ইসলামি সামরিক আইনশাস্ত্র

উইকিমিডিয়ার ইসলামী তালিকা নিবন্ধ

ইসলামী সামরিক আইনশাস্ত্র বলতে এমন কিছু বিধিমালাকে বোঝায়, যা শরিয়তে (ইসলামী আইনে) এবং ফিকহে (ইসলামী আইনশাস্ত্রে) উলামাদের (ইসলামী পণ্ডিত) দ্বারা যুদ্ধের সঠিক ইসলামী পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত হয়েছে, যেই নিয়মগুলোকে যুদ্ধের সময় মুসলিমরা মেনে চলবে বলে আশা করা হয়। কিছু পণ্ডিত এবং মুসলিম ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ইসলামী নীতিমালার উপর ভিত্তি করে সশস্ত্র সংগ্রামকে ক্ষুদ্রতর জিহাদ) হিসাবে বর্ণনা করেন।

বিধিবিধানের ক্রমবিকাশ

সম্পাদনা

প্রথম সামরিক বিধানসমূহ প্রণয়ন করা হয়েছিল, যখন মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিধানসমূহ কুরআন (ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ) এবং হাদিস (মুহাম্মদ (সা.) এর কার্যকলাপ, উক্তি, সম্মতি ও রীতি নিয়ে সংরক্ষিত বর্ণনা) এর ব্যাখ্যার আলোকে ক্রমান্বয়ে বিকশিত হয়। এসব বিধানের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল যুদ্ধের ন্যায়সঙ্গতা (হারব) এবং জিহাদের আদেশ। সাধারণ বিবাদ ও সশস্ত্র সংঘর্ষগুলো এ বিধানের আওতায় পড়ে না।[]

জিহাদ (আরবিতে "সংগ্রাম") শব্দটি মক্কার কুরাইশদের দ্বারা মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের পর সামরিক দিক থেকে একটি বিশেষ তাৎপর্য লাভ করে। এটি আল্লাহর পথে সংগ্রাম হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়, যা মুসলিম উম্মাহ দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত। জিহাদের নির্দেশনাগুলোকে মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত উভয় দায়িত্ব হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছে। এজন্য আক্রমণের প্রকৃতি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ—যদি মুসলিম উম্মাহর ওপর সমষ্টিগত আক্রমণ হয়, তখন জিহাদ প্রতিটি মুসলমানের ওপর বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এছাড়া, মুসলিম শাসিত অঞ্চল (দার আল-ইসলাম) এবং অমুসলিম অঞ্চল (বন্ধুসুলভ বা শত্রুভাবাপন্ন) অনুযায়ী জিহাদের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন ভিন্নভাবে নির্ধারিত হয়।[]

যুদ্ধের নীতিশাস্ত্র

সম্পাদনা

যুদ্ধ ন্যায়সঙ্গত হয় বৈধ আত্মরক্ষার জন্য, অন্য মুসলমানদের সাহায্য করতে এবং চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হলে, তবে এই পরিস্থিতিগুলো আর বিদ্যমান না থাকলে যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত।[][][][] যুদ্ধ অবশ্যই নিয়মানুবর্তিতার সাথে পরিচালিত হতে হবে, যাতে নিরীহ নাগরিকদের ক্ষতি এড়ানো যায়, প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন শক্তি প্রয়োগ করতে হয়, ক্রোধ ছাড়াই এবং যুদ্ধবন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হয়।[]

মুহাম্মদ (সা.) তার জীবদ্দশায় মুসলিম বাহিনীকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং যুদ্ধ পরিচালনার জন্য কিছু নীতিমালা গ্রহণ করেছিলেন। তার এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাগুলোর সারাংশ তার সঙ্গী এবং প্রথম খলিফা আবু বকর মুসলিম সেনাবাহিনীর জন্য দশটি নিয়মে উপস্থাপন করেন:[]

হে মানুষগণ! আমি আপনাদের দশটি নির্দেশনা দিচ্ছি; এগুলো ভালোভাবে শিখে নিন! হে মানুষগণ, থামো, যাতে আমি আপনাদের যুদ্ধের সময় দশটি নির্দেশনা প্রদান করতে পারি। বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না। মৃতদেহ বিকৃত করবেন না। শিশু, নারী, অথবা বৃদ্ধদের হত্যা করবেন না। খাদ্যের প্রয়োজন ব্যতিত শত্রুর কোন গবাদি পশু হত্যা করবেন না। যুদ্ধের প্রয়োজন ছাড়া গাছপালার ক্ষতি করবেন না, বিশেষত ফলদায়ী গাছগুলোকে আগুনে পোড়াবেন না। এমন কোনো গির্জাবাসী, সন্ন্যাসী বা ধর্মযাজককে হত্যা করবেন না, যারা তাদের জীবন ধর্মীয় সেবায় উৎসর্গ করেছেন।

