আব্দুল কাদের জিলানী

প্রখ্যাত ইসলামি আইনজ্ঞ ও সুফি মুসলিম তরিকা কাদেরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা
(আবদুল কাদের জিলানী থেকে পুনর্নির্দেশিত)

আব্দুল কাদের জিলানী (ফার্সি: عبدالقادر گیلانی, আরবি: عبدالقادر الجيلاني, প্রতিবর্ণীকৃত: ʿAbd al-Qādir al-Jīlānī) হলেন একজন সুন্নি মুসলিম ধর্মপ্রচারক, তপস্বী, মরমী, আইনজ্ঞ এবং হাম্বলী মাযহাবের ধর্মতত্ত্ববিদ। তিনি ইসলাম ধর্মে অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ইসলামের অন্যতম প্রচারক হিসাবে সুবিদিত। সূফীরা তাকে 'বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী' নামে ব্যক্ত করেন। আধ্যাত্মিকতায় উচ্চমার্গের জন্য বড়পীর, ইরাকের অন্তর্গত 'জিলান' নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করায় জিলানী, সম্মানিত হিসাবে আবু মোহাম্মদ মুহিউদ্দীন প্রভৃতি উপাধি ও নামেও তাকে সম্বোধন করা হয়।[]

বড়পীর, গাউসুল আজম

আব্দুল কাদের জিলানী
উপাধিশাইখুল ইসলাম, গাউসুল আজম, সুলতানুল আউলিয়া
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম২৩ মার্চ ১০৭৮
(১ রমজান, ৪৭০ হিজরি)
মৃত্যু২১ ফেব্রুয়ারি ১১৬৬
(১১ রবিউস সানি ৫৬১ হিজরী)
(বয়স ৮৭)
সমাধিস্থলবাগদাদ, ইরাক
ধর্মইসলাম
সন্তানআবদুল রাজ্জাক জিলানী
পিতামাতা
  • আবু সালেহ মুছা জঙ্গী (পিতা)
  • সাইয়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (মাতা)
যুগইসলামি স্বর্ণযুগ
অঞ্চলবাগদাদ
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহাম্বলি[][]
প্রধান আগ্রহফিকহ, সুফিবাদ
তরিকাকাদেরিয়া (প্রতিষ্ঠাতা)
মুসলিম নেতা
যার দ্বারা প্রভাবিত

নাম

সম্মানসূচক মুহিউদ্দিন অনেক সুফিদের কাছে "ধর্মের পুনরুজ্জীবক" হিসাবে তার মর্যাদা নির্দেশ করে।[] গিলানি (আরবি আল-জিলানী) তার জন্মস্থান, গিলানকে বোঝায়। [][১০] যাইহোক, গিলানি বাগদাদীর উপাধিও বহন করেছিলেন, বাগদাদে তার বাসস্থান এবং দাফনের কথা উল্লেখ করে।

জন্ম

আব্দুল কাদের হিজরি ৪৭০ সনের রমজান মাসের ১ তারিখে বাগদাদ নগরের জিলান শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু সালেহ মুছা জঙ্গী এবং মাতার নাম সাইয়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা। তার পিতা ছিলেন ইমাম হাসান ইবনে আলীর বংশধর ও মাতা ছিলেন ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর বংশধর।

শিক্ষা

 
আব্দুল কাদির জিলানীর কাল্পনিক চিত্র

জিলানী তার জন্মের প্রদেশ গিলানে তার প্রাথমিক জীবন কাটিয়েছেন। ১০৯৫ সালে আঠারো বছর বয়সে তিনি বাগদাদে যান। সেখানে তিনি আবু সাঈদ মুবারক মাখযুমী এবং ইবনে আকিলের অধীনে হাম্বলী মাযহাব অধ্যয়ন করেন।[১১][১২] তিনি আবু মুহাম্মদ জাফর আল-সাররাজের কাছে হাদিস অধ্যয়ন করেন।[১২] শিক্ষা শেষ করে জিলানী বাগদাদ ত্যাগ করেন। তিনি ইরাকের মরুভূমিতে পঁচিশ বছর তপস্যা করেন।[১৩]

