X rays on stamps"The Canadian Philatelist74 (1): 14–19। 
  23. Röntgen Peak. SCAR Composite Antarctic Gazetteer
  24. "(6401) Roentgen"(6401) Roentgen In: Dictionary of Minor Planet Names। Springer। ২০০৩। পৃষ্ঠা 530। আইএসবিএন 978-3-540-29925-7ডিওআই:10.1007/978-3-540-29925-7_5844 

বহির্ভূত লিঙ্কসমূহ

সম্পাদনা