— আসসুনানুল কুবরা- ৯/৯০

তাবারি (মুসলিম ইতিহাসবিদ) এর মতে, আবু বকর (রা.) (প্রথম খলিফা) উসামা ইবনে যায়িদের অভিযানের সময় দশটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছিলেন।[] অন্যদিকে, সিফফিনের যুদ্ধের সময় খলিফা আলি (রা.) বলেছিলেন যে ইসলাম শত্রুদের পানি সরবরাহ বন্ধ করাকে অনুমোদন দেয় না।[] রাশিদুন খলিফাদের এই ঘটনা ছাড়াও, হাদিসে এসেছে যে নবী মুহাম্মদ (সা.) মিশর বিজয়ের সম্পর্কে একটি বিশেষ মন্তব্য করেন, যা তার মৃত্যুর পর ঘটেছিল:[১০]

যুদ্ধের বৈধতা

সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক সংঘাত

সম্পাদনা

যুদ্ধবন্দি

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  1. Aboul-Enein and Zuhur (2004), pp. 3–4
  2. Patricia Crone, Encyclopedia of the Qur'an, "War". Brill Publishers, p. 456.
  3. Micheline R. Ishay, The History of Human Rights: From Ancient Times to the Globalization Era, University of California Press, p. 45
  4. Sohail H. Hashmi, David Miller, Boundaries and Justice: diverse ethical perspectives, Princeton University Press, p. 197
  5. Douglas M. Johnston, Faith-Based Diplomacy: Trumping Realpolitik, Oxford University Press, p. 48
  6. "BBC - Religions - Islam: War" 
  7. Aboul-Enein, H. Yousuf and Zuhur, Sherifa, Islamic Rulings on Warfare, p. 22, Strategic Studies Institute, US Army War College, Diane Publishing Co., Darby PA, আইএসবিএন ১-৪২৮৯-১০৩৯-৫
  8. Tabari, Al (১৯৯৩)। The conquest of Arabia। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 16। আইএসবিএন 978-0-7914-1071-4 
  9. Encyclopaedia of Islam (2005), p. 204
  10. El Daly, Okasha (২০০৪)। Egyptology: The Missing Millennium : Ancient Egypt in Medieval Arabic WritingsRoutledge। পৃষ্ঠা 18। আইএসবিএন 1-84472-063-2 

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  • Aboul-Enein, H. Yousuf; Zuhur, Sherifa, "Islamic Rulings on Warfare", Strategic Studies Institute, US Army War College, Diane Publishing Co., Darby PA, আইএসবিএন ১-৪২৮৯-১০৩৯-৫
  • Abu-Nimer, Mohammed (2000–2001). "A Framework for Nonviolence and Peacebuilding in Islam". Journal of Law and Religion 15 (1/2). Retrieved on 2007-08-05.
  • Ali, Abdullah Yusuf (১৯৯১)। The Holy Quran। Medina: King Fahd Holy Qur-an Printing Complex। 
  • Charles, Robert H. (২০০৭) [1916]। The Chronicle of John, Bishop of Nikiu: Translated from Zotenberg's Ethiopic Text। Merchantville, NJ: Evolution Publishing। আইএসবিএন 9781889758879 
  • Dāmād, Sayyid Mustafa Muhaqqiq et al. (2003). Islamic views on Human Rights. Tehran: Center for Cultural-International Studies.
  • Crone, Patricia (2004). God's Rule: Government and Islam. New York: Columbia University Press.
  • Javed Ahmad Ghamidi, Mizan (2001). The Islamic Law of Jihad, Dar ul-Ishraq. ওসিএলসি 52901690
  • Nicola Melis, Trattato sulla guerra. Il Kitāb al-ğihād di Molla Hüsrev, Aipsa, Cagliari 2002.
  • Madelung, Wilferd (১৯৯৭)। The Succession to Muhammad: A Study of the Early Caliphate। Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-64696-0 
  • Maududi, Sayyid Abul Ala (১৯৬৭)। The Meaning of the Quran। Lahore: Islamic publications। 
  • Maududi, Sayyid Abul Ala (১৯৯৮)। Human Rights in Islam। Islamabad: Da'wah Academy। 
  • M. Mukarram Ahmed, Muzaffar Husain Syed, সম্পাদক (২০০৫)। "Encyclopaedia of Islam: Introduction to Islam"। Encyclopaedia of Islam। Anmol Publications PVT. LTD.। আইএসবিএন 81-261-2339-7 
  • Islam Question and Answer, "[১]", Ruling on having intercourse with a slave woman when one has a wife
  • Islam Question and Answer, "[২]", Husband forcing his wife to have intercourse

আরও পড়ুন

সম্পাদনা