উইকিপিডিয়া:উইকিপত্রিকা/পৌষ ১৪৩১/বিশেষ প্রতিবেদন

বিশেষ প্রতিবেদন

তথ্যসূত্র উন্নয়ন সেশন: যা বলেছি আর যা বলা হয়নি

উইকিসম্মেলনে সেশন নেওয়ার সময় আমি।

আমরা সকলেই জানি যে সূত্র ছাড়া উইকিপিডিয়া কিছুই না। উইকিপিডিয়ায় একটি নিবন্ধ সৃষ্টি করতে সূত্র লাগবেই লাগবে। তবে উইকিপিডিয়ার আছে একটি নীতিমালা। যেকোন সূত্র হলেই উইকিপিডিয়ায় নিবন্ধ লেখা যায়না। সূত্র হতে হবে যাচাইযোগ্য, মাধ্যমিক, নিরপেক্ষ ও উন্নতমানের। আমার মনে হয় সূত্র বাছাই ঠিকমতো করতে না পারার ফলে একটি নিবন্ধ সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে যায়। আমি সঠিক ও উন্নতমানের সূত্র খুঁজে না পাওয়াকে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখি। কেননা দেখা যায় যে কিছু বিষয় উইকিপিডিয়ায় উল্লেখযোগ্য হলেও ভালো সূত্রের অভাবে সেই বিষয়গুলোর উপর নিবন্ধ লেখা সম্ভব হচ্ছেনা।

হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন যে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে গাজীপুর জেলার মাওনায় উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ কর্তৃক বাংলা উইকিসম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত উইকিমিডিয়ানরা বিভিন্ন বিষয়ের উপর সেশন নিয়েছিলেন। আমি উইকিসম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম এবং সেখানে ১৬ তারিখে আনুমানিক সকাল ১১.৩০ টার পরে “উইকিপিডিয়ায় তথ্যসূত্র উন্নয়ন, সঠিক ও উন্নতমানের সূত্র বাছাই ও ব্যবহার” শিরোনামে একটি ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের সেশন উপস্থাপন করি। নিচে সেশনের ভিডিও ও স্লাইড পেয়ে যাবেন।

তবে সত্যি কথা বলতে স্লাইড পড়ে একটি সেশন সব সময় স্পষ্ট বোঝা যায়না। যদিও সেশনের ভিডিও আছে, কিন্তু সেই ভিডিওটা সম্পূর্ণ নয়। তাছাড়া সেশনে হয়তো সময়ের অভাবে অনেক কিছু বলা যায়নি বা ব্যাখ্যা করা যায়নি। উইকিসম্মেলনে অনেকে উপস্থিত ছিলেন না। সুতরাং তাদের কাছে সেশনের বিস্তারিত পৌঁছানোর জন্য আমার এই লেখা।

আমরা সকলেই জানি যে, সূত্র ছাড়া উইকিপিডিয়া কিছুই না। উইকিপিডিয়ায় একটি নিবন্ধ সৃষ্টি করতে সূত্র লাগবেই লাগবে। তবে উইকিপিডিয়ার আছে একটি নীতিমালা। যেকোন সূত্র হলেই উইকিপিডিয়ায় নিবন্ধ লেখা যায়না। সূত্র হতে হবে যাচাইযোগ্য, মাধ্যমিক, নিরপেক্ষ ও উন্নতমানের। আমার মনে হয় সূত্র বাছাই ঠিকমতো করতে না পারার ফলে একটি নিবন্ধ সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে যায়। আমি সঠিক ও উন্নতমানের সূত্র খুঁজে না পাওয়াকে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখি। কেননা দেখা যায় যে কিছু বিষয় উইকিপিডিয়ায় উল্লেখযোগ্য হলেও ভালো সূত্রের অভাবে সেই বিষয়গুলোর উপর নিবন্ধ লেখা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই কিভাবে আমরা নিবন্ধের জন্য ভালো সূত্র যোগাড় ও উন্নয়ন করতে পারি সেটাই সেশনে অভিজ্ঞ উইকিমিডিয়ানদের নিকট তুলে ধরেছিলাম।

