বিষয়বস্তুতে চলুন

বর্ধমান রেল ওভারব্রিজ

স্থানাঙ্ক: ২৩°১৫′০৬.২″ উত্তর ৮৭°৫২′১০.৭″ পূর্ব / ২৩.২৫১৭২২° উত্তর ৮৭.৮৬৯৬৩৯° পূর্ব / 23.251722; 87.869639
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বর্ধমান রেল ওভারব্রিজ
স্থানাঙ্ক২৩°১৫′০৬.২″ উত্তর ৮৭°৫২′১০.৭″ পূর্ব / ২৩.২৫১৭২২° উত্তর ৮৭.৮৬৯৬৩৯° পূর্ব / 23.251722; 87.869639
বহন করেমোটরযান, সাইকেল, পথচারী
অতিক্রম করেবর্ধমান–আসানসোল রেলপথ, বর্ধমান–কাটোয়া রেলপথ
স্থানবর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
শুরুতিনকোনিয়া
সমাপ্তিবাজেপ্রতাপপুর
অন্য নামনতুন রেল ওভারব্রিজ
মালিকপূর্ব রেল
বৈশিষ্ট্য
নকশাতার আলম্বিত সেতু
মোট দৈর্ঘ্য১৮৮.৪৩ মিটার (৬১৮.২ ফুট)
প্রস্থ
  • ফুটপাত: ৩.০ মিটার (৯.৮ ফুট)
  • সড়কপথ: ২৭.৭ মিটার (৯১ ফুট)
  • মোট: ৩০.৭ মিটার (১০১ ফুট)[]
ঊর্ধ্বে অনুমোদিত সীমা৬,৫০০ মিলিমিটার (২৬০ ইঞ্চি)
লেনের সংখ্যা৪টি
ইতিহাস
নির্মাণকারীরেল বিকাশ নিগম লিমিটেড
নির্মাণ শুরু২০১২
নির্মাণ শেষ২০১৯
নির্মাণ ব্যয়₹২৮৭–৩০০ কোটি[]
উদ্বোধন হয়
চালু২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯; ৫ বছর আগে (2019-09-27)[]
প্রতিস্থাপনপুরনো রেল ওভারব্রিজ
অবস্থান
মানচিত্র
তথ্যসূত্র
[][]

বর্ধমান রেল ওভারব্রিজ বা নতুন রেল ওভারব্রিজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান শহরে অবস্থিত একটি সড়ক সেতুবর্ধমান জংশন রেলওয়ে স্টেশনের নিকটে অবস্থিত এই সেতু বর্ধমান–আসানসোলবর্ধমান–কাটোয়া রেলপথকে অতিক্রম করে। ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকার[] ও ২৭ সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক[] এর জোড়া উদ্বোধন করেছিল। ঐ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরে এই সেতু চালু করা হয়েছিল।[] এটি ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম রেল ওভারব্রিজ বা রেলপথ অতিক্রমকারী সেতু। রাজ্যের পূর্ত দপ্তরের মতে এই রেল ওভারব্রিজ তৈরি করতে ২৮৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল, যদিও সেতু নির্মাণকারী সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের (আরভিএনএল) মতে এর পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা।[]

প্রায় ৯০ বছর পুরনো রেল ওভারব্রিজকে প্রতিস্থাপন করার জন্য এই নতুন রেল ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়েছিল।[] এছাড়া পূর্ব রেল পুরনো ওভারব্রিজটি ভাঙার কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ঐ সেতুর জায়গায় একটি ফুটব্রিজ তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
পুরনো রেল ওভারব্রিজ, যা ২০২৩ সালে ভেঙে ফেলা হয়েছিল।

১৯৩০ সাল নাগাদ বর্ধমানকাটোয়া শহরের মধ্যে যাতায়াতের জন্য বর্ধমান স্টেশনের নিকট একটি রেল ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি কাটোয়া, কালনা, নদিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, কলকাতাউত্তরবঙ্গের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল। প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এই সেতু পারাপার করত, আর এই সেতু দিয়ে প্রায় ২,১০০টি ভারী গাড়ি চলাচল করত।[]

১৯৯০-এর দশকে রাজ্যের পূর্ত দপ্তরভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ উভয়ই এই সেতুকে "বিপজ্জনক" বলে ঘোষণা করেছিল। ১৯৯৬ সালের রেল বাজেটে এই রেল ওভারব্রিজের পরিবর্তে একটি নতুন সেতু তৈরির ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে রাজ্য সরকার কলকাতার বিদ্যাসাগর সেতুর ধাঁচে নতুন রেল ওভারব্রিজ তৈরি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ২০১২ সালের শুরুতে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল।[]

২০১৮ সাল থেকে পুরনো সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে সেতুতে বাস, লরি, ডাম্পার ইত্যাদি ভারী মোটরযান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।[]

নতুন সেতু উদ্বোধন ও চালু

[সম্পাদনা]

২০১৯ সালে নতুন রেল ওভারব্রিজের জোড়া উদ্বোধন হয়েছিল। ২৩ সেপ্টেম্বরে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে পূর্ব রেল ৩০ সেপ্টেম্বরে সেতুটি উদ্বোধন করা হবে বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর আগেই ২৪ সেপ্টেম্বরে সেতুটির উদ্বোধন করে দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ থেকে এর প্রতীকী উদ্বোধন করেছিলেন। এর ফলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ও বিরোধীদল বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল।[] তবে রাজ্য সরকারের এই উদ্বোধন সত্ত্বেও সেতুটি বন্ধ ছিল।[]