ধর্ম প্রচার

শিক্ষা-দীক্ষায় পূর্ণতা অর্জনের পর তিনি নিজেকে পবিত্র ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন মাহফিলে তিনি ইসলামের আদর্শ যুক্তিপূর্ণ ভাষায় বর্ণনা করতেন। তার মহফিলে শুধু মুসলমান নয়, অনেক অমুসলিমও অংশগ্রহণ করতো। তার বক্তব্য শুনে অনেক অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।[]

সুফিবাদের কাদেরিয়া তরিকা (সুফি তরিকা)

তিনি কাদেরিয়া তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন, এর অনেকগুলি শাখার সাথে বিস্তৃত, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে এবং এছাড়াও এটি যুক্তরাজ্য, আফ্রিকা, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, বলকান, রাশিয়া, ফিলিস্তিন, চীন,[১৪] এবং পূর্বপশ্চিম আফ্রিকায় রয়েছে।[১৫]

বই

তিনি কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের পণ্ডিত ছিলেন। তার রচিত বহু গ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • কিতাব সিরর আল-আসরার ওয়া মাযহার আল-আনওয়ার[১৬](রহস্যের গোপন বই এবং আলোর প্রকাশ)
  • ফুতুহ আল গাইব (অদৃশ্যের রহস্য)
  • গুনিয়াতুত তালেবীন (অন্বেষকদের ধন) غنیہ الطالیبین
  • ক্বসীদায়ে গাউসিয়া[]
  • আল-ফুয়ুদাত আল-রব্বানিয়া (প্রভুর অনুগ্রহের প্রকাশ)[১৭]
  • পনেরোটি চিঠি: খামসাতা 'আশারা মাকতুবান[১৮]
  • কিবরিয়াত এ আহমার[১৯]
  • জান্নাত ও জাহান্নামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ[২০]
  • মহিমান্বিত প্রতিভাস (আল-ফাতহ আর-রব্বানী)[২১]

মৃত্যু

 
আবদুল কাদের জিলানীর সমাধি

হিজরী ৫৬১ সালের ১১ রবিউসসানী আব্দুল কাদের পরলোক গমন করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তার ওফাত দিবস সারা বিশ্বের সূফীরা প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকেন এবং তার মৃত্যুবার্ষিকী ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম হিসেবে পরিচিত। প্রতি আরবি মাসের ১০ তারিখ দিবাগত রাত গেয়ারভী শরীফ পালন হয়।[]

জন্মদিন এবং মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন

রমজান আবদুল কাদের জিলানীর জন্মদিন হিসাবে উদযাপিত হয় এবং তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী ১১ রবিউস সানিতে পালিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে, তাঁর ওরশ বা মৃত্যুবার্ষিকীকে গেয়ারভী শরীফ বা সম্মানিত দিবস বলা হয়।[২২]