প্রথম সমস্যা হচ্ছে একটি পাতাকে যাচাইযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ যেসব সূত্র ব্যবহার করে নিবন্ধটি তৈরি করা হয়েছে সেগুলো নির্ভরযোগ্য কিনা। বর্তমানে ওয়েব সূত্র পাওয়া খুব সহজ। ওয়েব সূত্র বলতে বোঝানো হচ্ছে সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রকাশিত খবর, বিভিন্ন গবেষণামূলক ওয়েবসাইটের তথ্য ইত্যাদি। কিন্তু এখানে ব্যাপার হচ্ছে ওয়েব সূত্র বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যেতে পারে। কয়েক মাস আগে উত্তরা লেক নিবন্ধ লেখার জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের ২০১৩ সালে অনলাইনে প্রকাশিত একটি সূত্র পাওয়া গিয়েছিল। বেশ কয়েক দিন পর ওই সূত্রের লিংকে গিয়ে দেখি সেটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে! আমি ভাবতে পারিনি যে মাসখানেকের মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন খবরটি মুছে ফেলবে। নাহলে তখনই সেটা আর্কাইভ করে ফেলতাম। আর্কাইভ আমাদের ওয়েব সূত্র হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। আর তাই উইকিপিডিয়ানদের কাছে আমার পরামর্শ: কখনোই যেকোন অনলাইন সূত্র দ্রুত আর্কাইভ করতে ভুলবেন না, এমনকি সেই সূত্র কাজে লাগবেনা বলে মনে হলেও। কারণ ভবিষ্যতে যে তা কাজে আসবেনা তার নিশ্চয়তা আমরা কেউ দিতে পারিনা। সেই প্রসঙ্গে আমি পরে আসছি।

বাংলাদেশের (এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতের) সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টালের একটা বড় দোষ হচ্ছে তারা আগের খবরগুলো ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলে (খুব সম্ভবত স্টোরেজের অভাবে)। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম “দ্য ডেইলি স্টার”। তবে শুধু একটি ওয়েবসাইটের সূত্র দিয়ে উইকিপিডিয়ায় কোন পাতার উল্লেখযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা যায়না। কিন্তু আরেকটা বড় বিষয় হলো আর্কাইভার চাইলেও সব ওয়েবসাইটের পেজ আর্কাইভ করতে পারছেনা। এই সমস্যাটা সাম্প্রতিক দেখা গেছে। যেমন আগে “দ্য ডেইলি স্টার” বা “বাংলা ট্রিবিউনের” সূত্র আর্কাইভ করা যেতো, আজকাল করা যাচ্ছেনা। আমার ধারণা ডিডোজ অ্যাটাক থেকে রক্ষা করতে এসব ওয়েবসাইটে প্রক্সি সার্ভার থেকে সরাসরি প্রবেশ এড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হচ্ছে। কেননা যখনই এসব ওয়েবসাইটের লিংক আমি আর্কাইভ করতে যাই তখন আর্কাইভার বলে যে লিংকে অ্যাক্সেস বা প্রবেশ করতে পারছেনা। এই সমস্যা সূত্র রক্ষার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে নাহিদ সুলতান জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আর্কাইভ করা সূত্র হারিয়ে যাওয়া ঠেকানোর জন্য সমাধান হতে পারে কিনা। অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আজকাল সব সূত্র আর্কাইভার দ্বারা আর্কাইভ করা যাচ্ছেনা। অন্যদিকে সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদমের বর্তমান ইস্যুর কারণে কিছু মূল্যবান সূত্র সার্চ রেজাল্টে আসছেনা। আবার দেখা যাচ্ছে যে বিষয়টি নিয়ে লিখছি তার ব্যাপারে নতুন খবর প্রকাশ পেলে সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্টে পুরোনো লিংকগুলো এক প্রকারের উধাও হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে এম এ এন ছিদ্দিক নিবন্ধের উদাহরণটা দেওয়া যায়। এটা লেখার সময়টা ছিল ছিদ্দিককে পদচ্যুত করে মোহাম্মদ আবদুর রউফকে নিয়োগ করার আগে। তখন বেশ কিছু সূত্র সংগ্রহ করে নিবন্ধটি লিখে ফেলি। কিন্তু এম এ এন ছিদ্দিকের চুক্তি সরকার বাতিল করার পর সার্চ রেজাল্টে খেয়াল করি যে আগের পুরোনো সূত্র মানে যেগুলো আমি নিবন্ধে ব্যবহার করেছিলাম সেগুলো সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্টে কিছুতেই আনা যাচ্ছেনা। যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে। এখন ধরুন আমি যদি এম এ এন ছিদ্দিকের চুক্তি বাতিলের পর তার নিবন্ধ লিখতে যেতাম তাহলে কি তখন উল্লেখযোগ্যতা অর্জনের জন্য যে পুরোনো সূত্রগুলো প্রয়োজন সেগুলো পেতাম? আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে যদি আমরা কোন অনলাইন সূত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকি তাহলে কিভাবে সেটা আর্কাইভ করবো? মানে ধরুন আজ থেকে “ক” দিন পর আমি হয়ত “খ” বিষয়ের উপর নিবন্ধ রচনা করবো। আমি “ক” দিন পর নিবন্ধটি লিখবো তা কিন্তু আজ জানিনা। নিবন্ধটি লিখতে অনলাইনের “গ” সূত্রটি খুবই প্রয়োজন হবে। আবার ধরুন “গ” সূত্রটি “ক-১” দিনে (অর্থাৎ “ক” দিনের ঠিক এক দিন আগে) মুছে ফেলা হবে। এখন আমি “খ” বিষয়টি নিয়ে যে লিখবো সেটাই যদি “ক-১” দিন আগে না জানি তাহলে কিভাবে সূত্রটি খুঁজে আর্কাইভ করে সংরক্ষণ করবো? যদি অন্য কোন নিবন্ধ নিয়ে কাজ করার সময় ঘটনাক্রমে সূত্রটি আমার সামনে চলে আসে সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য সূত্রটি সংরক্ষণ করার কথা আমি ভাবতে পারি। আর এখানেই চলে আসে স্মৃতিশক্তির ব্যাপারটা।