২৫ সেপ্টেম্বরে পূর্ব রেল একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছিল যে ৩০ সেপ্টেম্বরের জায়গায় ২৭ সেপ্টেম্বরে রেলের তরফ থেকে নতুন রেল ওভারব্রিজ উদ্বোধন করা হবে।[] এই উদ্বোধনের পর সেতুটি চালু হয়েছিল, আর প্রথমদিকে এই সেতুতে মোটরবাইক ও তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ ছিল।[]

পুরনো সেতু ভাঙা ও ফুটব্রিজ

[সম্পাদনা]

২০২২ সালের মার্চ মাসে ভগ্নপ্রাপ্ত পুরনো রেল ওভারব্রিজকে ভাঙা এবং সেখানে হাঁটার জন্য সেতু বা ফুটব্রিজ তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুরনো সেতুটির ভাঙার কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। তখন সেতু ভাঙার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ফুটব্রিজ তৈরি করার কথা ভাবা হয়েছিল। প্রাথমিক নকশা অনুযায়ী এর দৈর্ঘ্য ১১০ মিটার (৩৬০ ফুট) ও প্রস্থ ৩ মিটার (৯.৮ ফুট)। সেতুটির নির্মাণের সম্ভাব্য খরচ ৭–৮ কোটি টাকা।[]

বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]
বাজেপ্রতাপপুর থেকে বর্ধমান রেল ওভারব্রিজ।

বর্ধমান রেল ওভারব্রিজ ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম রেল ওভারব্রিজ, যা বর্ধমান শহরকে কাটোয়াকালনা মহকুমার সাথে সংযুক্ত করে। এটি একটি তার আলম্বিত সেতু, যার মোট দৈর্ঘ্য ১৮৮.৪৩ মিটার (৬১৮.২ ফুট)। এর উভয়প্রান্তে ১.৫ মিটার (৪ ফুট ১১ ইঞ্চি) ফুটপাত ও মাঝখানে যানবাহন চলাচলের জন্য ২৭.৭ মিটার (৯১ ফুট) চওড়া চার লেনের সড়কপথ রয়েছে। ফুটপাত ও সড়কপথ মিলিয়ে সেতুটির মোট প্রস্থ ৩০.৭ মিটার (১০১ ফুট)।[]

ব্যয়

[সম্পাদনা]

রাজ্যের পূর্ত দপ্তরের মতে এই রেল ওভারব্রিজ তৈরি করতে ২৮৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। এর বেশিরভাগ রাজ্য সরকার দিয়েছিল এবং রাজ্য সরকার ১৬৭ কোটির বেশি টাকা সেতু নির্মাণকারী সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডকে (আরভিএনএল) দিয়েছিল। তবে আরভিএনএলের মতে সেতু নির্মাণের খরচ ৩০০ কোটি টাকা এবং কেন্দ্র ও রাজ্য তা অর্ধেক করে বহন করেছিল।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "India's second largest railway overbridge in West Bengal: All you need to know"। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯। 
  2. "উদ্বোধন হল, তবু রেলসেতু 'বন্ধ'ই"আনন্দবাজার অনলাইন। ২০১৯-০৯-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৪মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুর থেকে ওই সেতুর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমান পুরসভার কাছেও একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছিলেন আর এক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। উড়ালপুলের সংযোগকারী রাস্তায় কিছুটা হাঁটেনও তাঁরা। কিন্তু সেতু ‘বন্ধ’ ছিল ‘রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেডের’ লোহার পাঁচিলে। [...] পূর্ত দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (পশ্চিমাঞ্চল) দিলীপ বৈদ্য বলেন, “সেতু তৈরি করতে ২৮৭ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বেশির ভাগটাই রাজ্য সরকার দিয়েছে।’’ [...] যদিও আরভিএনএলের তরফে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে, সেতু তৈরি করতে ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। 
  3. "সেতু উদ্বোধন নিয়ে তরজা তুঙ্গে, রেলমন্ত্রী আসার আগেই বর্ধমানে গিয়ে ফিতে কেটে দিলেন সুব্রত"আনন্দবাজার অনলাইন। ২০১৯-০৯-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৪কিন্তু মঙ্গলবার আচমকাই বর্ধমানে হাজির হয়ে সেই সেতু উদ্বোধন করে দিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ থেকে প্রতীকী উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। 
  4. "শুক্রবার বর্ধমান রেলসেতুর উদ্বোধন করবেন রেল প্রতিমন্ত্রী"বর্ধমান.কম। ২০১৯-০৯-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৪ 
  5. "শেষমেশ চালু হল বর্ধমান রেলওয়ে ওভারব্রিজ"বর্ধমান.কম। ২০১৯-০৯-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৪ 
  6. Prasad, Rajesh। Implementation of 4-lane Cable Stayed ROB at Barddhaman – future fast track model for new ROB over busy yard (পিডিএফ)Iricen.gov.inরেল বিকাশ নিগম লিমিটেড। ৩ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৪ 
  7. "Staying with cables - A modern construction in new era - Four-lane cable-stayed ROB at Barddhaman"স্লাইডশেয়াররেল বিকাশ নিগম লিমিটেড। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২০ 
  8. "ভারী যান বন্ধ পুরনো রেলসেতুতে"আনন্দবাজার অনলাইন। ২০১৯-০৯-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৪ 
  9. "রেলসেতুর বিকল্প কবে"আনন্দবাজার অনলাইন। ২০২৩-০২-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৪ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]