ইউসুফ-জুলেখা
ইউসুফ-জোলেখা মধ্যযুগের পুঁথি লেখকদের রচিত বাংলা সাহিত্যের একটি প্রণয়-কাব্য। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলমান কবি শাহ মুহম্মদ সগীর, গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে(১৩৯৩-১৪০৯ খ্রিষ্টাব্দ) ইউসুফ-জোলেখা কাব্য রচনা করেন। শাহ মুহম্মদ সগীর ছাড়াও মধ্যযুগের আরো অনেক কবি ইউসুফ-জোলেখা নাম দিয়ে কাব্য রচনা করেন। তার মধ্যে আবদুল হাকিম, শাহ গরিবুল্লাহ, গোলাম সফাতুল্লাহ, সাদেক আলী এবং ফকির মোহাম্মদ উল্লেখযোগ্য।[১]
উৎস
সম্পাদনাশাহ মুহম্মদ সগীর এর ইউসুফ-জোলেখা কাব্যে সুপ্রাচীন প্রণয়কাহিনী উপজীব্য করা হয়েছে। বাইবেল ও কুরআন এ নৈতিক উপাখ্যান হিসেবে সংক্ষেপে এই কাহিনী বর্ণিত রয়েছে। ইরানের মহাকবি ফেরদৌসী (মৃত্যু ১০২৫ খ্রিষ্টাব্দ) এবং সূফীকবি জামী (মৃত্যু ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দ) মূল কাহিনী পল্লবিত করে ইউসুফ-জোলেখা নামে কাব্য রচনা করেছিলেন। তবে তাদের কাব্যের সাথে শাহ মুহম্মদ সগীরের কাহিনীর তেমন কোন মিল নেই। তবে ফেরদৌসীর কাব্যের রোমান্টিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে শাহ মুহম্মদ সগীরের কাব্যের যথেষ্ট সামঞ্জস্য বিদ্যমান। ডঃ মুহম্মদ এনামুল হক অনুমান করেন, 'কুরআন ও ফেরদৌসীর কাব্য ব্যতীত মুসলিম কিংবদন্তিতে স্বীয়-প্রতিভায় নির্ভর করিয়াই শাহ মুহম্মদ সগীর তাহার ইউসুফ-জোলেখা কাব্য রচনা করেছিলেন'।
বিষয়বস্তু
সম্পাদনাইউসুফ-জোলেখা কাব্যের বিষয়বস্তু ইউসুফ ও জোলেখার প্রণয়কাহিনী। কাব্যের আরম্ভে আল্লাহ ও রাসুলের বন্দনা, মাতাপিতা ও গুরুজনের প্রশংসা এবং রাজবন্দনা স্থান পেয়েছে। তৈমুস বাদশাহের কন্যা জোলেখা আজিজ মিশরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও ক্রীতদাস ইউসুফের প্রতি গভীর ভাবে প্রেমাসক্ত হন। নানাভাবে আকৃষ্ট করেও তিনি ইউসুফকে বশীভূত করতে পারেন নি। বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে ইউসুফ মিশরের অধিপতি হন। ঘটনাক্রমে জোলেখা তখনও তার আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করেন নি এবং পরে ইউসুফের মনেরও পরিবর্তন ঘটে। ফলে তাদের মিলন হয়। কাব্যের এই প্রধান কাহিনীর সাথে আরও অসংখ্য উপকাহিনী স্থান পেয়েছে। পরবর্তীত ইতিহাসে মুসলিম সাহিত্য এক গৌরব উজ্জল ভূমিকায় স্থায় পায়।
- ↑ "বাংলাপেডিয়ায় ইউসুফ-জোলেখা"। ২৬ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১৩।