আমরা উইকিপিডিয়ানরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখি। লেখার সময় এমন কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্রের প্রয়োজন হয় যেখানে শুধু নিবন্ধের বিষয়টি নিয়েই বিস্তারিত লেখা হয়েছে। এর পাশাপাশি এমন সূত্রের প্রয়োজন হবে যেখানে অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এবং তাতে আমার লেখা নিবন্ধের বিষয়টিও আছে। আবার নিবন্ধের বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর হালনাগাদ সম্পর্কিত সূত্রেরও প্রয়োজন পড়ে। এমন অনেক সূত্র পাওয়া যায় যেখানে প্রসঙ্গের কারণে বা ঘটনাক্রমে আমার লেখা নিবন্ধটির বিষয়ে বর্ণনা থাকতে পারে। এই সব ধরনের সূত্র আমরা যদি নিবন্ধে অন্তর্ভুক্ত করতে না পারি তাহলে অনেক সময় একটি নিবন্ধের উল্লেখযোগ্যতা পূর্ণতা পায়না। আর উল্লেখযোগ্যতা নিশ্চিত না করা গেলে সেই পাতাটি অপসারিত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে আমার মনে পড়ে যায় নিজের লেখা শিল্পী কামরুল হাসান সড়কের কথা। যেহেতু উইকিপিডিয়ায় ঢাকা মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন ৬-এর সম্প্রসারণের কাজে আমি নিয়মিতভাবে আছি সেহেতু নিবন্ধের জন্য মেট্রোরেল সম্পর্কিত সূত্রগুলো আমাকে পড়ে দেখতে হয়। একদিন একটি সূত্র পড়ে জানতে পারি যে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেলের পিলার বসানোর সুবিধার্থে উত্তরার ১৫ নং সেক্টর থেকে মিরপুরের ডিওএইচএস পর্যন্ত একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২০২২ সালে নামবিহীন সড়কটি চালু করে দেওয়া হয় এবং ২০২৩ সালে এর নাম “শিল্পী কামরুল হাসান সড়ক” দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। তো পরবর্তীতে আমি সড়কটি নিয়ে নিবন্ধ সৃষ্টি করা সম্ভব কিনা তা বিবেচনা করার সময় সূত্রটির কথা মাথায় আসে। তখন আরও সূত্র খোঁজার সময় বুঝতে পারি যে ২০১৬ সালে প্রকাশিত সূত্রটি নিবন্ধের উল্লেখযোগ্যতাকে পূর্ণতা দিবে। কেননা উপরে ব্যাখ্যা করেছি যে বিভিন্ন রকম সূত্রের প্রয়োজন হয়। আর স্মৃতিশক্তির জোরে আমি শিল্পী কামরুল ইসলাম নিবন্ধের উল্লেখযোগ্যতা পূরণ করতে সক্ষম হই।

তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে অনলাইন সূত্রের মাধ্যমে যেকোন বিষয়ের উল্লেখযোগ্যতাকে পূর্ণতা দেওয়া সম্ভব হয়না। কেননা বর্তমান যুগের নির্ভরযোগ্য প্রকাশনাগুলো কিছু বিষয় নিয়ে লিখেনা। গবেষক আফসান চৌধুরীর “অসহযোগ আন্দোলন ও প্রতিরোধ” বইতে লেখা আছে যে পাকিস্তান আমলে উত্তরবঙ্গের বিহারীরা নিজেদের জন্য পৃথক প্রদেশ দাবি করেছিল। অনলাইনে এটা নিয়ে কোন খবর প্রকাশিত হয়নি বললেই চলে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে যে আপনি কিভাবে এই বিষয়ের জন্য উইকিপিডিয়ায় উল্লেখযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করবেন? শুধু একটা বই দিয়ে উল্লেখযোগ্যতা পূরণ করা যাবেনা। সেক্ষেত্রে একাধিক বই ও গবেষণাপত্র প্রয়োজন যেগুলোতে বিষয়টি নিয়ে লেখা আছে। কিন্তু বই যোগাড় করা খুব সহজ কাজ নয়। অন্যদিকে দেশে ইতিহাস নিয়ে উন্নতমানের গবেষণাপত্র প্রকাশ হয় কম, আবার সেগুলো অনেক সময় মানুষের নিকট উন্মুক্ত করা হয়না। ঐতিহাসিক সংবাদপত্র অবশ্য এসব পরিস্থিতিতে ভালো সমাধান হতে পারে। ঐতিহাসিক সংবাদপত্র বলতে আমি আগের সময়কার পত্রিকাগুলোর কথা বলছি। এটাও বলে রাখা ভালো যে ঐতিহাসিক ঘটনার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে অনলাইন সূত্রগুলো ভুল তথ্য দিতে পারে। ঐতিহাসিক সংবাদপত্র সেসব ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে পারে। তবে ঐতিহাসিক সংবাদপত্র পাওয়া এত সহজ না। আপনি টাকা দিয়ে লাইব্রেরি থেকে ঐতিহাসিক সংবাদপত্র কিনতে পারেন। তবে সবসময় তথ্যের জন্য অর্থ ব্যয় করা সাধ্যে নাও কুলাতে পারে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বা পিআইবির সংরক্ষাণাগার (যদি আপনি সাংবাদিক হয়ে থাকেন) ঐতিহাসিক সংবাদপত্র পাওয়ার ভালো উৎস হতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সময় ও অর্থ ব্যয় করে গ্রন্থাগার বা আর্কাইভে গিয়ে সংবাদপত্র খোঁজা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি মাঝেমধ্যে সংগ্রামের নোটবুক নামক ওয়েবসাইট ব্যবহার করি। এখানে আছে ১৯৪০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংবাদপত্র। তবে এরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এসবের পাশাপাশি মনে রাখা প্রয়োজন যে এই অনলাইন পত্রিকা আর্কাইভ সার্চ ইঞ্জিনের মতো নয়। সার্চ ইঞ্জিনে নিজের ফরমায়েশ মতো সার্চ করে তথ্য খোঁজা যায়। অন্যদিকে সংগ্রামের নোটবুকে লেখা সার্চ করে ঐতিহাসিক সংবাদপত্রগুলো থেকে নির্দিষ্ট কোন খবর পাওয়া এক কথায় প্রায় অসম্ভব। আপনি যদি কোন ঘটনা বা বিষয়ের সুনির্দিষ্ট তারিখ জেনে থাকেন তাহলে তথ্য পাওয়া সহজতর হতে পারে। সংগ্রামের নোটবুকে কিন্তু সব তারিখের সব সংবাদপত্রের পিডিএফ ফাইল পাওয়া যায়না। সুতরাং ঐতিহাসিক সংবাদপত্র ব্যবহারেও চ্যালেঞ্জ আছে। এখানে উল্লেখ্য যে বিদেশের সংবাদপত্র আর্কাইভে এসব সমস্যা নেই। তবে বিদেশের ইংরেজি সংবাদপত্র আর্কাইভ ব্যবহারে অনেক সময় অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে যা অনেক উইকিপিডিয়ানের পক্ষে সম্ভব নয়।