 
শায়খ আবদুল কাদের জিলানীর মাজার গম্বুজ, বাগদাদ, ইরাক

টীকা

তথ্যসূত্র

উদ্ধৃতি

  1. জন রেনার্দ, দ্য এ টু জেড অফ সুফজম। পৃষ্ঠা ১৪২। আইএসবিএন ০৮১০৮৬৩৪৩X
  2. জুয়ান এডুয়ার্ডো ক্যাম্পো, এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইসলাম, পৃ. ২৮৮। আইএসবিএন ১৪৩৮১২৬৯৬৪
  3. আব্দুল-কাদির আল-জিলানি (২০ জানুয়ারি ২০১৯)। জামাল আল-দিন ফালেহ আল-কিলানি, সম্পাদক। "ফুতুহ আল-গাইব ("অদৃশ্যের প্রকাশ")"গুগল বই (আরবি ভাষায়)। وقد تأثر به القائد صلاح الدين الأيوبي، والشيخ معين الدين الجشتي، والشيخ شهاب الدين عمر السهروردي رحمهم الله 
  4. তাজকরে খানওয়াদে হজরত ঈশান, মুহাম্মদ ইয়াসিন কাসওয়ারি, কুপেরাতিস লাহোরিন, এডারে তালিমত নকশবান্দিয়া রচিত, পৃষ্ঠা ২৮১
  5. Burton, Isabel (১৮৯৮)। The Life of Captain Sir Richard Burton Volume 1। Charles Scribner's Sons। পৃষ্ঠা ১২১। আইএসবিএন 9783752405637 
  6. Reese, Scott S. (২০০১)। "The Best of Guides: Sufi Poetry and Alternate Discourses of Reform in Early Twentieth-Century Somalia"জার্নাল অফ আফ্রিকান কালচারাল স্টাডিজ১৪ (1 Islamic Religious Poetry in Africa): ৪৯–৬৮। এসটুসিআইডি 162001423জেস্টোর 3181395ডিওআই:10.1080/136968101750333969 
  7. বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], মোঃ নুরুজ্জামান শাহরিয়ার, দৈনিক ইনকিলাব। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২৩ ফেব্রেুয়ারি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
  8. Mihr-e-munīr: biography of Hadrat Syed Pīr Meher Alī Shāh pg 21, Muhammad Fādil Khān, Faid Ahmad. Sajjadah Nashinan of Golra Sharif, Islamabad (1998).
  9. Encyclopaedia of religion and ethics: volume 1. (A – Art). Part 1. (A – Algonquins) pg 10. Hastings, James and Selbie, John A. Adamant Media corporation. (2001), "and he was probably of Persian origin."
  10. The Sufi orders in Islam, 2nd edition, pg 32. Triingham, J. Spencer and Voll, John O. Oxford University Press US, (1998), "The Hanafi Qadirriya is also included since 'Abd al-Qadir, of Persian origin was contemporary of the other two."
  11. Campo, Juan Eduardo (২০০৯-০১-০১)। Encyclopedia of Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 9781438126968 
  12. Gibb, H.A.R.; Kramers, J.H. (১৯৮৬)। Encyclopaedia of Islam (New সংস্করণ)। Brill। পৃষ্ঠা 69। আইএসবিএন 978-9004081147 
  13. Esposito J. L. The Oxford dictionary of Islam. p160. আইএসবিএন ০১৯৯৭৫৭২৬৭ISBN 0199757267
  14. Gladney, Dru. "Muslim Tombs and Ethnic Folklore: Charters for Hui Identity"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Journal of Asian Studies, August 1987, Vol. 46 (3): 495–532; pp. 48–49 in the PDF file.
  15. Abun-Nasr, Jamil M. "The Special Sufi Paths (Tariqas)". Muslim Communities of Grace: The Sufi Brotherhoods in Islamic Religious Life. New York: Columbia UP, 2007. 86–96.
  16. "Sirr-ul-Asrar"www.nafseislam.com। ২০২০-০৬-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-০৪ 
  17. "Al-Fuyudat al-Rabbaniyya"www.al-baz.com। ২০২১-০৫-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৫ 
  18. Al-Jilani, 'Abd Al-Qadir (২০১৯-০৫-২৭)। Fifteen Letters: Khamsata 'Ashara Maktuban (ইংরেজি ভাষায়)। Islamic Book Trust। আইএসবিএন 978-967-0526-14-0 
  19. "Marfat Library"www.marfat.com। ২০২১-০৫-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৫ 
  20. 1078–1166., عبد القادر الجيلاني، (২০১০)। A concise description of Jannah & Jahannam, the garden of paradise and the fire of hell : excerpted from 'Sufficient provision for seekers of the Path of Truth (Al-Ghunya li-Tālibi al-Ḥaqq)। Ta-Ha। আইএসবিএন 978-1-84200-120-2ওসিএলসি 1158643778 
  21. al-Jīlānī, ʻAbd al-Qādir (১৯৯৮)। The Sublime Revelation (al-Fatḥ Ar-rabbānī): A Collection of Sixty-two Discourses (ইংরেজি ভাষায়)। Al-Baz Publishing, Incorporated। আইএসবিএন 978-1-882216-02-4 
  22. "Ghousia"। ১৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২১ 

গ্রন্থপঞ্জি