সেশনে সবার শেষে সমস্যা সমাধানে আমি দুটি পরামর্শ দিয়েছিলাম। প্রথম পরামর্শটি ছিল পিডিএফ বইয়ের একটা অনলাইন লাইব্রেরি তৈরি, আরেকটি হলো ঐতিহাসিক সংবাদপত্রের জন্য একটি অনলাইন আর্কাইভ স্থাপন যেখানে শুধু বাংলা সংবাদপত্র পাওয়া যাবে এবং সার্চ ইঞ্জিনের মতো সার্চ করে কি-ওয়ার্ডের ভিত্তিতে নিজের জন্য কাঙ্খিত সংবাদ পাওয়া সম্ভব হবে। এই দুটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে উইকিপিডিয়ানরা বিনামূল্যে এগুলো ব্যবহার করে উইকিপিডিয়াকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবে। প্রশ্নোত্তর পর্বে অবশ্য আমি আরেকটি পরামর্শ দিয়েছিলাম – উইকিপিডিয়ার জন্য স্বতন্ত্র অনলাইন আর্কাইভার তৈরি। কিন্তু সময় স্বল্পতায় তখন আমি এর রূপরেখা সেশনে তুলে ধরিনি। এই অনলাইন আর্কাইভার ব্যবহার করতে উইকিমিডিয়া অ্যাকাউন্টের আবশ্যকতা রাখা উচিত। তবে এটি হবে থার্ড পার্টি আর্কাইভার ভিত্তিক যেখানে আমরা উইকিপিডিয়ানরা ওয়েবপেজ আর্কাইভ করবো। সেটা কেমন হবে? ধরুন আপনি একটি ওয়েবসাইটের পাতা আর্কাইভ করতে চাইছেন যেটি কোন ফ্রি অনলাইন আর্কাইভার আর্কাইভ করতে পারছেনা। আপনার ফোনে কিংবা কম্পিউটারে আর্কাইভ করার জন্য একটি সফটওয়্যার বা অ্যাপ ইনস্টল করা থাকবে। সেটি ব্যবহার করে আপনি যে ওয়েবপেজ আর্কাইভ করতে চান সে লিংকে প্রবেশ করবেন। ওয়েবপেজ লোড হওয়ার পর আর্কাইভ বোতামে ক্লিক করলে আপনার আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে তা আপনার ডিভাইসে অস্থায়ী সময়ের জন্য আর্কাইভ করে সংরক্ষণ করা হবে। তারপর সেই আর্কাইভ সফটওয়্যার/অ্যাপ ওয়েবসাইট হতে ডিভাইসে ডাউনলোড করে আর্কাইভ করা ফাইলটি উইকিপিডিয়ার প্রস্তাবিত আর্কাইভারের সার্ভারে আপলোড করবে। সফটওয়্যার/অ্যাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার উইকিমিডিয়া অ্যাকাউন্ট লগিন করা থাকবে। সার্ভারে আর্কাইভ ফাইল আপলোড করার পর সেটি আর্কাইভ তালিকায় ভেসে উঠবে এবং সেটি কখন আপলোড করা হয়েছে তার তারিখ ও সময়ের পাশাপাশি আপনার ব্যবহারকারী নাম দেখা যাবে। আর এভাবেই অনলাইন আর্কাইভারের সমস্যার সমাধান করা যাবে।

আজ এই পর্যন্তই, ভবিষ্যতে উইকিপিডিয়ায় সূত্রের ব্যবহার নিয়ে হয়তো আরও লিখবো।

উদ্ধৃতি

  • সেশনটির প্রেজেন্টেশন স্লাইড দেখতে: https://commons.m.wikimedia.org/wiki/File:উইকিপিডিয়ায়_তথ্যসূত্র_উন্নয়ন,_সঠিক_ও_উন্নতমানের_সূত্র_বাছাই_ও_ব্যবহার.pdf
  • সেশনটির ভিডিও দেখতে চাইলে: https://www.youtube.com/live/I0iBa9Ly-4c?si=ziakLUC6-ddqSf9W
  • https://bn.wikipedia.org/wiki/এমআরটি_লাইন_৬
  • https://dailyasianage.com/news/12500/metro-rail-obstacles-contained-partially
  • https://bn.wikipedia.org/wiki/এম_এ_এন_ছিদ্দিক
  • https://bn.wikipedia.org/wiki/উত্তরা_লেক
  • https://bd.wikimedia.org/wiki/বাংলা_উইকিসম্মেলন_২০২৪